আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
290 views
in পবিত্রতা (Purity) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ্।
উস্তাদ! ফিকহের ক্লাসে আপনার কাছে নাপাকি থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কে পড়েছিলাম,,, তাই আলহামদুলিল্লাহ মাসায়ালাগুলো আমার জানা আছে,,,

কিন্তু আমার সমস্যা হলো-

আমাদের বাসায় এমন এক গোসলখানা আছে যেখানে আলাদা একটু উচু করে পস্রাবের জন্য জায়গা করা হয়েছে, কিন্তু সেটা পূর্ব -পশ্চিম দিকে মুখ করে তৈরি এবং এমনভাবে তৈরি যে একটু ঘুরে উত্তর-দক্ষিণ করে বসাও সম্ভব নয়,তাই বাধ্য হয়ে ই নিচে গোসলখানায় পস্রাব করতে হয়,,তাই গোসল করার সময় জায়গা টা আমি খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করার পর যখন মনে হতো নাপাকি আর নেই,তারপর গোসল করতাম।কিন্তু এখান গোসলখানা নতুন করে সংস্করণ করার ফলে সেখানে পিচ্ছিল না হওয়ার জন্য এমনভাবে এঁকে দিয়েছে যে সেখান থেকে হাজার চেষ্টা করলেও নাপাকি দূর করা সম্ভব নয়,,এখন ওই গোসলখানায় আমি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবো?সেখানে গোসল করবো না বলে কয়েকদিন আমি প্রতিবেশির বাসায় গোসল করেছি কিন্তু এখন আম্মু আমার সাথে অনেক ঝামেলা করতেছে। উনার দাবি,যে তিনি আমাকে প্রতিবেশীর বাসায়ও গোসল করতে দিবে না এবং আমাকে বাসায় ওই গোসলখানাতেই গোসল করতে হবে।

তাহলে উস্তাদ,আমাকে বলুন যে আমি নাপাকির ওপর দাঁড়িয়ে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবো? আমি অনেক বুঝিয়েছি, কিন্তু তারা আমার কথা মানতে কিছুতেই রাজি নয়। ওখানে গোসল করে আমি কিছুতেই মন থেকে সন্তুষ্ট হতে পারবো না,,

পরিবারে দ্বীনের বুঝ না থাকার কারণে আমার কথার কেউ গুরুত্ব দেয় না।
(বিঃদ্রঃ প্রতিবেশীর বাসায় গোসল করতে না দেওয়ার একটা কারণ হলো তাদের একটু খোটা (উপকার দেখিয়ে দেওয়া)দেয়া স্বভাব রয়েছে।)

উস্তাদ!আমাকে বলে দিন এ অবস্থায় আমার কি করা উচিৎ?ওখানে গোসল করে আমার কি পবিত্রতা অর্জন হবে?

উস্তাদ,আমার এবং পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
জাঝাকিল্লাহ খাইরান।

1 Answer

0 votes
by (60,240 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

একদা জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করলে সাহাবারা তার উপর ক্ষেপে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন:

دَعُوْهُ وَهَرِيْقُوْا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوْبًا مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ وَلَمْ تُبْعَثُوْا مُعَسِّرِيْنَ.

তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, তাকে বাধা দিও না। তবে প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে সহজতার জন্যে পাঠানো হয়েছে কঠোরতার জন্যে নয়সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২০

 

পবিত্রকরণ এর দিক দিয়ে নাজাসত দুই প্রকারঃ যথা-

দৃশ্যমান নাজাসত

অদৃশ্যমান নাজাসত

 

দৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে প্রথম প্রকার তথা দৃশ্যমান নাজাসত লাগলে সেই নাজাসতকে  দূর করে দিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে এক্ষেত্রে নাজাসত দূর করতে ধৌত করার কোনো পরিমাণ নেই। যতবার ধৌত করলে নাজাসত দূর হবে ততবারই ধৌত করতে হবে। যদি একবার ধৌত করলে তা চলে যায় তবে একবারই ধৌত করতে হবে।

 

অদৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে দ্বিতীয় প্রকার তথা অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলে, কাপড়কে তিনবার ধৌত করে তিনবারই নিংড়াতে হতে এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বাহির না হয়। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪জা'মেউল ফাতাওয়া;৫/১৬৭)

