এরূপ কোন কথা কুরআন-হাদীসে পাওয়া যায় না। বরং কুরআনুল কারীমে মহান রাব্বুল ‘আলামীন জান্নাতের নিয়ামতের কথা বর্ণনা করেছেন, তারপর জান্নাত পাওয়ার জন্য আমল করতে আদেশ দিয়েছেন। যেমন
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
لِمِثۡلِ ہٰذَا فَلۡیَعۡمَلِ الۡعٰمِلُوۡنَ ﴿۶۱﴾
এরূপ সাফল্যের জন্য (জান্নাত লাভের জন্য) আমলকারীদের উচিত আমল করা উচিত।
(সুরা আস সাফফাত ৬১)
আরও বলেন, “আর এ বিষয়ে (জান্নাত লাভের বিষয়ে) প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” [আল-মুতাফফিফীন: ২৬]
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُعَاذٍ الصَّنْعَانِيُّ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ أَبِي النَّجُودِ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، قَالَ كُنْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَأَصْبَحْتُ يَوْمًا قَرِيبًا مِنْهُ وَنَحْنُ نَسِيرُ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ . قَالَ " لَقَدْ سَأَلْتَنِي عَنْ عَظِيمٍ وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ تَعْبُدُ اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ وَتَحُجُّ الْبَيْتَ " . ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الْخَيْرِ الصَّوْمُ جُنَّةٌ وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ الْمَاءُ النَّارَ وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ " . قَالَ ثُمَّ تَلاََ: ( تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ ) حَتَّى بَلَغَ: (يَعْمَلُونَ) ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ كُلِّهِ وَعَمُودِهِ وَذِرْوَةِ سَنَامِهِ " . قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ " . ثُمَّ قَالَ " أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمَلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ " . قُلْتُ بَلَى يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ " كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا " . فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ فَقَالَ " ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ "
মু'আয ইবনু জাবাল (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কোন এক ভ্রমণে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। একদিন যেতে যেতে আমি তার নিকটবর্তী হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি কাজ সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম হতে দূরে রাখবে। তিনি বললেনঃ তুমি তো আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছো। তবে সেই ব্যক্তির জন্য এ ব্যাপারটা অতি সহজ যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা'আলা তা সহজ করে দেন।
তুমি আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত করবে, কোন কিছুকে তার সাথে শরীক করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা রাখবে এবং বাইতুল্লাহর হাজ্জ করবে। তিনি আরো বললেনঃ আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ সম্পর্কে বলে দিব না? রোযা হলো ঢালস্বরূপ, দান-খাইরাত গুনাহসমূহ বিলীন করে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং কোন ব্যক্তির মধ্যরাতের নামায আদায় করা। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “তাদের দেহপাশ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুকে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ " (সূরা আস-সাজদাহ ১৬, ১৭)
তিনি আবার বলেনঃ আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেনঃ সকল কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামায এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। তিনি আরো বললেন? আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তার জিহা ধরে বললেনঃ এটা সংযত রাখ। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নাবী! আমরা যে কথা-বার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা (জবাবদিহি) হবে? তিনি বললেনঃ হে মু'আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহবার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
(সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৭৩) তিরমিজি ২৬১৬)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
অত্র হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম জান্নাত পাওয়ার ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য আমল বলে দিলেন।
যদি জান্নাত পাওয়ার উদ্দেশ্যে এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল না হতো, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম মু’আযকে অবশ্যই বলে দিতেন যে, তুমি জান্নাত পাওয়ার এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ইবাদত করো না। কেননা, এতে ইবাদত কবুল হবেনা।
যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া-সাল্লাম একথা বলেননি, তাই ""জান্নাত পাওয়ার জন্য ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হয় না"" এমন কথা ছহীহ নয়।
তবে উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে এক্ষেত্রে একথা বলা যেতে পারে যে, প্রতিটি মু’মিন জান্নাত ও জাহান্নামের উর্ধ্বে ওঠে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদত করতে পারলে সেটা ইখলাসের অনেক উঁচু স্তর হবে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন হয়ে গেলে জান্নাতও হাসিল হবে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ হবে।