আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
173 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায

প্রশ্ন১ঃ আমার এক দ্বীনি বোনের রামাদান মাসে টয়লেট এর সাথে প্রচুর ব্লিডিং হয়। এতে উনি মনে করেছিলেন উনার রোজা ভেঙে গেছে। তাই উনি অনেজ জ্বালাপোড়া অনুভূত করলে পায়ুপথে অয়েন্টমেন্ট ইউজ করেছিলেন। পরবর্তীতে আমি উনাকে জানালাম আমরা ফিক্বহে পড়েছি রক্ত গেলে রোজা ভঙ্গ হয় না। তবে পায়ুপথ এ মেডিসিন দিলে রোজা ভেঙে যায়। এটা উনার জানা ছিলো না। এটা জানার পর  উনি  সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখার মতোই ছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো উনার রোজা টা কি ভেঙে গেছে? যদি ভেঙে যায় তাহলে শুধু কাযা আদায় করবেন নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে?

২/ আমার আরও দুইজন দ্বীনি বোন, উনারা রামাদান এর ফরজ রোজার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না, দ্বীনের বুঝ কম ছিলো বলে। তাই বালেগা হওয়ার পর অনেক ফরজ রোজা ইচ্ছাকৃত রাখেন নি। একটু টায়ার্ড লাগলে রোজা ভেঙে ফেলেছেন। সেহরি তে উঠতে ইচ্ছে না হলে রোজা রাখেন নি, এমন ভাবে জীবনে অনেক রোজা মিস করেছেন। দ্বীনের বুঝ আসার পর আলহামদুলিল্লাহ রোজা রাখছেন সব গুলো।
এখন প্রশ্ন হলো বিগত জীবনে কতোগুলো রোজা এমন ভাবে বাদ গেছে তার হিসেব নেই। এই রোজা গুলো এখন কাযা আদায় করতে হবে? নাকি কাফফারাও আদায় করতে হবে। আফফারা আদায় করতে হলে এতোগুলো রোজার কাফফারার বিধান কিরূপ হবে।

৩/ আমার পায়ের নখের ইনফেকশন ছিলো এক বছর আগে।  নখ পেকে যেতো তখন আমি নখ না ভিজিয়ে অজু, গোসল করতাম। তারপর আল্লাহর রহমতে ভালো হলে নখ ভিজিয়ে অজু গোসল করতাম। যখন ই ভেজাতাম তার কিছুদিন পর আল্লাহর ইচ্ছেয় আবার নখের পাকা গলা শুরু হতো। ডক্টর আমাকে বলতেন নখ ভালো না হওয়া অব্দি নখ ভেজানো যাবে না। ১০-২০ দিন ভেজাবো না নাকি এক মাস ভেজাবো না এরকম কোন সময় নির্দিষ্ট করে বলতেন না। আমি নিজ থেকেই নখ একটু বেটার হলেই ভিজিয়ে ফেলতাম  ভেজানোর পর ই আল্লাহর ইচ্ছেয় আবার পেকে যেতো এরকম টা ৩-৪ বার হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সিন্ধান্ত নিলাম নখ সম্পূর্ণ ভালো না হলে আর ভেজাবোই না। তারপর প্রায় ২-৩ মাস নখ এ ব্যাথা থাকতো এবং দগদগে লাল হয়ে থাক্তো তাই আমিও আর ভেজাই নি নখ।

তারপর প্রথম রোজার দিন আল্লাহর নাম নিয়ে এই ব্যাথাযুক্ত নখ ভিজিয়ে অজু গোসল করা শুরু করলাম। তারপর আল্লাহর রহমতে আর পাকা গলা হয় নি। তবে এখনো নখে ব্যাথা আছে এবং লাল হয়ে আছে। এরূপ অবস্থায়ই নখ ভিজিয়ে অজু গোসল করি। তবে কিছুদিন পূর্বেই নখের এই অবস্থায় ই আমি না ভিজিয়ে অজু গোসল করেছিলাম। তখন কি আমার অজু হয়েছিলো? আর সেই অজু দ্বারা যে ইবাদাত করেছি সেটা হয়েছিলো?
৪/ অসুস্থতার কারণে পায়ুপথে অয়েন্টমেন্ট ইউজ করতে হয়। সেটা যদি প্যান্ট এ লাগে তাহলে সেই প্যান্ট পড়ে কি নামাজ পড়া যাবে? আর অয়েন্টমেন্ট যদি পায়ুপথ এর ভেতরে প্রবেশ করিয়ে ইউজ করা হয় আর মুভমেন্ট এর কারণে সেটা বের হয়ে যায় তখন কি অজুও ভেঙে যাবে?

