আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
158 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম, আমি প্রবাসে থাকি। আমার একমাত্র বোন এবং পিতা মাতা আছেন। আমার পিতা মাতা এক দুই বছর পর পর প্রবাসে আমাদের কাছে বেড়াতে আসেন। এর আগে প্রতিবার আমার কোন প্রয়োজন যেমন সন্তান জন্মদানে তাদের সাহায্য দরকার ছিলো। গত বছর ২০২১ এ তারা শুধুমাত্র আমাদের দেখতে আসেন। তারা তিন মাস ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই আমি তাদের সাথে অতিরিক্ত সময় কাটাই যেহেতু আমার মা আমার কাছে থাকেন না। আমার বোনও এসময় আমার কাছে চলে আসে। আমি আমার মা এবং বোনের সাথে অবসর সময় যাপন করি। যেহেতু তারা মাত্র তিন মাস আছেন। এতে আমার স্বামী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হন কারণ তার সাথে আমি সময় কম কাটাই। এর আগে তিন বার আমার পরিবার যখন এসেছিলো সে এরূপ ব্যবহার করে নাই। ২০২০ এ তার মা মা যায়। সেই কারণে কিনা জানিনা আমার পরিবারের সাথে আমার বেশি সময় কাটানো দেখে সে অত্যন্ত বিরক্ত হয় এবং আমার পিতা মাতা বোনকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর হতে আমার তাকে একেবারেই সহ্য হয়না। আমি স্ত্রী হিসেবে তার প্রতি সমস্ত দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু কিছুই মন থেকে করিনা। আমাদের তিনটি সন্তান রয়েছে সুতরাং তাকে ছেড়ে দেয়াও সম্ভব নয়। তার আচরণে কোন অনুসোচনা নাই। সে মনে করে যা করেছে ঠিক। সেইসাথে তার বোনেরা টেলিফোনে তাকে প্ররোচনা দেয়। আমার কিছুই ভালো লাগেনা। আমি জানি আমার পরিবার কখনোই আর আমার বাসায় আসবে না। এই কষ্ট আমি কিভাবে সহ্য করবো? আমি এবার হাজ্জ এ যেতে চাই ইনশাআল্লাহ। বাচ্চাদের আমার পিতা মাতার রাখার কথা। কিভাবে কি করবো জানিনা। যাকে এত অসহ্য লাগে তাকে স্বামী হিসাবে মেনে কিভাবে জীবন পার করবো? আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ

1 Answer

0 votes
by (58,740 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

স্বামী-স্ত্রী একজন আরেক জনের পোষাক সরূপ। তাই তারা একে অপরে পোষাকের মত মিলে মিশে থাকবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ ۚ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ ۗ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ ۖ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ ۚ

রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ আল্লাহ অবগত রয়েছেন যেতোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলেসুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেনতা আহরন কর। (সুরা বাকারাআয়াত ১৮৭)

 

সহীহ ইবনে হিব্বানে এসেছে-

عَنْ طَلْقِ بْنِ عَلِيٍّ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا الرَّجُلُ دَعَا زَوْجَتَهُ لِحَاجَتِهِ فَلْتجبه وَإِنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُّورِ " .

তালক ইবনু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘স্বামী যদি মনোবাসনা পূরণের জন্য তার স্ত্রীকে ডাকে তবে সে যদি চুলার কাছেও থাকে তবুও যেন অবশ্যই সাড়া দেয়। ’ (সহীহ ইবনে হিব্বান৪১৬৫) 

হাদীসটি আরো কিতাবে রয়েছে- মুসনাদে আহমদ, ১৬৩৩১আল- মুহাল্লা১০/৪১আস সুনানুল কুবরা৮৯৭১আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৩/১০৩

স্বামীর জন্য জরুরি হলো স্ত্রীর অধিকার রক্ষা করা,তার সাথে সদব্যবহার করা।

  

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

ألا واستوصوا بالنساء خيرا، فإنما هن عوان عندكم ليس تملكون منهن شيئا غير ذلك

শোন হে! তোমরা আমার পক্ষ হতে নারীদের প্রতি সদাচরণের উপদেশ গ্রহণ কর। তারা তো তোমাদের কাছে আটকে আছে। তোমরা তাদের কাছ থেকে এছাড়া আর কিছুর অধিকার রাখো না। (জামে তিরমিযী, হাদীস: ১০৮৩

 

মহানবী সা: বলেছেন “ যে স্ত্রী স্বামীর ডাকে সাঁড়া না দেয় এবং স্বামী রাগান্বিত অবস্হায় সারারাত একাকী কাটায়, সে স্ত্রীর উপর ফিরিশ্তারা সকাল পর্যন্ত লা’নত দিতে থাকে ” ছহীহুল বোখারি ৫১৯৩, ছহীহ মুসলিম ১৪৩৬, সুনানে আবু দাউদ ২১৪১, নাসাঈ।

