ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
সূরা আল মুমিনুন-এর প্রথম কয়েকটি আয়াতে
সাফল্য লাভকারীদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন। এর মধ্যে ‘অসার, অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয়’ কথাবার্তা থেকে
বেঁচে থাকা লোকদের বিষয়েও বলা হয়েছে। পূর্ণ মুমিনের এটি একটি গুণ যে সে অনর্থক
বিষয়াদি থেকে বিরত থাকা। অসার ও অনর্থক কথা বা কাজ মানে এমন প্রত্যেকটি কথা ও কাজ
যা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন ও যাতে
কোনো ফল লাভও হয় না। শিরকও এর অন্তর্ভুক্ত, গোনাহের কাজও এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে [ইবন কাসির]। অনরূপভাবে গানবাজনাও এর আওতায় পড়ে [কুরতুবি]
মোটকথা যেসব কথায় বা কাজে কোনো লাভ হয় না, যেগুলোর পরিণাম কল্যাণকর নয়, আসলে কোনো প্রয়োজন নেই, উদ্দেশ্যও ভালো নয় তা সবই ‘বাজে’ কাজের
অন্তর্ভুক্ত। যাতে কোনো দ্বীনি উপকার নেই বরং ক্ষতি বিদ্যমান। এ থেকে বিরত থাকা
ওয়াজিব। রাসূলুলাল্লাহ সা: বলেন : ‘মানুষ যখন অনর্থক বিষয়াদি ত্যাগ করে, তখন তার ইসলাম সৌন্দর্যমণ্ডিত হতে পারে
[তিরমিজি : ২৩১৭, ২৩১৮, ইবনে মাজাহ : ৩৯৭৬]।
মানুষ স্বভাবতই গুনাহ বা অপরাধপ্রবণ হয়।
এটি মানব চরিত্রের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আর মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তবে শর্ত হলো, গুনাহের পর সেটি গোপন রেখে অনুতপ্ত হয়ে
আল্লাহর কাছে তাওবা করতে হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
أَنَّهُ
مَنْ عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ
فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
‘তোমাদের মধ্যে যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কর্ম সম্পাদন করবে, অতঃপর তাওবা করবে এবং সংশোধন করে নেবে, তাহলে তো তিনি ক্ষমাপরায়ণ, দয়াশীল। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৪)
আর ক্ষমা পার্থনা ইবাদতসমূহের মধ্যে
অন্যতম ইবাদত। যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না আল্লাহ তাআলা ওই
ব্যক্তির ওপর রাগান্বিত হন। আমাদের অনেকেরই এমন এমন অপরাধ রয়েছে, যা মানুষ জানলে সমাজে মুখ দেখাতে পারব না।
কিন্তু আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে সেগুলো ঢেকে রেখেছেন। এটি বান্দার প্রতি তাঁর অবারিত
অনুগ্রহমাত্র। কারণ তিনি চান বান্দা তাওবা করে গুনাহমুক্ত হোক। হাদিসের ভাষ্যমতে, মানুষ যদি অপরাধ না করত আর ক্ষমা
প্রার্থনা না করত তবে আল্লাহ এ জাতিকে উঠিয়ে নিয়ে অন্য জাতি পাঠাতেন।
ক্ষমার এত সর্বব্যাপী ঘোষণা থাকার পরও
মহান আল্লাহ কিছু মানুষকে ক্ষমা করবেন না। মহানবী (সা.) সেই শ্রেণির মানুষের
ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি
তিনি বলেছেন,
عَنْ
سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ سَمِعْتُ
رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى
إِلاَّ الْمُجَاهِرِينَ، وَإِنَّ مِنَ الْمَجَانَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ
بِاللَّيْلِ عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ، فَيَقُولَ يَا
فُلاَنُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ
وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ ".
‘আমার উম্মতের
সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে; তবে ওই সব লোককে ক্ষমা করা হবে না, যারা পাপ করার পর তা অন্যের কাছে প্রকাশ
করে দেয়। অন্যের কাছে প্রকাশ করার একটি দিক হলো কোনো ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোনো
গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহটিকে গোপন রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে
নিজেই অন্য মানুষের কাছে বলল, হে অমুক! জানো, রাতে আমি এ কাজ
করেছি। সারা রাত মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাপটি গোপন রাখলেন আর ভোর হওয়া মাত্রই
আল্লাহর ঢেকে রাখা পাপের বিষয়টি সে ব্যক্তি নিজেই প্রকাশ করে দিল। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)
হাদিসের ঘোষণা থেকে এ কথা পরিষ্কার
প্রতীয়মান হয় যে কোনো ব্যক্তি যদি অনিচ্ছায় কোনো গুনাহ করে বসে আর তা গোপন রাখে; তাহলে আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির পাপ কাজ
গোপন রাখেন। অতঃপর মানুষটি তাওবা করলে তিনি ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে,
لَا
يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ
‘আল্লাহ কোনো মন্দ
বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। ’
(কপি)
বদ নজর সম্পর্কে জানুন- https://ifatwa.info/12071/?show=12071#q12071
আরো জানুন- https://ifatwa.info/37479/?show=37479#q37479
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. আপনি সকাল-সন্ধ্যা সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, আপনি কাউকে সব কথা বলবেন
না। মানুষকে বললে আপনার কোনো উপকার হবে না
বরং ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনাই বেশী। বিশেষ করে ফ্রেন্ডরা এই ক্ষতি বেশী করে থাকে।
২. আপনি সব কথা মানুষকে বলা থেকে বিরত থাকবেন।
৩. আপনি অনর্থক ও বেশী কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলেই এই অভ্যাস এমনিতেই বাদ হয়ে যাবে। আর অনর্থক ও বেশী কথা বলার সময় এই খেয়াল রাখবেন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনার বলা সকল কথার হিসেব
নিবেন।