ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
বিক্রেতা বাজার মূল্যানুসারে পণ্য বিক্রি করবে।যদি বাজাল মূল্যানুসারে বিক্রি না করে,তাহলে দুই অবস্থা হতে পারে
প্রথম অবস্থাঃ
বাজার মূল্য থেকে কম দামে বিক্রি করা।যেমন কোনো বিক্রেতা সে তার বন্ধুর নিকট কোনো পণ্য বাজার মূল্য থেকে কম দামে বিক্রি করল।তাহলে এটা জায়েয।এতে কোনো সন্দেহ নাই।বিক্রেতা এত্থেকে বাধা দেয়া যাবে না।তবে যদি বিক্রেতা এরকম ক্রয়-বিক্রয় দ্বারা অন্য ব্যবসায়ীকে ক্ষতি পৌছানোর উদ্দেশ্য করে,তাহলে এটা জায়েয হবে না।কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
لا ضرر ولا ضرار
ইসলামে নিজেকে ক্ষতি পৌছানো নেই এবং অন্যকেও ক্ষতি পৌছানো যাবে না।(সুনানু ইবনি মা'জা-২৩৪০)
দ্বিতীয় অবস্থাঃ
বাজার মূল্য থেকে বেশ দামে বিক্রি করা।যদি কিঞ্চিৎ বেশ দামে বিক্রি করা হয় যেমন ২০ টাকা মূল্যর জিনিষকে ২২/২৫টাকায় বিক্রি করা হল,তাহলে এটা জায়েয।কেননা এ কিঞ্চিৎ কমবেশ সমাজে প্রচলিত রয়েছে।
আর যদি বাজার মূল্যর চেয়ে বেশ বেশী দামে বিক্রয় করা হয়,এবং ক্রেতা মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে,যেমন ৬০টাকার মালকে ৮০/৯০টাকায় বিক্রি করা হয়,তাহলে এমন ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হবে না।এটা ধোকা এবং চক্রান্তের শামিল।ক্রেতার এক্ষেত্রে খেয়ার থাকবে যখন তার সামনে উক্ত জিনিষের আসল মূল্য উদগাঠিত হবে।এটাকে কোনো কোনো উলামা খেয়ারে গাবন বলে উল্লেখ করে থাকেন।(আল মুগনি-৪/১৮)
শায়েখ ইবনে উসাইমিন রাহ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো?ঐ বিক্রেতার হুকুম কি?যিনি বিভিন্ন ক্রেতার নিকট বিভিন্ন মূল্যে পণ্য বিক্রয় করে থাকেন। একই পণ্যকে কারো নিকট দশ টাকায় এবং কারো নিকট ত্রিশ টাকায় এবং কারো নিকট পঞ্চাশ কায় বিক্রয় করা হয়।এমন ক্রয়-বিক্রয় কি জায়েয?
জবাবে তিনি বলেছিলেন,
একই পণ্যে দামের ভিন্নতা যদি বাজার মূল্য পরিবর্তেনর কারণে হয়ে থাকে,যেমন কোনো একটি পণ্যর বাজারমূল্য গতকালের তুলনায় আজকে কিছুটা ভিন্ন হয়।তাহলে এমন পণ্য সমূহে গতকালের তুলনায় আজকে কাজার মূল্যানুসারে কমবেশ করে ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয।
এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু যদি পণ্যর বাজার মূল্য সম্পর্কে ক্রেতার জ্ঞাত বা অজ্ঞতার দরুণ একই পণ্য-কে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রিয় করা হয়,তাহলে এমনটা জায়েয হবে না।যেমন, বিক্রেতা কোনো ক্রেতাকে অভিজ্ঞ দেখে কম দামে বিক্রি করলো, আবার অন্যজনকে অনভিজ্ঞ দেখে বেশ দামে বিক্রি করলো।এটা কখনো জায়েয হবে না।কেননা এটা ধোকা এবং হাদীসে বর্ণিত নাসিহা এর খেলাফ।
হযরত তামীম দারী রাযি থেকে বর্ণিত
عن تميم الداري أنه قال : (الدين النصيحة) . قيل : لمن يا رسول الله ؟ قال : ( لله ولكتابه ولرسوله ولأئمة المسلمين وعامتهم )
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,দ্বীনে ইসলাম হলো,নাসিহা(অন্যর কল্যাণ কামনা)এর নাম।জিজ্ঞেস করা হলো, নাসিহা কার জন্যে?উত্তরে বলা হল,আল্লাহর জন্য কিতাবের জন্য,রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্য এবং মুসলমান শাষক ও জনসাধারণের জন্য।(সহীহ মুসলিম-৫৫)
যখন কোনো মুসলমান সে এটা পছন্দ করবে না যে, তার ভাইদের কেউ এমন অাচরণ, তার সাথে করুক,সে কিভাবে এমন আচরণ অন্যর সাথে করবে?
বিক্রেতার উপর নৈতিকভাবে ওয়াজিব,সে বাজারমূল্য অনুযায়ী সবার জন্য প্রায় সমান মূল্য নির্ধারণ করবে।
তবে কোনো বিক্রেতা যদি প্রথম একজনের কাছে বাজারমূল্য অনুযায়ী বিক্রি করলো,অতঃপর একজন বন্ধু আসল,যে ঐ মালে মূল্য কমানোর জন্য চাপাচাপি শুরু করে দিল,বা কোনো ক্রেতা একসাথে কয়েকটি ক্ররিদ করলো,তাহলে এমতাবস্থায় মূল্যে কমবেশ করার অনুমোদন রয়েছে।কেননা প্রথমজনের নিকট সে বাজারমূল্যেই বিক্রি করেছে।তাই প্রথমজনের উপর কোনো প্রকার জুলুম করা হয়নি।আর দ্বিতীয় জনের ব্যাপারে সে নিজের ক্ষতি স্বীকার করেছে।
(ফাতাওয়া তিজারাত-৯০)
বিঃদ্রঃ
খুচরা এবং পাইকারী মূল্যে বেশকম করে বিক্রি করা জায়েয রয়েছে।