আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
141 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (23 points)
আসসালামু আলাইকুম
আমি ৪ মাসের গর্ভবতী। এটাই আমার প্রথম প্রেগ্নেন্সি আলহামদুলিল্লাহ। এই সময়ে ২/২.৫ মাস থেকে ডক্টর কিছু মেডিসিন, যেমন ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি খেতে বলে সন্তান ও মায়ের সুস্থতার জন্য। কিন্তু আমার স্বামী ব্যক্তিগতভাবে মেডিসিন খাওয়া পছন্দ করে না।
সে আমাকে বলে, তোমার শরীরের জন্য যেগুলো প্রয়োজন সেগুলো তোমাদের বডিতে আল্লাহ তৈরি করে দিবেন। হ্যা,আমিও এটা অস্বীকার করিনা।
কিন্তু গর্ভাবস্থায় তো মায়ের শরীরে অনেক কিছুর ঘাটতি তৈরি হয়, অনেক পুষ্টির প্রয়োজন হয় মা ও সন্তানের জন্য।

সে আরও বলে যে মধু ও কালোজিরা খেলে আর অন্য কোনো মেডিসিনের প্রয়োজন নেই কারণ মধু ও কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ।
উনি আরও একটা হাদিসের কথা বলেন, যদিও হাদিসটি আমার পুরোপুরি মনে নেই। হাদিস টি এমন " মহানবী সাঃ বলেছেন যে/ যারা কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করবে না তারা কেয়ামতের দিন হাত ধরে জান্নাতে যাবে "।  এখানে কোন চিকিৎসা পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে তা আমার মনে হচ্ছে না।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১। নবীজি সাঃ এর সময়ে কি তাঁরা অসুস্থতায় চিকিৎসা নিতেন না? অথবা ঔষধ খেতেন না?

২। আমার সন্তান কে সুস্থ সবল ভাবে পৃথিবীতে নিয়ে আসার চেষ্টা তো আমাদেরকে করতে হবে। বাকিটা আল্লাহ পাক ভালো জানেন উনি কেমন সন্তান দিবেন।  সন্তানের ও আমার সুস্থতার জন্য কি ঔষধ গুলো আমার খাওয়া উচিত কি না?

৩. যদি ঔষধ খাওয়া উচিত হয় তাহলে আমি আমার স্বামী কে কিভাবে বুঝাবো সে যেন আমাকে ঔষধ খাওয়ায়

1 Answer

0 votes
by (58,500 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

রোগ-ব্যাধির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য অগ্রিম ঔষধ/ভ্যাক্সিন/টিকা গ্রহণ করা জায়েয। ব্যাপারে ইসলামে কোন বাধা নেই।

বরং রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে অগ্রিম প্রতিরোধ করা অধিক উত্তম, বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার ক্ষয়-ক্ষতির চেয়ে বিপর্যয় থেকে বাঁচার অগ্রীম পন্থা অবলম্বন করা অধিক উত্তম-এ ব্যাপারে কোন জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বিমত থাকার কথা নয়।

 

আমরা এই শিক্ষা পাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন থেকে।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ تَصَبَّحَ سَبْعَ تَمَرَاتِ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرُّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سَمٌّ وَلاَ سِحْرٌ "

সাআদ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রা: থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন বিষ এবং যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)

 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

مَا أَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ دَاءً، إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ دَوَاءً، عَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ، وَجَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ

আল্লাহ তাআলা এমন কোন রোগ অবতীর্ণ করেন নি যার ওষুধ অবতীর্ণ করেন নি। (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রতিটি রোগ-ব্যাধির সাথে সাথে সেগুলোর প্রতিষেধকও অবতীর্ণ করেছেন। সেগুলো কেউ জানে আর কেউ জানে না।” (মুসনাদ আহমাদ)

 

রাসুলুল্লাহ সাঃ চিকিৎসা গ্রহন করতে আদেশ করেছেন

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ عُمَرَ النَّمَرِيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلَاقَةَ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيكٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابَهُ كَأَنَّمَا عَلَى رُءُوسِهِمُ الطَّيْرُ، فَسَلَّمْتُ ثُمَّ قَعَدْتُ، فَجَاءَ الْأَعْرَابُ مِنْ هَا هُنَا وَهَا هُنَا، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنَتَدَاوَى؟ فَقَالَ: تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ دَوَاءً، غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ

উসামাহ ইবনু শরীক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এস দেখলাম তাঁর সাহাবীদের মাথার উপর যেন পাখী বসে আছে, অর্থাৎ শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি সালাম দিয়ে বসলাম। অতঃপর এদিক-সেদিক থেকে কিছু বেদুঈন এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো? তিনি বলেন, তোমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করো; কেননা মহান আল্লাহ একমাত্র বার্ধক্য ছাড়া সকল রোগেরই ঔষধ সৃষ্টি করেছেন।

(আবু দাউদ ৩৮৫৫)

 

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحَبَّةِ السَّوْدَاءِ فَإِنَّ فِيهَا شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ السَّامَ ” . وَالسَّامُ الْمَوْتُ

তোমরা এই কালোজিরা ব্যবহার করবে। কেননা, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। [সূনান তিরমিযী, হাদিস নম্বরঃ [2048]অধ্যায়ঃ ৩১/ চিকিৎসা (كتاب الطب عن رسول اللَّهِ ﷺ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন]

 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خِدَاشٍ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ زَكَرِيَّاءَ الْقُرَشِيُّ، حَدَّثَنَا الزُّبَيْرُ بْنُ سَعِيدٍ الْهَاشِمِيُّ، عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ سَالِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " مَنْ لَعِقَ الْعَسَلَ ثَلاَثَ غَدَوَاتٍ كُلَّ شَهْرٍ لَمْ يُصِبْهُ عَظِيمٌ مِنَ الْبَلاَءِ "

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন ভোরবেলা মধু চেটে চেটে খেলে সে মারাত্মক কোন বিপদে আক্রান্ত হবে না।

ইবনু মাজাহ ৩৪৫০, ঈফাহ্ ৭৬৩, ঈফুল জামি৫৮৩১, আল মুজামুল আওসাত্ব ৪০৮, ‘ত্ববারানীর আল মুজামুল কাবীর ২৭৭, শুআবুল ঈমান ৫৯৩০,মিশকাত ৪৫৭০) উক্ত হাদীস সনদের দিক থেকে জয়ীফ।

 

সুতরাং ঔষধ, কালোজিরা, মধু ব্যবহার করে 100% রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে- এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ তায়ালা রোগ থেকে মুক্তি দানকারী। এটা একমাত্র তাঁর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। আমাদের কাজ হবে, আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং বিভিন্ন পথ্য ও ঔষধ ব্যবহার করা। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই সুস্থতা অর্জিত হবে। অন্যথায় তিনি অন্যভাবে বান্দাকে এর বিনিময় দান করবেন। এ বিশ্বাস রাখাই মুমিনের কর্তব্য।

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

১. হ্যাঁ, রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরামও  চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

২. আপনি এ বিষয়ে কোনো দ্বীনদার অভিজ্ঞ গাইনি ডাক্তারের সাথে  পরামর্শ করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...