آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
তরজমা: রাসূল ঈমান আনয়ন করেছেন ঐ সকল বস্তু সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও। সবাই ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর নবীগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর নবীগণের মাঝে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা আপনার নিকট ক্ষমা চাই, ওহে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সকলেই আপনারা দিকে প্রত্যাবর্তন করি। [সূত্র : সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৫।]
وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর এবং তাঁর রাসূলগণের ওপর ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে”। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত ১৩৬।
হাদীসে জিবরাঈলে উল্লেখ আছে, হযরত জিবরাঈল আ. আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
اَنْ تُؤ مِنَ بِا للّهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه والْيَؤمِ الاَخِرِ وَتُؤْمِنُ بِا لْقَدْرِ خَيْرِه وَ شَرِّه
ঈমানের হাকীকত হলো, তুমি মনে-প্রাণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের ওপর, আসমানী কিতাবসমূহের ওপর, আল্লাহ তা‘আলার নবী-রাসূলগণের উপর, কিয়ামত দিবসের ওপর এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার ওপর। [সূত্র: বুখারী খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২ ও মুসলিম। মিশকাত শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১১]
উল্লেখিত আয়াত ও অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’-এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালের মাধ্যমে এ কথাগুলোরই স্বীকৃতি জানানো হয় এবং মনে-প্রাণে বদ্ধমূল বিশ্বাসের ঘোষণা করা হয় যে,
أَ مَنْتُ باِ للهِ وَ مَلأَئِكَتِه وَ كُتُبِهِ وَرُسُلِه وَالْيَوْ مِ الأخِرِ وَالقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ ا للهِ تَعَالي والْبَعْثِ بَعْدَا لْمَوْتِ
আমি ঈমান আনলাম বা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিশ্বাস করলাম-১. আল্লাহ তা‘আলাকে, ২. তাঁর ফেরেশতাগণকে, ৩। তাঁর প্রেরিত সকল আসমানী কিতাবকে, ৪. তাঁর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলকে, ৫. কিয়ামত দিবসকে অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বজগত একদিন শেষ হবে, তাও বিশ্বাস করি, ৬। তাকদীরকে বিশ্বাস করি অর্থাৎ জগতে ভালো-মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট, তাঁরই পক্ষ হতে নির্ধারিত এবং মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন পুনর্বার জীবিত হতে হবে, তাও অটলভাবে বিশ্বাস করি।
আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যত বিধান-আহকাম হাসিল করেছেন এবং অকাট্য দলীল দ্বারা তা প্রমাণিত হয়েছে তার কোন একটি বাদ না দিয়ে সব গুলোকে মনে প্রাণে বদ্ধমূল ভাবে বিশ্বাস করা।
আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-নিষেধ সঠিকভাবে এবং পূর্ণভাবে আমল করার মাধ্যমে এ ঈমান কামিল বা শক্তিশালী হয়।
আর আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনে ত্রুটি করলে ঈমান নাকেস বা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঈমানের নূর-নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এবং তাওবা না করলে আল্লাহ না করুন ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
১. আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান
আল্লাহ তা‘আলার ওপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তাঁর কোন প্রকার অংশ বা অংশীদার বা শরীক নেই, তাঁর কোন কিছুর অভাব নেই। তিনিই সকলের সব অভাব পূরণকারী। তিনি কারো পিতা নন, পুত্রও নন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। একমাত্র তিনিই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা। কোন জ্ঞান বা চক্ষু আল্লাহ তা‘আলাকে আয়ত্ত করতে পারে না। তিনি চিরকাল আছেন এবং থাকবেন। তিনি অনাদি ও অনন্ত। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। তিনিই একমাত্র ইবাদত পাওয়ার যোগ্য।
সারকথা, আল্লাহ তা‘আলার বিষয়ে তিনটি কথা অবশ্যই মানতে হবে।
ক. তিনি এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয় । তাঁর কোন শরীক নেই। সৃষ্ট জীবের সাথে তাঁর কোন তুলনা হয় না।
খ. তাঁর অনেকগুলো অনাদি-অনন্ত সিফাত বা গুণ আছে, সেগুলো একমাত্র তাঁর জন্যেই নির্ধারিত। সেসব গুনের মধ্যে অন্য কেউ শরীক নেই। যেমন: তিনিই সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, হায়াত-মওতদাতা, বিধানদাতা, গায়েব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর মৃত্যু নেই। অন্য সবকিছুই ক্ষয়শীল ও ধ্বংসশীল, কিন্তু তাঁর ক্ষয়ও নেই, ধ্বংসও নেই। সবকিছুর ওপর তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত। সবকিছুর ওপরই তাঁর ক্ষমতা চলে। আল্লাহ তা‘আলা কারো মুখাপেক্ষী নন, সব-ই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি আগুণকে পানি এবং পানিকে আগুণ করতে পারেন। এই যে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আকাশ, বাতাস, চন্দ্র সূর্য ইত্যাদি বিদ্যমান, তিনি হুকুম করলে মুহূর্তের মধ্যে এসব নিস্তনাবুদ হয়ে যাবে। তিনি সর্বজ্ঞ, তিনি না জানেন-এমন কিছুই নেই। মনের মধ্যে যে ভাবনা বা কল্পনা উদয় হয়, তাও তিনি জানেন। তিনি সবকিছুই দেখছেন। সবকিছুই শুনছেন। মৃদু আওয়াজ এমনকি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণ আওয়াজও তিনি শুনেন। গাইবের বিষয় একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন। তিনি ছাড়া আর কেউ গাইব জানেন না। এমনকি নবী-রাসূল অলী ও নন। আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র হাযির-নাযির। তিনি ছাড়া আর কেউ হাযির নাযির নন। এমনকি নবী-অলীগণ ও নন।
তিনি যা ইচ্ছা, তা-ই করতে পারেন। কোন পীর, ওলী, পয়গাম্বর বা ফেরেশতা তাঁর ইচ্ছাকে রদ বা প্রতিহত করতে পারে না। তিনি আদেশ ও নিষেধ জারি করেন।
তিনি একমাত্র বন্দেগীর উপযুক্ত। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য হতে পারে না। অন্য কারো ইবাদত-বন্দেগী করা যায় না। তাঁর কোন অংশীদার কিংবা সহকর্মী বা উযীর-নাযীর নেই। তিনি একক কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনিই সর্বোপরি বাদশাহ, রাজাধিরাজ; সবই তাঁর বান্দা ও গোলাম । তিনি বান্দাদের ওপর বড়ই মেহেরবান।
তিনি সব দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র। তাঁর মাঝে আদৌ কোন রকমের দোষ-ত্রুটি নেই। তাঁর ক্রিয়া-কর্ম, আদেশ-নিষেধ সবই ভালো ও মঙ্গলময়, কোন একটিতেও বিন্দুমাত্র অন্যায় বা দোষ নেই। তিনিই বিপদ-আপদ দেন এবং বিপদ-আপদ হতে উদ্ধার করেন, অন্য কেউ কোন প্রকার বিপদ-আপদ হতে মুক্তি দিতে পারে না।
প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা তাঁরই। তিনিই সকল সম্মান ও মর্যাদার অধিপতি। তিনিই প্রকৃত মহান। একমাত্র তিনিই নিজেকে নিজে বড় বলতে পারেন। এতদ্ব্যতীত অন্য কারো এ রকম বলার ক্ষমতা ও অধিকার নেই। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, এবং সৃষ্টি করবেন। তিনি এমন দয়ালু যে, দয়া করে অনেকের গুনাহ তিনি মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল।
তিনি অত্যন্ত পরাক্রমশালী। তাঁর প্রভাব ও প্রভুত্ব সকলের ওপর; কিন্তু তাঁর ওপর কারো প্রভাব বা প্রভুত্ব চলে না।
তিনি বড়ই দাতা। সমস্ত জীবের ও যাবতীয় চেতন-অচেতন পদার্থের আহার তিনি দান করেন। তিনি রুযীর মালিক। রুযী কমানো-বাড়ানো তাঁরই হাতে। তিনি যার রুযী কমাতে ইচ্ছা করেন, তার রুযী কম করে দেন। যার রুযী বাড়াতে ইচ্ছা করেন, বাড়িয়ে দেন।
