আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
228 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (22 points)
closed by
১) ঈসা(আ) কি রাসূল ছিলেন নাকি শুধু নবী? কারণ উস্তাদ একজন বলেছেন যে রাসূল তারাই যাদের নতুন শরীয়াহ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যেহেতু ঈসা(আ) কে নতুন শরীয়াহ দেওয়া হয়নি তাই উনি রাসূল না।কিন্তু সুরা আলে ইমরান এর ৪৯ নং আয়াতে বলা আছে যে তাঁকে বনী ইসরায়েলের "রাসূল" করে পাঠানো হয়েছে।
২) আমাদের ফরয নামাযের পরে যদি সুন্নাত এ মুয়াক্কাদাহ থাকে তাহলে ফরয নামাযের পরের যিকির কি সুন্নাত পড়ে তারপর পড়বো?
৩)আর এইটা যদি হয় তাহলে কি বাসায় এসে তাড়াতাড়ি সুন্নাত পড়তে হবে,,যেহেতু  ফরয বাদে বাকি সব নামাযই বাসায় পড়া উত্তম?
৪) আর বাসায় তাড়াতাড়ি চলে আসলে তো জামাতে যেয়ে সবার সাথে কথা বার্তা বলা, খোঁজ খবর নেওয়ার যে সুন্নাহ সেটা পালন হলো না।

সাহাবা রা কি করতেন এই ব্যাপারে?

৫) মাগরিবের সুন্নাত এ মুয়াক্কাদাহ কি মসজিদেই ফরযের পরেই পড়বো? যেহেতু মাগরিব তাড়াতাড়ি পড়তে হয়। নাকি বাসায় এসে পড়বো?
৬)ইশা বা যোহরের ফরযের পরের  সুন্নাত এ মুয়াক্কাদাহ একটু দেরি করে পড়লে সমস্যা আছে?

 ৭)নিষিদ্ধ ওয়াক্তে, ফজর ও আসরের ফরযের পরে, এবং ফজরের সুন্নাত  এর পরে কিন্তু ফরযের আগে তাহিয়্যাতুল অযু বা দুখুলুল মাসজিদ পড়া যাবে?
closed

1 Answer

+1 vote
by (671,200 points)
selected by
 
Best answer
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১) হযরত ঈসা আঃ রাসুল ছিলেন।
তার উপর ইঞ্জিল কিতাব নাযিল হয়েছিলো।
নবী ও  রাসুলের পার্থক্যের ক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামদের মাঝে  অনেক মতবিরোধ রয়েছে।  

শাইখুল ইসলাম  আল্লামা শিব্বির আহমেদ উসমানী রহঃ নবি ও রাসুলের মধ্যে  পার্থক্য বর্ণনা করেন যে নবী বলা হয় যাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহি আসে।
,
আম্বিয়ায়ে কেরামদের মধ্যে কিছু নবীর বিশেষত মর্যাদা দেওয়া হয়েছিলো,যেমন তাদেরকে কাফেরদের মোকাবেলায় পৃথক উম্মতের কাছে পাঠানো হয়েছিলো,অথবা নতুন কিতাব এবং স্বয়ংসম্পুর্ন শরীয়ত  দেওয়া হয়েছিলো।
(তাফসীরে উসমানী ২/৪৯১ মাআরিফুল কুরআন ৬/৪২) 
সুতরাং  হযরত ঈসা আঃ রাসুল ছিলেন। 

বিস্তারিত জানুন 

(০২) ফরজ নামাজ পড়ার পর সুন্নাত নামাজ দেরি করা উচিত নয়,শরয়ী ওযর না থাকলে যত দ্রুত সম্ভব সুন্নাত শুরু করে দিতে হবে।
সুতরাং নামাজের পরের যিকির আযকার,নফল আমল একটু দেরি করেই আদায় করতে হবে।
তবে যিকির আযকার আগে করে পরে সুন্নাত পড়াও জায়েজ আছে।

(০৩) যদি বাসায় এসে সুন্নাত পড়েন,তাহলে তারাতারি সুন্নাত  পড়ে নেওয়াই উচিত।

(০৪) বাসায় সুন্নাত নফল পড়ার বিধানঃ

শরীয়তের বিধান হলো নফল নামাজ,এবং সুন্নাত নামাজ ঘরে আদায় করা জরুরি নয়,বরং উত্তম।
তবে শর্ত হলো সুন্নাত,নফল পড়ার জন্য ঘরে আসার কারনে নামাজির অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হওয়ার আশংকা না থাকতে হবে,ঘরে নামাজ পড়ার কারনে নামাজে খুশু খুজুর মধ্যে কমতি আসার ভয় না থাকতে হবে।
তাহলে ঘরে সুন্নাত নফল নামাজ পড়াই উত্তম, অন্যথায় মসজিদেই পড়া উচিত।
(নাজমুল ফাতওয়া ২/২৬১)

