আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
138 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (64 points)
আসসালামু আলাইকুম।

শায়খ স্বামী তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর সময় ছাড়া অন্য কোন সময় স্ত্রীকে তাকে ছুতে দেয় না, কাছে আসতে দেয় না। স্ত্রী‌ স্বামীর প্রতি তীব্র মানসিক ও শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করে। তাই সারাক্ষণ তার স্বামীকে ছুতে চায়, আদর করতে চায়, জড়িয়ে ধরতে চায়। তার এই স্বভাবের জন্য তার স্বামী তার উপর খুব বিরক্ত, খুব খারাপ ব্যবহার করে, গালিগালাজ করে। তার মতে বাজারের খারাপ মেয়েরা সারাক্ষণ এসব করতে চায়। কোন ভাল ভদ্র মেয়ে সারাক্ষণ এসব করতে চায় না। এসব করে সে তার স্বামীকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। স্ত্রী এজন্য মানসিকভাবে কষ্টে আছে। তাদের এই দ্বন্দ্ব কিভাবে সমাধান করা যায়?

১) এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর করনীয় কি?

২) এই পরিস্থিতিতে স্বামীর করনীয় কি?

1 Answer

0 votes
by (63,080 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/38511/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,

স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করাও স্বামীর দায়িত্ব। এর জন্য নির্ধারিত সময় ধার্য নেইবরং চাহিদাশারীরিক সক্ষমতা ইত্যাদি অনুপাতে করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন বিরত থাকাও নিষেধ। ওমর (রা.) একদা রাতের বেলা একটি ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেলেন যে জনৈক মহিলা বিরহের কবিতা পড়ছে। তখন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে তার স্বামী দীর্ঘদিন জিহাদে রতবাড়িতে আসছে না। তখন ওমর (রা.) হাফসা (রা.)-কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন যে নারী স্বামীবিহীন কত দিন ধৈর্য ধারণ করতে পারেহাফসা (রা.) লজ্জায় বলতে চাচ্ছিলেন না। তখন ওমর (রা.) বলেননিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা হক কথায় লজ্জা করেন না। তখন হাফসা (রা.) ইশারায় তিন বা চার মাসের কথা বলেন। অতঃপর ওমর (রা.) সেনাপতিদের নির্দেশ দিয়ে পাঠালেন যে চার মাসের বেশি যেন কোনো সৈন্যকে আটকে রাখা না হয়বরং অনূর্ধ্ব চার মাস পর পর তাদের ছুটি দেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকহাদিস : ১২৫৯৩)

 

উক্ত ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে স্বাভাবিকভাবে চার মাসের বেশি স্ত্রী সহবাস থেকে কখনো বিরত থাকবে না।

যেনা করলে যেমন গুনাহ হয় ঠিক তেমনি ভাবে স্ত্রী সহবাস করলেও সওয়াব হয়।

  স্ত্রী সহবাসের সময় যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিতসংক্ষেপে তা নিম্নে পেশ করা হল-

 

১- নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎকাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখারমুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা। এ মর্মে আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,

وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ

স্ত্রী সহবাসও সদকা। তারা বললেনইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদিস্ত্রী সহবাস এতেও কি সে সাওয়াব পাবেতিনি বললেনতোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার গুনাহ হবে নাঅনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে। (মুসলিম ২২০১)

 

২- সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বনআলিঙ্গনমর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে,

كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها

রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গনচুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)

 

৩- সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া–

بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

আল্লাহর নামে শুরু করছিহে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’

 

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনএরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)

 

৪- যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ.

  نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ

 (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপঅতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই আয়াতের তফসিরে বলেনقَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারোতবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে।’ ( দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)

 

৫- মলদ্বারে সহবাস হারাম। কেননারাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

لا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا

যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করেআল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। (ইবন মাজাহ ১৯২৩)

 

৬-ঋতুবতী অবস্থায় সহবাস হারাম। কেননারাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ

যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলোসে অবশ্যই মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহর কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ ৩৯০৪)

 

৭- একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছেরাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا وُضُوءًافإنه أنشط للعود

যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননাএটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)

তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননারাসূলুল্লাহ ﷺ  বলেছেন,  هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُ  এরূপ করা অধিকতর পবিত্রউত্তম ও উৎকৃষ্ট। ( আবু দাউদ ২১৯)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জড়িয়ে ধরাকিস করাহাত ধরা, শরীরে হেলান দেওয়াতার যৌন চাহিদা পূর্ণ করাও ইবাদত। এতে আল্লাহ তায়ালা অনেক অনেক সওয়াব দান করেন। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যে স্ত্রী তার স্বামীকে অনেক অনেক মুহাব্বত ও ভালোবাসে। এগুলো তো একজন সৎভালো ও দ্বীনদার স্ত্রীর অভ্যাস। তাই সেই স্বামীকে বুঝাতে হবে যে, ‘আপনি তাকে এসব করতে নিষেধ করবেন না। বরং আপনার স্ত্রীকে আপনার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিবেন। এতে দুজনেরই অনেক অনেক সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ।

 

২. এটিকে নিছক দুনিয়াবী কাজ মনে করা ভুল। সুতরাং স্ত্রীর শারীরিক চাহিদা পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব । অন্যান্য ইবাদতের প্রতি ইসলাম যেভাবে উৎসাহিত করে ঠিক তেমনিভাবে স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক চাহিদা পূরণ অর্থাৎ একে অপরকে জড়িয়ে ধরা, কিস করাহাত ধরাশরীরে হেলান দেওয়ারও নির্দেশ প্রদাণ করে। স্ত্রীকে কিস করা, জড়িয়ে ধরাহেলান দেওয়াকে সময় নষ্ট বা খারাপ মনে করে তা থেকে বিরত থাকা মোটেও উচিত না। হাদীস শরীফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গনচুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)


. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে স্ত্রী তার আপন জায়গায় ঠিক আছ  এগুলো তো একজন সৎভালো ও দ্বীনদার স্ত্রীর অভ্যাস। তবে স্বামীর কাজের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। যাতে খুব বেশী ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে স্বামীর অফিসে যাওয়া, অন্যন্য কাজ কর্মে ব্যাঘাত না ঘটে।


. সুতরাং স্বামীর জন্য উচিত হলো  স্ত্রীকে নিষেধ না করে বরং স্ত্রীকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভালোবাসা প্রকাশ করার সুযোগ করে দিবে এবং বিরক্ত বোধ করবে নাআর এগুলোর দ্বারা  স্বামী স্ত্রীর সওয়াবও হবে


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...