উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
,
ইসলামে জামাতের সাথে নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা নামাজের ব্যাপারে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। ঈমানের পরেই যার স্থান। যা ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ। জামাআতে নামাজ শুরু করার প্রথম তাকবিরের রয়েছে অত্যাধিক ফজিলত। যাকে তাকবিরে উলা বলা হয়।
,
তাকবীরে উলা সম্পর্কিত হাদীসটি নিম্নরূপ :
من صلى أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولى كتب له براءتان : براءة من النار، وبراءة من النفاق
অর্থ : যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামায আদায় করবে এবং সে প্রথম তাকবীরও পাবে তার জন্যদুটি মুক্তির পরওয়ানা লেখা হবে।
(এক) জাহান্নাম থেকে মুক্তি।
(দুই) নেফাক থেকে মুক্তি।
(-সুনানেতিরমিযী ১/৩৩; আততারগীব ১/২৬৩)
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইমামের প্রথম তাকবীর বলার সাথে সাথে তাকবীর বলে নামায শুরুকরলে তাকবীরে উলা পাবে। সুতরাং ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথেই নামাযে শরিক হওয়ারচেষ্টা করতে হবে। প্রকাশ থাকে যে, সূরা ফাতেহা শেষ হওয়ার আগে জামাতে শরিক হতে পারলেওকোনো কোনো ফকীহ তাকবীরে উলার সওয়াব হাসিল হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেছেন।
-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৪; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৪০; রদ্দুল মুহতার ১/৫২৬
,
(০১) কেহ যদি টানা ৪০ দিন জামাতে তাকবিরে উলার সহিত নামায পড়া শুরু করার নিয়ত করার পর মাঝে যদি জামাতে না যাওয়ার ওযর দেখা দেয়, যেমন বৃষ্টি হওয়া,অসুস্থ হওয়া বা করোনা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারনে যদি জামাতে না যেতে পারে,
এমতাবস্থায় সে আর ঐ ফযিলত পাবেনা।
তাকে আবার নতুন করে ৪০ দিন গননা শুরু করতে হবে।
,
(০২) তাকবিরর উলার সহিত ৪০ দিন জামাতে নামায পড়ার জন্য জন্য বৃষ্টির মধ্যে ছাতা নিয়ে যাওয়া জরুরি।
বৃষ্টি না হয়,তবে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মুকিম ব্যাক্তির জন্য ছাতা/রেইনকোট নিয়ে যাওয়া জরুরি।
(০৩) জামাতে না যাওয়ার ওযরঃ
ঘোর অন্ধকার,কঠিন শিত,(শিত কাটানোর আসবাব নেই) মুষুলধারে বৃষ্টি হলে মসজিদে না গিয়ে বাসায় নামাজ পড়ার অনুমতি আছে।
এ সংক্রান্ত বুখারী শরীফের হাদীসঃ
مُسَدَّدٌ قَالَ أَخْبَرَنَا يَحْيَى عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ حَدَّثَنِي نَافِعٌ قَالَ أَذَّنَ ابْنُ عُمَرَ فِي لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ بِضَجْنَانَ ثُمَّ قَالَ صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ فَأَخْبَرَنَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَأْمُرُ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ ثُمَّ يَقُولُ عَلَى إِثْرِهِ أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ فِي اللَّيْلَةِ الْبَارِدَةِ أَوْ الْمَطِيرَةِ فِي السَّفَرِ.
৬৩২. নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রচন্ড এক শীতের রাতে ইবনু ‘উমার (রাযি.) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়ায্যিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর। (৬৬৬; মুসলিম ৬/৩, হাঃ ৬৯৭, আহমাদ ৪৫৮০ (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬০৪)
.
عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ أَذَّنَ بِالصَّلاَةِ فِي لَيْلَةٍ ذَاتِ بَرْدٍ وَرِيحٍ ثُمَّ قَالَ أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ.
৬৬৬. নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাযি.) একদা তীব্র শীত ও বাতাসের রাতে সালাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআয্যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- ‘‘প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও।’’ (৬৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৩৩)
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ مَحْمُودِ بْنِ الرَّبِيعِ الأَنْصَارِيِّ، أَنَّ عِتْبَانَ بْنَ مَالِكٍ، كَانَ يَؤُمُّ قَوْمَهُ وَهْوَ أَعْمَى، وَأَنَّهُ قَالَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهَا تَكُونُ الظُّلْمَةُ وَالسَّيْلُ وَأَنَا رَجُلٌ ضَرِيرُ الْبَصَرِ، فَصَلِّ يَا رَسُولَ اللَّهِ فِي بَيْتِي مَكَانًا أَتَّخِذُهُ مُصَلًّى، فَجَاءَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " أَيْنَ تُحِبُّ أَنْ أُصَلِّيَ ". فَأَشَارَ إِلَى مَكَانٍ مِنَ الْبَيْتِ، فَصَلَّى فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم.
৬৬৭. মাহমূদ ইবনু রাবী ‘আল-আনসারী (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘ইত্বান ইবনু মালিক (রাযি.) তাঁর নিজ গোত্রের ইমামাত করতেন। তিনি ছিলেন অন্ধ। একদা তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো কখনো ঘোর অন্ধকার ও বর্ষণ প্রবাহিত হয়ে পড়ে। অথচ আমি একজন অন্ধ ব্যক্তি। হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার ঘরে কোন এক স্থানে সালাত আদায় করুন যে স্থানটিকে আমার সালাতের স্থান হিসেবে নির্ধারিত করবো। অতঃপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে এলেন এবং বললেনঃ আমার সালাত আদায়ের জন্য কোন্ জায়গাটি তুমি ভাল মনে কর? তিনি ইঙ্গিত করে ঘরের জায়গা দেখিয়ে দিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে স্থানে সালাত আদায় করলেন। (৪২৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৩৪)
এসব হাদীসের ব্যখ্যায় মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেন যে
لكن قاعدة حمل المطلق على المقيد تقتضي أن يختص ذلك بالمسافر مطلقا، ويلحق به من تلحقه بذلك مشقة في الحضر دون من لا تلحقه،
যার সারমর্ম হলো মুসাফিরদের জন্য সর্বক্ষেত্রেই কঠিন বৃষ্টি হলে বাসায় নামাজ পড়ার অনুমতি রয়েছে, তবে মুকিম (যে ব্যাক্তি মুসাফির নন) এর জন্য যদি সে সময়ে মসজিদে যাওয়া কষ্টকর হয়,তবেই তার জন্য বাসায় নামাজ পড়ার অনুমতি থাকবে,মসজিদে যাওয়া কষ্টকর না হলে এই অনুমতি নেই।
(ফাতহুল বারী, আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
,
★★সুতরাং যদি কোনো ব্যাক্তি মুসাফির না হয়,এবং তার কাছে ছাতা,রেইনকোট ইত্যাদি থাকে,এককথায় মসজিদে যাওয়া যদি তার জন্য কষ্টকর না হয়,তাহলে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সেই সময়ে মসজিদে না গিয়ে বাড়িতে নামাজ পড়ার কোনো অনুমতি নেই।
,
(০৪) ওযরের সময় বাসাতে জামাত করে যদি নামজ পড়েন, তাহলেও এই ফযিলত পাবেন।
(০৫) ওযর ছাড়া বাসাতে জামাতে পড়লেও এই ফযিলত পাওয়া যাবে।
★তবে মহল্লার মসজিদে জামাতে নামাজ না পড়ার গুনাহ হবে।