وفی الشامیۃ(۲۲/۲): (قولہ والافضل فی النفل الخ) شمل ما بعد الفریضۃ وما قبلھا، لحدیث الصحیحین ’’علیکم الصلاۃ فی بیوتکم فان خیر صلاۃ المرء فی بیتہ الا المکتوبۃ‘‘ واخرج ابو داؤد ’’صلاۃ المرء فی بیتہ افضل من صلاتہ فی مسجدی ھذا الا المکتوبۃ‘‘ وتمامہ فی شرح المنیۃ وحیث کان ھذا افضل یراعی مالم یلزم منہ خوف شغل عنھا لوذھب لبیتہ، او کان فی بیتہ ما یشغل بالہ ویقلل خشوعہ فیصلیھا حینئذ فی المسجد لان اعتبار الخشوع ارجح

যার সারমর্ম হলো বাসায় সুন্নাত নামাজ  পড়লে যদি খুশু খুজুতে সমস্যা না হয়,তাহলে বাসাতেই সুন্নায় নফল পড়া উত্তম।
কারন রাসুল সাঃ বলেছেন 
علیکم الصلاۃ فی بیوتکم فان خیر صلاۃ المرء فی بیتہ الا المکتوبۃ‘‘ 
তোমাদের জন্য ঘরেই নামাজ পড়তে হবে।
কেননা ফরজ নামাজ ব্যাতিত অন্যান্য নামাজ ঘরে পড়াই ভালো।
আবু দাউদ শরীফের হাদীসে এসেছে যে রাসুল সাঃ বলেছেন 
صلاۃ المرء فی بیتہ افضل من صلاتہ فی مسجدی ھذا الا المکتوبۃ‘‘
ফরজ ব্যাতিত অন্যান্য  নামাজ মসজিদের তুলনায় ঘরে পড়াই উত্তম।       

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ
وفی الھندیۃ(۱۱۳/۱): الافضل فی السنن
 والنوافل المنزل لقولہ علیہ السلام صلاۃ الرجل فی المنزل افضل الا المکتوبۃ الخ۔
নফল এবং সুন্নাত নামাজ ঘরে পড়াই উত্তম।
,
★★সুতরাং জামাতে যেয়ে সবার সাথে কথা বার্তা বলা, খোঁজ খবর নেওয়ার যে সুন্নাহ,উক্ত সুন্নাহ নামাজের আগে একটু আগে মসজিদে গিয়ে পালন করতে হবে। 
ফজর,আছর নামাজের পর তো সুন্নাত নেই,সেই সময়েও বিস্তারিত ভাবে লোকদের খোজ খবর  নেওয়া যাবে।
(০৫) মাগরীবের সুন্নাতের ক্ষেত্রেও একই হুকুম।
উপরোক্ত শর্তের ভিত্তিতে তারাতাড়ি  বাসায় এসে বাসাতে পড়াই উত্তম।
যদি উপরোক্ত শর্ত না পাওয়া যায়,তাহলে মসজিদেই তারাতাড়ি পড়ে নিতে হবে।
,
(০৬) ইশা বা যোহরের ফরযের পরের  সুন্নাত এ মুয়াক্কাদাহ একটু দেরি করে পড়লে সমস্যা নেই।
তবে তারাতাড়ি পরাই উত্তম।

(০৭)  নিষিদ্ধ ওয়াক্তে যেকোনো ফরজ,নফল,কাজা নামাজ পড়া হারাম।
,
فى صحيح البخارى– أبا سعيد الخدري يقول : سمعت رسول الله صلى الله عليه و سلم يقول لا صلاة بعد الصبح حتى ترتفع الشمس ولا صلاة بعد العصر حتى تغيب الشمس ( صحيح البخارى- كتاب مواقيت الصلاة، باب لا يتحرى الصلاة قبل غروب الشمس، رقم-1139) 

অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন-আমি নবীজি সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, ফজরের নামাযের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই, এবং আসরের পর সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই। (সহীহ বুখারী-১/৮২, হাদীস নং-১১৩৯)

وفى صحيح المسلم- قال عمرو بن عبسة السلمى ………… فقلت يا نبى الله……أخبرنى عن الصلاة قال « صل صلاة الصبح ثم أقصر عن الصلاة حتى تطلع الشمس حتى ترتفع فإنها تطلع حين تطلع بين قرنى شيطان وحينئذ يسجد لها الكفار (صحيح مسلم- صلاة المسافربن، باب إسلام عمرو بن عبسة،رقم-1967)

