আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
489 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (9 points)
আসসালামু আলাইকুম, বছরখানিক আগে, একদিন মসজিদে তাবলীগের তালিমে বসেছিলাম । তখন তাবলীগের একজন মুরুব্বি একটি হাদিস বলছিলেন। হাদিসের ঘটনাটি ছিল কিছুটা এরকম, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সম্ভবত কারো জমি জমা নিয়ে বিচার কাজ সম্পাদন করছিলেন। তখন একজন সাহাবী উমর (রাঃ) কে বললেন নবীজি এখানে কিছুটা ভুল করে ফেলেছেন অথবা নবীজির বিচার সঠিক হয় নি। এটা শুনার সাথে সাথে উমর (রাঃ) সাহাবীর গর্দান কেটে ফেললেন। এটা শুনে আমার কাছে হাদিসটি জাল মনে হয় এবং একটি চিন্তা মাথায় আসে তা হল উমার (রাঃ) এই কথা বলার জন্য কি আরেক সাহাবীর গর্দান কেটে ফেলবেন? এটা কি আদৌ সম্ভব। আমার এ চিন্তা কি ঈমান এর সঙ্গে সাংঘরষিক?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

আলোচ্য ঘটনাটি মদিনার মুনাফিক বিশর সম্পর্কে। 
সে মুরতাদ,তাই ওমর রাঃ তাকে এই শাস্তি দিয়েছিলেন।

পুরো হাদীস দেখুনঃ 
قال ابن أبي حاتم : حدثنا يونس بن عبد الأعلى قراءة ، أخبرنا ابن وهب ، أخبرني عبد الله بن لهيعة ، عن أبي الأسود قال : اختصم رجلان إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم بينهما ، فقال الذي قضي عليه : ردنا إلى عمر بن الخطاب فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " انطلقا إليه " فلما أتيا إليه قال الرجل : يا ابن الخطاب ، قضى لي رسول الله صلى الله عليه وسلم على هذا ، فقال : ردنا إلى عمر . فردنا إليك . فقال : أكذاك ؟ فقال : نعم فقال عمر : مكانكما حتى أخرج إليكما فأقضي بينكما . فخرج إليهما مشتملا على سيفه ، فضرب الذي قال ردنا إلى عمر فقتله ، وأدبر الآخر فارا إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله قتل عمر والله صاحبي ، ولولا أني أعجزته لقتلني ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : " ما كنت أظن أن يجترئ عمر على قتل مؤمن " فأنزل الله : ( فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك ) الآية ، فهدر دم ذلك الرجل ، وبرئ عمر من قتله ، فكره الله أن يسن ذلك بعد ، فقال : ( ولو أنا كتبنا عليهم أن اقتلوا أنفسكم أو اخرجوا من دياركم ما فعلوه إلا قليل منهم ولو أنهم فعلوا ما يوعظون به لكان خيرا لهم وأشد تثبيتا ) [ النساء : 66 ] .
,
وكذا رواه ابن مردويه من طريق ابن لهيعة ، عن أبي الأسود به .
وهو أثر غريب ، وهو مرسل ، وابن لهيعة ضعيف والله أعلم .
طريق أخرى : قال الحافظ أبو إسحاق إبراهيم بن عبد الرحمن بن إبراهيم بن دحيم في تفسيره : حدثنا شعيب بن شعيب حدثنا أبو المغيرة ، حدثنا عتبة بن ضمرة ، حدثني أبي : أن رجلين اختصما إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقضى للمحق على المبطل ، فقال المقضي عليه : لا أرضى . فقال صاحبه : فما تريد ؟ قال : أن نذهب إلى أبي بكر الصديق ، فذهبا إليه ، فقال الذي قضي له : قد اختصمنا إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقضى لي فقال أبو بكر : فأنتما على ما قضى به النبي صلى الله عليه وسلم فأبى صاحبه أن يرضى ، قال : نأتي عمر بن الخطاب ، فأتياه ، فقال المقضي له : قد اختصمنا إلى النبي صلى الله عليه وسلم ، فقضى لي عليه ، فأبى أن يرضى ، [ ثم أتينا أبا بكر ، فقال : أنتما على ما قضى به رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فأبى أن يرضى ] فسأله عمر ، فقال : كذلك ، فدخل عمر منزله وخرج والسيف في يده قد سله ، فضرب به رأس الذي أبى أن يرضى ، فقتله ، فأنزل الله : ( فلا وربك لا يؤمنون حتى يحكموك فيما شجر بينهم ) [ إلى آخر ] الآية .
.
হযরত আবুল আসওয়াদ,হযরত যমরাহ,হযরত ইবনে আব্বাস সহ আরো কিছু ছাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে, মদীনায় বিশর নামক একজন মুনাফিক বাস করতো। একবার জনৈক ইহুদীর সাথে তার বিবাদ বেধে যায়। ইহুদী বললোঃ চল, আমরা মুহাম্মদ(সা) এর কাছে গিয়ে এর মীমাংসা করে আসি। বিশর প্রথমে এ প্রস্তাবে রাজী হলো না।
সে ইহুদী নেতা কা’ব ইবনে আশরাফের কাছে মীমাংসার জন্য যাওয়ার প্রস্তাব করলো। কা’ব ইবনে আশরাফ ছিল মুসলমানদের কট্টর দুশমন। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এই ইহুদী নেতার কাছ থেকে মীমাংসা কামনা করেছিল মুসলমান পরিচয় দানকারী বিশর। অথচ ইহুদী লোকটি স্বয়ং রাসূল এর উপর এর বিচারের ভার অর্পণ করতে চাইছিল।
আসলে এর কারণ ছিল এই যে, রাসূল(সা) এর বিচার যে পুরোপুরি ন্যায়সংগত হবে তা উভয়ে জানতো। কিন্তু ন্যায়সংগত মীমাংসা হলে মুনাফিক হেরে যেত আর ইহুদী জয়লাভ করত।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত ইহুদীর মতই স্থির হল। উভয়ে রাসূল(সা) এর কাছে গিয়ে বিবাদটার মীমাংসার ভার তাঁর ওপর অর্পণ করলো। রাসূল(সা) মামলার ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে ইহুদীর পক্ষে রায় দিলেন এবং বিশর হেরে গেল।
সে এ মীমাংসায় অসন্তুষ্ট হয়ে ইহুদীকে এই মর্মে সম্মত করে যে, বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য তারা হযরত ওমরের নিকট যাবে। বিশর ভেবেছিল যে, হযরত ওমর যেহেতু কাফেরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিন, তাই তিনি ইহুদীর মোকাবিলায় তার পক্ষে রায় দেবেন।
দু’জনেই হযরত ওমরের নিকট উপস্থিত হলো। ইহুদী তাঁকে পুরো ঘটনা জানালো এবং বললো, এ ব্যাপারে রাসূল(সা) যে ফায়সালা করেছেন, তা আমার পক্ষে। কিন্তু এ লোকটি তাতে সম্মত নয়। তাই আমাকে আপনার নিকট নিয়ে এসেছে।
হযরত ওমর বিশরকে জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি এরূপ? সে বললো, হাঁ। তখন হযরত ওমর বললেন, তাহলে একটু অপেক্ষা কর। এই বলে তিনি ঘরের ভেতর থেকে একখানা তলোয়ার নিয়ে এলেন এবং “যে লোক রাসূলের ফায়সালা মেনে নিতে রাজী হয় না, ওমরের কাছে তার ফায়সালা হলো এই……” এই বলে চোখের নিমেষে বিশরকে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন।
এরপর বিশরের উত্তরাধিকারীরা রাসূল(সা) এর নিকট হযরত ওমরের(রা) বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করলো যে, তিনি শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন। এ সময় রাসূল(সা) এর মুখ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কথা বেরিয়ে আসে যে, “ওমর কোনো মুসলমানকে হত্যা করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে এটা আমি মনে করি না।”

