আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
177 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম। অনেক দিশেহারা হয়ে আমার সমস্যা নিয়ে এখানে হাজির হলাম। আল্লাহর জন্য আমাকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করুন। নিজের নফসের সাথে লড়াই করে আর পারছিনা বারবার আত্মহত্যার কথা মাথায় আসে।
2019 সালে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পরে আমাকে ওনার বাড়িতে নিয়ে যায় কিছুদিনের জন্য। সেখানে কিছুদিন থাকার পর আমাকে আবার দিয়ে যায় (এটাই আমাদের শেষ দেখা) । এর 3 মাস পরেই বিভিন্ন ঝামেলায় আমার তালাক হয়ে যায়।এরপর বছর ঘুরতেই আমার পরিবার আমাকে আবার বিয়ে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ছেলে খোজা শুরু করে। কিন্তু আমার তালাকের পরেই আল্লাহ রব্বুল আ'লামিন আমাকে হিদায়াত দান করে। আমি পর্দা, রোজা, নামায সব শুরু করি। সেই কারণে নন মাহরামদের সামনে যাওয়া বন্ধ করে দেই। কিন্তু আমাকে প্রতিদিন এক একজন করে দেখতে আসা, ছেলের চাচা, ভাই, বন্ধুদের সামনে আমার যাওয়া নিয়ে প্রতিবাদে বাসায় সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকতো। খুব করে চাচ্ছিলাম আমার বিয়েটা হয়ে যাক। কারন একপ্রকার বাধ্য হয়ে আমাকে তাদের সামনে যেতেই হত। এরই মধ্যে 2021 সালে আমার একটা প্রস্তাব আসে আমার স্টুডেন্টের আম্মুর মাধ্যমে। সম্পর্কে তার মামাত দেবর। আমার ফ্যামিলির সাথে যখন তাদের আমাকে নিয়ে কথা হয়, তারা আমাকে নিয়ে সবটাই বলে যে আমার তা'লাক হয়েছিল, কিন্তু আমাকে সেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এই কথাটুকু আমার ফ্যামিলি গোপন করে যায়। আমি জানার পর আমার ফ্যামিলিকে রিকুয়েস্ট করি এতটুকু কেন তারা গোপন করছে? আমাকে যে নেবে সবটা জেনেই নেবে। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেনি। আর আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুলটা আমি এখানেই করি, আমিও তাকে এটা জানানোর সাহস পাইনি। এর অনেক কারন ও ছিল( যদিও নিজের ভুলের বিপরীতে কোন কারন খুজতে নেই, তাও জানানোর জন্য বললাম) আমি ছোট থেকেই পারিবারিক সমস্যার মধ্যে বড় হয়েছি, একটা সামান্য কথা মুখের উপর বলার কনফিডেন্ট আমার নেই, নিজের মাকে অত্যাচারিত হতে দেখেছি ছোট হতে, আমার বাবার বলা মিথ্যার পরিপেক্ষিতে যখনই মা কিছু বলত আমার মাকে নানা ভাষায় গালি দিয়ে চুপ করিয়ে দিত, এই নানা ভয়ে আমি বলতে গিয়েও বলার সাহস পাইনি। তারা দেখার 7 দিনের মাথায় আমার বিয়ে হয়ে যায় তার সাথে। বিয়ের পরেও নানা ভাবে তাকে সেই কথাটুকু বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিবারের মান সম্মানের ভয়ে পারিনি। শুধু কেদেছি। আমি আমার স্বামীকে বিয়ের পর থেকেই অন্তর থেকে ভালোবেসেছি, কতটা ভালোবাসি তাকে তা একমাত্র আমার রব জানে। কয়েক মাস আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো যায়। কিন্তু কয়েকমাস পরেই সে জানতে পারে আমি সেই বাসায় গিয়েছিলাম। সে প্রথম প্রথম কিছু বলেনি, কিন্তু ধীরে ধীরে আমার সাথে কথা বলা কমিয়ে দেয়, আমার প্রতি অবহেলা বাড়তে থাকে, আমার বাসায় আসাও কমিয়ে দেয়( কাছের জন্য সে অন্য জায়গায় থাকে, আগে প্রতি সপ্তাহে আসত)। আমি সবকিছুর জন্য তার কাছে ক্ষমা চাই, আর আমার না বলতে পারার কারন গুলোও ব্যাখা করি। কিন্তু সে একটাই কথা বলে আমি সবটা জানার পর আমাকে তুমি বলেছো, আমি না জানার আগেও যদি সবটা বলতে তাও হতো। কিন্তু আমি বলার কতটা চেষ্টা করেছি তা একমাত্র আল্লাহ জানে। সে এখন পুরোপুরি আমার সাথে কথা ও দেখা করা বন্ধ করেছে। আমার তাকে ছাড়া নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, আমি তাকে সবভাবে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। আমি নিজের ভুলের কারনেও দগ্ধে মরছি, এই একটা মানুষকে আমি সাংঘাতিক ভালবাসি। আমি এখন কি করব, এই প্রতারণার বিষয়ে ইসলাম কি বলে? তাকে কিভাবে বুঝাবো আমার অন্তরটা? আমাকে একটু পরামর্শ দিন

