আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
299 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (7 points)
edited by

আমি একজন ওয়াসওয়াসার রুগী। আমি বিয়ে করেনি। আমি জীবনে অনেকবার আল্লাহর দেওয়া কসম ভেঙেছি। এমনও কসম ভেঙেছি যা ভাঙলে ঈমান চলে যায়। অর্থাৎ কাফের, মুশরিক হয়ে যাওয়ার কসম ও ভেঙেছি। আবার সাধারণ বিষয়েও কসম কেটেছি। যেমনঃ আল্লাহর কসম উমুক কাজ করবো না। আমার কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা হিসেবে ২০০টি কসম ভেঙে ফেলার কাফফারা দিবো নিয়ত করেছিলাম। এটা একজন মুফতি হুজুরের সাথে পরামর্শ করেই নিয়েছিলাম।
যখন ২০০ টির নিয়ত করেছিলাম তখন সবগুলো কসম এখনো ভেঙে ফেলিনি। মানে ভেঙে ফেলার আগেই কাফফারার নিয়ত করে ফেলেছিলাম।
১. কসম ভেঙে ফেলার আগেই কি কাফফারার নিয়ত করা যায়?
২. এরপর আগের কসমগুলো আমি যখন ভেঙে ফেলি তখন মনে মনে আবার কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করে ফেলি। এটা কি সঠিক পদ্ধতি নাকি আগের ২০০ থেকেই কাফফারা আদায় হতে থাকবে?
৩. আমি যদি এমন নিয়ত করি যে কাফফারা কসম ভেঙে ফেলার পর বাড়াবো, পরে যদি চিন্তা করি যে আগেই তো ২০০ কসমের কাফফারার নিয়ত করে রেখেছি। তাহলে কেন বাড়াবো? - এটা কি সঠিক নাকি কাফফারা বাড়াবো?
৪. আমি যদি ঈমান হারানোর কসমগুলোর কাফফারা আদায় করার নিয়ত না করে শুধু ঈমান আনি সেক্ষেত্রে কি ঈমান আসবে?
৫. একটি কসম ভেঙেছে কি না আমি নিশ্চিত নয়। আমি যদি সেই কাজের উপর অগ্রিম কাফফারার নিয়ত করে রাখি তাহলে কি যখন নিশ্চিত হবো তখন আবার কাফফারা আদায়ের নিয়ত করবো?
৬. আমি আল্লাহর কসম করে বলেছিলাম যে, ' আইফতোয়া তে ওলী উল্লাহ হুজুরকে তালাক সংক্রান্ত প্রশ্ন করবো না' - এই কসম কয়েকভাবে করেছিলাম। এরপর প্রশ্ন করে ফেলেছি। কিন্তু ওলী উল্লাহ হুজুর প্রশ্ন দেখার আগেই আমি কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করে ফেলেছিলাম। যেহেতু ওলী উল্লাহ হুজুর প্রশ্ন এখনো দেখেনি আর আমি যেহেতু আগেই উচ্চারণ করে কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করে ফেলেছি এখন প্রশ্ন দেখার পর কি আবার কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করতে হবে? আমার ধারণা যে, "প্রশ্ন তো এখনো হুজুরের কাছে পৌছায়নি। আমার মনে না থাকায় হয়তো আগেই কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করে ফেলেছি।"
৭. পরবর্তীতে আমি আরও কিছু কসম ভেঙে উচ্চারণ করে সর্বমোট ২৮৫টি কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করেছি। এই সবগুলোই কি আমার উপর দেওয়া ওয়াজিব হয়ে গেছে?
৮. কিছুদিন আগে আমি আমার সিম পরিবর্তন করি, সিম পরিবর্তন না করার ব্যাপারে আমি কাফের/মুশরিক ইত্যাদি হয়ে যাওয়ার কসম করেছিলাম। তবে, এই কসম গুলো করেছি ২০০টি কাফফারা দেওয়ার নিয়তের আগে। কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করেছিলাম জানুয়ারী মাসে। আর সিম পরিবর্তন করেছি মার্চ মাসে। এখন আমার মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে যে, আমি হয়তো সিম পরিবর্তন এর ব্যাপারে হয়তো কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করিনি। বা করলেও তো সিম পরিবর্তন করার আগে করেছি। এখন কি করা উচিত আমার? সিম পরিবর্তন করার কারণে কি নতুন করে আরো কিছু কাফফারা দেওয়ার নিয়ত করবো?

০৯. উমুক কাজ করলে আমি কাফের / উমুক কাজ করলে আমি মুশরিক/ উমুক কাজ করলে আমার এই ক্ষতি হবে - এই ধরনের কসম ভেঙে ফেললে কাফফারা কয়টি হবে ১ টি নাকি ৩ টি? মানে একবার কাফের না হওয়ার এর জন্য, আরেকবার মুশরিক না হওয়ার এর জন্য? আরেকবার নিজের ক্ষতি না হওয়ার জন্য?

১০. আমি ওয়াসওয়াসার দরুন কাফফারার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারছি না। আমি পরবর্তীতে কিংবা ১ বছর পর কোন আলেমের সাথে সাক্ষাতে আলোচনা করে কাফফারা নির্ধারণ করবো - এই নিয়ত করা যাবে কি? নাকি এখনই কাফফারার সংখ্যা ঠিক করে তারপর ঈমান আনতে হবে?

