উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) আমল বিনষ্ট হওয়ার কিছু আছে যা সমূলে শেষ করে দেয়।
যেমন শিরক, কুফরি, ধর্মত্যাগ, বিশ্বাসে বৃহত্তম মুনাফেকি ও তাকদিরে অবিশ্বাস ইত্যাদি।
এগুলো পূর্বের যাবতীয় আমল রববাদ করে দেয়। আবার কিছু আছে আংশিক বিনাশ করে। যেসবে ঈমান চলে যায় না; তবে সংশ্লিষ্ট ইবাদতকে নষ্ট করে দেয়। এসবও আবার কখনও সমূলে বিনাশের দিকে নিয়ে যায়। (আল্লাহর কাছে পানাহ চাই)।
প্রথম প্রকারের মধ্য হতে কিছু এখানে উল্লেখ করা হলোঃ
যেমন
★ কুফরি ও শিরক। আল্লাহ তায়ালা কুফরি ও কাফের সম্পর্কে বলেছেন ‘যে ব্যক্তি ঈমানের বিষয় অবিশ্বাস করে, তার শ্রম বিফলে যাবে এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সূরা মায়িদা : ৫)।
আল্লাহ আরও বলেন‘যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি বিন্দুমাত্র কমতি করা হয় না। এরাই হলো সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে, আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হলো।’ (সূরা হুদ : ১৫-১৬)।
শিরক বিষয়ে তিনি এরশাদ করেন ‘মুশরিকরা যোগ্যতা রাখে না আল্লাহর মসজিদ আবাদ করার, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরির স্বীকৃতি দিচ্ছে। এদের আমল বরবাদ হবে এবং এরা আগুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে।’ (সূরা তওবা : ১৭)।
আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) কে সম্বোধন করে আল্লাহ যা বলছেন, তা খেয়াল করুন ‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরিক স্থির করেন; তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন।’ (সূরা জুমার : ৬৫)।
মুহাম্মদ (সা.) তো শিরক থেকে কত দূরে। তাঁর ক্ষেত্রে শিরক করা তো কল্পনারও অতীত। তারপরও এ ছিল আল্লাহর বড় হুমকি। শিরক করা বা তার কাছে ঘেঁষা থেকেও এ বিশাল সতর্কবার্তা।
আল্লাহ তায়ালা নবীদের আলোচনায়, যার মধ্যে বিশিষ্টরাও ছিলেন অন্যত্র বলেন ‘তারা যদি অংশীস্থাপন (শিরক) করত, তাহলে তাদের কৃতকর্ম নিষ্ফল হতো।’ (সূরা আনআম : ৮৮)।
নবীদের ক্ষেত্রে শিরক করা ছিল অসম্ভব, বরং কল্পনাতীত বিষয়। তবু এ ছিল শিরক করা, শিরকে বা এর মাধ্যম কিংবা উপায়-উপকরণের কাছে যাওয়া থেকে বড় ধমকি দেওয়া হয়েছে। তাওহিদ রক্ষা, ইবাদতে একমাত্র আল্লাহকেই একক রাখা এবং শরিক না করে শুধু তাঁর জন্য যাবতীয় ইবাদত সীমিত রাখার ক্ষেত্রে বড় সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
★আমল বিনাশী দ্বিতীয় কাজ রিদ্দত বা ধর্মত্যাগ তথা মুরতাদ হয়ে যাওয়া : (আল্লাহর কাছে এ থেকেও পানাহ চাই)। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন ‘তোমাদের মধ্যে যারা নিজের দ্বীন থেকে ফিরে দাঁড়াবে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে। আর তারাই হলো দোজখবাসী। তাতে তারা চিরকাল বাস করবে।’ (সূরা বাকারা : ২১৭)।
★আমল বিনাশী তৃতীয় কাজ তকদির তথা ভাগ্যলিপিকে অস্বীকার করা : জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন ‘তোমার কাছে যদি ওহুদ পরিমাণ কিংবা ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনা থাকে আর তা পুরোটাই তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করে দাও, আল্লাহ সেটি কবুল করবেন না, যে পর্যন্ত তুমি তকদিরে পরিপূর্ণ ঈমান আনয়ন কর।’ (বর্ণনায় আহমাদ ও ইবনে মাজা)।
তকদিরে অবিশ্বাসীদের ব্যাপারে আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বলেন ‘তুমি যখন তকদির অস্বীকারকারীদের সাক্ষাৎ পাবে তাদের বলবে, আমি তাদের থেকে মুক্ত এবং তারাও আমার থেকে মুক্ত। আর আমি যে সত্তার নামে শপথ করি, তাঁর কসম, তাদের (তকদির অস্বীকারকারীদের) কারও কাছে যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও থাকে, অতঃপর তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ওই দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তকদিরের প্রতি ঈমান আনে।’ (বর্ণনায় মুসলিম)।
★আমল বিনাশী চতুর্থ কাজ আল্লাহর রাসুলের শানে বেয়াদবি বা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা : কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘নিশ্চয়ই যারা কাফের এবং আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখে এবং নিজেদের জন্য সৎপথ ব্যক্ত হওয়ার পর রাসুলের বিরোধিতা করে, তারা আল্লাহর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না এবং তিনি ব্যর্থ করে দেবেন তাদের কর্মগুলোকে।’ (সূরা মুহাম্মদ : ৩২)।