 

নাজাসতকে ১০টি পদ্ধতিতে পবিত্র করা যায় যথা-

১. ধৌত করা,যেমন কাপড় ইত্যাদি।

২. মোছা, যেমন আয়না,তলোয়ার ইত্যাদি।

৩. টুকা দিয়ে নাজাসত দূর করা,যেমন গাড় বীর্য কে টুকা দিয়ে কাপড় থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা,ইত্যাদি।

৪. ঘর্ষণ, মর্দন, যেমন শরীর বিশিষ্ট নাজাসত যাকে ঘর্ষণ-মর্দন করে দূর করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।

৫. শুকিয়ে নাজাসতের আসর দূর হয়ে যাওয়া,যেমন জমিন,গাছ ইত্যাদি শুকিয়ে পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।

৬. জ্বালানো, যেমন গোবর ইত্যাদি জ্বলে ভস্ম হয়ে ছাই হয়, যা পবিত্র।ইত্যাদি।

৭. এক অবস্থা থেকে ভিন্নরূপ ধারণ করে পবিত্র হওয়া। যেমনঃ মদ থেকে সিরকায় পরিণত হওয়া যা কিনা পবিত্র। ইত্যাদি।

৮. দেবাগত,যেমন মানুষ এবং খিনযির ব্যতীত সকল প্রকার প্রাণীর চামড়া কে লবন মাখিয়ে রৌদ্রে রাখলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।

৯. যবেহ, প্রাণীকে যবেহ করার মাধ্যমে উক্ত প্রাণীর চামড়া পবিত্র হয়ে যায়। যদি এমন প্রাণীও হয় যার গোস্ত ভক্ষণ করা হারাম,তবে তার চামড়াকে পবিত্র করে দেয়,ইত্যাদি।

১০. নরখ,তথা যদি কোনো কূপে নাজসত পড়ে যায় তাহলে উক্ত কূপের মুনাসিব পরিমাণ পানি বাহিরে নিক্ষেপ করলেই উক্ত কোপ পবিত্র হয়ে যায় ইত্যাদি।

এই মোট দশ ভাবে কোনো অপবিত্র জিনিষকে পবিত্র করা যায়।

 

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/41755/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত গোসলখানাতেও যেখানে পিচ্ছিল না হওয়ার জন্য এঁকে দেওয়া হয়েছে গোসল করতে পারবেন তবে যেহেতু সেখানেই আবার প্রস্রাব করা হয় তাই গোসল করার সময় খুব ভালোভাবে পানি ঢেলে দিবেন তাহলেই পরিষ্কার বা পবিত্র হয়ে যাবে  কারণ, প্রস্রাবের উপর ভালো ভাবে পানি ঢেলে দিলেই তা দূর হয়ে যাবে এমনকি আঁকা আঁকা দাগের মধ্য থেকেও এখানে তো আর প্রস্রাব দূর করার জন্য সব সময় ঘষা মাজার প্রয়োজন নেই বরং প্রস্রাবের উপর ভালো ভাবে পানি ঢেলে দিলেই তা যথেষ্ট তবে মাঝে মধ্যে ঘষে মেজে পরিষ্কার করে নেওয়া উত্তম যাতে ওয়াসওয়াসা না থাকে

. যেই পাশে প্রস্রাব করা হয় না সেই পাশে দাঁড়িয়ে গোসল করবেন এবং গোসলের আগে অবশ্যই ভালো ভাবে পানি ঢেলে নিবেন এবং গোসল শেষে ভালো ভাবে উভয় পা ধৌত করে নিবেন

. যদি সম্ভব হয় তাহলে এখানে প্রস্রাব না করে অন্য কোথাও বা টয়লেটে প্রস্রাব করলে ভালো হয় আর এখানে শুধু গোসলের ব্যবস্থা থাকলেই ভালো হয় তাহলে ওয়াসওয়াসা থেকে বেচে থাকা সম্ভব

. দুআ করি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য, আল্লাহ তায়ালা আপনাদেরকে কবুল করুন  দ্বীনের উপর সর্বদা অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন 

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...