ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
ইসলামী শরীয়াতে ব্যবসার নির্দিষ্ট সংখ্যার বা নির্দিষ্ট পার্সেন্টের মুনাফা অর্জনের কোনো সীমারেখা দেয়নি, বরং সেটাকে উরফ ও পরিস্থিতির উপর ছেড়ে দিয়েছে অন্যকথায় বলা যায়, যোগান ও চাহিদার উপর ছেড়ে দিয়েছে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
"عَنْ اَبِي هُرَيْرَةَ اَنَّ رَجُلًا جَاءَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اﷲِ سَعِّرْ! فَقَالَ: بَلْ أَدْعُو، ثُمَّ جَاءَ هُ رَجُلٌ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اﷲِ سَعِّرْ! فَقَالَ: بَلْ اﷲُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ، وَإِنِّي لَاَرْجُو أَنْ أَلْقَی اﷲَ وَلَيْسَ لِأَحَدٍ عِنْدِي مَظْلَمَةٌ". ( ٢/ ٣٣٧، رقم الحديث: ٣٤٥٠، ط: موسسة قرطبة مصر)
একদা এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। তিনি বললেনঃ বরং আমি দু’আ করবো। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করুন। তিনি বললেনঃ বরং আল্লাহই (জিনিসের দাম) কমান-বাড়ান। আমি আশা করি যে, আমি যেন আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হই, আমার বিরুদ্ধে কারো প্রতি জুলুমের কোনো অভিযোগ থাকবে না। (আবু দাউদ-৩৪৫০)
আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
"عَنْ أَنَسٍ قَالَ النَّاسُ: يَا رَسُولَ اﷲِ غَلَا السِّعْرُ فَسَعِّرْ لَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اﷲِ: إِنَّ اﷲَ هُوَ الْمُسَعِّرُ الْقَابِضُ الْبَاسِطُ الرَّازِقُ، وَإِنِّي لَأَرْجُو أَنْ أَلْقَی اﷲَ وَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْکُمْ يُطَالِبُنِي بِمَظْلَمَةٍ فِي دَمٍ وَلَا مَالٍ". (٣ / ٢٧٢، رقم الحديث: ٣٤٥١)
তিনি বলেন, লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। আপনি আমাদের জন্য দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহই মূল্যের গতি নির্ধারণকারী, তিনিই তা কমান ও বৃদ্ধি করেন এবং একমাত্র তিনিই রিযিকদাতা। আমি এই আশা করি যে, আমি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবো যেন আমার উপর কারো জীবন বা সম্পদের উপর জুলুম করার কোনোরূপ অভিযোগ না থাকে।( আব-দাউদ-৩৪৫১, ইবনে মাজা-২২০০)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ব্যবসাতে কি পরিমাণ ও কত পার্সেন্ট মুনাফা অর্জন করা যাবে?
ইসলামী শরীয়তে এর কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই, বরং ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের সন্তুষ্টিতে যেকোনো মূল্যে কোনো জিনিষকে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে।
মোটকথা, ক্রয়-বিক্রয়ের সময় আমাদেরকে অবশ্যই দুটি দিক খেয়ালে রাখতে হবে।
- প্রথমতঃ উভয়ের সন্তুষ্টি আছে কি না? সেদিকে অত্যান্ত সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রাখতে হবে ,
কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺗِﺠَﺎﺭَﺓً ﻋَﻦ ﺗَﺮَﺍﺽٍ ﻣِّﻨﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ
তরজমাঃ-হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।(সূরা নিসা(২৯)
এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত,
عن ابن عباس قال;قال رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه و سلم
" ﻻ ﻳﺤﻞ ﻣﺎﻝ ﺍﻣﺮﺉ ﻣﺴﻠﻢ ﺇﻻ ﺑﻄﻴﺐ ﻧﻔﺲ ﻣﻨﻪ "
নবী কারীম সাঃ বলেনঃ"কোন মুসলমানের জন্য অন্য কোনো মুসলমানের মাল তার অন্তরের সন্তুষ্টি ব্যতীত হালাল হবে না।(তালখিসুল হাবীর-১২৪৯)
সুপ্রিয় পাঠকবর্গ!