আল্লাহর রাসুল (সা.) এর সঙ্গে বেয়াদবির এক রূপ তাঁর সামনে আওয়াজ উঁচু করা। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এ ব্যাপারে বলেন ‘হে মোমিনরা! তোমরা নবীর কণ্ঠস্বরের ওপর তোমাদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সঙ্গে যেরূপ উঁচুস্বরে কথা বল, তাঁর সঙ্গে সেরূপ উঁচুস্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তোমরা টেরও পাবে না।’ (সূরা হুজুরাত : ২)।
শরিয়তবিদরা উল্লেখ করেছেন ‘রাসুল (সা.) এর মৃত্যুর পরও এ বিধান বলবৎ রয়েছে। সুতরাং মুসলিম যখন তাঁর মসজিদে বা তাঁর কবর জিয়ারতে যায়, কর্তব্য হবে সেখানে নিজের স্বর নিচু রাখা। মসজিদে নববিতে অবস্থানকালে আলাপ বা তর্কে লিপ্ত হলে এ বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখা।
★আমল বিনাশী পঞ্চম কাজ আল্লাহর দ্বীন বা দ্বীনদারদের নিয়ে বিদ্রুপ করা : আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর; তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সঙ্গে, তাঁর হুকুম-আহকামের সঙ্গে এবং তাঁর রাসুলের সঙ্গে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দিইও; তবে অবশ্য কিছু লোককে আজাবও দেব। কারণ তারা ছিল গোনাহগার।’ (সূরা তওবা : ৬৫-৬৬)।
দ্বীনের কোনো বিষয় অপছন্দ বা ঘৃণা করাও সমপর্যায়ের অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাজিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব আল্লাহ তাদের কর্ম বিফল করে দেবেন।’ (সূরা মুহাম্মদ : ৯)।
এ এক বড় অধ্যায়। প্রতিটি মুসলিমের উচিত এ থেকে সতর্ক থাকা। বিশেষ করে যখন শরিয়তের কোনো বিধান নিজের প্রবৃত্তি বা অভিরুচির বাইরে হয় কিংবা অন্তরে এ সম্পর্কে অপছন্দ অনুভব করে। এসব ক্ষেত্রেই সব আমল বরবাদ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। এজন্যই মুসলমানের উচিত এ দোয়া পছন্দ করা এবং বারবার পড়তে থাকা ‘রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা ওয়াবিল ইসলামি দিনা ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা।’ অর্থাৎ আল্লাহ আমার প্রভু, ইসলাম আমার ধর্ম এবং মুহাম্মদ (সা.) আমার নবী হওয়ায় আমি সন্তুষ্ট আছি। এ দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়বেন।
★আমল বিনাশী ষষ্ঠ কাজ গণক, জাদুকর ও জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া : সহিহ হাদিসে মুহাম্মদ (সা.) বলেন ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে গেল, তারপর সে যা বলে, তা বিশ্বাস করল সে মুহাম্মদ (সা.) আনীত দ্বীনকে অস্বীকার করল।’ (বর্ণনায় আহমাদ)।
অন্য হাদিসে এসেছে ‘যে ব্যক্তি গণকের কাছে গিয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করল, ৭০ রাত পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।’ (বর্ণনায় মুসলিম)। শরিয়তবিদদের মত হলো, গণকের কাছে গেলে ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না। আর তাদের বক্তব্য বিশ্বাস করলে সেটা তাকে কুফরিতে নিমজ্জিত করবে। (আল্লাহর কাছে পানাহ চাই)।
এছাড়া আরও নানা রকম আমল বরবাদকারী বিষয় রয়েছে। যেগুলো অনেক মারাত্মক গুনাহ।
তবে এর দ্বারা তার সারাজীবনের নেক আমল বরবাদ হবেনা। তবে সংশ্লিষ্ট আমল
বরবাদ হয়ে যাবে।
যেমনঃ কোনো মুসলিম ভাই সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কসম দিয়ে বলা, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, কোনো ত্রুটি বা সগিরা গোনাহকারীকে তাচ্ছিল্য করা বা ছোট ভাবা, রিয়া বা লৌকিকতা দেখানো এবং বাহ্যিকভাবে ভালো থেকে গোপনে পাপে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি।
,
★উল্লেখ্য যে যেই কাজগুলো সমূলে আমল বিনষ্ট করে দেয়,এগুলো সবই কুফরি, এগুলো করার দ্বারা সে কাফের হয়ে যায়।
তাই সে তওবা করে মুসলমান হলে তাকে মুরাতাদ ব্যাক্তি মুসলমান হয়ে যাওয়ার মাসয়ালা হিসেবে ধরা হবে।
সেই হিসেবে তার পূর্বের নেক আমল ফিরে পাবে কিনা,এই ব্যাপারে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
খালেছ দিলে তওবা করলে আশা করা যায়,যে আল্লাহ তায়ালা তার পূর্বে নেক আমল ফিরিয়ে দিবেন।
,
(০২) ""হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেছেন, আমি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের সময় বৃষ্টির ফোটাসমুহ গুনতে পারি কিন্তু যৌবনকালে ইবাদাতকারীর সওয়াবসমুহ গুনে শেষ করতে পারি না""
এই মর্মে৷ কোনো হাদীস খুজে পাওয়া যায়নি।