কাউকে উচ্চপদস্থ বা অপদস্থ করার ক্ষমতা তাঁরই হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। এসবই তাঁরই ক্ষমতায়, তাঁরই ইখতিয়ারে। অন্য কারো এতে কোন রকম ক্ষমতা বা অধিকার নেই। তিনি প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুসারে যার জন্যে যা ভালো মনে করেন, তার জন্যে তাই ব্যবস্থা করেন। তাতে কারো কোন প্রকার প্রতিবাদ করার অধিকার নেই।
তিনি ন্যায়পরায়ণ, তাঁর কোন কাজেই অন্যায় বা অত্যাচারের লেশমাত্র নেই। তিনি বড় সহিষ্ণু, অনেক কিছু সহ্য করেন। কত পাপিষ্ঠ তাঁর নাফরমানী করছে, তাঁর ওপর কত রকম দোষারোপ এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করছে, তারপরও তিনি তাদের রিযিক জারি রেখেছেন।
তিনি এমনই কদরশিনাস-গুণগ্রাহী এবং উদার যে, তাঁর আদৌ কোন প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করলে এবং তাঁর আদেশ পালন করলে, তিনি তার বড়ই কদর করেন এবং সন্তুষ্ট হয়ে আশাতীত রূপে পুরস্কার দান করেন। তিনি এমনই মেহেরবান ও দয়ালু যে, তাঁর নিকট দরখাস্ত করলে [অর্থাৎ দু‘আ করলে] তিনি তা মঞ্জুর করেন। তাঁর ভাণ্ডার অফুরন্ত, তাঁর ভাণ্ডারে কোন কিছুরই অভাব নেই। তিনি অনাদি -অনন্তকাল ব্যাপী সকল জীব-জন্তু ও প্রাণিজগতের আহার যোগান দিয়ে আসছেন।
তিনি জীবন দান করেছেন, ধন-রত্ন দান করছেন, বিদ্যা-বুদ্ধি দান করেছেন। অধিকন্তু আখিরাতেও অসংখ্য ও অগণিত সাওয়াব ও নেয়ামত দান করবেন। কিন্তু তাঁর ভাণ্ডার তবুও বিন্দুমাত্র কমেনি বা কমবে না।
তাঁর কোন কাজই হিকমত ও মঙ্গল ছাড়া নয়। কিন্তু সব বিষয় সকলের বুঝে আসে না। তাই নির্বুদ্ধিতা বশত কখনো না বুঝে দিলে দিলে বা মুখে প্রতিবাদ করে ঈমান নষ্ট করা উচিত নয়। তিনি সব কর্ম সমাধানকারী। বান্দা চেষ্টা করবে, কিন্তু সে কর্ম সমাধানের ভার তাঁরই কুদরতী হাতে ন্যস্ত।
তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং কিয়ামতের দিন পুনর্বার সকলকে জীবিত করবেন। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। তাঁর হাকীকত ও স্বরূপ এবং তিনি যে কত অসীম, তা কারো বোঝার ক্ষমতা নেই। কেবলমাত্র তাঁর সিফাত অর্থাৎ গুণাবলী ও তাঁর কার্যাবলীর দ্বারাই তাকে আমরা চিনতে পারি।
মানুষ পাপ করে যদি খাঁটিভাবে তাওবা করে, তবে তিনি তা কবুল করেন। যে শাস্তির উপযুক্ত, তাকে তিনি শাস্তি দেন। তিনি হিদায়ত দেন। তাঁর নিদ্রা নেই। সমস্ত বিশ্বজগতের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানে তিনি বিন্দুমাত্রও ক্লান্ত হন না। তিনিই সমস্ত বিশ্বের রক্ষক।
এ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলাকে চিনবার জন্যে তাঁর কতগুলো সিফাতে কামালিয়া অর্থাৎ মহৎ গুণাবলীর বর্ণনা দেওয়া হলো। এতদ্ব্যতীত যত মহৎ গুণ আছে, আল্লাহ তা‘আলা তৎসমুদয় দ্বারা বিভূষিত। ফলকথা এই যে, সৎ ও মহৎ যত গুণ আছে, অনাদিকাল যাবৎ সে সব আল্লাহ তা‘আলার মধ্যে আছে এবং চিরকাল থাকবে। কিন্তু কোন দোষ ত্রুটির লেশমাত্রও তাঁর মধ্যে নেই।
আল্লাহ তা‘আলার গুণ সম্বন্ধে কুরআন মজীদে এবং হাদীস শরীফের কোন কোন জায়গায় এরূপ উল্লেখ আছে যে, তিনি আশ্চর্যান্বিত হন, হাসেন, কথা বলেন, দেখেন, শুনেন, সিংহাসনাসীন হন, নিম্ন আসমানে অবতীর্ণ হন। তাঁর হাত, পা, মুখ ইত্যাদি আছে। এসব ব্যাপারে কখনো বিভ্রান্তিতে পড়তে বা তর্ক-বিতর্ক করতে নেই। সহজ-সরলভাবে আমাদের আক্বীদা ও একীন এই রাখা উচিত যে, আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্টজীবের মতো তাঁর ওঠা-বসা বা হাত-পা তো নিশ্চয়ই নয়। তবে কেমন? তা আমাদের জ্ঞানের বাইরে। প্রিয় ভ্রাতৃবৃন্দ! সাবধান! সাবধান!!! যেন শয়তান ধোঁকা দিয়ে গোলকধাঁধায় না ফেলতে পারে। একিনী আক্বীদা ও অটল বিশ্বাস রাখবেন যে, আমাদের বা অন্য কোন সৃষ্ঠজীবের সাদৃশ্য হতে আল্লাহ তা‘আলা সম্পূর্ণ পবিত্র ও মহান।
এ দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চোখে কেউ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পারেনি। কখনো পারবেও না। তবে জান্নাতে গিয়ে জান্নাতীরা আল্লাহ পাকের দীদার লাভ করবে। জান্নাত এটাই-সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামত হবে।
গ. একমাত্র তিনিই মাখলুকের ইবাদত-বন্দেগী পাওয়ার উপযুক্ত। আর কেউ ইবাদত পাওয়ার উপযুক্ত নয়।
আল্লাহ তা’লার ওপর ঈমান আনার অর্থ শুধু আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব স্বীকার করা নয়; বরং অস্তিত্ব স্বীকার করার সাথে সাথে তার উপরোক্ত গুণবাচক কথাগুলো স্বীকার করাও জরুরী। নতুবা আল্লাহপাকের ওপর সম্পূর্ণরূপে ঈমান আনা হবে না এবং সে ঈমান গ্রহণযোগ্যও হবে না।
★২. ফেরেশতাগণের ওপর ঈমান
ফেরেশতাগণের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো এ কথা বিশ্বাস করা যে, মহান আল্লাহ এক ধরণের মাখলুককে নূরের দ্বারা সৃষ্টি করে তাদেরকে আমাদের চক্ষুর অন্তরালে রেখেছেন। তাদেরকে ফেরেশতা বলে। তাঁরা পুরুষ বা মহিলা কোনটিই নন। বরং তাঁরা ভিন্ন ধরনের মাখলুক। অনেক ধরণের কাজ আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সোপর্দ করে রেখেছেন। যেমন: নবীগণের আ. নিকট অহী আনয়ন করা, মেঘ পরিচালনা করা, রুহু কবয করা, নেকী-বদী লিখে রাখা ইত্যাদি। তাঁরা সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। তাঁরা বিন্দুমাত্র আল্লাহর নাফরমানী করেন না। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় ও ফরমাবরদার বান্দা। তাঁদের মধ্যে চারজন ফেরেশতা যথা: হযরত জিবরাঈল আ. হযরত মীকাঈল আ., হযরত ইসরাফীল আ. ও হযরত আযরাঈল আ. অতিপ্রসিদ্ধ ।
★জিন সম্বন্ধে আক্বীদা
আরেক প্রকার জীবকে আল্লাহ তা‘আলা আগুনের দ্বারা সৃষ্টি করে আমাদের চক্ষুর অগোচর করে রেখেছেন। তাদেরকে জিন বলে। তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ সবরকম হয়। তারা নারী-পুরুষও বটে এবং তাদের সন্তানাদিও হয়। তাদের খানা-পিনার প্রয়োজনও হয়। জিন মানুষের ওপর আছর করতে পারে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ ও বড় দুষ্ট হচ্ছে ‘ইবলিশ শয়তান’। হাশরের ময়দানে জিনদেরও হিসাব-নিকাশ হবে। এ কথা কুরআনে কারীমে উল্লেখ আছে। সুতরাং তা বিশ্বাস করা ঈমানের অংশ।
★৩. আল্লাহর প্রেরিত কিতাবসমূহের ওপর ঈমান
আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত কিতাবসমূহের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো, এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতি ও জিন জাতির হিদায়াতের জন্যে ছোট-বড় বহু কিতাব হযরত জিবরাঈল আ. এর মাধ্যমে পয়গাম্বরগণের আ. ওপর নাযিল করেছেন, তারা সে সব কিতাবের দ্বারা নিজ নিজ উম্মতকে দ্বীনের কথা শিখিয়েছেন। উক্ত কিতাবসমূহের মধ্যে চারখানা কিতাব বেশি প্রসিদ্ধ, যা প্রসিদ্ধ চারজন রাসূলের আ. ওপর নাযিল করা হয়েছে। তার মধ্যে কুরআন শরীফ সর্বশেষ কিতাব। এরপরে আর কোন কিতাব নাযিল হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত কুরআন শরীফের হুকুমই চলতে থাকবে। পবিত্র কুরআনের কোন সূরা আয়াত এমনকি কোন শব্দ হরকত, নুকতার মধ্যে এমনিভাবে অর্থের মাঝেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিলুপ্তি আসেনি এবং কিয়ামত পর্যন্ত আসাও সম্ভব নয়। কারণ স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের হিফাযতের ওয়াদা করেছেন এবং তা নিজের দায়িত্বে রেখেছেন। অন্যান্য কিতাবগুলোকে বেদ্বীন লোকেরা অনেক কিছু পরিবর্তন করে ফেলেছে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে সেগুলোর হিফাযতের ওয়াদা করেন নি। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরা, প্রতিটি আয়াত, প্রতিটি হরফ এমনকি প্রতিটি নুকতাহ ও হরকতের প্রতি ঈমান রাখতে হবে। কোন একটি অস্বীকার করলে ঈমান থাকবে না। কাফের হয়ে যাবে।
কুরআন শরীফ ও তার ব্যাখ্যা হাদীস শরীফে তিনি দ্বীন সম্বন্ধীয় সব কথা বর্ণনা করে দিয়েছেন। কোন অংশ গোপন রাখেন নি। সুতরাং, এখন নতুন কোন কথা বা প্রথা চালু করা দুরস্ত নয়। দ্বীনের ব্যাপারে এরূপ নতুন কথাকে ইলহাদ বা বিদ‘আত বলে। যা অত্যন্ত মারাত্মক গুনাহ ও পথভ্রষ্টতা।
