আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
212 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (28 points)
edited by
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ

আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা থেকে কি মৃত্যু চেয়ে দুআ করা যাবে অথবা ফিতনার যামানায় ইমান নিয়ে দ্রুত মৃত্যু চেয়ে দুআ করা যাবে?যে আল্লাহ আমি আপনার সান্নিধ্য চাই।আমার তাওবাহ কবুল করে আমাকে আপনার কাছে ডেকে নিন।

এভাবে দুআ করা যাবে কি?কোনো কষ্টের জন্য দুআ না। শুধু ই আল্লাহর কাছে যাওয়ার জন্য।উনার সান্নিধ্যে র জন্য।

1 Answer

0 votes
by (589,260 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক বান্দার জন্য নির্ধারিত সময়/হায়াতের পূর্বে মৃত্যু কামনা করা যাবে না,তা নিষেধ। 
কেননা এক্ষেত্রে শরীয়তের অনেক বিষয়াদি বিশেষকরে নিম্নোক্ত আয়াতকে সরাসরি অস্বীকার করা হয়।
যেমন আল্লাহ তা'আলার বানীঃ
ﻭَﻟَﻮْ ﻳُﺆَﺍﺧِﺬُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺑِﻈُﻠْﻤِﻬِﻢْ ﻣَﺎ ﺗَﺮَﻙَ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺩَﺍﺑَّﺔٍ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻳُﺆَﺧِّﺮُﻫُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﺟَﻞٍ ﻣُﺴَﻤًّﻰ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺃَﺟَﻠُﻬُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘَﺄْﺧِﺮُﻭﻥَ ﺳَﺎﻋَﺔً ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘَﻘْﺪِﻣُﻮﻥَ
যদি আল্লাহ লোকদেরকে তাদের অন্যায় কাজের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভূ-পৃষ্ঠে চলমান কোন কিছুকেই ছাড়তেন না।কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন।অতঃপর যখন নির্ধারিত সময় এসে যাবে, তখন কেউ এক মুহুর্তও বিলম্বিত কিংবা তরাম্বিত করতে পারবে না।{সূরা নাহল-৬১}

এবং নিম্নোক্ত হাদীসের মর্ম সম্ভলিত সমস্ত হাদীসকে অস্বীকৃতি করা হয়।
যেমন,হযরত আবু উমামা রাযি থেকে বর্ণিত 
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ، ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻧﻔﺚ ﺭﻭﺡ ﺍﻟﻘﺪﺱ ﻓﻲ ﺭﻭﻋﻲ : ﺃﻥ ﻧﻔﺴﺎ ﻟﻦ ﺗﺨﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ ﺣﺘﻰ ﺗﺴﺘﻜﻤﻞ ﺃﺟﻠﻬﺎ ، ﻭﺗﺴﺘﻮﻋﺐ ﺭﺯﻗﻬﺎ ؛ ﻓﺄﺟﻤﻠﻮﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﻄﻠﺐ ، ﻭﻻ ﻳﺤﻤﻠﻨﻜﻢ ﺍﺳﺘﺒﻄﺎﺀ ﺍﻟﺮﺯﻕ ﺃﻥ ﺗﻄﻠﺒﻮﻩ ﺑﻤﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ؛ ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﻨﺎﻝ ﻣﺎ ﻋﻨﺪﻩ ﺇﻻ ﺑﻄﺎﻋﺘﻪ ) 
নবীজী সাঃ বলেন,জিব্রাঈল আঃ আমার কাছে ওহী নিয়ে এসে বললেনঃ কোনো প্রাণী পৃথিবী থেকে ততদিন পর্যন্ত বিধায় নিবে না, যতদিন না তার নির্ধারিত হায়াত  সমাপ্ত হচ্ছে এবং তার রিযিক শেষ হচ্ছে।
সুতরাং তোমরা রিযিক অন্বেষণে সর্বোত্তম পন্থা অবলম্ব করো।রিযিক তালাশ যেন তোমরাদেরকে আল্লাহর সাথে নাফরমানি করতে উদ্বুদ্ধ না করে।কেননা আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য সংরক্ষিত রিযিক হারাম পন্থায় অর্জিত হবে না।বরং তা হালাল পন্থায়ই অন্বেষণ করতে হবে।(আল-মু'জামুল কাবীর-৮/১৬৬)

মৃত্যু কামনার অনেক প্রকার হতে পারে।
তন্মধ্যে কিছু আছে জায়েয এবং কিছু নাজায়েজ।

নাজায়েজ মৃত্যু কামনা,যেমনঃ-
সাধারণত মৃত্যু কামনা বা কোনো দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত হয়ে মৃত্যু কামনা করাকে নাজায়েজ প্রকারের অন্তর্ভূত।

