بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ফতোয়ার বিধানঃ
যোগ্য মুফতীর জন্য ফতোয়া প্রদান ফরযে কেফায়া। সুতরাং অঞ্চল বিশেষে যদি একাধিক মুফতী বিদ্যমান থাকে তাহলে তাদের একজন এ দায়িত্ব পালন করলে অন্যরা এর দায়ভার থেকে মুক্তি পাবেন। তবে কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে ফতোয়া প্রদান করা ফরযে আইন বলে বিবেচিত। যথা,
১. কোথাও যদি কেবলমাত্র একজন মুফতী থাকেন তাহলে সে মুফতীর জন্য ফতোয়া প্রদান করা ফরযে আইন হয়ে পড়ে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয় যে সকল লোক আমার নাযিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হিদায়তকে গোপন করে যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলা অভিসম্পাত বর্ষণ করেন এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীরাও অভিসম্পাত বর্ষণ করেন।- সূরা বাকারা-১৫৯
২. ফতোয়া প্রার্থীর যদি দ্রুত ফতোয়ার প্রয়োজন হয় এবং ফতোয়া প্রদান না করা হলে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়া কিংবা আল্লাহর বিধান পরিত্যাগের প্রবল আশঙ্কা হয় তাহলে এক্ষেত্রে মুফতী মহোদয়ের জন্য ফতোয়া প্রদান করা ফরযে আইন।
৩. প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি ফিকহ ফতোয়ায় বিশেষজ্ঞ কোনো ব্যক্তিকে মুফতী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন তার উপর ফতোয়ার দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে ঈমানদারগণ আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো। নির্দেশ মান্য করো রাসূলের, তোমাদের মধ্যে যারা প্রশাসক তাদের।- সূরা নিসা ৫৯।
ইমাম নববী রহ. বলেন, ফতোয়া প্রার্থীদের ফতোয়া প্রদান করা ফরযে কেফায়া। আর যদি সেখানে কেবলমাত্র একজন মুফতী থাকেন তবে সেক্ষেত্রে ফতোয়া প্রদান ফরযে আইন হয়ে পড়ে।- আল্লামা জাস্টিস তাকি উসমানী, উসূলুল ইফতা ওয়া আদাবুহু ২৮৬, ইমাম নববী, আলমাজমু ভূমিকাংশ ১/২৭।
আল্লামা মাহাল্লী রহ. বলেন, তাত্ত্বিক প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করা, দীনি বিষয়ে সমস্যার সমাধান প্রদান করা, সংশয় সন্দেহ বিদূরিত করা, তাফসীর হাদীস এবং ফিকহ বিষয়ক শরঈ জ্ঞান অর্জন করা- এসবই ফরযে কিফায়া। এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে যেন বিচারক এবং মুফতী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। কারণ ধর্মীয় অঙ্গনে এ দু’টির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রাষ্ট্রের ভিতরে সর্বজন বিদিত যোগ্যমান নির্দিষ্ট সংখ্যক মুফতী থাকা আবশ্যক। যাতে করে মানুষ তাদের ধর্মীয় সমস্যাবলি নিয়ে তাদের শরণাপন্ন হতে পারে। নামায কসর করা যায় এই পরিমাণ দূরত্বের মাঝে একজন করে মুফতী থাকা আবশ্যক বলে মত দিয়েছেন শাফী মাসলাকের উলামায়ে কেরাম।- জালালুদ্দীন মাহাল্লী, শরহু মিনহাজিত তালিবীন ৬/৩২৪।
ফতোয়া জিজ্ঞাসার বিধান
জীবন ঘনিষ্ঠ বিষয়াদির বিধান সম্বন্ধে যে অবগত নয় তার জন্য ফতোয়া জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। কারণ শরীয়তের বিধান মতে ইমপ্লিমেন্টেশন তথা আমল করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য জরুরি।
ইমাম নববী রহ. বলেন, কোনো ব্যক্তি কোনো বিষয়ের সম্মুখীন হলে তার জন্য সে বিষয় সম্বন্ধে বিধান জেনে নেয়া আবশ্যক। সুতরাং তার এলাকায় যদি যোগ্যমান মুফতী না থাকে তবে সফর করে হলেও বিজ্ঞ মুফতীর শরণাপন্ন হওয়া তার জন্য আবশ্যক। আমাদের পূর্বসূরিদের অনেকেই একটি মাত্র মাসআলার জন্য রাত দিন সফর করতেন।- আল্লামা শাতিবী, আল মুওয়াফাকাত ৫/৩৭১, ইমাম নববী, আলমাজমু’১/৫৪।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. বাংলাদেশে প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ফাতাওয়া ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে অন্যতম ঃ আল কাওসার, আহলে হক মিডিয়া, আই ফাতাওয়া, আস্ক মাসাইল এবং জামিয়া রাহমানিয়া অনলাইন ফাতাওয়া সাইড। এছাড়া আরো কিছু ফাতাওয়া ওয়েবসাইট থাকতে পারে।
২. ফাতওয়া জানতে চাওয়ার উল্লেখযোগ্য একটি আদব হলো, ব্যাক্তিগত জীবনঘনিষ্ট কোন বিষয়ে জানতে হলে মুফতী সাহেবের নিকট নিজের নাম উল্ল্যেখ না করে উদাহরণ স্বরুপ তৃতীয় কোন ব্যক্তির নাম দিয়ে মাসআলা বা ফাতওয়া জেনে নেওয়া। যাতে মুফতি সাহেব বুঝতে না পারেন যে, প্রশ্নকৃত বিষয়টির সাথে আপনি সম্পৃক্ত। এই আদবটি রক্ষা করলে প্রশ্নেল্লিখিত প্রবলেম থাকবে না বলে আশা করি।