فَلۡیَنۡظُرِ الۡاِنۡسَانُ مِمَّ خُلِقَ ؕ﴿۵﴾
অতএব মানুষ যেন চিন্তা করে দেখে তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
(সুরা আত তারিক ০৫)
এখানে আল্লাহ তা’আলা যে মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম তার ওপর মানুষেরই নিজের সত্ত্ব থেকে প্রমাণাদি উপস্থাপন করছেন। মানুষ তার নিজের সম্পর্কে একটু চিন্তা করে দেখুক। তাকে কিভাবে কোত্থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে? তাকে অত্যন্ত দুর্বল বস্তু হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। যিনি প্রথমবার তাকে সৃষ্টি করতে পারেন তিনি অবশ্যই দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে সক্ষম।
خُلِقَ مِنۡ مَّآءٍ دَافِقٍ ۙ﴿۶﴾
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি হতো।
(সুরা আত তারিক ০৬)
অর্থাৎ বীর্য থেকে, যা পুরুষ ও নারী থেকে সবেগে বের হয়। যা থেকে আল্লাহর হুকুমে সন্তান জন্মলাভ করে। [ইবন কাসীর]
یَّخۡرُجُ مِنۡۢ بَیۡنِ الصُّلۡبِ وَ التَّرَآئِبِ ؕ﴿۷﴾
এটা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পঞ্জরাস্থির মধ্য থেকে।
(সুরা আত তারিক ০৭)
ইবন আব্বাস বলেন, পুরুষের মেরুদণ্ড ও নারীর পঞ্জরাস্থির পানি হলদে ও তরল। সে দু’টো থেকেই সন্তান হয়। [ইবন কাসীর]
আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন যে বীর্য সেটির একটি বের হয় মেরুদণ্ড থেকে, সেটি পুরুষের শুক্র, অপরটি বের হয় বুকের উপরের পাঁজর থেকে, সেটি মহিলার শুক্র।
উপরোক্ত আয়াত গুলিতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন মানুষ সৃষ্টি হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি তথা বীর্য (Semen ) থেকে। এই বীর্য নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে।
,
এখানে মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে বীর্য নির্গত হওয়া বলতে আসলে কি বুঝায়?
যেখানে আমরা সবাই জানি, বীর্য তৈরী হয় অন্ডকোষ( testis) থেকে।
অন্ডকোষে( testis) কিভাবে বীর্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়।
অন্ডকোষে( testis) বীর্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত রক্ত ও স্নায়ুর সংযোগ (Blood supply, Nerve supply)।
অন্ডকোষের রক্ত সঞ্চালন হয় Testicular Artery নামক রক্ত নালীকা দ্বারা যা লাম্বার lambar L2 লেভেল থেকে তৈরী হয় যা মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী একটি স্থান।
ঠিক একই ভাবে অন্ডকোষের স্নায়ুর সংযোগ ( Nerve supply) আসে Paraaortic ganglia থেকে যা অবস্থান করে মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী একটি স্থানে।
অর্থাৎ একথা পরীষ্কার যে অন্ডকোষের কাজ সম্পু্র্নরুপে নিয়ন্ত্রিত হয় এমন দুটি স্থান থেকে যাদের অবস্থান মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী একটি স্থানে।
আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হচ্ছে অন্ডকোষের উংপত্তিও কিন্তু মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্যবর্তী কিডনীর নিকটবর্তী একটি যায়গা হতে।এটি Genital ridge নামক স্থান থেকে তৈরী হয়ে ধীরা ধীরে অন্ডথলীতে(scrotum) নেমে আসে।
কাজেই আলোচনা থেকে একথা পরিস্কার যে অন্ডকোষের( testis) উপত্তি (Development) ও তার কাজ (Blood supply, Nerve supply) এমন একটি স্থান থেকে নিয়ন্ত্রিত যা কিনা মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মাঝে অবস্থান করে।
(সংগৃহীত)
অন্য এক তাফসীর গ্রন্থে আছেঃ
‘ভ্রুণতত্ত্বের (Embryology) দৃষ্টিতে এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, ভ্রুণের (Foetus) মধ্যে যে অণ্ডকোষে বীর্যের জন্ম হয় তা মেরুদণ্ড ও বক্ষপাঁজরের মধ্যস্থলে কিডনির কাছে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে অণ্ডকোষ ধীরে ধীরে অণ্ডথলিতে (Scrotum) নেমে আসে। কিন্তু তার স্নায়ু ও শিরাগুলোর উৎস সবসময় সেখানেই (মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্যস্থলে) থাকে। পিঠের নিকটবর্তী মহাধমনী (AORTA) থেকে শিরাগুলো (Artery) বের হয় এবং পেটের সমগ্র অঞ্চল সফর করে সেখানে রক্ত সরবরাহ করে। এভাবে দেখা যায়, অণ্ডকোষ আসলে পিঠের একটি অংশ। শরীরের অতিরিক্ত উষ্ণতা সহ্য করার ক্ষমতা না থাকায় তাকে অণ্ডথলিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। উপরন্তু যদিও অণ্ডকোষ বীর্য উৎপাদন করে এবং তা মৌলিক কোষে (Seminal vesicles) জমা থাকে, তবুও মেরুদণ্ড ও পাঁজরের মধ্যস্থলই হচ্ছে তাকে বের করার কেন্দ্রীয় সঞ্চালন শক্তি। মস্তিষ্ক থেকে স্নায়বিক প্রবাহ এ কেন্দ্রে পৌঁছার পর কেন্দ্রের সঞ্চালনে (Trigger Action) মৌলিক কোষ সঙ্কুচিত হয়। এর ফলে তরল শুক্র পিচকারীর মতো প্রবল বেগে বের হয়ে থাকে। এ জন্য কুরআনের বক্তব্য চিকিৎসাশাস্ত্রের সর্বাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানলব্ধ জ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যশীল।’