বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
বীমা সম্পর্কে কয়েকটি ফাতাওয়া গ্রন্থের ভাষ্য-
আল্লামা শামীর ফাতাওয়া
والذي يظهر لي: أنه لا يحل للتاجر أخذ بدل الهالك من ماله لأن هذا التزام ما لا يلزم.
অর্থঃ- (বিমার ব্যাপারে উত্তর হল) সমুদ্রপথে মাল ধ্বংস হলে ক্ষতিপূরণ নেওয়াটা ব্যবসায়ীদের জন্যে জায়েয হবে না। কেননা এটি 'এমন বস্তুকে আবশ্যক করে নেওয়া যা মূলতঃ আবশ্যক নয়' সেই মাসয়ালার অন্তর্ভুক্ত।
মুফতিয়ে আযম পাকিস্তান আল্লামা শফী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ-
একথা তো সুস্পষ্ট যে, শুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করার দ্বারা কোন লেনদেনের বাস্তবতা পরিবর্তন হয় না। বিমা কোম্পানি থেকে যে লাভ প্রদান করা হয় তা নিঃসন্দেহে সুদের অন্তর্ভুক্ত।(জাওয়াহিরুল ফিকহ - ২/১৮১)
বুহুস ফি ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছারা তে বর্ণিত রয়েছে,
اما بعد! فقد اتفق معظم العلماء المعاصرين والمجامع والندوات الفقهية علي حرمة التأمين التجاري التقليدي لما يشمل عليه من الغرر والقمار والربا
﴿بحوث في قضايا فقهية معاصرة - ٢/١٨٧﴾
অর্থঃ- বর্তমান যুগের আলেমদের বড় অংশ ফিকহী বোর্ড ও সেমিনারে কমার্শিয়াল বিমা হারাম হওয়ার উপর একমত পোষণ করেছেন। যেহেতু এ জাতীয় বিমার মধ্যে ধোঁকাবাজি, জুয়া ও সুদের উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে।(বুহুস ফি ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছার, ২/১৮৭)
ফাতাওয়ায়ে ইসলামিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
يجوز للانسان أن يساهم في هذه الشركات اذا كانت لا تتعامل بالربا فان كان تعاملها بالربا فلايجوز وذاك لثبوت تحريم التعامل بالربا في الكتاب و السنة و الاجماع وكذالك لايجوز للانسان أن يساهم في شركات التأمين التجاري لأن عقود التأمين مشتملة علي الغرر والجهالة والربا والعقود المشتملة علي الغرر والجهالة والربا محرمة في الشريعة الاسلامية، ﴿الفتاوي الاسلامية - ٢/٣٩٢ ﴾
অর্থঃ-কোন ব্যক্তির জন্যে ব্যাংক ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা তখনি জায়েয হবে যখন তা সুদ মুক্ত হবে। এটা এজন্যই যেহেতু সুদের হারাম হওয়া কুরআন সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মত দ্বারা সাব্যস্ত। এমনিভাবে মানুষের জন্যে কমার্শিয়াল বিমায় অংশগ্রহণ করা জায়েয নেই। যেহেতু কমার্শিয়াল বিমার চুক্তি ধোঁকা অস্পষ্টতা ও সুদের অন্তর্ভুক্ত, বিধায় তা হারাম (ফাতাওয়া ইসলামিয়া, ২/৩৯২)
ইমদাদুল ফাতাওয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
এ সকল ব্যবসায়ী বিমা কোম্পানি গ্রাহককে যে বিশেষ সুরতে বিনিময় প্রদান করে থাকে, বাহ্যিকভাবে যদিও সেড়া ধ্বংসপ্রাপ্ত মালের ক্ষতিপূরণ কিন্তু বাস্তবে সেটা ঐ টাকার বিনিময় যা গ্রাহক মাসিক বা বাৎসরিক প্রিমিয়াম আকারে পরিশোধ করে ছিল।.... অতএব বাহ্যিকভাবে এটা জুয়া.... আর বাস্তবে সেটা সুদ.....। অতএব বিমা চুক্তিটি নিঃসন্দেহে হারাম। এমনিভাবে জীবন বিমা (হারাম) কেননা তা বাহ্যিকভাবে ঘুষ.আর বাস্তবে সুদ।(ইমদাদুল ফাতাওয়া, ৩/১৬১)
কিফায়াতুল মুফতি এ বর্ণিত রয়েছে,
প্রশ্ন, জীবন বিমা করার বিধান কী? উত্তর, জীবন বিমা করানো জায়েয নেই। প্রশ্ন,জান ও অর্থ সম্পদের বিমা করা জায়েয আছে কি?উত্তর, বিমা এক ধরণের জুয়া। এজন্য জান ও অর্থ সম্পদের বিমা করা জায়েয নেই।(কিফায়াতুল মুফতি, ৮ / ৮২, ৮৩)
ফাতাওয়ায়ে উসমানী তে বর্ণিত রয়েছে,