কুরআন-হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া কুফরী কাজ। কোন ফরযকে অস্বীকার করা কুফরী কাজ। তেমনিভাবে কোন হালালকে হারাম মনে করা বা কোন অকাট্য হারাম বা গুনাহকে হালাল হিসাবে বিশ্বাস করা কুফরী। এর দ্বারা ঈমান চলে যায়।
★৪. নবী-রাসূল আ. এর ওপর ঈমান
নবী-রাসূল আ.- এর ওপর ঈমান আনার অর্থ এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হিদায়াতের জন্যে এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখাবার জন্য স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে বাছাই করে বহুসংখ্যক পয়গাম্বর অর্থাৎ নবী-রাসূল আ. মনোনীত করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। যাতে করে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করে দুনিয়াতে কামিয়াব হতে পারে এবং পরকালে দোযখ থেকে মুক্তি লাভ করে বেহেশত হাসিল করতে পারে।
পয়গাম্বরগণ সকলেই মাসুম বা নিষ্পাপ। তাঁরা কোন প্রকার পাপ করেন না। নবীগণ মানুষ। তাঁরা খোদা নন। খোদার পুত্র নন। খোদার রূপান্তর (অবতার) নন। বরং তাঁরা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি। নবীগণ আল্লাহর বাণী হুবহু পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁদের সঠিক সংখ্যা কুরআন শরীফ বা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে বর্ণনা করেন নি। কাজেই নিশ্চিতভাবে তাঁদের সঠিক সংখ্যা কেউ বলতে পারে না। এ কথা যদি ও প্রসিদ্ধ যে, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন কিন্তু কোন সহীহ হাদীস দ্বারা তা প্রমাণিত নয়। শুধু এতটুকু বলা যায় যে, বহুসংখ্যক পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন।
আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তাঁদের দ্বারা অনেক অসাধারণ ও অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঐ সব ঘটনাকে মু‘জিযা বলে। নবীগণের মু‘জিযাসমূহ বিশ্বাস করাও ঈমানের অঙ্গ।
পয়গাম্বরগণের আ. মধ্যে সর্বপ্রথম দুনিয়াতে আগমন করেছেন হযরত আদম আ. এবং সর্বশেষ অথচ সর্বপ্রধান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতাবা সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পরে অন্য কেউ দুনিয়াতে নবী বা রাসূল হিসেবে আগমন করেননি এবং করবেনও না। হযরত ঈসা আ. কিয়ামতের পূর্বে যদিও আগমন করবেন, কিন্তু তিনি তো পূর্বেই নবী ছিলেন। নতুন নবী হিসেবে তিনি আগমন করবেন না। আমদের নবী খাতামুন নাবিয়্যীন বা শেষনবী। তাঁর পরে নতুনভাবে আর কোন নবী আসবেন না; তারপর আসল বা ছায়া কোনরূপ নবীই নাই। বরং তাঁর আগমনের মাধ্যমে নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের নবীর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে যত জিন বা ইনসান ছিল, আছে বা সৃষ্টি হবে, সকলের জন্যেই তিনি নবী। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত পৃথিবীতে একমাত্র তাঁরই হুকুম এবং তরীকা সকলের মুক্তি ও নাজাতের জন্যে অদ্বিতীয় পথ হিসেবে বহাল থাকবে। অন্য কোন ধর্ম, তরীকা বা ইজম এর অনুসরণ কাউকে আল্লাহর দরবারে কামিয়াব করতে পারবে না। আমাদের নবীর পরে অন্য কেউ নবী হয়েছেন বা নবী হবেন বলে বিশ্বাস করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। তেমনিভাবে কেউ নতুন নবী হওয়ার দাবি করলে বা তার অনুসরণ করলে, সেও কাফির বলে গণ্য হবে।
হযরত ঈসা আ. এখনও আসমানে জীবিত আছেন। তাঁকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন, ইহা সত্য। কুরআন হাদীসে প্রমাণিত। তাই ইহা বিশ্বাস করতে হবে, অন্যথায় ঈমান থাকবে না, তিনি কিয়ামতের পূর্বে আসমান থেকে জমিনে অবতরণ করবেন। আমাদের নবীর অনুসারী হয়ে। হযরত ঈসা আ.- এর ব্যাপারে পুত্রবাদ ও কর্তৃত্বদের বিশ্বাস কুফরী।
দুনিয়াতে যত পয়গাম্বর এসেছেন, সকলেই আমাদের মাননীয় ও ভক্তির পাত্র। তাঁরা সকলেই আল্লাহর হুকুম প্রচার করেছেন। তাঁদের মধ্যে পরস্পরে কোন বিরোধ ছিল না। সকলেই পরস্পর ভাই ভাই ছিলেন। হ্যাঁ, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্য হিকমতের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হুকুম জারি করেছেন। আর এই সামান্য বিভিন্নতাও শুধু আমলের ব্যাপারে, ঈমান আকীদার ব্যাপারে নয়। আকীদাসমূহ আদি হতে অন্ত পর্যন্ত চিরকাল এক। আক্বীদার মধ্যে কোন প্রকার রদবদল বা পরিবর্তন হয়নি, আর হবেও না কখনো। পয়গাম্বরগণ সকলেই কামিল ছিলেন। কেও নাকিস বা অসম্পূর্ণ ছিলেন না। অবশ্য তাঁদের মধ্যে কারো মর্যাদা ছিল বেশি, কারো মর্যাদা ছিল তুলনামূলকভাবে কম। সকল নবী নিজ নিজ কবরে জীবিত আছেন। এজন্য নবীগণকে ‘হায়াতুন্নবী’ বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মর্তবা সর্বাপেক্ষা বেশি। তাই বলে নবীগণের মধ্যে তুলনা করে একজনকে বড় এবং একজনকে হেয় বা ছোট করে দেখানো বা বর্ণনা করা নিষেধ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম-এর সমস্ত কথা মেনে নেয়া জরুরী। তাঁর একটি কথাও অবিশ্বাস করলে বা সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করলে কিংবা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করলে বা দোষ বের করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।
ঈমানের জন্যে আমাদের নবীর সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মি‘রাজ ভ্রমণের কথা বিশ্বাস করাও জরুরী। যে মি‘রাজ বিশ্বাস করে না, সে বেদ্বীন। তার ঈমান নষ্ট হয়ে গেছে।
★সাহাবীর পরিচিতিঃ
যেসব মুসলমান আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বচক্ষে দেখেছেন, এবং ঈমানের হালতে ইনতিকাল করেছেন, তাঁদেরকে ‘সাহাবী’ বলা হয়। সাহাবীগণের অনেক ফযীলতের কথা কুরআন ও হাদীসে এসেছে। সমস্ত সাহাবী রা. গণের সাথে মুহাব্বত রাখা ও তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা পোষণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
তাঁদের কাউকে মন্দ বলা আমদের জন্যে সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সাহাবীগণ যদিও মাসুম বা নিষ্পাপ নন, কিন্তু তাঁরা মাগফূর বা ক্ষমাপ্রাপ্ত। সুতরাং, পরবর্তী লোকদের জন্য তাঁদের সমালোচনা করার কোন অধিকার নেই। তাঁরা সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
তাঁরা সকলেই আদিল অর্থাৎ নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী এবং সত্যের মাপকাঠি। তাঁদের দোষ চর্চা করা হারাম এবং ঈমান বিধ্বংসী কাজ। ‘আকীদাতুত তাহাবী’ কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘সাহাবীগণের প্রতি মুহাব্বত-ভক্তি রাখা দ্বীনদারী ও ঈমানদারী এবং দ্বীনের ও ঈমানের পূর্ণতা। আর তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা বা তাদের বিরূপ সমালোচনা করা কুফরী, মুনাফেকী এবং শরী‘আতের সীমার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সমস্ত সাহাবীগণের মাঝে চারজন সর্বপ্রধান। তাঁদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা., তিনিই প্রথম খলীফা বরহক এবং তিনি সমস্ত উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রা., তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গণী রা. এবং চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা.। সকল সাহাবায়ে কিরামের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার চির সন্তুষ্টির সুসংবাদ দিয়েছেন। বিশেষ করে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন। এই দশজনকে আশারায়ে মুবাশশারা (সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন) বলা হয়। তাঁরা হলেন -১. হযরত আবু বকর রা., ২. হযরত ওমর ফারুক রা., ৩। হযরত উসমান রা. ৪. হযরত আলী রা., ৫. হযরত তালহা রা., ৬. হযরত যুবায়ের রা. ৭. হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা., ৮. হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াককাস রা., ৯. হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ রা., ১০. হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা.
