হযরত উসমান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল সা. কে বলতে শুনেছি, ‘যখন কোনো ব্যক্তিকে তোমরা প্রসংশা করতে শুনবে তার মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।’ [সহি মুসলিম, হাদিস নং ৩০০২]
হযরত মুয়াবিয়া রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমরা তোষামোদ থেকে বেঁচে থাকবে। কেননা তা হত্যাতুল্য।’ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭৪৩]
হযরত আদি ইবনে আরতা রহ. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুল সা. এর একজন সাহাবি ছিলেন। যখন কেউ তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করতেন, বলতেন, হে আল্লাহ! তারা যা বলছে সে বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ কর না, তারা যা জানে সে ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করুন, আমাদের তাদের ধারণা চেয়ে উত্তম মানুষ বানান। [জামিউ সহিহিল আজকার, পৃষ্ঠা-১৩]
★ইসলামি শরিয়তের বিভিন্ন বিষয়ে পণ্ডিতদের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত আরেকটি উপাধি ‘আল্লামা’। যার অর্থ মহাজ্ঞানী ও পণ্ডিত।
আরবি ইলম (علم) শব্দের অর্থ জ্ঞান। এখান থেকে এসেছে আলিম (عالم) বা জ্ঞানী। আলিম শব্দের মুবালাগা বা সুপারলেটিভ ডিগ্রি হচ্ছে আল্লামা(علامة); যার অর্থ অত্যন্ত জ্ঞানী বা মহাজ্ঞানী।
কামুসুল আলকাব গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘আল্লামা’ মুবালাগার সিগা (যা কোনো দোষ বা গুণের আধিক্য বোঝায়)।
সাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য এ শব্দ ব্যবহার করা শুদ্ধ নয়। যদি না ব্যক্তির জ্ঞানচর্চায় গভীর পাণ্ডিত্য ও স্বতন্ত্র অবস্থান না থাকে।
সাধারণ জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য এ শব্দ ব্যবহার করা শুদ্ধ নয়। যদি না ব্যক্তির জ্ঞানচর্চায় গভীর পাণ্ডিত্য ও স্বতন্ত্র অবস্থান না থাকে।
,
আরবে পরিমিত আকারে আল্লামা শব্দের ব্যবহার বহু পূর্বে শুরু হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে এ উপাধিটি প্রথম ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় ভারতীয় মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা কবি ও দার্শনিক মুহাম্মদ ইকবালের ব্যাপারে। তিনি ভারতবর্ষের প্রথম খ্যাতিমান ‘আল্লামা’।
★কোনো ব্যক্তি যদি কোনো শাস্ত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্য ও সাধারণভাবে তার স্বীকৃতি লাভ করেন তবেই তার ক্ষেত্রে আল্লামা শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
যেমন কেউ তাফসিরে পণ্ডিত তাকে বলা হয় আল্লামা ফিত তাফসির।’
‘তবে কারো পাণ্ডিত্য যদি সর্বজন বিধিত না হয় তবে তারা ‘তালিবুল ইলম’ বা জ্ঞানান্বেষী শব্দটি ব্যবহার করেন। এমনকি বিখ্যাত অধ্যাপকরা পর্যন্ত নিজেদের ‘তালিবুল ইলম’ পরিচয় দিতে সাচ্ছ্বন্দবোধ করেন।’
‘আল্লামা’ শব্দটি আরবী। যেটি আলেম শব্দের ইসমে মুবালাগা। অর্থাৎ বড় জ্ঞানী। যখন কোন আলেমের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হয় এবং তার ইলম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে আল্লামা বলা হয়। বিদ্বানদের মধ্যে এর প্রচলন রয়েছে।
(আল-ফারাবী, আছ-ছিহাহ ৫/১৯৯০; আর-রাযী, মুখতারুছ ছিহাহ ১/২১৭; আব্দুল কারীম খিযর, শারহুল আরবাঈন ২১৮ পৃ.)।
আল্লামা হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে,সেই শর্তসাপেক্ষে কাউকে আল্লামা বলা যেতে পারে।
ইসলামি গবেষকদের মতে,আল্লামা তাদেরকে বলা যায়,”যারা জামে’উল মানকুলাত -ওয়াল মা’কুলাত বিষয়ে অভিজ্ঞ অর্থাৎ উলূমে নাকলিয়া এবং উলূমে আকলিয়ায় সমানভাবে যিনি দক্ষ হবেন তিনিই আল্লামা”।
যেমন বলা হয়,আল্লামা তকী উসমানী দাঃবাঃ
আল্লামা রফি উসমানী দাঃবাঃ
ইলমে মানকুলাত বলতে ওই শাস্ত্রকে বোঝানো হয়, যা উক্তি ও বর্ণনানির্ভর, যার মধ্যে কিয়াস বা যুক্তি চলে না। যেমন- ইলমে আকাইদ,ইলমে ফারায়িয,ইলমে হাদীস,ইলমে নাহব,ইলমে সরফ,ইলমে রিজাল,ইলমে তারীখ,ইলমে বালাগাত,ইলমে লুগাত,ইত্যাদি।
আর ইলমে মা’কুলাত বলতে ওই শাস্ত্রকে বোঝানো হয়, যার মধ্যে কিয়াস, যুক্তি ও বুদ্ধি খাটাতে হয়, যেমন-ইলমে ফিকহ,ইলমে মানতিক, ইলমে কালাম,ইলমে হাইয়াত,ইলমে ফালসাফা ইত্যাদি।
শায়েখ আব্দুল মালেক সাহেব হাফিঃ আল্লামা সুলতান যওক নদভী সাহেব এর ক্ষেত্রে বলা যাবে।