বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
■ কাপড়ে অপবিত্র
জিনিষ লেগে উক্ত কাপড়কে অপবিত্র করে ফেলে। যাকে আরবীতে নাজাসত বলে।
নাজাসত দুই প্রকার
নাজাসাতে গালিজাহ
নাজাসাতে খাফিফাহ
প্রথম প্রকারঃ নাজাসতে গালিজাহ
যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে,
وَهِيَ
نَوْعَانِ
(الْأَوَّلُ)
الْمُغَلَّظَةُ
وَعُفِيَ
مِنْهَا
قَدْرُ
الدِّرْهَمِ
নাজসতে গালিজাহ যা এক দিরহাম পরিমাণ হলে ক্ষমাযোগ্য।
(নাজাসতে গালিজাহ কি কি?)
সে সম্পর্কে বলা হয়,
كل ما يخرج من بدن الإنسان ... إذا كان سائلا. كذا في الظهيرية فإذا أصاب الثوب أكثر من قدر الدرهم يمنع جواز الصلاة. كذا في المحيط.
ভাবার্থঃ-ঐ সমস্ত জিনিষ যা মানুষের শরীর থেকে বের হয়ে ওজু গোসলকে
ওয়াজিব করে দেয়। তা হল নাজাসতে গালিজাহ,যেমনঃ- পায়খানা,পেশাব,বীর্য, মযি(বীর্যের পূর্বে যা বাহির হয়),ওদি(প্রস্রাবের সময় যা বাহির হয়)ফুঁজ,বমি যখন তা মুখ ভরে হয়,(বাহরুর রায়েক)এবং আরো ও নাজাসতে গালিজাহ হল যথাক্রমে-হায়েয ও নেফাসের রক্ত,ছোট্ট বালক/বালিকার প্রস্রাব তারা আহার করুক বা না করুক। মদ,প্রবাহিত রক্ত,মৃত জানোয়ারের গোসত,ঐ সমস্ত প্রাণীর প্রস্রাব ও গোবর যাদের গোস্ত ভক্ষণ হারাম।গরুর
গোবর,কুকুরের বিষ্টা, মোরগ এবং হাস ও পানী হাসের বিষ্ঠা। হিংস প্রাণীর বিষ্টা,বিড়ালের বিষ্টা,ইদুরের বিষ্টা। বিড়াল এবং ইদুরের প্রস্রাব যদি কাপড়ে লাগে তবে কিছুসংখ্যক উলামায়ে
কেরামগণ মনে করেন যে,যদি তা এক দিরহামের বেশী হয় তবে নাপাক। আর কিছুসংখ্যক না করেন। সাপের
বিষ্টা,ও প্রস্রাব। জোকের বিষ্টা। আঠালো ও টিকটিকির রক্ত যদি তা প্রবাহিত
হয়। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৬)
নাজাসতে গালিজাহ কাপড় বা শরীরে লাগলে, এক দিরহাম (তথা বর্তমান সময়ের পাঁচ টাকার সিকি)পরিমাণ বা তার
চেয়ে কম হলে,
উক্ত কাপড়ের সাথে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম
যদি সময়-সুযোগ থাকে।
দ্বিতীয় প্রকারঃ নাজাসতে খাফিফাহ
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত রয়েছে
(والثاني المخففة) وعفي منها ما دون ربع الثوب. ....كذا في البحر الرائق وبول ما يؤكل لحمه والفرس وخرء طير لا يؤكل مخفف هكذا في الكنز.
ভাবার্থঃ নাজাসতে খাফিফাহ, যা এক চতুর্থাংশের কম হলে ক্ষমাযোগ্য। চতুর্থাংশ কিসের? সেটা নিয়ে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন,কাপড় বা শরীরের যে অংশে নাজাসত লাগবে তার চতুর্থাংশ উদ্দেশ্য
যেমন,আস্তিন,হাতা,এবং হাত পাঁ ইত্যাদি। এটাই বিশুদ্ধ মত।ঐ সমস্ত প্রাণীর প্রস্রাব
যেগুলোর গোস্ত ভক্ষণ করা হালাল,এবং ঐ সমস্ত পাখীর
বিষ্টা যেগুলোর গোসত ভক্ষণ করা হারাম। এগুলা হল নাজাসতে খাফিফাহ। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৬)
নাজাসতে খাফিফাহ কাপড় বা শরীরে লাগলে এক চতু্র্থাংশ পর্যন্ত
মাফ। তথা ঐ কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়লে নামায বিশুদ্ধ হবে। যদিও তা ধৌত করা উত্তম যদি
হাতে সময়-সুযোগ থাকে।
■ হাদীস
শরীফে এসেছে-
يَا
عَمَّارُ
إِنَّمَا
يُغْسَلُ
الثَّوْبُ
مِنْ
خَمْسٍ:
مِنَ
الْغَائِطِ
وَالْبَوْلِ
وَالْقَيْءِ
وَالدَّمِ
وَالْمَنِيِّ
আম্মার বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয়
৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথা-১-পায়খানা, ২-প্রশ্রাব, ৩-বমি,
৪-রক্ত, ৫-বীর্য। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪৫৮}
■ পবিত্রকরণ এর দিক দিয়ে
নাজাসত দুই প্রকারঃ যথা-
দৃশ্যমান নাজাসত
অদৃশ্যমান নাজাসত
দৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে প্রথম প্রকার