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


আত্মহত্যা কোনো ভাবেই সমাধান নয়। 
একটি আত্মহত্যা শুধু একটি জীবনকে শেষ করে দেয় না বরং একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি গোটা মানবজাতিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়।

প্রত্যেক আত্মহত্যায় চেষ্টাকারী ব্যাক্তির ফিকির করা উচিত, যে আত্মহত্যা করার পর তার পরিবারের উপর কি যন্ত্রণা  যায়, কি চাপ যায়,কতটা কষ্ট পায় মা বাবা,আত্মীয় স্বজন।

আত্মহত্যা কারী ব্যাক্তি দুনিয়াও হারায়,আখেরাতও হারায়।
সুতরাং এটি কোনো সমাধান হতেই পারেনা।  

ইসলামী আইন ও বিধানে আত্মহত্যাকে হারাম করা হয়েছে এবং তার পরিণতিতে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির আত্মহত্যা করার পদ্ধতি অনুযায়ী তার যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। 

পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর করুণাময়।’ (সূরা আন-নিসা, ৪ : ২৯-৩০) 

অন্য দিকে অনেক হাদিস আত্মহত্যা এবং এর শাস্তি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত 

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ (সহিহ বুখারি, খণ্ড ২, হাদিস নং ৪৪৬) 

এখন যারা ইসলামী অনুশাসনে বিশ্বাসী এবং সে আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করেন, তারা কখনো আত্মহত্যা করে নিজেদের পরকালীন জীবনকে জাহান্নামে নিশ্চিত করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।

★আত্মহত্যা থেকে বাঁচার জন্য তাক্বদীরে বিশ্বাস মযবুত করা জরূরী । 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি বিস্ময়কর। যখন সে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আবার যখন বিপদগ্রস্ত হয়, তখন ছবর করে। উভয় অবস্থায় সে আল্লাহর নিকট পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়’ (মুসলিম)। 

★সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা জরুরী । আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হন’ (তালাক ৬৫/৩)। 

★হতাশা থেকে বাঁচতে হবে,হতাশ হওয়া যাবেনা।
আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’ (যুমার ৩৯/৫৩)। অতএব মুমিন কখনো হতাশায় ভোগে না।

আত্মহত্যা মহাপাপ। এরপরেও মানুষ আত্মহত্যা করে। 

কোন মুমিন আত্মহত্যা করতে পারে না। কেননা এটা করলে সে ইহকাল ও পরকাল দু’টিই হারাবে। তাকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, উপায়-উপাদানের মালিক আল্লাহ। 

নিরুপায় মানুষ আল্লাহর উপর একান্ত ভরসা করে বৈধ পন্থায় চেষ্টা করে গেলে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য উত্তম পথ বের করে দিবেন। 

এ ব্যাপারে তিনি তার অনুগত বান্দাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য তিনি উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রূযী দেন, যা সে কল্পনাও করেনি’ (তালাক ৬৫/২-৩)।

 তিনি বলেন ‘যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, অবশ্যই আমরা তাদেরকে আমাদের পথসমূহে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’ (আনকাবূত ২৯/৬৯)


★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি নিজ পরিবারকে দিয়ে তাদের পরিবারের সাথে বৈঠক করাবেন।
সামগ্রিকভাবে আপনি এবং আপনার পরিবার তাদের কাছে মাফ চাইবেন।
ইনশাআল্লাহ সমাধান মিলবে।
অনেক বুঝানোর পরেও কাজ না হলে  আপনি ধৈর্য ধারন করে যাবেন।
যদি সে তালাকও দেয়,তবুও হতাশ হবেননা।
নিশ্চয়ই আপনার জন্য উত্তম কোনো কিছু অপেক্ষা করছে।

আখেরাতের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার  জিন্দেগীর এ শাস্তি কিছু নয়।
ধৈর্য করে আল্লাহর উপর ভরসা করে ঈমান আমল নিয়ে চললে আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম জাযা দিবেন।
শুধুমাত্র আল্লাহকে আপন মনে করুন। 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
শুধুমাত্র স্বামীর জন্য কেনো আত্মহত্যা করবেন?
অথচ যিনি আপনাকে সৃষ্টি করলেন, রিযিক দিলেন,এতো লক্ষ কোটি নিয়ামত দ্বারা ভরপুর করলেন,সেই মহান সত্তার কথা  ভাববেননা?
সুতরাং আপনি হতাশ হবেননা।
,
যে যে পরামর্শ দেয়া হলো,আমল করুন,সমাধান মিলবে,ইনশাআল্লাহ।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...