উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) সে পুরোপুরি চেষ্টা চালিয়ে যাবে,কাহারো মাধ্যমে কাজটি করানো যায় কিনা।
যদি একান্ত প্রয়োজন হয়,কাহারী মাধ্যমে প্রয়োজন পূরন করা না যায়,তাহলে সেক্ষেত্রে যদি গোনাহে লিপ্ত হবার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে তার জন্য প্রয়োজনে বাহিরে যাওয়া জায়েজ আছে।
সেক্ষেত্রে পুরোপুরি পর্দা করে যেতে হবে,দৃষ্টি অবনত রাখতে হবে।
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (30) وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ الخ
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। {সূরা নূর-৩০,৩১}
,
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}
বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।
প্রয়োজনে পরপুরুষদের সাথে কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলতে হবে,তাহলে জায়েজ আছে।
,
(০২)
যাতায়াতে যে মুখোমুখি দুই সিট ওয়ালা টমটম আছে,।ওরকম টমটমে নারী পুরুষ এক সাথে যাতায়াত না করাটাই উত্তম।
কারন এক্ষেত্রে মুখোমুখি বসতে হয়।
,
তারপরেও কোনো উপায় না থাকলে প্রয়োজন বশত ফেতনার আশংকা না থাকলে মুখোমুখি হয়ে বসা যাবে, এতে গুনাহ্ হবেনা।
কারন এখানে তো আরো লোকজন আছে,একাকি নয়।
তাই ফেতনার আশংকা তেমন নেই।
★হাদীস শরীফে পর নারী পুরুষদের একাকীত্ব হওয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
عن ابن عمر قال : خطبنا عمر بالجابية الخ ألا لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان
হযরত ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়। {সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৫৮৬}
عن عقبة بن عامر أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ( إياكم والدخول على النساء ) . فقال رجل من الأنصار يا رسول الله أفرأيت الحمو ؟ قال ( الحمو الموت
হযরত ওকবা বিন আমের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“তোমরা মহিলাদের নিকট [একাকি] প্রবেশ করা থেকে বিরত থাক। আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলল-‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবরের ব্যাপারে কি নির্দেশ?’ তিনি বললেন-‘দেবরতো মৃত্যুতুল্য’”। {সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৪৯৩৪, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৫৮০৩, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৭৩৬, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-১৩২৯৬, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১১৭১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৬৪২, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৯২১৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৮৮, মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীস নং-৪০৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৩৯৬, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৯৫৪}
ওরকম টমটমে লোকাল যাতায়াত করা নারীদের জন্য উচিত নয়, কারন এক্ষেত্রে পুরুষের গায়ে না লাগলেও মুখোমুখি বসাটা নিকটতর একেবারেই।
তবে প্রয়োজন বশত ফেতনার আশংকা না থাকে,এবং পুরোপুরি পর্দার বিধান মানে,তাহলে জায়েজ আছে।
,
(০৩)
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى
হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে বিনম্র হয়ে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে পৌরষত্ব আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে। {সূরা আহযাব-৩২}
★পরপুরুষের সঙ্গে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলার সময় কণ্ঠস্বর কঠোর রাখবে, সুমিষ্ট মোলায়েম স্বরে নয়l হযরত আয়েশা (রা) এর নিকট মাসয়ালা বা হাদিসের প্রয়োজনে অন্যান্য সাহাবীগণ আসলে, তিনি মুখের ওপর হাত রেখে কণ্ঠ বিকৃত করে পর্দার আড়ালে থেকে কথা বলতেন যেন কারো অন্তর ব্যাধিগ্রস্থ না হয় l -তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬
,
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মুখের ওপর হাত রেখে কণ্ঠ বিকৃত করে পর্দার আড়ালে থেকে কথা যেতে পারে।
,
(০৪) হারাম সম্পর্কে লিপ্ত থাকার সময় কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে বিয়ে করবে বলে ওয়াদা করে,এই ওয়াদা করাটাই যেহেতু নাজায়েজ।
তাই তা পূরন করা জরুরী নয়।
,
এই ওয়াদা পূরন না করলে কোনো গুনাহ হবেনা।
,