তথা দৃশ্যমান নাজাসত লাগলে সেই নাজাসতকে দূর করে দিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে এক্ষেত্রে
নাজাসত দূর করতে ধৌত করার কোনো পরিমাণ নেই। যতবার ধৌত করলে নাজাসত দূর হবে ততবারই
ধৌত করতে হবে। যদি একবার ধৌত করলে তা চলে যায় তবে একবারই ধৌত করতে হবে।
অদৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে দ্বিতীয়
প্রকার তথা অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলে, কাপড়কে
তিনবার ধৌত করে তিনবারই নিংড়াতে হতে এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে
করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বাহির না হয়। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪জা'মেউল
ফাতাওয়া;৫/১৬৭)
নাজাসতকে ১০টি পদ্ধতিতে পবিত্র করা যায় যথা-
১. ধৌত করা,যেমন
কাপড় ইত্যাদি।
২. মোছা, যেমন
আয়না,তলোয়ার ইত্যাদি।
৩. টুকা দিয়ে নাজাসত দূর করা,যেমন গাড় বীর্য কে টুকা দিয়ে কাপড় থেকে দূরে
সরিয়ে ফেলা,ইত্যাদি।
৪. ঘর্ষণ, মর্দন, যেমন শরীর বিশিষ্ট নাজাসত যাকে ঘর্ষণ-মর্দন
করে দূর করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৫. শুকিয়ে নাজাসতের আসর দূর হয়ে যাওয়া,যেমন জমিন,গাছ
ইত্যাদি শুকিয়ে পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৬. জ্বালানো, যেমন
গোবর ইত্যাদি জ্বলে ভস্ম হয়ে ছাই হয়, যা
পবিত্র।ইত্যাদি।
৭. এক অবস্থা থেকে ভিন্নরূপ ধারণ করে পবিত্র
হওয়া। যেমনঃ মদ থেকে সিরকায় পরিণত হওয়া যা কিনা পবিত্র। ইত্যাদি।
৮. দেবাগত,যেমন
মানুষ এবং খিনযির ব্যতীত সকল প্রকার প্রাণীর চামড়া কে লবন মাখিয়ে রৌদ্রে রাখলে তা
পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৯. যবেহ, প্রাণীকে
যবেহ করার মাধ্যমে উক্ত প্রাণীর চামড়া পবিত্র হয়ে যায়। যদি এমন প্রাণীও হয় যার
গোস্ত ভক্ষণ করা হারাম,তবে তার চামড়াকে পবিত্র
করে দেয়,ইত্যাদি।
১০. নরখ,তথা
যদি কোনো কূপে নাজসত পড়ে যায় তাহলে উক্ত কূপের মুনাসিব পরিমাণ পানি বাহিরে নিক্ষেপ
করলেই উক্ত কোপ পবিত্র হয়ে যায় ইত্যাদি।
এই মোট দশ ভাবে কোনো অপবিত্র জিনিষকে পবিত্র
করা যায়।
আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/41197/?show=41197#q41197
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিছানার
চাদর পাক বলেই ধরে নিবেন। কারণ, চাদর কেচে দিলে সাধারণত তাতে কোনো ধরণের নাপাক থাকার
কথা নয়।
২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তোষকের
উপর পবিত্র কিছু বিছিয়ে ঘুমাবেন। তাহলে আর এই ওয়াসওয়াসাটা হবে না। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত
জানুন- https://ifatwa.info/26427/
৩. আপনার একটু ওয়াসওয়াসা রোগ
আছে। তাই উক্ত ফ্লোরে যখন পানি ঢেলে পরিষ্কার করে দিয়েছেন, তো মনে করবেন যে, ফ্লোর
এখন পবিত্র। পবিত্র ফ্লোরেই পা দিচ্ছি। নিশ্চিত ভাবে নাপাকি না দেখা পর্যন্ত ফ্লোর পাক ধরে নিবেন।
৪. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার নখ সর্বদা পাক ধরে নিবন। কারণ, নখের মধ্যে
কাপড় কাচার সময় হালকা নাপাকি গেলেও পরিষ্কার পানিতে আবার কাপড় ধৌত করার সময় ঐ নাপাকি
বের হয়ে যায়। আবার হাত ধৌত করা, ওযু করার সময়ও বের হয়ে যায়।
৫.হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিছানার
উপরে গুছানো কাপড়গুলো পবিত্র হিসেবে ধরে নিবেন। কারণ, বিছানার চাদর তো পবিত্র
ছিলো।
উল্লেখ্য যে, আপনার মনে হয় একটু
ওয়াসওয়াসার রোগ আছে। আর ‘ওয়াসওয়াসার কার্যকরী চিকিৎসা হল, একে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া; এমনকি মনের মধ্যে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা
সত্ত্বেও।’ (আল-ফাতাওয়া আল-ফিকহিয়্যা আল-কুবরা ১/১৪৯)