আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,552 views
in পবিত্রতা (Purity) by (47 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,
মুহতারাম,
১) শুনেছি যে গোসল করার দ্বারাই অজু আদায় হয়ে যায় আর তাই গোসলের পরে অজু করা মাকরূহ। এখানে কি শুধু ফরজ গোসল উদ্দেশ্য নাকি সাধারণভাবে দৈনন্দিন যে গোসল করা হয় সেটিও উদ্দেশ্য?

২) যদি গোসলের (কিংবা ফরজ গোসলের) দ্বারাই অজু আদায় হয়, তাহলে গোসল (কিংবা ফরজ গোসল) করার সময় যদি বায়ু নির্গমন কিংবা পেশাবের ফোঁটা বের হয় সেক্ষেত্রে করণীয় কি? সেক্ষেত্রেও কি গোসলের দ্বারা ওযু আদায় হয়ে যাবে?

৩) নির্দিষ্টভাবে, ফরজ গোসল করার সময় যদি পেশাবের ফোঁটা বের হয় কিংবা বায়ু নির্গত হয় সে ক্ষেত্রে করণীয় কি? এতে কি ফরজ গোসলে কোনোরূপ বিঘ্নতা সৃষ্টি হবে?

1 Answer

0 votes
by (671,200 points)
edited by
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
ওযুর ফরয ৪টি:

১। মুখমণ্ডল ধৌত করা। মুখ ও নাক মুখমণ্ডলের অংশ।
২। দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
৩। মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা।
৪। দুই পা টাখনুসহ ধৌত করা।
,
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: 
يا ايها الذين امنوا اذا قمتم الي الصلوة فاغسلوا وجوهكم و ايديكم الي المرافق وامسحوا بروؤسكم وارجلكم الي الكعبين 

“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ কর এবং পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে নাও।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]
.

সুতরাং গোসল চাই ফরজ গোসল হোক,বা সাধারণভাবে দৈনন্দিন যে গোসল করা হয়, সেটাই হোক,গোসল করার পর বা ঐ অঙ্গ গুলো এমনিতেই ধোয়া হলে অযু হয়ে যাবে।
সেই অযু দিয়ে নামাজ পড়া যাবে।
,
গোসলের পর নতুন করে আর ওজুর দরকার নাই, যদি ওজু না ভাঙ্গে। কেননা হযরত ‘আয়েশা রা. বলেন, নবী মুহাম্মদ সা. ফরজ গোসলের পর আর ওযূ করতেন না। [তিরমিযী : ১০৩, মিশকাত : ৪০৯]
,

হাদীসের পূর্ণরুপঃ 
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مُوسَى، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يَتَوَضَّأُ بَعْدَ الْغُسْلِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَذَا قَوْلُ غَيْرِ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَالتَّابِعِينَ أَنْ لاَ يَتَوَضَّأَ بَعْدَ الْغُسْلِ .

'আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোসল করার পর ওযু করতেন না। —সহীহ। ইবনু মাজাহ– (৫৭৯)।

আবু ঈসা বলেন, এটি হাসান সহীহ হাদীস। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবা এবং তাবিঈদের এটাই মত যে, গোসলের পর ওযু করার দরকার নেই।
(তিরমিজি ১০৭)
,
(২.৩)
অযু ভেঙ্গে যাওয়ার কারন গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারন হলো পায়খানা ও পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন বায়ু, পেশাব-পায়খানা,মযি  ইত্যাদি। [হেদায়া-১/৭]

ইরশাদ হয়েছে,
او جاء أحد منكم من الغاءة
তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসলে (নামাজ পড়তে পবিত্রতা অর্জন করে নাও) (সুরা মায়িদা-৬) 

হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 
كل ما يخرج من السبيلين 

শরীর থেকে যা কিছু বের হয়, তার কারণে অজু ভেঙে যায়...। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস নং-৫৬৮)

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত  গোসল যদি ফরজ গোসল না হয়,তাহলে গোসল  করার সময় যদি বায়ু বের হয়, কিংবা পেশাবের ফোঁটা বের হয় সেক্ষেত্রে গোসলের মধ্যেই যদি অযুর ফরজ অঙ্গ যদি আবার ধৌত করে,তাহলে সেটার দ্বারাই অযু আদায় হয়ে যাবে।
(অযুর ফরয উপরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।)  


★প্রশ্নে উল্লেখিত  গোসল যদি ফরজ গোসল হয়,তাহলে ঐ গোসল করার সময় যদি যদি গোসলের ফরজ আদায় করার পূর্বেই বায়ু বের হয়, কিংবা পেশাবের ফোঁটা বের হয় সেক্ষেত্রে গোসলের ফরজ আবার আদায় করতে হবে।
সুন্নাত আদায় করার দরকার  নেই।
তবে সুন্নাত মুস্তাহাব  সহ আদায় করাই উত্তম।  
আর যদি গোসলের ৩ টি ফরজ আদায় করার পর বায়ু বের হয় বা পেশাব বের হয়,তাহলে শুধু মাত্র অযু করাই   যথেষ্ট। 
গোসলের বাকি কাজ করতে করতে অযুর ফরজ অঙ্গ যদি আবার ধৌত করে,তাহলে সেটার দ্বারাই অযু আদায় হয়ে যাবে।

★গোসলের ফরজ তিনটি 
১. একবার কুলি করা ফরজ।
১. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিস্কার করা ফরজ।
৩. সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো ফরজ।