★নবী আ. এর বিবি ও আওলাদ সম্বন্ধে আক্বীদাঃ
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিবি ও আহল-আওলাদগণের রা. বিশেষভাবে তাযীম করা উম্মতের ওপর ওয়াজিব। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আওলাদগণের মধ্যে হযরত ফাতিমা রা. এবং বিবিগণের মধ্যে হযরত খাদীজা ও আয়িশা রা. এর মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।
★ওলী-বুযুর্গদের সম্বন্ধে আক্বীদাঃ
ওলী-বুযুর্গদের কারামত সত্য। কিন্তু ওলী-বুযুর্গগণ যত বড়ই হোন না কেন, তাঁরা নবী রাসূল আ. তো দূরের কথা, একজন সাধারণ সাহাবীর সমতুল্যও হতে পারেন না। অবশ্য হক্কানী পীর-মাশায়িখ ও উলামায়ে কিরাম যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিশ এবং দ্বীনের ধারক বাহক সুতরাং, তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা রাখা, তাঁদের সঙ্গ লাভ করা এবং তাদের প্রতি বিদ্বেষ না রাখা সকল মুসলমানের জন্য জরুরী। দ্বীনের খাদিম হিসেবে তাঁদেরকে হেয় করা, কিংবা গালি দেয়া কুফরী কাজ। মানুষ যতই খোদার পেয়ারা হোক, হুঁশ-জ্ঞান থাকতে শরী‘আতের হুকুম-আহকামের পাবন্দী অবশ্যই তাকে করতে হবে। নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত কখনো মাফ হবে না। তেমনিভাবে মদ খাওয়া, গান-বাদ্য করা, পরস্ত্রী দর্শন বা স্পর্শ করা কখনো তার জন্যে জায়িয হবে না। হারাম বস্তুসমূহ হারামই থাকবে এবং হারাম কাজ করে বা ফরয বন্দেগী ছেড়ে দিয়ে কেউ কখনো আল্লাহর ওলী হতে পারে না।
★৫. কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান
কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান আনার অর্থ-কুরআন ও হাদীসে কিয়ামতের যতগুলো নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে, তা নিশ্চয়ই ঘটবে-দৃঢ়ভাবে এ কথা বিশ্বাস করা। যেমন- বিশ্বাস করা যে, ইমাম মাহদী রহ. আবির্ভূত হবেন। তিনি অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণতার সাথে বাদশাহী করবেন। ‘কানা দাজ্জাল’ অনেক অনেক ফিতনা-ফাসাদ করবে, তাকে খতম করার জন্য হযরত ঈসা আ. আসমান থেকে অবতীর্ণ হবেন এবং তাকে বধ করবেন। ‘ইয়াজুজ মা’জুজ’ অতিশক্তিশালী পথভ্রষ্ট শ্রেণীর মানুষ। তারা দুনিয়াতে ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে দেবে। অতঃপর আল্লাহর গযবে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। ‘দাব্বাতুল আরদ’ নামে এক আশ্চর্য জানোয়ার পৃথিবীতে জাহির হবে এবং মানুষের সাথে কথা বলবে।
কিয়ামতের পূর্বে পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হবে, তাওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কুরআন শরীফ উঠে যাবে। এ ধরনের আরো অনেক ঘটনা ঘটবে। তারপরে কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত মু‘মিনগণ মারা যাবেন এবং সমস্ত দুনিয়া কাফিরদের দ্বারা ভরে যাবে।আর তাদের উপর কিয়ামত কায়িম হবে।
সারকথা, কিয়ামতের সকল নিদর্শন যখন পূর্ণ হবে, তখন আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইসরাফীল আ. শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন । তাতে কতিপয় জিনিস ব্যতীত সব ধ্বংস হয়ে যাবে, আসমান চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, সমস্ত জীবজন্তু মরে যাবে, যারা পূর্বে মারা গেছে, তাদের রুহ বেঁহুশ হয়ে যাবে। অনেক দিন এ অবস্থায় অতিবাহিত হবে। আল্লাহর নির্দেশে তারপর আবার-শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। তাতে সমস্ত আলম আবার জীবিত হয়ে উঠবে এবং কেয়ামতের ময়দানে সকলে একত্রিত হবে।
কিয়ামতের দিন সূর্য অতি নিকটে চলে আসবে। ফলে মানুষের খুব কষ্ট হবে। কষ্ট দূর করার জন্য লোকেরা হযরত আদম আ. থেকে শুরু করে বড় বড় নবীগণের আ. নিকট সুপারিশের জন্য যাবে। কিন্তু কেউ সুপারিশ করার সাহস পাবে না। অবশেষে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শাফাআতে হিসাব-নিকাশ শুরু হবে।
মীযানের মাধ্যমে নেকী-বদীর হিসাব হবে। অনেকে বিনা হিসেবেই বেহেশতে চলে যাবে, আবার অনেককে বিনা হিসেবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হিসাবের পর নেককারদের ডান হাতে এবং বদকারদের বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে।
সেদিন জাহান্নামের উপরে অবস্থিত পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকে পার হতে হবে। নেককার লোকেরা তা দ্রুত পার হয়ে যাবেন, কিন্তু বদকার লোকেরা পার হওয়ার সময় পুলসিরাতের নিচে অবস্থিত দোযখের মধ্যে পড়ে যাবে।
সেই কঠিন দিনে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতদেরকে হাউজে কাউসারের শরবত পান করাবেন। তা এমন তৃপ্তিকর হবে, যা পান করার পর পিপাসার নামমাত্র থাকবে না। জাহান্নামের মাঝে ভয়ানক অগ্নিকুণ্ডসহ বিভিন্ন রকম শাস্তির উপকরণ মহান আল্লাহ পূর্ব হতেই সৃষ্টি করে রেখেছেন। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র ঈমান আছে, সে যত বড় পাপী হোক না কেন, স্বীয় পাপের শাস্তি ভোগ করবে, অতঃপর নবীগণের আ. কিংবা অন্যদের সুপারিশে দোযখ হতে মুক্তি লাভ করে কোন এক সময় বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর যারা কুফরী করেছে, বা শিরকী করেছে, তারা যদি দুনিয়াতে অনেক ভাল কাজও করে থাকে, তথাপি তারা কখনো কিছুতেই দোযখ হতে মুক্তি পাবে না। দোযখীদের কখনো মৃত্যুও আসবে না। তারা চিরকাল শাস্তিই ভোগ করতে থাকবে এবং তাদের কোন আশা-আকাঙ্খা পূর্ণ হবে না।
দোযখের ন্যায় বেহেশতকেও আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব হতে সৃষ্টি করে রেখেছেন। সেখানে নেক লোকদের জন্যে অগণিত ও অকল্পনীয় শান্তির সামগ্রী ও নেয়ামত মওজুদ আছে। যে একবার বেহেশতে যাবে, তার আর কোন ভয় বা ভাবনা থাকবে না। এবং কোনদিন তাকে বেহেশত থেকে বের হতে হবে না। বরং চিরকাল সেখানে জীবিত অবস্থায় থেকে সুখ-শান্তি ভোগ করতে থাকবে।
বেহেশতের সকল নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার দীদার বা দর্শন লাভ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট নেয়ামত। যদিও দুনিয়াতে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চোখে কেউ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে না, কিন্তু মু‘মিনগণ বেহেশতের মধ্যে আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হবেন। বেহেশতের মধ্যে বাগ-বাগিচা, বালাখানা, হুর-গিলমান, বিভিন্ন রকম নহর ও নানারকম অকল্পনীয় সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী সর্বদা মওজুদ থাকবে। জান্নাতীদের দিলের কোন নেয়ামত ভোগ করার ইচ্ছা হওয়ার সাথে সাথে তা পূর্ণ হবে।
দুনিয়াতে কাউকে নিশ্চিতভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যায় না। অবশ্য কুরআন-হাদীসে যাদের নাম নিয়ে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে বলা যাবে। তবে কারোর ভাল আমল বা ভাল আখলাক দেখে তাকে ভাল মনে করা উচিত।
★৬. তাকদীরের ওপর ঈমান
তাকদীরের ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, মনে-প্রাণে অটল বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সমগ্র বিশ্বজগতে ভালো বা মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা‘আলা পূর্ব হতেই জানেন, লাউহে মাহফুযে তা লিখে রেখেছেন এবং তিনি যেমন জানেন তেমনই হয়, তার মধ্যে কোন ব্যতিক্রম হয় না। আল্লাহই সবকিছুর সৃষ্টি কর্তা। তার ক্ষমতা সর্বব্যাপী । তার ক্ষমতা ছিন্ন করে বের হতে পারে, এমন কেউ নেই। তিনি সর্বজ্ঞ, আদি-অন্ত সবকিছুই তিনি সঠিকভাবে জানেন।
মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা ভাল-মন্দ বুঝবার এবং কাজ করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং ইচ্ছাশক্তিও দান করেছেন। তার দ্বারা নিজ ক্ষমতায়, নিজ ইচ্ছায় সে পাপ ও পুণ্যের কাজ করে। পাপ কাজ করলে আল্লাহ তা‘আলা অসন্তুষ্ট হন এবং পুণ্যের কাজ করলে সন্তুষ্ট হন। কাজ করা ভিন্ন কথা, আর সৃষ্টি করা ভিন্ন কথা। সৃষ্টি তো সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলা করেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছানুযায়ী কাজ করার ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দান করেছেন।
মানুষ জীবনভর যতই ভাল বা মন্দ থাকুক না কেন, যে অবস্থায় তার ইনতিকাল হবে, সে হিসেবে শান্তি বা শাস্তি পাবে। যেমন, এক ব্যক্তি সারাজীবন মু‘মিন ছিল, কিন্তু মউতের পূর্বে ইচ্ছা পূর্বক কুফরী বা শিরকী কথা বললো বা ঈমান বিরোধী কাজ করলো, তাহলে সে কাফির সাব্যস্ত হবে। সুতরাং, দিলের মধ্যে আল্লাহর রহমতের আশা ও গযবের ভয় রাখা জরুরী। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অসাধ্য কোন হুকুম করেননি। যা কিছু আদেশ করেছেন বা নিষেধ করেছেন, সবই বান্দার আয়ত্তে ও ইখতিয়ারে।
আল্লাহ তা‘আলার ওপর কোন কিছু করা ওয়াজিব নয়। তিনি যা কিছু দান করেন, সবই তাঁর রহমত এবং মেহেরবানী মাত্র। তাঁর ওপর কারো কোনরূপ দাবি বা হুকুম কিংবা কর্তৃত্ব চলে না। ছোট হতে ছোট গুনাহের কারণে তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং বড় থেকে বড় পাপও তিনি মার্জনা করতে পারেন। সবই তাঁর ইচ্ছাধীন। তিনি কাউকে দোযখে দিলে, সেটাই ইনসাফ এবং কাউকে জান্নাতে প্রবেশ করালে, সেটা তার রহমত। আপত্তি করার অধিকার কারো নেই।
★৭। মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ওপর ঈমান
মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে, আমাদের বর্তমান জীবন পরীক্ষার নিমিত্ত। মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করে এ জীবনের সকল বিষয়ের হিসাব নিবেন। মৃত্যুর পর একটি রয়েছে কবরে সাময়িক ফলভোগের বরযখী যিন্দেগী, আর পরবর্তীতে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর আসবে পরকালীন আসল যিন্দেগী। পূর্ণাঙ্গ হিসাব-কিতাবের পর বান্দার জন্যে নির্ণীত হবে বেহেশত বা দোযখের সেই অনন্ত যিন্দেগী।
কিয়ামতের পূর্বেই মুনকার-নাকীরের প্রশ্নোত্তরের পর কবরের ভিতরে নেককারদের জন্যে শান্তি ও আরামের ব্যবস্থা করা হয় এবং বদকারদের জন্যে আযাব শুরু হয়ে যায়।
কবর দ্বারা উদ্দেশ্য, আলমে বরযখ অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের যিন্দেগীর মধ্যবর্তী যিন্দেগী। সকল মানুষ ইনতিকালের পর সেখানেই পৌঁছে যায়, তাই তাকে কবর দেয়া হোক বা না-ই হোক। যেমন-অনেককে বাঘ বা কোন হিংস্র প্রাণী খেয়ে ফেলে, কতেককে আগুনে জ্বালানো হয়, তারাও সেখানে উপস্থিত হয়। কবর বলে মূলত এ জগতকেই বোঝানো হয়। নেক লোকদের জন্যে কবর জান্নাত বা বেহেশতের একটা অংশ হয়ে যায়। তারা সেখানে আরামের সাথে অবস্থান করতে থাকে। মৃত ব্যক্তির জন্যে দু‘আ করলে বা কিছু সদকা করলে, সে তা পেয়ে খুশি হয় এবং তাতে তার বড়ই উপকার হয়।
★★মুসলমানদের আরো কতিপয় আক্বীদা বিশ্বাস★★
★আল্লাহর দীদার তথা সাক্ষাৎ সম্পর্কে আক্বীদাঃ
আল্লাহর দীদার বা আল্লাহকে দেখা সম্পর্কে ইসলামের আক্বীদা হল, দুনিয়াতে থেকে জাগ্রত অবস্থায় এই চর্মচক্ষুর দ্বারা কেউ আল্লাহকে কখনো দেখতে পারে নি। এবং পারবেও না। তবে বেহেশত বাসীগণ বেহেশতে গিয়ে আল্লাহর দীদার তথা দর্শন লাভ করবেন। বেহেশত বাসীদের জন্য এটি হবে একটি নেয়ামত এবং বেহেশতের অন্য সকল নেয়ামতের তুলনায় এই নেয়ামত [আল্লাহর দীদার] সর্বাপেক্ষা উৎকৃষ্ট মনে হবে।
উল্লেখ্য যে, স্বপ্নে আল্লাহকে দেখা যায়। তবে সে দেখাকে দুনিয়ার চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা বলা হয় না। সুতরাং কেউ আল্লাহকে স্বপ্নে দেখলে তা বাস্তবে আল্লাহকে দেখা হবে না।
★আরশ-কুরসী সম্পর্কে আক্বীদাঃ
আরশ অর্থ সিংহাসন। আর কুরসী অর্থ চেয়ার বা আসন। আল্লাহ যেমন তাঁর আরশ বা কুরসী ও তেমনি শানের হবে। এটাই স্বাভাবিক। সপ্ত আকাশের উপর আল্লাহ তা‘আলার আরশ ও কুরসী অবস্থিত। হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী আরশ ও কুরসী এত বিশাল ও বড় আকৃতির যে, তা সমগ্র আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। এখানে মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহপাক কোন মাখলুকের ন্যায় ওঠাবসা করেন না। এবং তিনি কোন নির্দিষ্ট স্থানেও সীমাবদ্ধ নন। মাখলুকের তথা সৃষ্টিজীবের কোন কার্যকলাপ ও আচার-আচরণের সাথে আল্লাহর কোন কার্যকলাপ ও আচার-আচরণের তুলনা বা মিল হয়না। তারপরেও তার আরশ ও কুরসী থাকার কী অর্থ-তা অনুধাবন করা, বিশ্লেষণ করা মানব জ্ঞানের ঊর্ধ্বে। তাই আমাদের এ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করা ঠিক হবে না। আমাদেরকে শুধু আরশ ও কুরসী সম্পর্কে উল্লেখিত আক্বীদা বিশ্বাসটুকু রাখতে হবে। এর ঊর্ধ্বে আর কিছু কল্পনা করার অধিকার আমাদের নেই।
★হযরত মাহদি ‘আলাইহির রিযওয়ান সম্পর্কে আক্বীদাঃ
কিয়ামতের ছোট বড় আলামত প্রকাশিত হওয়ার পর পরিশেষে এমন একটি সময় আসবে, যখন কাফির-মুশরিকদের প্রভাব খুব বেশি হবে। চতুর্দিকে খ্রিস্টানদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। খায়বার নামক স্থান পর্যন্ত খ্রিষ্টানদের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন দুর্দশার সময় মুসলমানগণ তাদের বাদশাহ বানানোর জন্য হযরত মাহদীকে তালাশ করতে থাকবে, এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক সৎলোক মক্কায় বাইতুল্লাহ শরীফে তাওয়াফ রত অবস্থায় হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহীমের মাঝখানে পেয়ে তাকে চিনে ফেলবেন। এবং তাঁর হাতে বাইয়াত হয়ে তাকে খলীফা নিযুক্ত করবেন। এ সময় তাঁর বয়স হবে চল্লিশ বছর। ঐ সময় একটি গায়েবি আওয়াজ আসবে ইনিই আল্লাহর খলীফা -মাহদী।
হযরত ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মদ। তাঁর পিতার নাম হবে আবদুল্লাহ । তিনি হযরত ফাতিমা রাযি. এর বংশোদ্ভূত অর্থাৎ সায়্যিদ বংশীয় লোক হবেন। মদীনা তাঁর অবস্থান হবে। তিনি বাইতুল মুকাদ্দাসে হিজরত করবেন। তাঁর দৈহিক গঠন ও আখলাক রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুরূপ হবে। তিনি নবী হবেন না, তাঁর ওপর ওহীও অবতীর্ণ হবে না। তিনি মুসলমানদের খলীফা হবেন এবং আধিপত্য বিস্তারকারী খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে তিনি জিহাদ পরিচালনা করবেন এবং তাদের দখল থেকে শাম, কনষ্টান্টিনোপল [বর্তমান ইস্তাম্বুল] প্রভৃতি অঞ্চল জয় করবেন। তাঁর আমলে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে। এবং তার আমলেই হযরত ঈসা আ. অবতরণ করবেন। হযরত ঈসা আ. এর আগমনের কিছুকাল পরে তিনি ইনতিকাল করবেন।
★হযরত ঈসা আ.এর দুনিয়াতে অবতরণ সম্পর্কে আক্বীদাঃ
দাজ্জাল ও তার বাহিনী বাইতুল মুক্কাদ্দাসের চারদিকে ঘিরে ফেলবে। মুসলমানগণ আবদ্ধ হয়ে পড়বে। ইত্যবসরে একদিন ফজরের নামাযের ইকামত হওয়ার পর হযরত ঈসা আ. আকাশ থেকে ফেরেশতাদের ওপর ভর করে অবতরণ করবেন। বাইতুল মুক্কাদ্দাসের পূর্বদিকের মিনারার নিকট তিনি অবতরণ করবেন। এবং হযরত মাহদী এই নামাযের ইমামতি করবেন। নামাযের পর হযরত ঈসা আ. হাতে ছোট একটি বর্শা নিয়ে বের হবেন। তাঁকে দেখেই দাজ্জাল পলায়ন করতে আরম্ভ করবে। হযরত ঈসা আ. তার পেছনে ছুটবেন এবং বাবে লুত নামক জায়গায় গিয়ে তাকে নাগালে পেয়ে বর্শার আঘাতে বধ করবেন। মুসলমানদের আক্বীদা অনুযায়ী হযরত ঈসা আ. কে আল্লাহ তা‘আলা সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেন। তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেননি। কিংবা ইহুদিরা তাকে শূলীতে চড়িয়েও হত্যা করতে পারেন নি। তিনি আকাশে জীবিত আছেন। তাঁকে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওযা মুবারকের পাশেই দাফন করা হবে। হযরত ঈসা আ. তখন নবী হিসাবে আগমন করবেন না। বরং তিনি আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে এই দুনিয়াতে আগমন করবেন। এবং এই শরী‘আত অনুযায়ী তিনি জীবন-যাপন ও খেলাফত পরিচালনা করবেন।
