ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণ করাও স্বামীর দায়িত্ব। এর জন্য
নির্ধারিত সময় ধার্য নেই; বরং চাহিদা, শারীরিক সক্ষমতা ইত্যাদি অনুপাতে করতে হবে। তবে দীর্ঘদিন
বিরত থাকাও নিষেধ। ওমর (রা.) একদা রাতের বেলা একটি ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে
পেলেন যে জনৈক মহিলা বিরহের কবিতা পড়ছে। তখন এর কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে যে তার
স্বামী দীর্ঘদিন জিহাদে রত, বাড়িতে আসছে না। তখন ওমর (রা.) হাফসা (রা.)-কে গিয়ে জিজ্ঞেস
করলেন যে নারী স্বামীবিহীন কত দিন ধৈর্য ধারণ করতে পারে? হাফসা (রা.)
লজ্জায় বলতে চাচ্ছিলেন না। তখন ওমর (রা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা হক কথায় লজ্জা করেন না। তখন হাফসা
(রা.) ইশারায় তিন বা চার মাসের কথা বলেন। অতঃপর ওমর (রা.) সেনাপতিদের নির্দেশ দিয়ে
পাঠালেন যে চার মাসের বেশি যেন কোনো সৈন্যকে আটকে রাখা না হয়; বরং
অনূর্ধ্ব চার মাস পর পর তাদের ছুটি দেবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস :
১২৫৯৩)
উক্ত ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে স্বাভাবিকভাবে চার মাসের
বেশি স্ত্রী সহবাস থেকে কখনো বিরত থাকবে না।
যেনা করলে যেমন গুনাহ হয় ঠিক তেমনি ভাবে স্ত্রী সহবাস করলেও
সওয়াব হয়।
স্ত্রী সহবাসের
সময় যেসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত, সংক্ষেপে তা নিম্নে পেশ করা হল-
১- নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির
মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত
করা। এ মর্মে আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
وَفِي
بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا
شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا
فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي
الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ
স্ত্রী সহবাসও সদকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ!
কেউ যদিস্ত্রী সহবাস এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার
গুনাহ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব
পাবে। (মুসলিম ২২০১)
২- সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন
ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে,
كان
رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন,
চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)
৩- সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া–
بِسْمِ
اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا
رَزَقْتَنَا
আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে
তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা
পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
৪- যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ
রহ.
نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا
حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ
(তোমাদের স্ত্রীগণ
তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই
আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً
وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে
হবে) স্ত্রীর যোনিপথে।’ ( দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ
ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)
৫- মলদ্বারে সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
لا
يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার
দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। (ইবন মাজাহ ১৯২৩)
৬-ঋতুবতী অবস্থায় সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
مَنْ
أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا
يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর
মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই
মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর
নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহর কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ
৩৯০৪)
৭- একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া
মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا
أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ
بَيْنَهُمَا وُضُوءًافإنه أنشط للعود
যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস
করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি
দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)
তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ
وَأَطْهَرُ এরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ( আবু দাউদ ২১৯)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
১. স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জড়িয়ে ধরা, কিস করা, হাত ধরা,
শরীরে হেলান দেওয়া, তার যৌন চাহিদা পূর্ণ করাও ইবাদত। এতে
আল্লাহ তায়ালা অনেক অনেক সওয়াব দান করেন। প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যে,
আপনি অনেক বড় সুভাগ্যবান। আপনার স্ত্রী আপনাকে অনেক অনেক মুহাব্বত ও
ভালোবাসে। এগুলো তো একজন সৎ, ভালো ও দ্বীনদার স্ত্রীর
অভ্যাস। তাই আপনি তাকে নিষেধ করবেন না। বরং আপনার স্ত্রীকে আপনার প্রতি ভালোবাসা
প্রকাশ করার সযোগ করে দিবেন। এতে দুজনেরই অনেক অনেক সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ।
২. এটিকে নিছক দুনিয়াবী কাজ মনে করা ভুল। সুতরাং স্ত্রীর
শারীরিক চাহিদা পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব । অন্যান্য ইবাদতের প্রতি ইসলাম যেভাবে
উৎসাহিত করে ঠিক তেমনিভাবে স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক চাহিদা পূরণ অর্থাৎ একে
অপরকে জড়িয়ে ধরা, কিস করা, হাত ধরা,
শরীরে হেলান দেওয়া করারও নির্দেশ প্রদাণ করে। স্ত্রীকে কিস করা, জড়িয়ে ধরা, হেলান দেওয়াকে সময় নষ্ট মনে করে তা থেকে
বিরত থাকা মোটেও উচিত না। হাদীস শরীফে এসেছে- রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি
করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)