ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
একদা জনৈক গ্রাম্য ব্যক্তি মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করলে সাহাবারা তার উপর ক্ষেপে
যায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বললেন:
دَعُوْهُ وَهَرِيْقُوْا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ أَوْ ذَنُوْبًا مِنْ مَاءٍ فَإِنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِيْنَ وَلَمْ تُبْعَثُوْا مُعَسِّرِيْنَ.
“তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, তাকে বাধা দিও না। তবে প্রস্রাবের
উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কারণ, তোমাদেরকে সহজতার জন্যে পাঠানো
হয়েছে কঠোরতার জন্যে নয়” সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২০
■ পবিত্রকরণ এর দিক দিয়ে নাজাসত দুই প্রকারঃ
যথা-
দৃশ্যমান নাজাসত
অদৃশ্যমান নাজাসত
দৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে প্রথম প্রকার
তথা দৃশ্যমান নাজাসত লাগলে সেই নাজাসতকে দূর করে দিলেই কাপড় পবিত্র হয়ে যাবে
এক্ষেত্রে নাজাসত দূর করতে ধৌত করার কোনো পরিমাণ নেই। যতবার ধৌত করলে নাজাসত দূর
হবে ততবারই ধৌত করতে হবে। যদি একবার ধৌত করলে তা চলে যায় তবে একবারই ধৌত করতে হবে।
অদৃশ্যমান নাজাসতের বিধানঃ কাপড়ে দ্বিতীয়
প্রকার তথা অদৃশ্যমান নাজাসত লাগলে, কাপড়কে
তিনবার ধৌত করে তিনবারই নিংড়াতে হতে এবং শেষ বার একটু শক্তভাবে নিংড়ানো হবে যাতে
করে পরবর্তীতে আর কোনো পানি বাহির না হয়। (ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া;২/৫৭৪জা'মেউল
ফাতাওয়া;৫/১৬৭)
নাজাসতকে ১০টি পদ্ধতিতে পবিত্র করা যায় যথা-
১. ধৌত করা,যেমন
কাপড় ইত্যাদি।
২. মোছা, যেমন
আয়না,তলোয়ার ইত্যাদি।
৩. টুকা দিয়ে নাজাসত দূর করা,যেমন গাড় বীর্য কে টুকা দিয়ে কাপড় থেকে দূরে
সরিয়ে ফেলা,ইত্যাদি।
৪. ঘর্ষণ, মর্দন, যেমন শরীর বিশিষ্ট নাজাসত যাকে ঘর্ষণ-মর্দন
করে দূর করা হলে তা পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৫. শুকিয়ে নাজাসতের আসর দূর হয়ে যাওয়া,যেমন জমিন,গাছ
ইত্যাদি শুকিয়ে পবিত্র হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৬. জ্বালানো, যেমন
গোবর ইত্যাদি জ্বলে ভস্ম হয়ে ছাই হয়, যা
পবিত্র।ইত্যাদি।
৭. এক অবস্থা থেকে ভিন্নরূপ ধারণ করে পবিত্র
হওয়া। যেমনঃ মদ থেকে সিরকায় পরিণত হওয়া যা কিনা পবিত্র। ইত্যাদি।
৮. দেবাগত,যেমন
মানুষ এবং খিনযির ব্যতীত সকল প্রকার প্রাণীর চামড়া কে লবন মাখিয়ে রৌদ্রে রাখলে তা পবিত্র
হয়ে যায়,ইত্যাদি।
৯. যবেহ, প্রাণীকে
যবেহ করার মাধ্যমে উক্ত প্রাণীর চামড়া পবিত্র হয়ে যায়। যদি এমন প্রাণীও হয় যার
গোস্ত ভক্ষণ করা হারাম,তবে তার চামড়াকে পবিত্র
করে দেয়,ইত্যাদি।
১০. নরখ,তথা
যদি কোনো কূপে নাজসত পড়ে যায় তাহলে উক্ত কূপের মুনাসিব পরিমাণ পানি বাহিরে নিক্ষেপ
করলেই উক্ত কোপ পবিত্র হয়ে যায় ইত্যাদি।
এই মোট দশ ভাবে কোনো অপবিত্র জিনিষকে পবিত্র
করা যায়।
আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/41755/
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. প্রশ্নোক্ত
ক্ষেত্রে উক্ত গোসলখানাতেও যেখানে পিচ্ছিল না হওয়ার জন্য এঁকে দেওয়া হয়েছে গোসল করতে
পারবেন। তবে যেহেতু সেখানেই আবার প্রস্রাব করা হয় তাই গোসল করার সময়
খুব ভালোভাবে পানি ঢেলে দিবেন। তাহলেই পরিষ্কার বা পবিত্র হয়ে
যাবে। কারণ, প্রস্রাবের উপর ভালো ভাবে পানি ঢেলে দিলেই তা দূর
হয়ে যাবে। এমনকি আঁকা আঁকা দাগের মধ্য থেকেও। এখানে তো আর প্রস্রাব দূর করার জন্য সব সময় ঘষা মাজার প্রয়োজন নেই। বরং প্রস্রাবের উপর ভালো ভাবে পানি ঢেলে দিলেই তা যথেষ্ট। তবে মাঝে মধ্যে ঘষে মেজে পরিষ্কার করে নেওয়া উত্তম। যাতে ওয়াসওয়াসা না থাকে।
২. যেই পাশে প্রস্রাব
করা হয় না সেই পাশে দাঁড়িয়ে গোসল করবেন এবং গোসলের আগে অবশ্যই ভালো ভাবে পানি ঢেলে
নিবেন এবং গোসল শেষে ভালো ভাবে উভয় পা ধৌত করে নিবেন।
৩. যদি সম্ভব হয়
তাহলে এখানে প্রস্রাব না করে অন্য কোথাও বা টয়লেটে প্রস্রাব করলে ভালো হয়। আর এখানে শুধু গোসলের ব্যবস্থা থাকলেই ভালো হয়। তাহলে ওয়াসওয়াসা থেকে বেচে থাকা সম্ভব।
৪. দুআ করি আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য, আল্লাহ
তায়ালা আপনাদেরকে কবুল করুন। দ্বীনের উপর সর্বদা অবিচল
থাকার তাওফীক দান করুন।