আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
545 views
in পবিত্রতা (Purity) by (20 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম, 

১/ আমার লিকুরিয়াবায়ু জনিত সমস্যা উভয়টিই রয়েছে।সলাত আদায় করতে গেলে প্রতি ওয়াক্তেই বায়ুর চাপ আসলে সেটাকে আটকে রেখে সলাত শেষ করি।বারবার অজু করতে ইচ্ছা করে না। প্রতি ওয়াক্তেই এই সমস্যা হচ্ছে রিসেন্টলি।আমার ঠান্ডার সমস্যা আছে,একাধিকবার অজু করলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশংকা আছে।শীতের সময় বেশি হয় এটা।আবার সব সময় গরম পানি করে অজু করাও সম্ভব হয়ে উঠে না।এক সময় শুধু এই সমস্যাগুলোর কারণে সলাত আদায়ই করতাম না,আল্লাহ আমাকে মাফ করুক।লিকুরিয়া কখন বের হয় টের পাই না,কখনও অনেক বেশি হয়,কখনও অনেক কম।কিন্তু কাপড়ে লিকুরিয়ার একটা দূর্গন্ধ সবসময়ই থাকে। আর যতবারই ওয়াশরুমে যাই এটার উপস্থিতি দেখতে পাই।রঙ্গীন প্রিন্টের কাপড়ে লিকুরিয়ার দাগও বোঝা যায় না ভালো করে।কিভাবে পরিষ্কার করবো,কতটুকু পরিষ্কার করবো বুঝতে পারি না।বারবার পোশাক চেঞ্জ করলেও সলাত আদায়ে অনীহা চলে আসে।যেহেতু লিকুরিয়া আর বায়ুর সমস্যা ২ টাই আছে, আমি মাযুর কিনা জানাবেন।আর পূর্ণ ১ ওয়াক্ত চেক করার ক্ষেত্রে আমি যদি যেই ওয়াক্তে সময় কম সেটাকে বেছে নেই তাতে কি সমস্যা আছে?

২/আমি অতীতে যিনায় লিপ্ত ছিলাম,যার জন্য আমি আল্লাহর কাছে তাওবা করেছি।এখন আমি বিবাহিত,আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু আমার মনে মাঝেমাঝেই অতীতের চিন্তা চলে আসে।অনেক সময় ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও দেখি।মাথায় বারবার চিন্তা চলে আসলে আমি নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করি,অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করি তাও আসেই।আবার অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে খোঁজ নিতে ইচ্ছা হয়,মাঝেমাঝে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না বিধায় সোশাল মিডিয়ার ছবি/লেখা দেখেও ফেলি।কিন্তু আমার কোনো আবেগ কাজ করে না,অনেকটা কৌতুহল কাজ করে।এক্ষেত্রে কি আমি পরকীয়ার গুনাহতে আছি? মুক্তির উপায় কি? 

 

৩/ আমার আকদ হয়েছে।কিন্তু এখনও হাসবেন্ডের সাথে একত্রে থাকা হয় নি।একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি,দেখা সাক্ষাত হয়।বেশ কয়েকবার তার বাসায় গেলে আমরা মিলিত হয়েছি।আমার মনে হয় অন্য নারীদের তুলনায় আমার চাহিদা বেশি।হাসবেন্ড থেকে দূরে থাকার ফলেও এটা হতে পারে।একাকী থাকা অবস্থায় হাসবেন্ডের সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো নিয়ে চিন্তা করার কারণে উত্তেজনা বশত সাদাস্রাব নির্গত হলে  কি আমার গোসল ফরজ হয়ে যাবে?

৪/রোজা অবস্থায়, অজুর সময় গড়গড়া করি না।কিন্তু গোসলের সময় কুলি করতে গিয়ে সামান্য পানি গলার চলে গিয়েছে মনে হয়।কিন্তু গলা বেয়ে নিচে নামার আগেই আমি বেশ কয়েকবার গলা ঝাড়ি দিয়ে যথাসম্ভব বের করে ফেলার চেষ্টা করি।আমার মনে হচ্ছে পানি পেটে যায় নাই,গেলেও সেটা খুবই সামান্য পরিমান হয়ে থাকবে।আমার কি রোজা ভঙ্গ হয়েছে?আমি কি এই রোজা আবার রাখবো? 

------------------------

শায়খ, প্রয়োজনে একটু বেশি সময় নিয়ে হলেও প্রতিটা পয়েন্টের উত্তর বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে উপকৃত হবো।আমি অনেক দিন ধরেই প্রথম ৩ টা প্রশ্ন নিয়ে সন্দেহে আছি।

1 Answer

0 votes
by (589,380 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
https://www.ifatwa.info/50নং ফাতাওয়ায় আমরা উল্লেখ করেছি যে,
লিকুরিয়া রোগ যা মহিলাদের জরায়ুতে হয়।
যার অর্থ হল জরায়ু থেকে সাদাস্রাব নির্গত হওয়া।
সাদাস্রাব নাপাক।যা নির্গত হলে অজু চলে যায়।কাপড়ের যে অংশে লাগবে সেটুকু ধৌত করতে হবে।তা নাজাসতে গলিজা।এক দিরহামের বেশী হলে নামায হবে না।