    অনুবাদ-আমর বিন আবাসা আস সুলামী রাঃ বলেন-আমি বললাম-হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে নামায সম্পর্কে শিক্ষা দিন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন-ফজরের নামায আদায় করবে। তারপর সূর্য পূর্বাকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যখানে উদিত হয়, এবং সে সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে। (সহীহ মুসলিম-১/২৭৬, হাদীস নং-১৯৬৭)
,

 ★ফজর ও আসরের ফরযের পরে, এবং ফজরের সুন্নাত  এর পরে কিন্তু ফরযের আগে উক্ত সময় তাহিয়্যাতুল অযু , তাহিয়্যাতুল মসজিদ (দুখুলুল মাসজিদ)  এর নামাজ পড়া মাকরুহ 
নাজমুল ফাতওয়া  ২/১৮

হাদীস শরীফে এসেছেঃ   
عن حماد بن أبي سلیمان أنہ سأل إبراہیم النخعي عن الصلاۃ قبل المغرب، قال: فنہاہ عنہا، وقال: إن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم وأبا بکر رضي اللّٰہ عنہ وعمر رضي اللّٰہ عنہ لم یکونوا یصلونہا۔ (رواہ محمد في کتاب الآثار، نصب الرایۃ للزیلعي ۱؍۲۸۷، بحوالہ: إعلاء السنن ۲؍۶۳-۶۴ رقم: ۵۲۰ دار الکتب العلمیۃ بیروت)
রাসুলুল্লাহ সাঃ, আবু বকর সিদ্দিক রাঃ,এবং ওমর রাঃ মাগরীব নামাজের পূর্বে কোনো নফল ইত্যাদি আদায় করেননি।       

শরীয়তের বিধান হলো   যদি অযু করার পর ততক্ষনাৎ মাগরিব নামাজ পড়ে,তাহলে তাহিয়্যাতুল অযু এর নামাজেরও ছওয়াব পাওয়া যাবে। 
কিতাবুন নাওয়াজেল ৪/৩৫৭।
,
যদি মসজিদে ঢুকেই সুন্নাত নামাজ পড়ে,তাহলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর নামাজও আদায় হয়ে যাবে।
(নাজমুল ফাতওয়া ২/২৫৫)
,
قال في الحلیۃ: لو اشتغل داخل المسجد بالفریضۃ غیر ناو للتحیۃ قامت تلک الفریضۃ مقام تحیۃ المسجد لحصول تعظیم المسجد، کما في البدائع وغیرہ۔ (شامي ۲؍۴۵۹ زکریا)
যার সারমর্ম হলো কেহ যদি মসজিদের প্রবেশ করেই ফরজ নামাজ শুরু করে দেয়,তাহিয়্যাতুল মসজিদের নিয়ত নাও করে,তাহলেও  এই নামাজ তার তাহিয়্যাতুল মসজিদের জন্য যথেষ্ট হবে।  

সুবহে সাদিকের পর ফজরের ফরয নামাযের আগে দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য নফল নামায পড়া প্রমানিত নয়। 
★ফজরের ফরয পড়ার পর সূর্য উদিত হয়ে কিছুটা উঁচু হওয়া পর্যন্ত কোন নামায পড়তে রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন। তাই সে সময় নামায পড়া যাবে না।

عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ لاَ يُصَلِّى إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ وفى رواية إلا ركعتي الفجر
অনুবাদ-হযরত হাফসা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ফজর উদিত হবার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন নামায পড়তেন না।
{সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১৭১১,সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৫৮৭,মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২২৫,সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৪২২৭,সুনানে বায়হাকী,হাদীস নং-৯৭৯,আল মু’জামুল কাবীর হাদীস নং-৩৮৫}

فى موطا مالك- و حدثني عن مالك أنه بلغه أن عبد الله بن عمرفاتته ركعتا الفجر فقضاهما بعد أن طلعت الشمس( موطا مالك-النداء للصلاة، باب ما جاء في ركعتي الفجر،رقم-422

অনুবাদ-হযরত ইমাম মালেক রহ: বলেন, আমি জেনেছি যে, আবদুল্লাহ বিন ওমর রা: এর ফজরের দুই রাকাআত ছুটে গিয়েছিল। তিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করেন। (মুয়াত্তা মালিক-৪৫)

وفى جامع الترمذى- عن أبي هريرة قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من لم يصل ركعتي الفجر فليصلهما بعد ما تطلع الشمس (جامع الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم، باب ماجاء في إعادتهما بعد طلوع الشمس،رقم-423) 

 অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত যে, নবীজি সা: বলেন-যে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত (সময়মতো) পড়ল না সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে। ( জামে তিরমিজী-১/৯৬)
,


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...