ইন্স্যুরেন্স (বিমার) বর্তমান প্রচলিত যত প্রকার রয়েছে সবগুলো সুদ ও জুয়ার অন্তর্ভুক্ত, বিধায় তা হারাম। ... কিছু আলেমের বৈধ হওয়ার মত থাকলেও সে মতটি খুবই দুর্বল ও ক্ষীণ। তাদের দলীলাদিও অনেক দুর্বল ও কমজোর। 'মাজমাউল ফিকহ ইসলামি' জেদ্দাতে পুরো দুনিয়ার ইসলামি রাষ্ট্রের আলেমগণ একত্রিত হয়ে এ ব্যাপারে সুদীর্ঘ আলোচনা পর্যালোচনা করেছেন। অবশেষে বর্তমান প্রচলিত ইন্স্যুরেন্স হারাম হওয়ার উপর ফাতাওয়া দেওয়া হয় এবং কতক আলেমের বৈধ হওয়ার মতকে বাতিল সাব্যস্ত করা হয়। সেই সেমিনারে ১৪৫ টি ইসলামি রাষ্ট্র থেকে প্রায় ১৫০ জন আলেম অংশগ্রহণ করেন।(ফাতাওয়ায়ে উসমানী, ৩/৩২৮)
আপকে মাসায়েল আওর উনকা কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
বিমার বর্তমান প্রচলিত সকল সুরতই শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নয়। বরং বিমা হল জুয়ার উন্নত একটি পদ্ধতি মাত্র। এজন্য নিজ ইচ্ছায় বিমা করা বৈধ নয়। যদি আইনগত বাধ্য হয়ে বিমা করতেই হয় তবে নিজের জমাকৃত টাকার অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করা জায়েয হবে না। যেহেতু বিমার কার্যক্রম বৈধ নয় এজন্য বিমা কোম্পানিতে চাকরি করাও বৈধ নয়।(আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, ৬/১৬৯)
কিতাবুল ফাতাওয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
সম্পদের ইন্স্যুরেন্স মৌলিকভাবেই জায়েয নেই। কেননা যদি বিমাকারী পলিসি পূর্ণ করে তবে যত টাকার পলিসি করেছিল বিমা কোম্পানি তাকে তার বেশী টাকা প্রদান করে। এটা সুস্পষ্টভাবে সুদ। আর যদি বিমাকারী মেয়াদপূর্তির আগেই মারা যায় তাহলে তার নমিনী পূর্ণ টাকা পেয়ে যায়। অথচ বিমাকারী মাত্র কয়েকটা কিস্তি পরিশোধ করেছিল। তাহলে বুঝা গেল, বিমাকারী নিজেও জানে না যে বিমার কী ফলাফল হবে।কাউকে পূর্ণ কিস্তি পরিশোধ করতে হয় আবার কেউ দুই তিনটি কিস্তি দিয়েই পূর্ণ টাকা পেয়ে যায়। আর স্পষ্টত এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। বুঝা গেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সুদ ও জুয়ার দ্বারা গঠিত একটি পদ্ধতি মাত্র আর শরীয়তে সুদ ও জুয়া উভয়টি নিষিদ্ধ। তাই বিমা মূলগতভাবেই জায়েয নয়।(কিতাবুল ফাতাওয়া, ৫/৩৫৬)
ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়াতে বর্ণিত রয়েছে,
(পূর্বে পদ্ধতি আলোচনার পর) যদি জীবন বিমার পদ্ধতি এমন হয়ে থাকে যেমন আমাদের ধারণা, তাহলে বিমা নিম্নলিখিত কারণে অবৈধ ও হারাম।
১. বিমা চুক্তিতে সুদের অস্তিত্ব রয়েছে।
২. বিমার চুক্তি জুয়ার অন্তর্ভুক্ত।
৩. বিমাকারীর মৃত্যুর পর জমাকৃত টাকার মালিক হয় নমিনী হিসেবে যার নাম উল্লেখিত রয়েছে সে। অথচ ইসলামি ফারায়েয অনুযায়ী উক্ত টাকায় সমস্ত ওয়ারিসের নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।
৪. বিমা কোম্পানিতে যুক্ত হওয়ার দ্বারা تعاون علی الاثم والعدوان অর্থাৎ গুনাহের কাজে সহায়তা করা হয়। অথচ কুরআন মাজীদে تعاون علی الاثم والعدوان গুনাহের কাজে সহায়তা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।(ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া, ৬/২২০)
(ফাতাওয়া উসমানী, ৩/৩২৮)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
বীমা সুদ এবং জোয়ার উপর নির্ভরশীল হওয়ার ধরুণ বর্তমানে প্রচলিত সকল প্রকার বীমাই হারাম।তবে সরকারের পক্ষ্য থেকে যেই সমস্ত বীমার করার জন্য পাবন্দী রয়েছে,যেমন মটর বীমা ইত্যাদি।সেই সমস্ত বীমা ঐ শর্তে করা যাবে যে,বীমা কম্পানি থেকে পরবর্তীতে শুধুমাত্র জমাকৃত টাকাই নিতে হবে।অতিরিক্ত কোনো টাকা বা সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না।নিলেও তা সদকাহ করতে হবে।(ফাতাওয়ায়ে উসমানি-৩/৩১৪)