হক্কানী পীর বা হক্কানী আলেমের কাছে গিয়ে খালেস দিলে তওবা করে গুনাহ ছেড়ে দেওয়া, তাক্বওয়া পরহেযগারীর বাইয়াত করা জায়েজ আছে ।
এটি মূলত একটি প্রতিজ্ঞার নাম। যা বড় কোন বুযুর্গ ব্যক্তির হাত ধরে করা হয়ে থাকে।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
এমন বাইয়াত করা জরুরী নয়। তবে কেউ যদি নিজে নিজে আত্মশুদ্ধি না হতে পারে, নিজে নিজে গুনাহ ছাড়তে না পারে, তাহলে তার কোন হক্কানী আল্লাহর ওলীর হাতে বাইয়াত করা উত্তম হবে।
গোনাহ ছেড়ে দিয়ে সওয়াবের কাজ করার এমন বাইয়াত নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত।
তাই এটি মুস্তাহাব আমল। উত্তম আমল। তবে জরুরী নয়।
কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালাবলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَى أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থঃ হে নবী, ঈমানদার নারীরা যখন আপনার কাছে এসে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, জারজ সন্তানকে স্বামীর ঔরস থেকে আপন গর্ভজাত সন্তান বলে মিথ্যা দাবী করবে না এবং ভাল কাজে আপনার অবাধ্যতা করবে না, তখন তাদের বাইয়াত (আনুগত্য) গ্রহণ করুন এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অত্যন্ত দয়ালু। [ সুরা মুমতাহিনা ৬০:১২ ]
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» قَالَ: فَبَسَطْنَاأَيْدِيَنَا وَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ؟ قَالَ: «عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، وَتُطِيعُوا – وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً – وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ
আউফ ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নয় বা আট কিংবা সাতজন লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? অথচ আমরা কিছু দিন আগে তার হাতে বায়আত গ্রহণ করেছিলাম। তাই আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তো আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি? আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো বায়আত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট বায়আত গ্রহণ করবে কি?
তখন আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা তো আপনার নিকট বায়আত গ্রহণ করেছি। এখনি আবার কিসের উপর বায়অোত গ্রহণ করবো? বললেন, (এ কথার উপর বায়আত গ্রহণ করবে যে,) তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে শরীক করবে না। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে। আল্লাহর আনুগত্য করবে। তারপর তিনি ফিসফিস করে একটি কথা বললেন, মানুষের নিকট কোন কিছু সাওয়াল করবে না। আমি দেখেছি, এই কাফিলার কারো পশুর পৃষ্ট থেকে চাবুক পড়ে যাওয়ার পর সে কাউকে তা তুলে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানায়নি। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০৪৩, ইফাবা-২২৩৫}
আবূ অলীদ উবাদাহ ইবনু সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’ (রিয়াদুস সালেহীন ৩/১৯১, সহীহুল বুখারী ৭০৫৬, ১৮, ৩৮৯২, ৩৮৯৩, ৩৯৯৯, ৪৮৯৪, ৬৭৮৪, ৬৮০১৬৮৭৩৩, ৭১৯৯, ৭২১৩, ৭৪৬৮, মুসলিম ১৭০৯, তিরমিযী ১৪৩৯, নাসায়ী ৪১৪৯, ৪১৫১৪, ৪১৫২, ৪১৫৩, ৪১৫৪, ৪১৬১, ৪১৬২, ৪১৭৮, ৪২১০, ৫০০২, ইবনু মাজাহ ২৬০০, ২৮৬৬, আহমাদ ৪৩৮৮, ১৫২২৬, ২২১৬০, ২২১৯২, ২২২০৯, ২২২১৮, ২২২৪৮, ২২২৬৩)।