আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
139 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (136 points)
আসসালামুআলাইকুম।

বাড়ি থেকে দূরে পড়াশুনার জন্য থাকলে যে হাতখরচ এর টাকা দেয় বাবামা তা থেকে দান সদকা করলে কি তা সহী হবে? নাকি আমার নিজের মালিকানার টাকা না, শুধু আমার  খরচের জন্য দিয়েছে এই টাকা জন্য সদকা করা যাবেনা? দয়া করে জানাবেন কনফিউশন এ আছি। আমি ধরেন হয়তো ওই টাকা খাবার কিনে নিতাম কিন্তু সদকা করে দিলাম ইত্যাদি?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

 অসহায় হতদরিদ্র প্রতিবেশী বা বন্ধু বান্ধবদের দান-সাদকা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও অশেষ সওয়াবের কাজ। তাছাড়া প্রতিবেশী হওয়ার কারণে সে দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়৷ কুরআন-হাদিসে এ ব্যাপারে অনেক উৎসাহিত করা হয়েছে। 

কিন্তু ঘর থেকে যৌথ মালিকানার কোনো কিছু দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুমতি লাগবে৷ বাবার হলে বাবার অনুমতি, ভাইয়ের হলে ভাইয়ের অনুমতি লাগবে৷ অনুমতি ছাড়া দেওয়া জায়েয হবে না৷

তবে যদি মামুলি কোনো সহযোগিতা হয়, যা প্রবল ধারণা করা যায় যে, ঘরের কর্তাব্যক্তি জানলেও নিষেধ করবেন না, তাহলে এমন সামান্য পরিমাণ দান-সহযেগিতা করা যাবে৷

রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-

أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ.

অর্থ: সাবধান! কারো সম্পদ তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং-২০৬৯৫, বাইহাকী হাদীস নং-৫১০৫)

অপর হাদীসে এসেছে-  

لا تُنْفِقُ الْمَرْأَةُ شَيْئًا مِنْ بَيْتِهَا إِلا بِإِذْنِ زَوْجِهَا. فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلا الطَّعَامَ؟ قَالَ: ذَاكَ أَفْضَلُ أَمْوَالِنَا.

অর্থ: কোনো নারী তার স্বামীর ঘর থেকে কোন অর্থ খরচ করবে না তার অনুমতি ছাড়া। রাসূলুল্লাহ কে জিজ্ঞেস করা হলো, খাদ্যদ্রব্যও নয়? তিনি বললেন: এটি তো আমাদের সবচেয়ে উত্তম সম্পদ। (সুনান আবু দাউদ হাদীস নং-৩৬৬৫)

তবে ঘরের কর্তাব্যক্তিদের উচিত মামুলি দান-সাদাকা করার জন্য ঘরের অন্যান্য সদস্যদের অনুমতি দিয়ে রাখা৷ এতে ঘরের কর্তাব্যক্তির যেমন সওয়াব হবে, ঠিক তদ্রূপ যিনি দান করলেন, তারও সমান সওয়াব হবে৷

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

ﻣَﻦْ ﺩَﻝَّ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻠَﻪُ ﻣِﺜْﻞُ ﺃَﺟْﺮِ ﻓَﺎﻋِﻠِﻪِ.

অর্থ: ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারী অনুরূপ সাওয়াব পাবে৷ (সহীহ মুসলিম হাদীস নং-১৮৯৩, তিরমিযী হাদীস নং-২৬৭০)

রাসূলুল্লাহ  ইরশাদ করেন-

إِذَا أَنْفَقَتِ المَرْأَةُ مِنْ طَعَامِ بَيْتِهَا غَيْرَ مُفْسِدَةٍ، كَانَ لَهَا أَجْرُهَا بِمَا أَنْفَقَتْ، وَلِزَوْجِهَا أَجْرُهُ بِمَا كَسَبَ، وَلِلْخَازِنِ مِثْلُ ذَلِكَ، لاَ يَنْقُصُ بَعْضُهُمْ أَجْرَ بَعْضٍ شَيْئًا

অর্থ: যদি কোন স্ত্রী ক্ষতি না করে বাড়ীর খাবার থেকে দান করে তাহলে সে তার দানের সওয়াব পাবে এবং তার স্বামী এ খাবার উপাজর্নের কারণে সওয়াব পাবে। আর সঞ্চয়কারীও সওয়াব পাবে। এদের কেউ অন্যের সওয়াবে কমতি করবে না। (সহিহ বুখারী হাদীস নং-১৪২৫, সহিহ মুসলিম হাদীস নং-১০২৪)

তবে ঘরের কর্তার পক্ষ থেকে যদি অসম্মতি থাকে, বা জানলে বিরক্ত বা মনক্ষুণ্ণ হবেন কিংবা নিষেধ করবেন এরকম সম্ভাবনা থাকে, তাহলে অনুমতি ছাড়া দান করা জায়েয হবে না৷

প্রিয় প্রশ্নকর্তা! অসহায় প্রতিবেশীর হক সম্পর্কে আপনার এই দায়িত্বসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই প্রশংসিত বিষয়৷ রাসূল প্রতিবেশীর খোঁজখবর নিতেন৷ প্রতিবেশীর খোঁজখবর না রাখা ব্যক্তি সম্পর্কে হাদীসে কঠোর হুঁশিয়ারি এসেছে৷

রাসূলুল্লাহ  ইরশাদ করেন-

لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ، وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ

অর্থ: সে মুমিন নয় যে পেট ভরে খায় অথচ পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে৷ (বায়হাকী হাদীস নং-২০১৬০, বুখারী আল-আদাবুল মুফরাদ হাদীস নং-১১১)

আপনি আপনার বাবা অথবা পরিবারের কর্তা যারা আছেন, তাদের বিষয়টি সুন্দর করে বুঝাবেন৷ কিছু দান-সাদাকা করার অনুমতি চাইবেন৷ আশা করি বুঝবেন৷ অনুমতি দিবেন৷ আল্লাহ আপনাকে সচ্ছলতা দান করুন, যাতে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজ সম্পদ থেকে অসহায় গরিবদের সাহায্য করতে পারেন৷

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনার পিতা মাতা আপনাকে হাত খরচ বা নাস্তা করার জন্য যেই টাকা পয়সা দেন, তা সাধারণত আপনাকে মালিক বানিয়ে দেন। সুতরাং আপনি চাইলে সেই টাকা থেকে কিছু দান সদকা করতে পারেন। এবং এতে কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...