★দাজ্জাল সম্পর্কে আক্বীদাঃ
দাজ্জাল শব্দের অর্থ প্রতারক, ধোঁকাবাজ। এটি কিয়ামতের একটি অন্যতম আলামত। আল্লাহ তা‘আলা শেষ জামানায় লোকদের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য একজন লোককে প্রচুর ক্ষমতা প্রদান করবেন। তার এক চোখ টেরা থাকবে, চুল কোঁকড়া ও লাল বর্ণের হবে। সে খাটো দেহের অধিকারী হবে। তার কপালে লেখা থাকবে ‘কাফির’, সকল মু‘মিন সে লেখা পড়তে পারবে, ইরাক ও শাম দেশের মাঝখানে তার অভ্যুত্থান হবে। সে ইহুদি বংশোদ্ভূত হবে। প্রথমে সে নবুওয়তের দাবি করবে। তারপর ইস্পাহানে যাবে, সেখানে ৭০ হাজার ইহুদি তার অনুগামী হবে। তখন সে খোদায়ী দাবি করবে। লোকেরা চাইলে সে বৃষ্টি বর্ষণ করে দেখাবে, মৃতকে জীবিত করে দেখাবে, কৃত্রিম বেহেশত দোযখ তার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তার বেহেশত হবে দোযখ আর তার দোযখ হবে বেহেশত। সে আরো অনেক অলৌকিক কাণ্ড দেখাতে পারবে। যা দেখে কাঁচা ঈমানের লোকেরা তার দলভুক্ত হয়ে জাহান্নামী হয়ে যাবে। এক ভীষণ ফেতনা ও ভীষণ পরীক্ষা হবে সেটা। দাজ্জাল একটা গাধার উপর সওয়ার হয়ে ঝড়ের বেগে সমগ্র ভূ-খণ্ডে বিচরণ করবে এবং মক্কা, মদীনা এবং বাইতুল মুকাদ্দাস ব্যতীত [এসব এলাকায় সে প্রবেশ করতে পারবে না। ফেরেশতাগণ এসব এলাকার পাহারায় থাকবেন।] সব স্থানে ফিতনা বিস্তার করবে। হযরত মাহদীর সময় তা আবির্ভাব হবে। সে সময় হযরত ঈসা আ. আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। এবং তারই হাতে দাজ্জাল নিহত হবে। অভ্যুত্থানের পর দাজ্জাল সর্বমোট ৪০ দিন দুনিয়াতে থাকবে। দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য হাদীসে নিচের এই দু‘আটি পড়তে বলা হয়েছে-
اَ للّهُمَّ اِ نِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ ا لدَّجّا لِ
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপত্তা চাই। [সূত্র : মিশকাত শরীফ।]
★আকাশের এক ধরণের ধোঁয়া সম্পর্কে আক্বীদাঃ
হযরত ঈসা আ. এর ইনতিকালের পর কয়েকজন নেককার লোক ন্যায়পরায়ণতার সাথে রাজত্ব পরিচালনা করবেন। তারপর ক্রমান্বয়ে দ্বীনদারী কমে যাবে। চারিদিকে বেদ্বীনি শুরু হয়ে যাবে। এরই মাঝে এক সময় আকাশ থেকে একধরণের ধোঁয়া আসবে। যার ফলে মু‘মিন মুসলমানদের সর্দির মতো ভাব হবে। আর কাফিররা বেহুঁশ হয়ে যাবে। ৪০ দিন পর ধোঁয়া পরিষ্কার হবে।
★ইয়াজুজ মা’জুজ সম্পর্কে আক্বীদাঃ
দাজ্জালের ফিতনা ও তার মৃত্যুর পর আসবে ইয়াজুজ মাজুজের ফিতনা। এটাও কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত। ইয়াজুজ মাজুজ অত্যন্ত অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মানুষগোষ্ঠী। তাদের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি হবে। তারা দ্রুত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। ভীষণ উৎপাত শুরু করবে। তারা সর্বত্র হত্যা এবং লুটতরাজ চালাতে থাকবে। [তারা বর্তমানে কোন দেশের কোথায় কী অবস্থায় অবস্থিত, কী তাদের বর্তমান পরিচয় তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে কুরআন-হাদীসেও স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তাদের রাজত্ব ও উৎপাত চলাকালে হযরত ঈসা আ. এবং তার সঙ্গীরা আল্লাহর হুকুমে তূর পর্বতে আশ্রয় নিবেন। হযরত ঈসা আ. ও মুসলমানরা তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা মহামারীর আকারে রোগ-ব্যাধি প্রেরণ করবেন। বর্ণিত আছে-সেই রোগের ফলে তাদের ঘাড়ে এক ধরণের পোকা সৃষ্টি হবে। ফলে অল্প সময়ের মাঝেই ইয়াজুজ-মা’জুজের গোষ্ঠী সকলেই মরে যাবে। তাদের অসংখ্য মৃতদেহের পচা দুর্গন্ধ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তখন হযরত ঈসা আ. এবং তার সঙ্গীদের দু‘আয় আল্লাহ তা‘আলা একধরণের বিরাটকার পাখী প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড় হবে উটের ঘাড়ের মতো। তারা মৃতদেহগুলো উঠিয়ে নিয়ে সাগরে বা যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা সেখানে ফেলে দিবে। তারপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। এবং সমস্ত ভূপৃষ্ঠ বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
★পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয় সম্পর্কে আক্বীদাঃ
এর কিছু দিন পর একদিন হঠাৎ একটি রাত তিন রাতের পরিমাণ লম্বা হবে। মানুষ ঘুমাতে ঘুমাতে ত্যাক্ত হয়ে যাবে। গবাদি পশু বাইরে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাবে এবং চিৎকার শুরু করবে। তারপর সূর্য সামান্য আলো নিয়ে পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে। তখন থেকে আর কারো ঈমান বা তাওবা কবুল হবে না। তওবার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। এর পূর্ব পর্যন্ত খোলা থাকবে। সূর্য মধ্য আকাশ পর্যন্ত এসে আল্লাহর হুকুমে আবার পশ্চিম দিকে গিয়েই অস্ত যাবে। তারপর আবার যথারীতি কিছুদিন পূর্বের নিয়ম মাফিক পূর্বদিক থেকে উদিত হয়ে পশ্চিম দিকে গিয়ে অস্ত যেতে থাকবে। এবং পরিশেষে অস্ত হয়ে যাবে।
★দাব্বাতুল আরদ সম্পর্কে আক্বীদাঃ
পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়ের কিছুদিন পর মক্কা শরীফের সাফা পাহাড় ফেটে অদ্ভুত আকৃতির এক জানোয়ার বের হবে। একে বলা হয় দাব্বাতুল আরদ [ভূমির জন্তু]। এটিও কিয়ামতের একটি অন্যতম আলামত। এই প্রাণীটি মানুষের সাথে মানুষের ভাষায় কথা বলবে। সে অতি দ্রুত বেগে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াবে। সে মু‘মিনদের কপালে একটি নূরানি রেখা টেনে দিবে। ফলে তাদের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যাবে। এবং বেঈমানদের নাকের অথবা গর্দানের উপর সীল মেরে দিবে। ফলে তাদের চেহারা মলিন হয়ে যাবে। সে প্রত্যেক মু‘মিন ও কাফিরকে চিনতে পারবে। এই জন্তুর আবির্ভাব কিয়ামতের সর্বশেষ আলামত সমূহের অন্যতম। এই জন্তুটির আকার আকৃতি সম্পর্কে ইবনে কাছীরে বিভিন্ন বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে। এসবের অধিকাংশই নির্ভরযোগ্য নয়।
★কিয়ামতের পূর্বক্ষণে দুনিয়ার অবস্থা ও কিয়ামত সংঘটন সম্পর্কে আক্বীদাঃ
দাব্বাতুল আরদ গায়েব হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ দিক থেকে একটি আরামদায়ক বায়ু প্রবাহিত হবে। তাতে ঈমানদারগণের বগলে কিছু অসুখ হবে এবং তারা খুব সহজেই মারা যাবে। দুনিয়ায় কোনো ঈমানদার ব্যক্তি ও আল্লাহ আল্লাহ করার বা আল্লাহর নাম নেওয়ার মতো কেউ অবশিষ্ট থাকবে না। সারা দুনিয়ায় হাবশী কাফিরদের একসঙ্গে রাজত্ব চলবে। তারা বাইতুল্লাহ শরীফ ধ্বংস করে ফেলবে। কুরআন শরীফ মানুষের অন্তর থেকে এবং কাগজ থেকে উঠে যাবে। তারপর হঠাৎ একদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে। এবং তখনই কিয়ামত সংগঠিত হয়ে যাবে। সিঙ্গার ফুঁকে প্রথম প্রথম হালকা আওয়াজ হবে। পরে এত বিকট ও ভীষণ হবে যে, সারা দুনিয়ার সমস্ত লোক মারা যাবে। আসমান ও জমিন ফেটে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। পূর্বে যারা মারা গেছে তাদের রুহুও বেহুঁশ হয়ে যাবে। সর্বশেষ সারা দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।
★দু‘আর মাঝে ওসিলা গ্রহণ প্রসঙ্গে আক্বীদাঃ
দু‘আ কবুল হওয়ার জন্য নবীদের বা কোন জীবিত বা মৃত নেককার লোকদের ওসিলা দিয়ে কিংবা কোন নেক কাজের ওসিলা দিয়ে দু‘আ করা জায়িয বরং তা মুস্তাহাব। [সূত্র : আহসানুল ফাতাওয়া ১ম খণ্ড।]
★কারামত, কাশফ, এলহাম ও পীর বুযুর্গ বিষয়ে আক্বীদাঃ
