আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
145 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (3 points)

অনেকে বলে, বাবার উপার্জন এর অর্ধেকের বেশি যদি হালাল হয় তাহলে সন্তান বাবার উপার্জন থেকে ভক্ষণ করতে পারবে।
১. এটা কি শুধু হানাফি মাযহাবেই?
২. ফকিহ রা এর দলিল কোত্থেকে নিয়েছেন?
৩. যদি এই মতটি গ্রহণযোগ্য হয়,তাহলে নিম্নোক্ত লিখাটি পড়ে দেখেন, আমি কি বাবার উপার্জন থেকে নির্দ্বিধায় নিতে পারবো?

করোনার আগের অবস্থাঃ

আমার বাবা কত বেতন পান কখনোই সন্তানদের কে বলেন না।
করোনার আগ পর্যন্ত ব্যাংকে ৮০ লাখ টাকা ছিলো।সেগুলো দিয়ে জায়গা জমি কিনে ফেলেন।
এই করোনায় বাবা চাকরি হারান।

বর্তমান অবস্থা-

বাবা এখন ছোটোখাটো ব্যবসা করছেন।

যেহেতু পূর্বেও ঘুষ সুদ কে খারাপ কিছু ভাবতেন না,এখনো হয়তো কম পরিমাণে হলে ঘুষ বা ব্যংকে টাকা রাখতে পারেন বলে আমার ধারণা কিংবা ব্যাংকে টাকা না ও থাকতে পারে।

অর্থাৎ বাবার ইনকাম সোর্স টা আমার কাছে স্বচ্ছ নয়।
চাকরি হারানোর পর থেকে আর্থিক ভাবে আমরা সংকটে রয়েছি।
বর্তমানে রাগের সময় প্রায়ই বলেন,প্রতি মাস গেলে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, প্রতি মাসে আমার আম্মু (স্কুলটিচার) আব্বুর হাতে বিশ হাজার টাকা তুলে দেন।
আমাদের দোকান(ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত) ভাড়া আসে আট হাজার টাকা।
(যেহেতু দোকানীর আর্থিকঅবস্থা খারাপ, প্রতিমাসে আট হাজার দেন কি না,নাকি কয়েকমাস পর পর দেন সেটাও সিউর না।)

এই ইনফোগুলো উল্লেখ করার কারণ,

আব্বুর ভাষ্য অনুযায়ী বর্তমানে মাসিক খরচ ৫০০০০ টাকা। (উনার ভাষ্য ছাড়া আর দলীল নাই)

আম্মুর মাষ্টারির টাকা ২০০০০ টাকা।দোকানভাড়া যেহেতু প্রতিমাসে দেন না, তাই ৮ হাজার টাকা বাদ রাখলাম।

এখন আমার বিধান কি?


আমি এডমিশন পরিক্ষার্থী। এক দেড় মাস হাতে আছে। আমি এখন কি করতে পারি?

(কোনো একটি কারণে আমি টিউশনি করতেও অক্ষম।)

আমি উচ্চতায় ৬ ফুট ২ ইঞ্চি।
কিন্তু অত্যন্ত চিকন। মানসিক ভাবে ভালো অবস্থায় নেই,পড়াশোনা ঠিকঠাক করতে পারি না।

খাবার অনেক বেশি খাওয়া দরকার।
কিন্তু অনেকে বলেন, এমতাবস্থায় প্রয়োজন পরিমাণ খেতে হবে।

এখন আমার করণীয় কি?



<!--/data/user/0/com.samsung.android.app.notes/files/clipdata/clipdata_220515_202541_389.sdoc-->

1 Answer

0 votes
by (560,460 points)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ٥١] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ١٧٢] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ "

