উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
জুমুআর দিন সুরা কাহফ ; রাতে শোয়ার আগে সুরা ইখলাস,ফালাক্ব,ও নাস ; সুরা মুলক ; সুরা বাক্বারার শেষ ২ আয়াত - এগুলো উচু গলায় তিলাওয়াত করা জরুরি নয়।
আপনার ইচ্ছা,চাইলে উচু আওয়াজেও পড়তে পারেন,চাইলে সালাতের সিররী কিরাআতের মত নিঃশব্দেও পড়তে পারেন।
কোনো সমস্যা নেই।
কুরআন কারীম বর্ণিত আছেঃ
বলে দাও, তোমরা আল্লাহ বা রহমান যে নামেই ডাকো না কেন, সব সুন্দর নাম তো তাঁরই। নামাজে তোমাদের স্বর খুব উচ্চ বা অতিশয় ক্ষীণ করো না, বরং এ দুইয়ের মধ্যপন্থা অবলম্বন করো। [সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১১০
,
সিররি কিরাআতের অর্থ বুঝতে অনেকে ভুল করে,অনেকে নামাজে মনে মনে কিরাআত পড়ে,তাই আস্তে আওয়াজে কিরাআত পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট করছিঃ-
যে সমস্ত নামাযে আস্তে কেরাত পড়া হয়, সে সকল নামাযে অনেককে দেখা যায়, মুখ-ঠোঁট না নেড়ে মনে মনে সূরা কেরাত পড়েন। হয়তো তারা এই ভুল ধারণা করে আছেন যে, আস্তে আস্তে কেরাত পড়া মানে মনে মনে পড়া।
এটি ঠিক নয়। কারণ যে সকল নামাযে কেরাত আস্তে পড়তে বলা হয়েছে, তার অর্থ হল, নিচু স্বরে তিলাওয়াত করা। আর এতো খুবই সহজ কথা যে, মনে মনে পড়া কোনোক্রমেই নিচু স্বরে পড়া নয়।
ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদি থেকেও বোঝা যায় যে, আস্তে কেরাত পড়ার সর্বোত্তম পদ্ধতি হল এমনভাবে পড়া, যেন সে নিজে শুনতে পায়। আর সর্বনিম্ন এতটুকু তো অবশ্যই জরুরি যে, সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করা হবে এবং ঠোঁট-জিহবার নড়াচড়া দেখা যাবে।
,
একটি হাদীসে আছে যে, যোহর ও আসর নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কুরআন পড়তেন, তখন কোনো কোনো আয়াত সাহাবায়ে কেরামও কখনো কখনো শুনতে পেতেন। হযরত আবু মামার বলেন, আমরা হযরত খাববাব রা.কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যোহর ও আসর নামাযে কুরআন পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কীভাবে বুঝতেন? তিনি বললেন, ‘বিজতিরাবি লিহয়াতিহী’-তাঁর দাঁড়ি মোবারক নড়াচড়া দ্বারা। (সহীহ বুখারী-ফাতহুল বারী ২/২৮৪-২৮৭)
অতএব কেরাত পড়ার সময় জিহবা ও ঠোঁট ব্যবহার করে মাখরাজ থেকে সহীহ-শুদ্ধভাবে হরফ উচ্চারণ করতে হবে। অন্যথায় শুধু মনে মনে পড়ার দ্বারা কেরাত আদায় হবে না।
,
হাদীসটির পুরো রুপঃ
حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ حَفْصٍ، قَالَ حَدَّثَنَا أَبِي قَالَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ، عَنْ أَبِي مَعْمَرٍ، قَالَ سَأَلْنَا خَبَّابًا أَكَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْرَأُ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ قَالَ نَعَمْ. قُلْنَا بِأَىِّ شَىْءٍ كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ قَالَ بِاضْطِرَابِ لِحْيَتِهِ.
আবূ মা‘মার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা খাববাব (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি যুহর ও ‘আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা প্রশ্ন করলাম, আপনারা কী করে তা বুঝতেন? তিনি বললেন, তাঁর দাড়ির নড়াচড়ায়। (বুখারী শরীফ ৭৪৬, (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৭২৪)
,
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "তিনি প্রত্যেক নামাযে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাযগুলোতে আমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যে সব নামাযে আমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৮) ও সহিহ মুসলিম (৩৯৬)]
,
আস্তে আস্তে কিরাআতের নামাজে সুরা সমূহ মুখে উচ্চারণ করে তিলাওয়াত করতে হবে; মুখ বন্ধ করে মনে মনে পড়া যাবে না। এমনভাবে পড়তে হবে যাতে নিজ কানে আওয়াজ আসে।
কুরআনের অক্ষর, বাক্য, আয়াতগুলো বিশুদ্ধ উচ্চারণ হতে হবে। তিলাওয়াত ভুল হলে গোনাহগার হতে হবে।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যখন তেলাওয়াত করবেন,তখন আওয়াজটা আপনি নিজ কানে শুনতে পান, এতটুকু জোরে পড়াই যথেষ্ট।
,