৫/ নরমালি আমার হায়েজ ৫দিনে শেষ হয়। গত মাসে ৪র্থ দিনে সাদাস্রাব দেখে ফরজ গোসল করে নামাজ, কুরআন পড়ি। কিন্তু ওইদিন ই সন্ধ্যার পর হালকা হলুদ স্রাব যেতে দেখি। তাই পরের দিন আবার ফরজ গোসল করে তারপর নামাজ পড়ি। এই হালকা  হলুদ স্রাব কি পিরিয়ড হিসেবে গণ্য হবে।

এই মাসেও সেইম একই কাহিনী ৫ম দিনে সাদাস্রাব দেখে ফরজ গোসল সেরে নামাজ পড়ি কিন্তু রাতে আবার হলুদ স্রাব দেখি। এমতাবস্থায় পরবর্তী মাস গুলোতে আমার কি করণীয়?  প্রথমে সাদা স্রাব দেখে নামাজ পড়া শুরু করবো পরে আবার যখন হালকা হলুদ স্রাব যাবে তখন কি নামাজ অফ করে পরের দিন থেকে(স্রাব বন্ধ হলে) নামাজ শুরু করবো??

1 Answer

0 votes
by (589,680 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
পায়ূপথে রক্ত নির্গত হলে রোযা ভঙ্গ হবে না।তবে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে যদি কেউ রোযাকে ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হবে,কাফফারা ওয়াজিব হবে না।

(২)
https://www.ifatwa.info/2187 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
আপনি বালিগ হওয়ার বৎসর বয়স থেকে যতটা রমজান আপনার সামন দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে।এর মধ্যে যতটা রোযা আপনি রাখেননি।বা নিয়তই করেননি।সেগুলোকে হিসেব করে শুধুমাত্র কাযা করে নিবেন।কাফফারার কোনো প্রয়োজন এক্ষেত্রে নেই। আর যে সমস্ত রোযা আপনি রেখে তারপর ভেঙ্গে দিয়েছেন।যেমন আপনি সহবাসের মাধ্যমে মাধ্যমে একটি ভেঙ্গেছেন।এ রোযার কাফফারা আপনাকে আদায় করতে হবে।

কা'যা রোযা সমূহের কয়টি কাফ্ফারা আদায় করতে হবে? ছুটে যাওয়া প্রত্যেকটি রোযার জন্য কি পৃথক পৃথক কাফ্ফারা আদায় করতে হবে?নাকি সবগুলোর জন্য একটি কাফ্ফারাই যথেষ্ট হবে?
প্রতিউত্তরে বলা যায়-
এ সম্পর্কে সর্বমোট তিনটি মতামত পাওয়া যায়।
এর মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য অভিমত হচ্ছে-
প্রতিটি রোযার জন্য পৃথক পৃথক কাফ্ফারা যদিও আসার কথা ছিলো।কিন্তু যেহেতু এটা মানুষের জন্য অসম্ভব হয়ে দাড়াবে। তাই ফুকাহায়ে কেরাম সহজতার স্বার্থে বলেন যে,

অতীতের যতগুলো রোযা স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ হয়েছে সেই সবগুলোর জন্য একটি কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।এবং স্ত্রী সহবাস ব্যতীত অন্য কোনো মাধ্যম তথা খানাপিনার মাধ্যমে যতগুলো রোযা ভঙ্গ হয়েছে সেই সবগুলোর জন্য পৃথক একটি কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।আহসানুল ফাতাওয়া-৪/৪৩৪।

মোটকথাঃ জীবনে যত ফরয রোযা পানাহারের মাধ্যমে ভঙ্গ করা হয়েছে,তার জন্য একটি কাফ্ফারা আসবে।এবং একটি কাফ্ফারা ই উক্ত সকল রোযার জন্য যথেষ্ট হবে।
ঠিক এভাবে যত রোজা সহবাসের মাধ্যমে ভঙ্গ করা হয়েছে তার জন্য একটি কাফ্ফারা আসবে।কাফফারা সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/102। (শেষ)
কখন মানুষ বালেগ হয়, সে সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/12073

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
অতীতের কাযা রোযা সম্পর্কে অনুমানের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

(৩)
আপনি সমস্ত পা ধৌত করে নিবেন।এবং শুধুমাত্র ইনফেকশনকৃত নকে মাসেহ করে নিবেন। ইনশা'আল্লাহ, আপনার পবিত্রতায় কোনো সমস্যা হবে না।অজু গোসল হবে।কেননা নকে পানি লাগলে যে সমস্যা হয়, সেটা পরিক্ষিত।

(৪)
অয়েন্টমেন্ট যদি পায়ূপথের ভিতরে ইউজ করা হয়, এবং তা বের হয়ে আসে, তাহলে অজু ভেঙ্গে যাবে। এবং কাপড়ে লাগলে সেই কাপড় নাপাক হিসেবে বিবেচিত হবে।

(৫)
https://www.ifatwa.info/6962 নং ফাতাওয়ায় বলেছি যে,
اذا عاودها الدم في العشرة بطل الحكم بطهارتها مبتدأة كانت او معتادة و كأنها لم تطهر اصلا
হায়েয বন্ধ হওয়ার পর দশ দিনের ভিতর আবার যদি হায়েয চলে আসে,তাহলে পূর্বের পবিত্রতার বিধান খতম হয়ে যাবে।চায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ঐ মহিলা প্রথমবার হোক বা এ ব্যাপারে অভ্যস্ত থাকুক।যেমন ঐ মহিলা পূর্বে পবিত্রই হয়নি।(ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৪৮৫, যাকারিয়া)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,680 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 215 views
0 votes
1 answer 134 views
...