অত্র আয়াত এবং হাদীস থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে,যে কোনো ধরণের লেনদেনে উভয়ের সন্তুষ্টি একান্ত অত্যাবশ্যকীয় একটি বিষয়।সুতরাং উভয়ের সন্তুষ্টিতে যেকোনো মূল্যে লেনদেন করা যাবে,বৈধ আছে।কিন্তু কারো সন্তুষ্টি না থাকলে জোর করে বা তাকে বাধ্য করে তার সাথে লেনদেন করা কখনো জায়েয হবে না।
لما في شرح المجلة:
"الثمن المسمی هو الثمن الذي یسمیه و یعنیه العاقدان وقت البیع بالتراضي سواء کان مطابقًا لقیمة الحقیقیة أو ناقصًا عنها أو زائدًا علیها". (شرح المجلة للرستم، ص:73)
وفي الفتاوی الهندیة:
"ومن اشتری شیئًا و أغلی في ثمنه فباعه مرابحةً علی ذلك جاز، وقال أبویوسف: إذا زاد زیادةً لایتغابن الناس فیها فإني لا أحب أن یبیعه مرابحةً حتی یبیّن ، و الأصل أنّ عرف التجار معتبر في بیع المرابحة". (الفتاوی الهندیة، ج:3،ص:161،ط:رشیدیة)
- দ্বিতীয়তঃ কারো উপর জুলুম হচ্ছে কি না?সে দিকটাও নজরে রাখতে হবে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাঃ বলেনঃ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻈﻠﻢ ﻇﻠﻤﺎﺕ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ
জুলুম/নির্যাতন কিয়ামতের দিন অন্ধকাররূপ ধারণ করবে।(সহীহ বুখারী-২৩১৫)
’আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত।
وَعَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَن بيْعِ المضطرِّ وعنْ بيْعِ الغَرَرِ وَعَنْ بَيْعِ الثَّمَرَةِ قَبْلَ أَنْ تُدْرِكَ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোর-জবরদস্তিমূলক ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতারণামূলক দ্রব্যের ক্রয়-বিক্রয় এবং পুষ্ট হওয়ার আগে ফল ক্রয়-বিক্রয় করা হতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ-৩৩৮২, মিশকাত-২৮৬৫)
এবং অত্র হাদীস থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে লেনদেনে কারো প্রতি জুলুম/নির্যাতন না হওয়া চাই। জুলুম/নির্যাতন করা সর্বাবস্থায় হারাম।
কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু ক্রয়-বিক্রয়ের নির্ধারিত শর্ত ইজাব-কবুল তথা প্রস্তাব-সম্মতি পাওয়া যাচ্ছে,তাই লেনদেন সংগঠিত হয়ে যাবে। এবং উক্ত ক্রয়-বিক্রয় জায়েয হবে। হ্যা,অবশ্যই জুলুম-নির্যাতনের গোনাহ হবে।(ইমদাদুল ফাতাওয়া৩/১৯, আবকে মাসাঈল আউর উনকা হল৬/২৭, জামেউল ফাতাওয়া ৬/৬২)
وفي الفتاوی الشامية:
"قوله: بیع المضطر هو أن یضطر الرجل إلی طعام أو شراب أو لباس أو غیرها ولایبیعها البائع إلا بأکثر من ثمنها بکثیر، وکذلك في الشراء منه". (رد المحتار علی الدر المختار،ج:5،ص:59:ط:ایچ ایم سعید)
وفي نیل الاوطار:
" وَقَدِ اسْتُدِلَّ بِالْحَدِيثِ وَمَا وَرَدَ فِي مَعْنَاهُ عَلَى تَحْرِيمِ التَّسْعِيرِ وَأَنَّهُ مَظْلِمَةٌ وَوَجْهُهُ أَنَّ النَّاسَ مُسَلَّطُونَ عَلَى أَمْوَالِهِمْ وَالتَّسْعِيرُ حَجْرٌ عَلَيْهِمْ وَالْإِمَامُ مَأْمُورٌ بِرِعَايَةِ مَصْلَحَةِ الْمُسْلِمِينَ وَلَيْسَ نَظَرُهُ فِي مَصْلَحَةِ الْمُشْتَرِي بِرُخْصِ الثَّمَنِ أَوْلَى مِنْ نَظَرِهِ فِي مَصْلَحَةِ الْبَائِعِ بِتَوْفِيرِ الثَّمَنِ وَإِذَا تَقَابَلَ الْأَمْرَانِ وَجَبَ تَمْكِينُ الْفَرِيقَيْنِ مِنَ الِاجْتِهَادِ لِأَنْفُسِهِمْ وَإِلْزَامِ صَاحِبِ السِّلْعَةِ أَنْ يَبِيعَ بِمَا لَا يَرْضَى بِهِ مُنَافٍ لِقَوْلِهِ تَعَالَى إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تراض وَإِلَى هَذَا ذَهَبَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ" (نیل الاوطار 5/248)
احْتِكَارُ الصِّنْفِ:
١١ - وَقَدْ صَوَّرَهُ ابْنُ الْقَيِّمِ بِقَوْلِهِ: أَنْ يَلْزَمَ النَّاسَ أَلاَّ يَبِيعَ الطَّعَامَ أَوْ غَيْرَهُ مِنَ الأَْصْنَافِ إِلاَّ نَاسٌ مَعْرُوفُونَ، فَلاَ تُبَاعُ تِلْكَ السِّلَعُ إِلاَّ لَهُمْ، ثُمَّ يَبِيعُونَهَا هُمْ بِمَا يُرِيدُونَ. فَهَذَا مِنَ الْبَغْيِ فِي الأَْرْضِ وَالْفَسَادِ بِلاَ تَرَدُّدٍ فِي ذَلِكَ عِنْدَ أَحَدٍ مِنَ الْعُلَمَاءِ. وَيَجِبُ التَّسْعِيرُ عَلَيْهِمْ، وَأَنْ يَبِيعُوا وَيَشْتَرُوا بِقِيمَةِ الْمِثْل مَنْعًا لِلظُّلْمِ. وَكَذَلِكَ إِيجَارُ الْحَانُوتِ عَلَى الطَّرِيقِ أَوْ فِي الْقَرْيَةِ بِأُجْرَةٍ مُعَيَّنَةٍ، عَلَى أَلاَّ يَبِيعَ أَحَدٌ غَيْرُهُ، نَوْعٌ مِنْ أَخْذ أَمْوَال النَّاسِ قَهْرًا وَأَكْلِهَا بِالْبَاطِل، وَهُوَ حَرَامٌ عَلَى الْمُؤَجِّرِ وَالْمُسْتَأْجِرِ (الموسوعة الفقهية الكوئيتية:ج2ص95ِ)