 

মহানবী সা: বলেছেন “ তিন ব্যক্তির নামাজ তাঁদের মাথা অতিক্রম করেনা অর্থাৎ কবুল হয়না তন্মধ্যে একজন হলেন অবাধ্য স্ত্রী , যে স্বামীর ডাকে সাঁড়া দেয়না এবং স্বামী রাগান্বিত অবস্হায় ঘুমায় ” তাবরানী ১০৮৬, সুনানে তিরমিযি ৩৬০, হাকেম, সিলসিলা ছহীহা ২৮৮।

 

মহানবী সা: বলেছেন “ পরকালে আল্লাহপাক স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ স্ত্রীর দিকে তাকাবেন না ” নাসাঈ কুবরা ৯১৩৫, বাযযার ২৩৪৯,তাবরানী,হাকেম, ২৭৭১, বাইহাক্বী ১৪৪৯৭,সিলসিলাহ ছহীহা ২৮৯।

 

মহানবী সা: বলেছেন “ কোন স্ত্রী যদি তাঁর স্বামীর অধিকার সম্পর্কে জানতো, দিনে বা রাতের খাবার শেষ করে স্বামীর পাশে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতো ” ছহীহুল জামে ৫২৫৯, তাবরানী।

 

মহানবী সা: বলেছেন “যে স্ত্রী তাঁর স্বামীকে কষ্ট দেয়, জান্নাতের হুরেরা বলেন “তোমার স্বামীকে কষ্ট দিওনা তিনি তোমার কাছে সাময়িক মেহমান মাত্র তোমাকে ছেড়ে অচিরেই আমাদের কাছে ফিরে আসবে। তিরমিযি ১১৭৪, ইব্নে মাজাহ ২০১৪।

 

মা- বাবা সহ সকলের মৃত্যুতে শোক পালন হচ্ছে  মাত্র ৩ দিন পর্যন্ত পক্ষান্তরে স্বামীর মৃত্যুতে শোক পালন করতে হবে ৪ মাস ১০ দিন

সূরা আল বাক্বারা ২৩৪, ছহীহুল বোখারি ১২৮০

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

 

১. বোন, বিয়ের পর একজন মেয়েকে তার পিতা মাতার থেকেও তার স্বামীকে প্রাধাণ্য দিতে হবে। তাই এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন- আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত যদি অন্য কাউকে সেজদা করা জায়েজ হতো তাহলে মহিলাদেরকে তার স্বামীকে সেজদা করতে বলা হতো। তাহলে চিন্তা করুন, স্বামীর গুরুত্ব কতটুকু?

বোন, স্বামী শুধু দুনিয়াতে আপনার সঙ্গী হিসেবে থাকবেন না। বরং জান্নাতেও থাকবেন। সুতরাং স্বামীকে কোনো ভাবেই কষ্ট দিবেন না। আর ডিভোর্সের কথা ভুলেও চিন্তা করবেন না। বোন, সাংসারিক জীবনে অনেক কষ্ট করেই সামনে আগাতে হয়। মন মালিন্য, টুকটাক ঝগড়া থাকবেই। তাই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। আল্লাহ তায়ালার কাছে দুআ করুন। তিনি সব কিছু সহজ করে দিবেন।

 

২. প্রিয় বোন, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মুটেও ঠিক হয়নি যে, আপনার বাড়ীতে পিতা মাতা  ও বোন বেড়াতে আসলে তাদেরকেই প্রাধাণ্য দিয়ে স্বামীকে তেমন একটা সময় দেননি। আপনার উচিত ছিলো যে, সবাইকেই সময় সমান দেওয়া। কারণ, বিয়ের পর একজন মেয়েকে তার পিতা মাতার থেকেও তার স্বামীকে প্রাধাণ্য দিতে হবে।

 

৩. তবে আপনার স্বামীর জন্যও উচিত ছিলো যে, আপনাকে একটু ছাড় দেওয়া  এবং তার জন্য এটা মুটেও ঠিক হয়নি যে, আপনার পিতা মাতা ও বোনকে অপমান করা। কারণ, তাদেরকে যথাযথ মেহমানদারি করাও তার দায়িত্ব ছিলো। সুতরাং তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার কারণে অবশ্যই আপনার স্বামীর গোনাহ হবে। তবে তাই বলে স্বামীর সাথে আপনার ব্যবহার খারাপ করা ঠিক হবে না। বরং করলে  এতে আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হবেন।

 

৪. দুআ করি আল্লাহ তায়ালা আপনাকে হজ্জে মাবরুর করার তাওফীক দান করুন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...