জায়েয মৃত্যু কামনা,যেমনঃ-
নেককার বান্দারের জন্য তারাতারি আল্লাহর সাক্ষাৎ প্রার্থনার করতে মৃত্যকে কামনা করা।ইহা নিষেধ নয়।এরকম কামনা সালাফে সালেহীনদের কাছ থেকে বর্ণিত রয়েছে।যেমন,
হযরত আবুদ্দারদা রাযি সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায় যে,তিনি বলেন,
ﺃﺣﺐ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﺍﺷﺘﻴﺎﻗﺎ ﺇﻟﻰ ﺭﺑﻲ .
অামি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের আগ্রহের ধরুণ মৃত্যুকে পছন্দ করি।
আবু আনবাসা আল-খাউলানী বলেন,
ﻛﺎﻥ ﻣَﻦْ ﻗَﺒْﻠﻜﻢ ﻟﻘﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﺐ ﺇﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻬﺪ .
তোমাদের পূর্ববর্তী মানুষদের কাছে আল্লাহর সাক্ষাৎ মধুর চেয়ে মিষ্ট।
কোনো কোন বুজুর্গ আলেমেদ্বীন সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায় যে,
ﻃﺎﻝ ﺷﻮﻗﻲ ﺇﻟﻴﻚ ﻓﻌﺠِّﻞ ﻗﺪﻭﻣﻲ ﻋﻠﻴﻚ . 
হে আল্লাহ!
আপনার দিকে আমার আগ্রহ বাড়ছে সুতরাং আপনার দিকে আমাকে অগ্রসর করে দিন।

সকল প্রকার মৃত্যু কামনা নাজায়েজ নয় বরং কিছু কিছু মৃত্যু কামনা জায়েযও আছে, তার উপর নিম্নোক্ত আয়াতও প্রমাণ বহন করে,

ﻗُﻞْ ﺇِﻥ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟﺪَّﺍﺭُ ﺍﻵَﺧِﺮَﺓُ ﻋِﻨﺪَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺧَﺎﻟِﺼَﺔً ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﺘَﻤَﻨَّﻮُﺍْ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ
(হে নবী আপনি আহলে কিতাবদের বলুন)
যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর কাছে একমাত্র তোমাদের জন্যই বরাদ্দ হয়ে থাকে-অন্য লোকদের বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু কামনা কর, যদি (তোমরা)সত্যবাদী হয়ে থাকো।(সূরা-বাক্বারা-৯৪)


ﻗُﻞْ ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻫَﺎﺩُﻭﺍ ﺇِﻥ ﺯَﻋَﻤْﺘُﻢْ ﺃَﻧَّﻜُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣِﻦ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﺘَﻤَﻨَّﻮُﺍ ﺍﻟْﻤَﻮْﺕَ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ
বলুন হে ইহুদীগণ, যদি তোমরা দাবী কর যে, তোমরাই আল্লাহর বন্ধু-অন্য কোন মানব নয়, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা কর যদি তোমরা সত্যবাদী হও।(সূরা আল-জুমু'আ-৬)

সুতরাং উপরোক্ত আয়াত সমূহ প্রমাণ করে যে, আউলিয়া তথা আল্লাহর খাটি বান্দাগণ মৃত্যকে অপছন্দ করেন না।বরং তারা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আশায় মৃত্যুর আখাঙ্খা করে থাকেন।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺘَﻤَﻨَّﻮْﻧَﻪُ ﺃَﺑَﺪًﺍ ﺑِﻤَﺎ ﻗَﺪَّﻣَﺖْ ﺃَﻳْﺪِﻳﻬِﻢْ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺑِﺎﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ
তারা নিজেদের কৃতকর্মের কারণে কখনও মৃত্যু কামনা করবে না। আল্লাহ জালেমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন।(সূরা আল-জুমু'আ-৭)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যাদের গোনাহ রয়েছে,যদ্দরুর তারা মৃত্যুকে ভয় করে,একমাত্র তারাই মৃত্যুকে অপছন্দ করতে পারে।

যেমন সালাফে সালেহীনদের কাছ থেকে বর্ণিত রয়েছে,
ﻣﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﺇﻻ ﻣُﺮﻳﺐ .
সন্দেহ পোষণকারী ব্যতীত অন্য কেউ মৃত্যুকে অপছন্দ করতে পারে না।

হযরত ইবনে উমর রাযি সম্পর্কে বর্ণিত,তিনি বলতেন
ﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﺭﺯﻗﻨﻲ ﺷﻬﺎﺩﺓ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻠﻚ ﻭﺍﺟﻌﻞ ﻣﻮﺗﻲ ﻓﻲ ﺑﻠﺪ ﺭﺳﻮﻟﻚ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ
হে আল্লাহ!আমাকে আমাকে আপনার রাস্তায় শহিদি মৃত্যুর তাওফিক দান করো,এবং আপনার রাসূল সাঃ এর শহর "মদিনা মুনাওয়ারা"য় আমাকে মৃত্যু দান করো।(সহীহ বুখারী-১৭৯১)


সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে,আল্লাহ সাক্ষাৎ লাভের আশায় মৃত্যুকে কামনা করা জায়েয।
আর আল্লাহর নৈকট্যলাভ তখনই সম্ভব যখন ঈমানি হালতে কারো মৃত্যু হবে।
সুতরাং ঈমানি হালতে মৃত্যুকে কামনা করা জায়েয। নাজায়েজ তো হবেই না বরং তা সালাফে সালেহীনদের অনুসরণ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (589,260 points)
উত্তর দেয়া হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...