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”(সহীহ মুসলিম-১০১৫)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
শরীয়ত উপার্জন সক্ষম বালেগ পুরুষ এর উপর আরো অনেকের লালন পালনের দায়িত্ব দিয়েছে।যেমন, উপার্জন অক্ষম মাতা-পিতা, নাবালিগ ছেলে,মেয়ে,স্ত্রী সহ অনেকের ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে একজন পুরুষের উপর।
এখন অভিবাবকের সম্পদ হারাম হলে, সেই সম্পদ থেকে খরছ না করে নিজ মাল থেকে খরছ করাই উচিৎ,যদি নিজের সম্পদ থাকে।তবে বালেগ ছেলের উপর ওয়াজিব যে,তার সম্পদ না থাকলেও সে হালাল তরিক্বায় তার জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করবে।হ্যা উপার্জন অক্ষম ব্যক্তির জন্য অভিবাবকের  হারাম মাল থেকে তাওবাহ-ইস্তেগফারেরর সাথে প্রয়োজন পর্যন্ত খোরাকি গ্রহণ করা বৈধ রয়েছে।কেননা এই উপার্জন অক্ষম ব্যক্তিগণকে ভরণপোষণ করা তার একান্ত দায়িত্ব ছিলো।সুতরাং গোনাহ ঐ অভিবাবকের ই হবে।(বিস্তারিত জানতে দেখুন-ফাতাওয়ায়ে উসমানী-৩/১২৭)

আরো জানুনঃ

مسألة إذا كان الحرام أو الشبهة في يد أبويه فليمتنع عن مؤاكلتهما فإن كانا يسخطان فلا يوافقهما على الحرام المحض بل ينهاهما فلا طاعة لمخلوق في معصية الله تعالى فإن كان شبهة وكان امتناعه للورع فهذا قد عارضه أن الورع طلب رضاهما بل هو واجب فليتلطف في الامتناع فإن لم يقدر فليوافق وليقلل الأكل بأن يصغر اللقمة ويطيل المضغ ولا يتوسع فإن ذلك عدوان (احياء علوم الدين- 2/147)

যার সারমর্ম হলো যদি বাবার উপার্জন হারাম হয়,তাহলে সেখান থেকে খাবার গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
তারা যদি জোড় করে, তাহলেও তাদের কথা অনুযায়ী খাওয়া যাবেনা। কম খেতে হবে,ছোট ছোট লোকমা বানিয়ে তাদের দেখানোর জন্য শুধু খাবে,,,

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
শরীয়তে বালেগ ছেলের ভরনপোষণ এর কোনো দায়িত্ব বাবার উপর ওয়াজিব করে দেয়া হয়নি।  
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত আপনার ভরনপোষণ এর দায়িত্ব আপনার বাবার উপর যেহেতু ওয়াজিব নয়,তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যে আপনার বাবা হতে খরচ নিচ্ছেন,খানা পিনা করছেন,সেটি হাদিয়া। 
আর হারাম সম্পদ হতে হাদিয়ার ক্ষেত্রে বিধান হলোঃ-  

فى الفتاوى الهندية- أهدى إلى رجل شيئا أو أضافه إن  كان غالب ماله من الحلال فلا بأس إلا أن يعلم بأنه حرام ، فإن كان الغالب هو الحرام ينبغي أن لا يقبل الهدية ، ولا يأكل الطعام إلا أن يخبره بأنه حلال ورثته أو استقرضته من رجل ، كذا في الينابيع

যদি এমন কেউ কাউকে কিছু হাদিয়া দেয়,যার অধিকাংশ সম্পত্তি হালাল,তাহলে সেই মালকে গ্রহণ করা নাজায়েয নয়।তবে যদি সে জানতে পারে যে,দাতা হারাম থেকে দিচ্ছে তাহলে এমতাবস্থায় সেটা জায়েয হবে না।আর যদি তার মালের অধিকাংশই হারাম থাকে,তাহলে এমন ব্যক্তির হাদিয়া গ্রহণ জায়েয হবে না।এমন ব্যক্তির ওখানে আহার করাও যাবে না, যতক্ষণ না সে হালাল খাবারের সংবাদ দিচ্ছে বা এটা বলছে যে,সে ধার করে নিয়ে এসে আহার করাচ্ছে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৪২)

আরো জানুনঃ 

★সুতরাং বাবার অধিকাংশ ইনকাম হালাল হলে বালেগ ছেলে সন্তান সেখান থেকে ভক্ষন করতে পারবে।
জানা মতে কোনো মাযহাবে এর খেলাফ নেই।

প্রশ্নের তথ্য মতে আপনার বাব হতে আপনি যেই পরিমান খাবার ভক্ষন করেন,ও খরচাপাতি নেন,তার অধিকাংশই হালাল।
বরং এখানে হারামের মিশ্রণ খুবই সামান্য।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার এভাবে ভরনপোষণ নিতে ও খরচাপাতি নিতে কোনো সমস্যা নেই।
প্রয়োজন পরিমান নয়,আপনি চাইলে বেশিও খেতে পারবেন।        


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...