১১. হুজুর ১১নং প্রশ্নটি ইনবক্সে করেছি। 

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


প্রথমেই কয়েকটি মাসয়ালা জেনে নেই।

https://ifatwa.info/34525/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ 
শরীয়তের বিধান হলো ইচ্ছাপূর্বক ভাবে নিজেকে নিজে কাফের বলে পরিচয় দেওয়া কুফরী। 

সূরা নাহলের ১০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ (106)

“কেউ বিশ্বাস স্থাপনের পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং প্রত্যাখ্যানের জন্য হৃদয় মুক্ত রাখলে তার উপর আল্লাহ ক্রোধ পতিত হবে এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি। তবে তার জন্য নয়, যাকে (সত্য প্রত্যাখ্যানে) বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার অন্তর বিশ্বাসে অটল।” (১৬:১০৬)
,

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী তে আছে
"وَمَنْ يَرْضَى بِكُفْرِ نَفْسِهِ فَقَدْ كَفَرَ."
(كتاب السير، الْبَابُ التَّاسِعُ فِي أَحْكَامِ الْمُرْتَدِّين ، مطلب فِي مُوجِبَاتُ الْكُفْرِ أَنْوَاعٌ مِنْهَا مَا يَتَعَلَّقُ بِالْإِيمَانِ وَالْإِسْلَامِ، ٢ / ٢٥٧، ط: دار الفكر)
"এবং যে কুফরীতে সন্তুষ্ট থাকে, সে কাফের হয়ে গেছে।

বিস্তারিত জানুনঃ   

الفتاوى الهندية (2/ 54):
"ولو قال: إن فعل كذا فهو يهودي، أو نصراني، أو مجوسي، أو بريء من الإسلام، أو كافر، أو يعبد من دون الله، أو يعبد الصليب، أو نحو ذلك مما يكون اعتقاده كفرًا فهو يمين استحسانًا، كذا في البدائع.
حتى لو فعل ذلك الفعل يلزمه الكفارة، وهل يصير كافرًا؟ اختلف المشايخ فيه، قال: شمس الأئمة السرخسي - رحمه الله تعالى -: والمختار للفتوى أنه إن كان عنده أنه يكفر متى أتى بهذا الشرط، ومع هذا أتى يصير كافرًا لرضاه بالكفر".
সারমর্মঃ
যদি কেহ বলে যে সে যদি অমুক কাজ করে তাহলে সে ইহুদি অথবা নাসারা অথবা অগ্নিপুজক অথবা ইসলাম থেকে মুক্ত অথবা কাফের,,,,,
তাহলে সেটি কসম হবে।
যদি সে উক্ত কাজ করে,তাহলে সে কাফের হবে কিনা,এই ব্যাপারে মাশায়েখদের মতবিরোধ রয়েছে। 
শামসুল আঈম্মাহ সরখসি রহঃ বলেন যদি তার আকীদা এমন হয় যে এই কাজ করলেই সে কাফের হয়ে যাবে,তাহলে এহেন আকীদা থাকার পরেও উক্ত কাজ করা মানে কুফরিতে সন্তুষ্ট থাকা।
বিধায় সে কাফের হয়ে যাবে।  

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ব্যাক্তি যখন এ ধরনের কসম করেছিলো,তখন তার যদি আকীদা এটি থাকে,যে আমি ঐ কাজ করলে কাফের হয়ে যাবো,তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে।
কেননা সে কাফের হয়ে যাওয়া ধরে নেওয়া সত্ত্বেও সেই কাজ করেছে,বিধায় তাকে কুফরিতে সন্তুষ্ট ধরা হবে।  
আর যদি তার এহেন আকীদা তার না থাকে,তাহলে উক্ত কাজ করার দ্বারা কাফের হবেনা।
তবে উভয় ছুরতেই কাফফারা দিতেই হবে।

যদি কাফের হয়ে যায়,তাহলে ছুরতে তাকে নতুন ভাবে ঈমান আনতে হবে,বিবাহিত হলে নতুন ভাবে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।

একাধিক কসমের কাফফারা সংক্রান্ত মাসয়ালা জানুনঃ 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,

(০১)
কসম ভেঙ্গে ফেলার আগে তো কাফফারার প্রশ্নই আসেনা।
তাই কাফফারার নিয়তও করা যাবেনা।

(০২)
পূর্বে ফতোয়ায় বলা হয়েছে যে একই বিষয়ে আপনার কসম হওয়ায় আপনাকে  একটি  কাফফারা দিতে হবে।

(০৩)
এভাবে কাফফারা বাড়ানোর কথা বলায় কাফফারা বাড়বেনা।

(০৪)
সেক্ষেত্রে  ঈমান আসবে।

(০৫)
আগে কাফফারা আদায়ের নিয়তের প্রয়োজনীতা নেই।

(০৬)
এতে সমস্যা হবেনা।

তবে আপনি আবারো প্রশ্ন করায় এতে আপনাকে এ সংক্রান্ত একট কাফফারা আদায় করতে হবে। 

(০৭)
আপনি মোট কত ধরনের কসম করে ভেঙ্গে ফেলেছেন?
সেটি আগে স্পষ্ট করুন।
একই ধরনের কসমকে একটি কসম ধরবেন।  

(০৮)
আল্লাহর নামে কসম করে থাকলে এতে সীম পরিবর্তন এর জন্য একটি কাফফারা দিতে হবে।
এরপরে আবারো পরিবর্তন করলে তাতে আর কোনো সমস্যা হবেনা।  

(০৯)
এতে সেই কাজ করলে একটি কাফফারা আসবে।
এই ছুরতে কাফের হবে কিনা,সেটি উপরে বিস্তারিত  উল্লেখ রয়েছে।  

(১০)
হ্যাঁ, এই নিয়ত করা যাবে। 

(১১)
চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার যে কসম ছিলো,এতে কোনো সমস্যা হবেনা।

আর কাফের হয়ে যাওয়া সম্পর্কে যে কসম ছিলো,এটির হুকুম উপরে বিস্তারিত  উল্লেখ রয়েছে।  
এই ছুরতে সেই কাজ করলে একটি কাফফারা দিতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 110 views
...