★গোসলের সুন্নত
১. তিনবার কুলি করা সুন্নত।
২. তিনবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছিয়ে পরিস্কার করা সুন্নাত।
৩. সমস্ত শরীরে তিনবার পানি ঢেলে ভালো করে ঘষে পরিস্কার করা সুন্নাত।

আরো কিছু সুন্নাত,যাহা অনেকে মুস্তাহাবও বলেন।

১. গোসলের নিয়ত করা।
২. গোসলের শুরুতে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধোয়া।
৩. পেশাব পায়খানার রাস্তা পরিস্কার করা।
৪. শরীরের কোনো স্থানে নাপাকী থাকলে তা ধোয়া।
৫. অজু করা।
৬. পানি জমে থাকে এমন স্থানে গোসল করলে, গোসলের পর সেই স্থান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়া।

যার উপর গোসল ফরজ হয়েছে, সে যদি গোসলের একটা ফরজ বাদ দিয়ে শতবার গোসল করে, তবু তার শরীর নাপাক থেকে যাবে।

★ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
গোসলের পদ্ধতি : গোসলের পূর্বে পেশাব করে নেওয়া উচিত। ফরজ গোসলের জন্য-

১. গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে।
২. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ৩ বার ধৌত করতে হবে।
৩. এরপর ডানহাতে পানি নিয়ে বামহাত দিয়ে লজ্জাস্থান এবং তার আশপাশ ভালো করে ধৌত করতে হবে। শরীরের অন্য কোন জায়গায় বীর্য বা নাপাকি লেগে থাকলে সেটাও ধৌত করতে হবে।
৪. এবার বাম হাতকে ভালো করে ধৌত করতে হবে।
৫. তারপর ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ওজুর নিয়মের মত করে ওজু করতে হবে অর্থাৎ “বিসমিল্লাহ” বলে ডান হাতে পানি নিয়ে উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া, তিনবার কুলি করা, তিনবার নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়া, কপালের গোড়া হতে দুই কানের লতি ও থুঁতনির নীচ পর্যন্ত, প্রথমে ডান হাত ও পরে বাম হাত তিনবার ধোয়া (আংগুলে আংটি থাকলে, মেয়েদের হাতে, কানে, নাকে গহনা থাকলে তা নেড়ে-চেড়ে ভিজিয়ে নেয়া, সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা।
৬. অতঃপর প্রথমে মাথায় তিনবার (৩ অঞ্জলি) পানি ঢেলে চুলের গোড়ায় খিলাল করে ভালভাবে পানি পৌঁছাবে।
৭. এবার সমস্ত শরীর ধোয়ার জন্য প্রথমে ৩ বার ডানে তারপরে ৩ বার বামে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধৌত করতে হবে, যেন শরীরের কোন অংশই বা কোন লোমও শুকনো না থাকে। গোসল এমনভাবে করতে হবে, যাতে বগল, নাভী ও কানের ছিদ্র পর্যন্ত বাহিরের পানি দ্বারা ভিঁজে যায়। অতপর আবার সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে।
৮. সবার শেষে একটু অন্য জায়গায় সরে গিয়ে দুই পা ৩ বার ভালোভাবে ধৌত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে
পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল ভালোভাবে ভিজঁতে হবে। গোসলের সময় মেয়েদের মাথার খোপা খোলার দরকার নেই। কেবল চুলের গোড়ায় তিনবার তিন চুল্লু পানি পৌঁছাতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (47 points)
৩ নং প্রশ্নের উত্তরটি বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বায়ু বা পেশাবের ফোঁটা নির্গমন তো জানামতে ফরয গোসল ভাঙার বা গোসল ফরয হওয়ার কোনো কারণ নয়। তাহলে গোসলের ফরযগুলো দোহরাতে হবে কেন?
by (671,200 points)
লেখাটি অপূর্ণাঙ্গ ছিলো।
এখন পুরোটা যুক্ত করেছি।
by
+1
" গোসল যদি ফরজ গোসল হয়,তাহলে ঐ গোসল করার সময় যদি যদি গোসলের ফরজ আদায় করার পূর্বেই বায়ু বের হয়, কিংবা পেশাবের ফোঁটা বের হয় সেক্ষেত্রে গোসলের ফরজ আবার আদায় করতে হবে।"

এখানে আবার আদায় করতে হবে কথাটির অর্থ কী? কারণ বলাই তো হচ্ছে যে, "যদি গোসলের ফরজ আদায় করার পূর্বেই বায়ু বের হয়, কিংবা পেশাবের ফোঁটা বের হয়"! অর্থাৎ তখনো ফরজ আদায়ই করা হয় নি। 
হ্যাঁ। কথাটা যদি এমন হয় যে, "গোসল যদি ফরজ গোসল হয়,তাহলে ঐ গোসল করার সময় যদি অজুর ফরজগুলো আদায় করার পরও বায়ু বের হয়, কিংবা পেশাবের ফোঁটা বের হয় সেক্ষেত্রে সেগুলো আবার আদায় করতে হবে। আর গোসল যথারীতি শেষ করবে।" তাহলে স্পষ্ট হত। 
by
amr foroz gosol korar majhe ami jokhon komore pani dai tokhon bar bar mona hoy ja fota fota pesab porce.tokhon ami abr notun kora matha theke pa porjonto dhui.avabe amr onk time lege jay.amr ki puro body abr dhuta hobe naki kuli kora nake pani dia oi jayga ta dhuya nilai hobe.kau amk clear kore bolun please

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...