অতঃপর উনাকে ডেকে এনে  রাসুল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন, হে হযরত উমর ফারুক! আপনি নাকি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন, তিনি বললেন না, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি কোনো মুসলমান হত্যা করিনি। আমি যাকে হত্যা করেছি সে হচ্ছে একটা কাট্টা মুনাফিক। যে আপনার ফায়সালাকৃত বিষয়কে মনঃপুত হয়নি বলে পুনরায় ফায়সালার জন্য আমার নিকট গিয়েছিল। তাই আমি ফায়সালা হিসাবে তার মৃত্যুদন্ড দিয়েছি। তখন বিশরের আত্মীয়-স্বজন বললো, ইয়া রসূল্লাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! বিশর যে মুনাফিক ছিল, মুসলমান ছিলনা এর প্রমাণ ও সাক্ষী কোথায়? সেই মুহূর্তে খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষী হয়ে প্রমাণ হিসেবে নাযিল করে দিলেন,
فلا وربك لا يؤمنون حتي يحكموك فيما شجر بينهم ثم لا يجدوا في أنفسهم حرجا مما قضىت ويسلموا تسليما
 “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার রব উনার কসম, সে ব্যক্তি ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবেনা যতক্ষণ না সে তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে না নিবে। এবং আপনার ফায়সাল মুবারক উনার ব্যাপারে নিজের অন্তরে কোনো রকম সংশয়-সন্দেহ না করে পরিপূর্ণরূপে আনুগত্যের সাথে গ্রহণ করবে।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : আয়াত শরীফ- ৬৫)
.
তাফসীরে জালালাইন শরীফ, ১/৮৪২
তাফসীরে দুররে মানছুর , ২/৩২২
তাফসীরে ইবনে কাছীর , ২/৪০২

আসলে হযরত ওমর(রা) তাকে এই মনে করে হত্যা করেছেন যে, সে যেহেতু আল্লাহর রাসূলের ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে স্পষ্টতই মুরতাদ ও কাফের হয়ে গিয়েছে। ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের সর্বসম্মত শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড সেটাই তিনি তাকে দিয়েছেন। আর এর অব্যাহতি পর সূরা নিসার ৬০ থেকে ৬৮ নং আয়াত নাযিল হয়ে হযরত ওমরের(রা) অভিমতকে সঠিক প্রমাণিত করে।

শিক্ষাঃ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল(সা) এর আদেশ, নিষেধ বা সিদ্ধান্তকে যারা প্রকাশ্যভাবে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে মুসলমান বলে মনে করা বৈধ নয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকলে এ ধরনের লোকদের মৃত্যুদন্ড দেয়া অপরিহার্য।
অন্যথায়, এ ধরনের মুরতাদদের সমাজচ্যূত করা ও নিন্দা প্রতিবাদের মাধ্যমে কোনঠাসা করে রাখতে হবে, যাতে আর কেউ মুরতাদ হবার ধৃষ্টতা না দেখায়।
.
★এখানে হযরত ওমর রাঃ   কোনো ছাহাবার গর্দান উড়িয়ে দেননি, বরং তিনি একজন মুনাফিক মুরতাদ এর গর্দান উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...