এই সাদাস্রাব নির্গত হওয়া দুই প্রকার।
ক/
সাদাস্রাব মাঝেমধ্যে নির্গত হয়।অর্থাৎ হঠাৎ জরায়ুতে চলে আসে।
এমতাবস্থায় যদি হঠাৎ নামাযের মধ্যে বা নামাযের পূর্বে নির্গত হয়, তখন কাপড় পাল্টিয়ে লজ্জাস্থান ধৌত করা পূর্বক নতুন করে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।তারপর পূনরায় নামায পড়তে হবে।

খ/
যদি কোনো এক নামাযের পূর্ণ ওয়াক্ত ধারাবাহিক সাদাস্রাব নির্গত হতে থাকে।যেমন মাগরিবের নামাযের পূর্ণ ওয়াক্ত তথা ১ঘন্টা৩০মিনিট ধারাবাহিক সাদাস্রাব নির্গত হতে থাকে। তাহলে এমতাবস্থায় উনাকে মা'যুর গণ্য করে মা'যুরের হুকুম উনার উপর আরোপ করা হবে।

মা'যুরের হুকুম হল,
মা'যুর ব্যক্তি এক ওয়াক্তের জন্য এক অজু করবেন।
তারপর উক্ত অজু দ্বারা উক্ত ওয়াক্তের ভিতর যতসম্ভব উনি ফরয নফল ইত্যাদি ইবাদত করতে পারবেন।যখন ওয়াক্ত চলে যাবে তখন অজুও শেষ হয়ে যাবে।পূনরায় ভিন্ন ওয়াক্তের জন্য ভিন্ন অজু করতে হবে।ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যা-৫/২২৩/২২৪

নেপকিন জাতীয় কিছু পড়ে নিলে সমস্ত কাপড় নাপাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!
যদি স্রাব লজ্জাস্থানের ভিতরে থাকে, তাহলে সেই স্রাব দ্বারা নামায ভঙ্গ হবে না। এবং অজুও ভঙ্গ হবে না।  তবে লজ্জাস্থানের বাহিরে চলে আসলে অজু ভঙ্গ হবে ।
সাদাস্রাব বের হওয়ার পর যদি লজ্জাস্থানকে টিস্যু দ্বারা মুছা হয়, পানি দ্বারা ধৌত করা না হয়, তাহলেও পবিত্রতা অর্জিত হবে। (শেষ)

আপনি মা'যুর কি না?  সেটা প্রথমে পরীক্ষা করে দেখবেন। আপনি যদি মা'যুর হন, তাহলে নামাযে সাদাস্রাব আসলেও কোনো সমস্যা হবে না। অজু বা নামায কিছুই ভঙ্গ হবে না।তবে যদি আপনি মা'যুর না হন, তাহলে নামাযে সাদাস্রাব দেখামাত্রই অজু ভঙ্গ হয়ে যাবে, এবং নামাযও ভঙ্গ হবে।

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
বায়ূ নির্গত হওয়া এবং সাদাস্রাব বের হওয়ার বিধান একই।

(২)
এটা পরক্রিয়া হবে না।তবে আপনাকে অতীতের জীবন থেকে তাওবাহ করে আসতে হবে।এবং বর্তমানে ঐকাজকে পরিত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুক।

(৩)
যা বের হয়েছে, তা হল মযি।মযি নির্গত হওয়ার দরুণ গোসল ফরয হবে না।

(৪)
আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ,লিখেন,
اﻟْﻘَﺎﻋِﺪَﺓُ اﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔُ: اﻟْﻴَﻘِﻴﻦُ ﻻَ ﻳَﺰُﻭﻝُ ﺑِﺎﻟﺸَّﻚِّ
ﻭَﺩَﻟِﻴﻠُﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺮْﻓُﻮﻋًﺎ {ﺇﺫَا ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺄَﺷْﻜَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْءٌ ﺃَﻡْ ﻻَ ﻓَﻼَ ﻳَﺨْﺮُﺟَﻦَّ ﻣِﻦْ اﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳَﺴْﻤَﻊَ ﺻَﻮْﺗًﺎ، ﺃَﻭْ ﻳَﺠِﺪَ ﺭِﻳﺤًﺎ}
ভাবার্থঃতৃতীয় উসূল,ঈয়াক্বিন(দৃঢ় বিশ্বাস)সন্দের দ্বারা খতম হয় না।[তথা কারো কোনো বিষয় সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে, সে বিষয় সম্পর্কে বিপরিত কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে পূর্ব বিশ্বাসের কোনো ক্ষতি হবে না।অর্থাৎ নতুন করে জন্ম নেয়া সন্দেহ অগ্রহণযোগ্য ]

মুসলিম শরীফের সনদে বর্ণিত হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত হাদীস তার  উজ্জল দৃষ্টান্ত।
হাদীসটি এই,
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যদি কারো তার পায়ুপথে কিছু বের হওয়ার সন্দেহ হয়।এবং উক্ত বের হওয়া না হওয়া নিয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়।তাহলে সে যেন মসজিদ থেকে (অজু করার নিমিত্তে) বের না হয়,যতক্ষণ না সে বায়ুর আওয়াজ শুনছে বা এর দুর্গন্ধ তার নাকে আসছে।(আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর;১/৪৭)............এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/293

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
গলায় পানি পৌছেছে এমন নিছক সন্দেহ দ্বারা রোযায় কোনো সমস্যা হবে না।হ্যা যদি পানি পৌছার ব্যাপারে দৃঢ় ইয়াকিন বিশ্বাস হয়, তাহলে তখন রোযা ফাসিদ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,380 points)
সংযোজন ও ওসংশোধন করা হয়েছে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 143 views
0 votes
1 answer 175 views
...