بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
মহানবী (সা.)
বিভিন্ন পোশাক পরিধান করতেন। তিনি জামা (কামিস) পছন্দ করতেন। তবে অগণিত হাদিসের আলোকে
দেখা যায়, ব্যবহারের আধিক্যের দিক থেকে ‘ইযার’ ও ‘রিদা’ বা সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদরই তিনি
সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতেন।
মহানবী (সা.)-এর
লুঙ্গি পরিধানের কথা অগণিত হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর ব্যবহৃত লুঙ্গির আয়তন সম্পর্কে
অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণনাগুলোর সূত্র নিয়ে কারো কারো আপত্তি আছে,
তবে সব বর্ণনা একত্র করা হলে সেখান
থেকে আমরা বিশেষ বিধান পাই।
এ বিষয়ে ইমাম
ওয়াকিদি (রহ.) দুর্বল সূত্রে বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর লুঙ্গি ছিল চার হাত এক বিঘত
লম্বা ও এক হাত এক বিঘত চওড়া। তিনি জুমা ও দুই ঈদের নামাজের জন্য তা পরিধান করতেন।
’ এতে প্রতীয়মান হয় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের ব্যবহৃত লুঙ্গি আমাদের লুঙ্গির
মতোই বা তার চেয়ে একটু কম লম্বা এবং আমাদের দেশে প্রচলিত লুঙ্গির চেয়ে অনেক কম চওড়া
ছিল।
★লুঙ্গি পরিধানের সুন্নাত তরীকা।
১। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লুঙ্গি সাড়ে চার হাত লম্বা এবং সাড়ে তিন হাত প্রশস্ত
ছিল। (শামায়েল)
২। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাদা রংয়ের লুঙ্গি ছিল,
তিনি সাদা কাপড় পছন্দ করতেন। (বুখারী
শরীফ ও মিশকাত শরীফ)
৩। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লুঙ্গির সামনের দিক কিছুটা ঝুলন্ত থাকতো এবং পিছনের
দিক একটু উঁচু থাকতো। (মাদারিযুন নবুওয়াত)
৪। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লুঙ্গি সর্বদা অর্ধনলা বরাবর রাখতেন। (আবু দাউদ শরীফ,
হাদীস নং-৩৫৬২)
৫। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেলাই ছাড়া লুঙ্গি পরিধান করতেন। হ্যাঁ সতর খুলে যাওয়ার
ভয় থাকলে সেলাই করা জায়েয।
৬। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নুতন লুঙ্গি তথা কাপড় পরিধান করতেন তখন জুমার
দিন হতে শুরু করতেন। (যাদুল মায়াদ)
৭। রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন লুঙ্গি বা কাপড় পরিধান করতেন তখন পোশাকের নাম
নিয়ে এ দোয়া পড়তেন। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-৩৫০৪, তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং-১৬৮৯)
اَللّٰهُمَّ
لَكَ الْحَمْدُ اَنْتَ كَسَوْتَنِيْهِ اَسْاَلُكَ مِنْ خَيْرِهٖ وَخَيْرِ مَا
صُنِعَ لَهٗ وَاَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهٖ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهٗ
# হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমে রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে-
ﻋﻦ ﻋﺒﺪﺍﻟﻠﻪ
ﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮ ﺭﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨْﻬُﻤﺎ "ﺃﻥَّ ﺭﺟُﻼً ﻣﺮَّ ﻭﺭﺳﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠَّﻢ - ﻳﺒﻮﻝُ ﻓﺴﻠَّﻢ ﻓَﻠَﻢْ ﻳﺮُﺩَّ ﻋﻠﻴﻪ"
রাসূলুল্লাহ
প্রস্রাব করতেছিলেন,এমতাবস্থায় একব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো।উক্ত ব্যক্তি
রাসূলুল্লাহ সাঃ কে সালাম করলো কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাঃ সালামের কোনো জবাব দেননি।(সহীহ