আল্লাহর প্রিয় বান্দাকে বুযুর্গ এবং অলী বলা হয়। আর শরী`আতের বরখেলাফ চলে কেউ কখনো আল্লাহর প্রিয় বা অলী বা বুযুর্গ হতে পারে না। অতএব যারা শরী‘আত বিরোধী কাজ করে যেমন-নামায পড়ে না, রোযা রাখে না, গাজা বা নেশা করে, বেগানা মহিলাকে স্পর্শ করে বা দেখে, গান বাদ্য ইত্যাদি করে তারা কখনো পীর বুযুর্গ নয়। তারা যদি অলৌকিক কিছু দেখায় তা হলে সেটা কারামত নয়। বরং বুঝতে হবে সেটা জাদু বা এ ধরণের কিছুটা একটা হয়ে থাকবে। আর জাদু ফাসিকদের থেকেই প্রকাশ হয়।
যেহেতু শয়তান বাতাসে ঊর্ধ্বজগতে ভ্রমণ করতে পারে এ জন্য অনেক সময় শয়তান এসব লোকদের নিকট গায়েব জগতের অনেক খবরাখবর জানিয়ে দেয়। এতে করে এসব শুনে মূর্খ লোকেরা তাদের ভক্ত হয়ে যায় এবং এভাবেই তারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়ে। এসব দেখে তাদের ধোঁকায় পড়া যাবে না। এ সকল লোকদের কাছে গেলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় আছে।
কাশফ ও এলহাম শরীআতের মুতাবিক হলে, তা গ্রহণযোগ্য হবে। অন্যথায় তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
কোন বুযুর্গ বা পীর বিষয়ে এই আক্বীদা রাখা যে, তিনি সব সময়ে আমাদের অবস্থা জানেন, এটা সম্পূর্ণ শিরক। কোন পীর, বুযুর্গের হাতে বাইআত হলে তিনি নাজাতের ব্যবস্থা করবেন, পুলসিরাত পার করে দিবেন, এ ধরণের আক্বীদা রাখাও গুমরাহী বরং পীর বুযুর্গ কেবল ঈমান ও আমলের পথ দেখাবেন। আর এই ঈমান ও আমলই হবে নাজাতের ওসিলা।
কোনো পীর বুযুর্গের মর্যাদা চাই সে যত বড় হোক কস্মিনকালেও কোনো নবী বা সাহাবী থেকে বেশি বা তাদের সমানও হতে পারবে না।
★ঈসালে সওয়াব সম্পর্কে আক্বীদাঃ
ঈসালে সওয়াব অর্থ সওয়াব রেসানী বা সওয়াব পৌঁছানো। মৃত মুসলমানদের নিয়তে আদায়কৃত নামায, রোযা, দান, সদকা, তাসবীহ, তাহলীল, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার ইত্যাদি শারীরিক ও আর্থিক সকল ইবাদতের সওয়াব তাদের রুহে পৌঁছে থাকে। এটা কুরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এক মতে ফরয ইবাদতের দ্বারাও ঈসালে সওয়াব করা যায়। এতে একদিকে নিজের দায়িত্বও আদায় হবে, অপরদিকে মৃতুব্যক্তিও সওয়াব পাবে।[সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া ১ম খণ্ড]
★মাজার বিষয়ে আক্বীদাঃ
মাজার শব্দের অর্থ যিয়ারতের জায়গা। সাধারণভাবে বুযুর্গদের কবর যেখানে যিয়ারত করা হয়, তাকে মাজার বলে। সাধারণভাবে কবর যিয়ারত দ্বারা বেশ কিছু ফায়দা হয়। যেমন অন্তর নরম হয়, মৃত্যুর কথা মনে পড়ে, আখিরাতের চিন্তা বাড়ে, ইবাদতে আগ্রহ বাড়ে ইত্যাদি। বিশেষভাবে বুযুর্গদের কবর যিয়ারত করলে তাদর রূহানী ফয়ে-যও লাভ হয়। মাজারের এতটুকু ফায়দা অনস্বীকার্য। কিন্তু এছাড়া সাধারণ মানুষ মাজার ও মাজার যিয়ারত করা বিষয়ে এমন কিছু ভুল আক্বীদা বিশ্বাস পোষণ করে যার অনেকটাই শিরক-এর পর্যায়ভুক্ত। এসব অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
★বস্তুর ক্ষমতা সম্পর্কে আক্বীদাঃ
কোন আসবাব বা বস্তুর নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। কোন আসবাব বা বস্তুর নিজস্ব কোন ক্ষমতা আছে এমন বিশ্বাস করাও শিরক। তবে বস্তুর মাঝে যে ক্ষমতা দেখা যায় বা বস্তু থেকে যে প্রভাব প্রকাশ পায়, তা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত। তার নিজস্ব ক্ষমতা নয়। তাই আল্লাহ ক্ষমতা না দিলে বা কখনো সাময়িকভাবে ক্ষমতা হরণ করে নিলে এর স্বাভাবিক কার্যকারিতাও প্রকাশ পাবে না। আল্লাহপাকের এরূপ ফায়সালা হলেই বস্তুর স্বাভাবিক ক্ষমতা ও প্রভাব প্রকাশ পায় না। বস্তু বিষয়ে এ হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা।
★রাশি ও গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব সম্বন্ধে আক্বীদাঃ
রাশি হল সৌর জগতের কতগুলো গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতীক। এগুলো কল্পিত। এরূপ বারটি রাশি কল্পনা করা হয়। যথা- মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন। এগুলোকে বিভিন্ন গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতীক সাব্যস্ত করা হয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্র [অর্থাৎ ফলিত জ্যোতিষ বা Astrology এর ধারণা অনুযায়ী এসব গ্রহ নক্ষত্রের গতি, স্থিতি ও সঞ্চারের প্রভাবে ভবিষ্যৎ শুভ-অশুভ সংঘটিত হতে পারে। এভাবেই শুভ অশুভ নির্ণয় তথা ভাগ্য বিচার করা হয়।
ইসলামী আক্বীদা অনুসারে গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে নিজস্ব কোনো প্রভাব বা ক্ষমতা নেই। সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার। আল্লাহপাক ইরশাদ করেন: নিশ্চয়ই সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। [সূরা-আনআম,আয়াত-৫৭]
সুতরাং ভাগ্য তথা শুভ-অশুভ গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে ঘটে, এই আক্বীদা রাখা শিরক। তবে গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত এরূপ কোনো প্রভাব থাকলে থাকতেও পারে কিন্তু তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এ সম্পর্কে যা কিছু বলা হয় সবই কাল্পনিক। কুরআন-হাদীসে এর কোন প্রমাণ নেই। যদি প্রকৃতপক্ষে এরূপ কোনো প্রভাব থাকেও তবুও তা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। গ্রহ-নক্ষত্রের নিজস্ব ক্ষমতা নয়। অতএব, শুভ-অশুভ মৌলিকভাবে আল্লাহর ইচ্ছাধীন ও তারই নিয়ন্ত্রণে। [সূত্র : ফাতহুল মুলহিম।]
★রোগ সংক্রমণ বিষয়ে আক্বীদাঃ
জনসমাজে ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক ব্যাধি সম্বন্ধে যে ধারণা রয়েছে, সে সম্পর্কে ইসলামের আক্বীদা হল, কোন রোগের মধ্যে সংক্রমণের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। তাই দেখা যায়, তথাকথিত সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত লোকের কাছে যাওয়ার পরও অনেকে আক্রান্ত হয় না, তাছাড়া ডাক্তাররা তাদের সেবায় নিয়োজিত থেকেও তাদের অনেকের রোগ হয় না। আবার অনেকে না যেয়েও আক্রান্ত হয়ে যায়। এ বিষয়ে সহীহ আক্বীদা হল, রোগের মাঝে সংক্রমণ বা অন্যের মাঝে বিস্তৃত হওয়ার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই। কেউ অনুরূপ রোগীর সংস্পর্শে গেলে যদি তার আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা হয়, সে ক্ষেত্রেই কেবল সে আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হবে, অন্যথায় নয়। কিংবা এরূপ আক্বীদা রাখতে হবে, এসব রোগের মাঝে স্বাভাবিকভাবে আল্লাহ তা‘আলা সংক্রমণের এই নিয়ম রেখে দিয়েছেন। তবে আল্লাহর ইচ্ছা হলে সংক্রমণ নাও ঘটতে পারে। অর্থাৎ সংক্রমণের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব ক্ষমতা নয়, এর পশ্চাতে আল্লাহর দেয়া ক্ষমতা এবং তার ইচ্ছার দখল থাকে। তবে ইসলাম প্রচলিত এসব সংক্রামক রোগে আক্রান্ত লোকদের নিকট যেতে নিষেধ করেছে বিশেষভাবে কুষ্ঠ রোগীর নিকট, এ কারণে যে, উক্ত রোগীর নিকটে গেলে আর তার আক্রান্ত হওয়ার খোদায়ী ফায়সালা হওয়ার কারণে সে আক্রান্ত হলে তার ধারণা হতে পারে যে, উক্ত রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার কারণেই সে আক্রান্ত হয়েছে, এভাবে তার আক্বীদা নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তা যেন হতে না পারে, এজন্যই ইসলাম এরূপ বিধান দিয়েছে। তবে কেউ মজবুত আকীদার অধিকারী হলে, সে অনুরূপ রোগীর নিকট যেতে পারে। এমনিভাবে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত লোককেও সুস্থ এলাকার লোকদের নিকট যেতে নিষেধ করেছে। যাতে তা অন্য কারো আক্বীদা নষ্টের কারণ না ঘটে।
★রত্ন ও পাথরের প্রভাব বিষয়ে আক্বীদাঃ
মণি, মুক্তা, হিরা, চুনি, পান্না, আকীক প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে, মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন ঘটাতে পারে-এরূপ আক্বীদা বিশ্বাস রাখা মুশরিকদের কাজ, মুসলমানদের নয়। [সূত্র : আপকে মাসাইল আওড় উনকে হল।]
★হস্ত রেখা বিচার বিষয়ে আক্বীদাঃ
