আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
3,906 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (2 points)

আসসালামু আলাইকুম

১ম প্রশ্ন. আমি ১,০০,০০০/- টাকা দিয়ে এক বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে ১ বছর জমিতে ফসল ফলিয়ে ফসল ভোগ করলাম। জমির মালিক ১ বছর পর টাকা ফেরত দিলে আমি তার জমি ফেরত দিলাম। উক্ত টাকা ফেরত দেবার সময় জমির মালিক জমি ব্যবহার বাবদ আমাকে ১০০০/২০০০ টাকা কম দেন (বন্ধক নেওয়ার সময় চুক্তি অনুযায়ী)। এই প্রকারের জমি বন্ধক সুদ হবে কিনা?

২য় প্রশ্ন. আমি উক্ত বন্ধক নেওয়া জমি যদি নিজে চাষ না করি বরং জমির মালিককে/অন্যকে লিজ দেই এবং তার পরিবর্তে বছরে ১২,০০০/- টাকা নেই সেটা সুদ হবে কিনা?

উল্লেখ্য, বর্তমান আমাদের এলাকায় বিষয়টি এমনভাবে প্রচলিত আছে যে, উক্ত বন্ধক নেওয়া জমি মূল মালিককেই চাষ করতে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে তাকে বন্ধক বাবদ প্রাপ্য টাকা থেকে ১২,০০০/- টাকা কম দেওয়া হয়। অর্থাৎ মালিককে ১,০০,০০০/- টাকার বদলে ৮৮,০০০/- টাকা প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে হুকুম কি?

 বিস্তারিত জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (573,660 points)
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم  
,
বন্ধক রাখা হয় ঋণ আদায়ের নিশ্চয়তাস্বরূপ। এতে ঋণদাতা নিশ্চিত থাকেন যে ঋণ আদায় না করলেও বন্ধককৃত বস্তু থেকে আদায় করে নেওয়া যাবে। 
পবিত্র কোরআনেও এর নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যদি তোমরা সফরে থাকো এবং কোনো লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বস্ত মনে করো, তবে যাকে বিশ্বস্ত মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং নিজ রব আল্লাহকে ভয় করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৩)
,
বন্ধককৃত বস্তু বন্ধকগ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ। ★বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতার কোনো ফায়দা হাসিল করা নাজায়েজ ও হারাম। এমনকি বন্ধকদাতা এর অনুমতি দিলেও পারবে না। কারণ বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা কোনো ধরনের ফায়দা উপভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত, যা হারাম। (বাদায়েউস সানায়ে : ৬/১৪৬)

ইবনে সিরিন (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক লোক সাহাবি ইবনে মাসউদ (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে, তা আমি আরোহণের কাজে ব্যবহার করেছি। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, তুমি আরোহণের মাধ্যমে এর থেকে যে উপকার লাভ করেছ তা সুদ হিসেবে গণ্য হবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৭১)
,
বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম কাজি শুরাইহ (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, সুদ পান করা কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বলেন, বন্ধকগ্রহীতা বন্ধকি গাভির দুধ পান করা সুদ পানের অন্তর্ভুক্ত। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৫০৬৯)
,
★ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত পদ্ধতিটিত নাজায়েয হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। এই  পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দুটি কারবারই নাজায়েয।
,
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত কারবার বৈধভাবে করতে চাইলে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করবে। যার বিবরণ হল, জমির মালিক জমি ভাড়া দিবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। মালিকের ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দিবে। এক্ষেত্রে অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিবে। এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে।

-মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪

★প্রচলিত জমি বন্ধক পদ্ধতির বৈধ বিকল্প
১. বন্ধকি জমি থেকে বন্ধকগ্রহীতা উপকৃত হতে চাইলে এ পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে যে বন্ধকি চুক্তি বাতিল করে দীর্ঘমেয়াদি ইজারা পদ্ধতি অবলম্বন করবে। অর্থাৎ যত দিন পর্যন্ত ঋণের টাকা শোধ না হয় ঋণদাতা জমিটি ইজারা পদ্ধতিতে তা ভোগ করবে এবং তার ন্যায্য ভাড়াও মালিককে আদায় করবে। 

এ ক্ষেত্রে ঋণ ও ইজারাচুক্তি দুটি ভিন্ন হতে হবে, দুটি চুক্তিকে মিলিয়ে একটি অপরটির ওপর শর্তযুক্ত হতে পারবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৪৬৫, ইমদাদুল আহকাম ৩/৫১৮)

২. অথবা সে বন্ধকদাতার সঙ্গে ‘বাই বিল ওয়াফা’ চুক্তি করবে। অর্থাৎ বন্ধকগ্রহীতার কাছে ঋণী ব্যক্তি তার জমিটি বিক্রি করে দেবে এই ওয়াদার ওপর যে ঋণ পরিশোধ হওয়ার পর বন্ধকগ্রহীতা আবার জমিটি তার কাছে বিক্রি করে দেবে। এ ক্ষেত্রে বন্ধকগ্রহীতার মালিকানায় যত দিন থাকবে সে তা মালিক হিসেবে ভোগ করতে পারবে। (ইমদাদুল আহকাম : ৩/৫১১)
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত উভয় ছুরত নাজায়েজ। 
১ম পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র মূল্যে ভাড়া হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। 

★আর ২য় পদ্ধতিতে সে উক্ত বন্ধকি জমি অন্যের কাছে/জমির মালিকের কাছে লিজ দেয়।
যেহেতু সেই জমি থেকে নিজে চাষ করে ফায়দা হাসিল করাই জায়েজ নেই,সেহেতু অন্যের কাছে লিজ দিয়েও  ফায়দা হাসিল করা জায়েজ নেই।     
তাই এহেন কাজ থেকে বেঁচে থাকা জরুরী।     


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
জমি ২ বছরের জন্য বন্দক নেওয়ার পর মালিক নিজেই বিনামূল্যে জমি ভোগ করে। কিন্তু ২ বছর পর টাকা ফেরত দিতে পারলো না সেক্ষেত্রে করণীয় কি....?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...