আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
81 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

আমি স্বভাবসুলভভাবে আমার কাছের মানুষদের আমার সব কথা শেয়ার করা পছন্দ করি। কিন্তু কাছের মানুষ ব্যাপারটাও আমার কাছে মাঝে মাঝে দূর্বোধ্য হয়। খুব সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে অনেককিছু বলে ফেলি পরে আবার এজন্য ঝামেলায়ও পড়ি।
সাম্প্রতিক সময়ে আমার এক জায়গায় বিয়ের কথা চলছে। আমি মোটামুটি আমার পরিচিতদের মধ্যে অনেককেই জানিয়েছি৷ আমার খুব কাছের কয়েকজন বলেছে, "এসব আগে থেকে জানাতে হয় না। বদ-নজরের আশংকা থাকে।'' এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ কোনো কুপ্রভাব পড়েনি।

১. বদ নজর এড়াতে এ অবস্থায় আমার করণীয় কী?

এর মাঝে আমার কিছু শারীরিক সমস্যার কথা ভেবে (পরে জানতে পারি এটা ভুল ছিল) একবার মনে হয়েছে হয়ত এখানে আমার বিয়ে হবে না। আমার তো অনেক ফ্রেন্ড আছে... আমি তাদের বলব যাতে ওদের মধ্যে কেউ উনাকে বিয়ে করে। একজনকে বলেও ফেলেছি "আমি তোর ব্যাপারে এমন ভেবেছিলাম।"

২. এসব কারণে কী আমি গুনাহগার হবো? এগুলার কোনো খারাপ প্রভাব আছে কী? খারাপ প্রভাব এড়ানোর উপায় কী?

মাঝে মাঝে নিজের এই বলে-বেড়ানোর অভ্যাসের জন্য খুব খারাপ লাগে। হতাশ হয়ে যাই যে কেন এতো অতিরিক্ত কথা বলি! গোনাহ হয়ে যাচ্ছে কি না...
৩. এই অভ্যাস আমি কীভাবে বাদ দিতে পারি? কোনো আমল আছে?
জাযাকুমুল্লাহ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (63,560 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

সূরা আল মুমিনুন-এর প্রথম কয়েকটি আয়াতে সাফল্য লাভকারীদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। এর মধ্যে ‘অসার, অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়’ কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকা লোকদের বিষয়েও বলা হয়েছে। পূর্ণ মুমিনের এটি একটি গুণ যে সে অনর্থক বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। অসার ও অনর্থক কথা বা কাজ মানে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজ যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন ও যাতে কোনো ফল লাভও হয় না। শিরকও এর অন্তর্ভুক্ত, গোনাহের কাজও এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে [ইবন কাসির] অনরূপভাবে গানবাজনাও এর আওতায় পড়ে [কুরতুবি]

মোটকথা যেসব কথায় বা কাজে কোনো লাভ হয় না, যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয়, আসলে কোনো প্রয়োজন নেই, উদ্দেশ্যও ভালো নয় তা সবই ‘বাজে’ কাজের অন্তর্ভুক্ত। যাতে কোনো দ্বীনি উপকার নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান। এ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। রাসূলুলাল্লাহ সা: বলেন : ‘মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে, তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে পারে [তিরমিজি : ২৩১৭, ২৩১৮, ইবনে মাজাহ : ৩৯৭৬]

মানুষ স্বভাবতই গুনাহ বা অপরাধপ্রবণ হয়। এটি মানব চরিত্রের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আর মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তবে শর্ত হলো, গুনাহের পর সেটি গোপন রেখে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।

 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

أَنَّهُ مَنْ عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

 ‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম সম্পাদন করবে, অতঃপর তাওবা করবে এবং সংশোধন করে নেবে, তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)

 

আর ক্ষমা পার্থনা ইবাদতসমূহের মধ্যে অন্যতম ইবাদত। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন। আমাদের অনেকেরই এমন এমন অপরাধ রয়েছে, যা মানুষ জানলে সমাজে মুখ দেখাতে পারব না। কিন্তু আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সেগুলো ঢেকে রেখেছেন। এটি বান্দার প্রতি তাঁর অবারিত অনুগ্রহমাত্র। কারণ তিনি চান বান্দা তাওবা করে গুনাহমুক্ত হোক। হাদিসের ভাষ্যমতে, মানুষ যদি অপরাধ না করত আর ক্ষমা প্রার্থনা না করত তবে আল্লাহ এ জাতিকে উঠিয়ে নিয়ে অন্য জাতি পাঠাতেন।

 

ক্ষমার এত সর্বব্যাপী ঘোষণা থাকার পরও মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে ক্ষমা করবেন না। মহানবী (সা.) সেই শ্রেণির মানুষের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন,

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلاَّ الْمُجَاهِرِينَ، وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ، فَيَقُولَ يَا فُلاَنُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ ".

আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে; তবে ওই সব লোককে ক্ষমা করা হবে না, যারা পাপ করার পর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। অন্যের কাছে প্রকাশ করার একটি দিক হলো কোনো ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোনো গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহটিকে গোপন রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের কাছে বলল, হে অমুক! জানো, রাতে আমি এ কাজ করেছি। সারা রাত মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাপটি গোপন রাখলেন আর ভোর হওয়া মাত্রই আল্লাহর ঢেকে রাখা পাপের বিষয়টি সে ব্যক্তি নিজেই প্রকাশ করে দিল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

 

হাদিসের ঘোষণা থেকে এ কথা পরিষ্কার প্রতীয়মান হয় যে কোনো ব্যক্তি যদি অনিচ্ছায় কোনো গুনাহ করে বসে আর তা গোপন রাখে; তাহলে আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির পাপ কাজ গোপন রাখেন। অতঃপর মানুষটি তাওবা করলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,

لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ

আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। ’

(কপি)

বদ নজর সম্পর্কে জানুন- https://ifatwa.info/12071/?show=12071#q12071

আরো জানুন- https://ifatwa.info/37479/?show=37479#q37479

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

. আপনি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতে পারেন

উল্লেখ্য যে, আপনি কাউকে সব কথা বলবেন না মানুষকে বললে আপনার কোনো উপকার হবে না বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনাই বেশী বিশেষ করে ফ্রেন্ডরা এই ক্ষতি বেশী করে থাকে

. আপনি সব কথা মানুষকে বলা থেকে বিরত থাকবেন

. আপনি অনর্থক ও বেশী কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন তাহলেই এই অভ্যাস এমনিতেই বাদ হয়ে যাবে আর অনর্থক ও বেশী কথা বলার সময় এই খেয়াল রাখবেন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার বলা সকল কথার হিসেব নিবেন


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...