পামিষ্ট্রি (Pamistry) বা হস্তরেখা বিচার বিদ্যার মাধ্যমে হাতের রেখা ইত্যাদি দেখে ভাগ্যের বিষয়ও ভূত-ভবিষ্যতের শুভ-অশুভ সম্পর্কে বিশ্লেষণ দেয়া হয়, ইসলামে এরূপ বিষয়ে বিশ্বাস রাখা কুফরী। [সূত্র:আপকে মাসাইল আওড় উনকে হল, প্রথম খণ্ড।]
★নজর ও বাতাস লাগার বিষয়ে আক্বীদাঃ
# হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নজর লাগার বিষয়টি সত্য। জান-মাল ইত্যাদির প্রতি বদনজর লেগে গেলে তার ক্ষতি সাধন হতে পারে। আপনজনের প্রতিও আপনজনের বদনজর লাগতে পারে। এমনকি সন্তানের প্রতিও মা-বাবার বদনজর লাগতে পারে। আর বাতাস লাগার অর্থ যদি হয় জিন-ভূতের বাতাস অর্থাৎ তাদের খারাপ নজর বা খারাপ আছর লাগা, তা হলে এটাও সত্য। কেননা, জিন-ভূত মানুষের ওপর আছর করতে সক্ষম।
# কেউ কারো কোন ভালো কিছু দেখলে যদি মাশাআল্লাহ বলে তা হলে তার প্রতি বদনজর লাগে না। আর কারো ওপর কারো বদনজর লেগে গেলে যার নজর লাগার সন্দেহ হয় তার মুখ হাত [কনুইসহ] হাঁটু এবং ইসতিনজার জায়গা ধুয়ে সেই পানি যার ওপর নজর লেগেছে তার ওপর ঢেলে দিলে আল্লাহ চাহে তো ভালো হয়ে যাবে। বদনজর থেকে হিফাযতের জন্য কাল সূতা বাঁধা বা কালি কিংবা কাজলের টিপ লাগানো ভিত্তিহীন এবং কুসংস্কার।
★কুলক্ষণ ও সূলক্ষণ বিষয়ে আক্বীদাঃ
ইসলামী আক্বীদা মতে কোন বস্তু বা অবস্থা থেকে কু-লক্ষণ গ্রহণ করা বা কোন সময়, দিন ও মাসকে খারাপ মনে করা বৈধ নয়। এমনিভাবে কুরআন ও হাদীস দ্বারা স্বীকৃত নয়-এমন কোন লক্ষণ মানাও বৈধ নয়। তবে কেউ কোন বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা বা দুশ্চিন্তায় রয়েছে, এরূপ মুহূর্তে ঘটনাক্রমে বা কিছুটা ইচ্ছাকৃতভাবে খুশি বা সাফল্যসূচক কোন শব্দ শ্রুতিগোচর কিংবা দৃষ্টিগোচর হলে সেটাকে সু-লক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। এটা মূলতঃ কোন শব্দ বা বস্তুর প্রভাবকে বিশ্বাস করা নয়-এটা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রহমতের আশাকে শক্তিশালী করে।
★তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক বিষয়ে আক্বীদাঃ
তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁকে কাজ হওয়াটা নিশ্চিত নয়-হতেও পারে নাও হতে পারে। যেমন দু‘আ করা হলে রোগ ব্যাধি আরোগ্য হতেও পারে নাও হতে পারে। অর্থাৎ আল্লাহ পাকের মর্জি হলে আরোগ্য লাভ হবে, তা না হলে নয়। এমনিভাবে তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁকও একটি দু‘আ। মনে রাখতে হবে তাবীজের চেয়ে কিন্তু দু‘আ আরো বেশি শক্তিশালী। তাবীজ এবং ঝাড়-ফুঁকে কাজ হলেও সেটা তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁকের নিজস্ব ক্ষমতা নয়। বরং আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাতেই তা হয়ে থাকে।
# সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁকই ইজতিহাদ এবং কুরআন থেকে উদ্ভূত, কুরআন ও হাদীসে যার ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলা হয়নি যে, অমুক তাবীজ বা অমুক ঝাড়-ফুঁক দ্বারা কাজ হবে। অতএব, কোনো তাবীজ বা কোন ঝাড়-ফুঁক দ্বারা কাঙ্খিত ফল লাভ না হলে এরূপ বলার বা এমন ভাবার অবকাশ নেই যে, কুরআন ও হাদীস কি তা হলে সত্য নয়?
# যেসব বাক্য বা শব্দ কিংবা যেসব-নকশার অর্থ জানা যায় না, তার দ্বারা তাবীজ ও ঝাড়-ফুঁক করা বৈধ নয়।
# কোন বিষয়ের তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁকের জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন বা সময় রয়েছে বা বিশেষ কোন শর্ত ইত্যাদি রয়েছে-এমন মনে করা ঠিক নয়।
# তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁকের জন্য কারো অনুমতিপ্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক-এমন ধারণা করাও ভুল।
# তাবীজ বা ঝাড়-ফুঁক দ্বারা ভালো আছর হলে সেটাকে তাবীজদাতার বা আমিলের বুযুর্গী মনে করা ঠিক নয়। যা কিছু হয় সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। [সূত্র: ফাতাওয়া শামী।]
★ফাতিহা ইয়াযদাহমঃ
ফাতিহা বলতে বোঝানো হয়, কোন মৃতের জন্য দু‘আ করা, ঈসালে সওয়াব করা। ইয়াযদাহম ফার্সি শব্দটির অর্থ একাদশ। ৫৬১ হিজরী মুতাবিক ১১৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ রবিউস সানী তারিখে বড়পীর শায়খ আবদুল কাদির জিলানী রহ. ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু উপলক্ষে রবিউস সানীর ১১ তারিখে যে মৃত্যুবার্ষিকী পালন, উরস ও ফাতিহাখানী করা হয় তাকে বলা হয় ফাতিহা ইয়াযদহম।
পূর্বের পরিচ্ছেদে আলোচনা করা হয়েছে যে, ইসলামে জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও উরস করা শরী‘আত সমর্থিত অনুষ্ঠান নয়। তবে তিনি অনেক উঁচু দরের অলী ও বুযুর্গ ছিলেন। তাই এই নির্দিষ্ট তারিখের অনুসরণ না করে অন্য যে কোন দিন তাঁর জন্য দু‘আ করলে এবং জায়িয তরীকায় তাঁর জন্য ঈসালে সওয়াব করলে তাঁর রূহানী ফয়েজ ও বরকত লাভের ওসীলা হবে এবং তা সওয়াবের কাজ হবে।
★আখেরী চাহার শোমবাহঃ
আখেরী চাহার শোমবাহ কথাটি ফার্সি। এর অর্থ শেষ বুধবার। সাধারণ পরিভাষায় আখেরী চাহার শোমবাহ বলে সফর মাসের শেষ বুধবারকে বোঝানো হয়ে থাকে। বলা হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে অসুস্থতার মধ্যে রবিউল আওয়াল মাসের শুরু ভাগে ইনতিকাল করেন, সে অসুস্থতা থেকে সফর মাসের শেষ বুধবারে অর্থাৎ আখেরী চাহার শোমবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করেছিলেন, তাই এ দিবসটিকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। অথচ এ তথ্য সহীহ নয় বরং ও বিশুদ্ধ তথ্য হল, এ বুধবারেই তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। কাজেই যে দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসুস্থতা বেড়ে যায়, সেদিন ইহুদী প্রমুখদের জন্য খুশির দিন হতে পারে, মুসলমানদের জন্য নয়। অতএব, সফর মাসের শেষ বুধবার অর্থাৎ আখেরী চাহার শোমবাহকে খুশির দিন হিসেবে উদযাপন করা এবং ঐ দিন ছুটি পালন করা জায়িয হবে না। [সূত্র : ফাতাওয়া রাহীমিয়া, খণ্ড ১]
★আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বিষয়ে আক্বীদাঃ
এই হাদীসে বলা হয়েছে, অতি শীঘ্র আমার উম্মত তেহাত্তর ফেরকায় [দলে] বিভক্ত হয়ে পড়বে। তন্মধ্যে একটি মাত্র দল হবে মুক্তিপ্রাপ্ত। অর্থাৎ এরা হবে জান্নাতী। আর বাকি সবগুলো ফেরকা হবে জাহান্নামী। জিজ্ঞেস করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! সেই মুক্তিপ্রাপ্ত দল কারা? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: আমি ও আমার সাহাবীগণ যে মত ও পথের উপর আছি তার অনুসারীগণ।[সূত্র : তিরমিযী শরীফ, ২য় খণ্ড।]
এই হাদীসের মধ্যে যে মুক্তিপ্রাপ্ত বা জান্নাতী দল সম্পর্কে বলা হয়েছে তাদেরকে বলা হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। নামটির মাঝে সুন্নাত শব্দ দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মত ও পথ এবং জামাত শব্দ দ্বারা বিশেষভাবে সাহাবায়ে কিরামের জামাত উদ্দেশ্য। মোটকথা, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামের মত ও পথের অনুসারীদেরকে বলা হয় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন সময়ে যেসব সম্প্রদায় ও ফেরকার উদ্ভব হয়েছে, তন্মধ্যে সর্বযুগে এই দলটিই হল সত্যাশ্রয়ী দল। সর্বযুগে ইসলামের মৌলিক আকাইদ বিষয়ে হকপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠ উলামায়ে কিরাম এভাবে কুরআন, হাদীস ও সাহাবায়ে কিরামের মত ও পথের অনুসরণ করে আসছেন। এ দলটি তারই অনুসরণ করে আসছে। সর্বযুগে এই দলই হচ্ছে বড় দল। সর্বযুগেই এরা টিকে আছে। এর বাইরে যারা গিয়েছে, তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বহির্ভূত বিপথগামী ও বাতিলপন্থী সম্প্রদায়। এ ধরণের অনেক বাতিল সম্প্রদায় কালের অতল তলে বিলীন হয়ে গেছে। যারা রয়েছে এখনো, তারাও অচিরেই বিলীন হবে। হকপন্থী দল চিরকালই টিকে থাকবে।