আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
162 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (9 points)
edited by
আসসালামুআলাইকুম!

আমার বাবা-মা যদি এমন কাউকে আমার বিয়ের জন্য ঠিক করে যাকে আমার পছন্দ নয়। এক্ষেত্রে যদি আমি তাদেরকে বোঝানোর জন্য (মেয়ে অসুন্দর, আমার সাথে যায় না, ওকে পছন্দ হয় না) ইত্যাদি বাক্য যদি বলি তাহলে কি এক্ষেত্রে আমার অহংকার করা হবে বা গীবত? বিয়ের ক্ষেত্রে এরকম সমালোচনা করা বৈধ কিনা?
কারন, এরকম না বললে, বাবা-মাকে বোঝানো যাবে না।

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 
 
সর্বপ্রথম গীবত আর অহংকারের সংজ্ঞা জানুনঃ 

★গীবত কাকে বলে?
গীবত অর্থ পরনিন্দা। কারো অনুপস্থিতিতে তার দোষ-ত্রুটি আলোচনা করা। হতে পারে দোষটি তার মধ্যে আছে। কিন্তু এই আলোচিত দোষটির কথা শুনলে সে নির্ঘাত মনে ব্যথা পাবে। তাহলে এটাই গীবত। হাদীস শরীফে এক সাহাবীর কথা এসেছে, যিনি নবীজী ﷺ-কে প্রশ্ন করেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! গীবত কাকে বলে?

নবীজি ﷺ উত্তরে বলেছিলেন, আপন ভাইয়ের আলোচনা তার পেছনে এমনভাবে করা যা তার নিকট পছন্দনীয় নয়। অর্থাৎ সে পরবর্তীতে যদি জানতে পারে তার সম্পর্কে অমুক মজলিসে এ আলোচনা হয়েছে তাহলে মনে কষ্ট পাবে। এটাই গীবত।

সাহাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, আমি যে দোষ নিয়ে আলোচনা করেছি তা যদি সত্যি সত্যি আমার ভাইয়ের মাঝে থাকে?

নবীজি ﷺ উত্তর দিলেন, আসলেই যদি দোষ থাকে তাহলেই গীবত হবে। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার হবে। (আবু দাউদ, বাবলু গীবাত ৪৮৭৪)

★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু কোনো দোষ বর্ণনা করা হচ্ছেনা,তাই সেটা গীবত হবেনা। 
,
অহংকার কী-এ প্রশ্নের সরল উত্তর হচ্ছে, কোনো বিষয়ে নিজেকে বড় মনে করে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহংকার। শক্তিতে, সামর্থ্য,বয়সে, অভিজ্ঞতায় ত্রিশ বছরের যুবক যতটা সমৃদ্ধ, বার বছরের একটি ছেলে তো সবক্ষেত্রেই তার তুলনায় হবে রিক্তহস্ত। তার ছোট হওয়া এবং তাকে ছোট মনে করা এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। বাস্তবেই যে ছোট তাকে ছোট মনে করা অহংকার নয়।
,
 বরং অহংকার হচ্ছে, সে ছোট বলে তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। কাড়ি কাড়ি টাকা যার ব্যাংক একাউন্টে সঞ্চিত, সে তো যে দিন এনে দিন খায় তাকে অর্থবিত্তে ছোট মনে করতেই পারে। এটা অহংকার নয়। অহংকার হচ্ছে তাকে তাচ্ছিল্য করা, গরীব বলে তাকে হেয় করা।
,
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الْأَرْضَ وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولًا
“পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না।” (–সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৩৭)
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ . وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
“অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কণ্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।” (–সূরা লোকমান, আয়াত: ১৮-১৯)
আল্লাহপাক আরও  বলেন-
ساصرف عن آياتي الذين يتكبرون في الأرض بغير الحق
“আমি এমন লোক দের কে আমার আহকাম ও আয়াত সমূহ থেকে ফিরিয়ে রাখবো যারা জমিনে অহংকার করে যেটার কোনো হক তাদের নেই”
كذالك يطبع الله على كل قلب متك جبار
“এমনি ভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী ও অত্যাচারীর অন্তরে মোহর মেরে দেন। নিশ্চিত ভাবে আল্লাহ্ অহংকারী দের কে পছন্দ করেন না।”
إن الذين يستكبرون عن عبادتي سيدخلون جهنم داخرين
“যারা অহংকার বশত আমার এবাদত থেকে ফিরে যাবে অচিরেই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করব”
হাদিস শরীফে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
((لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ)
“যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
অহংকার এমন একটি গুণ যা শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি এ গুণ নিয়ে আল্লাহর সাথে টানাটানি করে আল্লাহ তাকে ধ্বংস করে দেন, তার প্রতাপ নস্যাৎ করে দেন ও তার জীবনকে সংকুচিত করে দেন।” (সহীহ মুসলিম। হাদিস নং- ৯১)
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِي، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِي ، فَمَنْ نَازَعَنِي وَاحِدًا مِنْهُمَا، قَذَفْتُهُ فِي النَّارِ
“অহংকার হচ্ছে আমার চাদর আর সম্মান হচ্ছে আমার পরনের কাপড়; যে ব্যক্তি এ দুটির কোন একটি নিয়েও আমার সাথে টানাটানি করে, আমি তাকে আযাবে নিক্ষেপ করি।” (–আবু দাউদ, হাদিস নং : ৪০৯০)
নিজের সৌন্দর্য্য, দামী পোশাক ও দামী খাবার ইত্যাদি দ্বারা অভিভূত হয়ে পড়া এবং মানুষের উপর দাম্ভিকতা প্রকাশ করাও অহংকার।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
ينما رجل يمشي في حلة تعجبه نفسه مرجل جمته إذ خسف الله به فهو يتجلجل إلى يوم القيامة
“একদা এক ব্যক্তি হুল্লা পরে, আত্মম্ভরিতা নিয়ে, মাথা আঁচড়িয়ে হাঁটছিল এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে সহ ভূমি ধ্বস করে দিলেন এবং এভাবে কিয়ামত পর্যন্ত সে নীচের দিকে যেতে থাকবে।” (–বুখারী, হাদিস নং : ৩২৯৭. মুসলিম, ২০৮৮)
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মেয়ে যদি সত্যিই অসুন্দর হয়,আর আপনি সাধারণত খবর দেওয়ার জন্য বলে থাকেন যে,মেয়ে অসুন্দর, আমার সাথে যায় না, ওকে পছন্দ হয়না,
তাহলে এটা অহংকার হবেনা।
,
তবে আপনি যদি মেয়ের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য এর সহিত অসুন্দর শব্দ ব্যবহার করেন,তাহলে এটা অহংকার হবে।
(উল্লেখ্য যে মেয়েকে যদি আপনার পছন্দ না হয়,{যদিও সে সুন্দরী},  তাই এমনিতেই যদি আপনি বলেন যে সে আমার সাথে যায়না,এটা যদি তুচ্ছতাচ্ছিল্য এর সাথে না বলে থাকেন,তাহলে অহংকার হবেনা। ) 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...