মমুসলিম-৩৭০)
মুহাজির ইবনে
কুনফুয রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে,
ﻭﻋﻦِ ﺍﻟﻤُﻬﺎﺟﺮ
ﺑﻦ ﻗﻨﻔﺬ ﺃﻧَّﻪ ﺃﺗَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒﻲَّ ﺻﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠَّﻢ ﻭﻫﻮ ﻳﺒﻮﻝ ﻓﺴﻠَّﻢ ﻋﻠﻴﻪِ ﻓﻠَﻢْ
ﻳَﺮُﺩَّ ﻋﻠﻴْﻪِ ﺣﺘَّﻰ ﺗﻮﺿَّﺄ، ﺛُﻢَّ ﺍﻋﺘَﺬَﺭَ ﺇﻟﻴْﻪِ ﻓﻘﺎﻝ : " ﺇﻧِّﻲ ﻛﺮِﻫْﺖُ ﺃﻥ
ﺃﺫْﻛُﺮَ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰَّ ﻭﺟﻞَّ ﺇﻻ ﻋﻠﻰ ﻃُﻬْﺮ ﺃﻭ ﻗﺎﻝَ : ﻋﻠﻰ ﻃﻬﺎﺭﺓ
একবার তিনি
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট আসলেন,এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রস্রাব করতেছিলেন।তিনি সালাম করলে
তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ ওজু করার পূর্ব পর্যন্ত তার সালামের কোনো জবাব দেননি।অতঃপর তাকে
কারণ বর্ণনা করে বললেন যে,অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহর যিকির করাকে আমি অপছন্দ করি।(সুনানে আবু-দাউদ-১৭)
ইমাম নববী
রাহ বলেন,
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨَّﻮﻭﻱُّ
ﺭﺣِﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ " ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ :" " ﻳُﻜْﺮَﻩُ ﺍﻟﺬِّﻛﺮُ ﻭﺍﻟﻜﻼﻡُ ﺣﺎﻝَ ﻗﻀﺎﺀِ
ﺍﻟﺤﺎﺟﺔ ﺳﻮﺍﺀٌ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﺼَّﺤﺮﺍﺀِ ﺃﻭ ﻓﻲ ﺍﻟﺒُﻨْﻴَﺎﻥ، ﻭﺳﻮﺍﺀٌ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺟَﻤﻴﻊ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭِ ﻭﺍﻟﻜﻼﻡ
ﺇﻻ ﻛﻼﻡ ﺍﻟﻀَّﺮﻭﺭﺓ، ﺣﺘَّﻰ ﻗﺎﻝ ﺑﻌﺾُ ﺃﺻﺤﺎﺑِﻨﺎ : ﺇﺫﺍ ﻋﻄِﺲَ ﻻ ﻳَﺤﻤَﺪ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ، ﻭﻻ
ﻳﺸﻤِّﺖُ ﻋﺎﻃِﺴًﺎ ﻭﻻ ﻳﺮﺩُّ ﺍﻟﺴَّﻼﻡ، ﻭﻻ ﻳُﺠﻴﺐ ﺍﻟﻤﺆﺫِّﻥ، ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﻤُﺴَﻠِّﻢ ﻣُﻘَﺼِّﺮًﺍ
ﻻ ﻳَﺴﺘﺤﻖُّ ﺟﻮﺍﺑًﺎ، ﻭﺍﻟﻜﻼﻡ ﺑِﻬﺬﺍ ﻛﻠِّﻪ ﻣﻜﺮﻭﻩٌ ﻛﺮﺍﻫﻴَﺔَ ﺗَﻨﺰﻳﻪٍ ﻭﻻ ﻳَﺤﺮﻡ، ﻓﺈﻥْ ﻋَﻄِﺲَ
ﻓَﺤَﻤِﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺑﻘَﻠْﺒِﻪ ﻭﻟﻢ ﻳُﺤﺮِّﻙ ﻟِﺴﺎﻧَﻪ ﻓﻼ ﺑﺄﺱ، ﻭﻛﺬﻟﻚ ﻳَﻔﻌَﻞُ ﺣﺎﻝَ ﺍﻟﺠِﻤﺎﻉ ."
বাথরুম করার
সময়ে আল্লাহর যিকির বা কথা বলা মাকরুহে তানযিহি। চায় বাথরুম ঘরে হোক বা বাহিরে খোলা
মাঠে হোক। এবং সব রকম কথাবার্তাই মাকরুহে তানযিহি। তবে প্রয়োজনের কথাবার্তা অবশ্যই
জায়েয। এমনকি আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেন, বাথরুমে থাকাবস্থায় কেউ হাঁচি দিলে,তখন সে 'আলহামদু-লিল্লাহ' বলতে পারবে না, এবং বাথরমে থাকাবস্থায় কেউ হাঁচির জবাবে 'ইয়ারহামুকাল্লাহ' ও বলতে পারবে না। সালামের জবাব দিতে পারবে না। আ'যানের জবাব দিতে পারবে না। এ সময় কথাবলা মাকরুহে
তানযিহি,হারাম নয়। তাই মনের ভিতর যিকিরকে ঠোট নাড়ারো ব্যতীত উপস্থিত করবে। সহবাসের বিষয়টাও
ঠিক এরকম। তথা সে সময়ও যিকির করা মাকরুহে তানযিহি।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনী ভাই/বোন!
১. রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের লুঙ্গির সামনের দিক কিছুটা ঝুলন্ত থাকতো এবং পিছনের
দিক একটু উঁচু থাকতো। স্বাভাবিক ভাবে সামনের দিকে একটু ঝুলিয়ে রেখে লুঙ্গি পরিধান করার
চেষ্টা করতে হবে। তবে সামনে ও পিছনের দিকে যদি সমান হয়ে যায় এতে গুনাহ হবে না। সুতরাং
উপরে উল্লেখিত পন্থায় আমল করাই শ্রেয় তবে এটিকে
কেন্দ্র করে অসওয়াসায় ভোগা মোটেও উচিত হবে না।
২. টয়লেটে
মনে মনে জিকির করা হলে গোনাহ হবে না। তবে মুখে উচ্চারণ করে বলা গোনাহের কাজ।