আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
177 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (42 points)
edited by
১)কেউ নামাজের সময় খারাপ পোশাক পরে কিন্তু মানুষের সামনে গেলে খুব সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পড়ে।

সে যে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর সময় ভালো পোশাক না পড়ে মানুষের সামনে যাওয়ার সময় ভালো পোশাক পরছে এতে কি আল্লাহর চেয়ে মানুষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?? এটা কি শিরক??

২)একজন লোক নামাজ পড়ার সময় খুবই অবহেলা করে। একদম ভালোমতো নামাজ পড়ে না।

 কিন্তু যখন সামনে ইমামতি করতে বলা হয় তখন সে খুব সুন্দর করে নামাজ পরে,যাতে তাকে অপমানিত না হতে হয়। তার এই কাজ কি বড় শির্ক নাকি ছোট শির্ক??

৩)সেদিন পরীক্ষায় নকল করলাম। নকল করার সময় মনে হইল, "নকল করলে আল্লাহ রাগ করবেন। "

কিন্তু তারপর মনে হলো, "এখন পড়াশোনায় ভালো করা খুব দরকার"।

 তারপর নকল করলাম। এরপর থেকে আমার মনে হচ্ছে আমি মনে হয় পড়ালেখাকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভালবাসি। এখন এটা কি শিরক?? পড়াশোনা কি ছেড়ে দিব?

৪)আর কি কি লক্ষন দেখলে বুঝতে পারব যে আমি কোন কিছুকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভালবাসি??
মানে ভালোবাসার ক্ষেত্রে শিরক বুঝব কিভাবে??

৫)আমি বুয়েটে চান্স পেতে চাই। আল্লাহর কাছে দুয়া করলাম। এরপর থেকে পরতে গেলেই মনে হয় যে আমি কি মনে করছি পরাশুনা না করলে বুয়েটে চান্স পাব না??
মানে আল্লাহর চাওয়ার পাশাপাশি আমার চেষ্টাও লাগবে??

এটা কি শিরক হবে না??"

৬)ধরুন কেউ বিশ্বাস করে যে রিজিকদাতা আল্লাহ।
চাকরি রিজিকের সন্ধান করার জন্য উসিলা হিসেবে করে।
তারপরেও তার মনে হচ্ছে যে।,"আমি হয়তো চাকরিকে রিযিকদাতা মনে করতেছি, কেননা আমার তাওয়াক্কুল এতটা শক্তিশালী না যে আমি আল্লার উপর ভরসা করে চাকরি না করে থাকতে পারব।তার মানে তো আমি মনে হয় চাকরি রিযিকদাতা মনে করে নিলাম। এখন কি শিরক?"

মানে সে চায় আল্লাহ কে রিযিকদাতা হিসেবে বিশ্বাস করতে আর উসিলা হিসেবে চাকরি করতে। কিন্তু মাঝে মধ্যে তার সন্দেহ হয় যে সে কি চাকরি কেই রিযিকদাতা হিসেবে বিশ্বাস করছে কি না।
এটা কি শিরক??
চাকরি ছেড়ে দিতে হবে??

৭)অন্য কোন ব্যাপারে যদি সামান্য একবারও মনে হয় যে শির্ক টাইপের বিশ্বাস হচ্ছে,তবে সাথে সাথে সেই কাজ বাদ দিয়ে দেয়।কিন্তু চাকরি  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ার ছাড়তে চাচ্ছে না।এতে কি শিরক হবে??

৮)আল্লাহর মর্যাদা আর আল্লাহর নামের মর্যাদা কি সমান??


আমরা আল্লাহর ইবাদাত করি নাকি আল্লাহর নামের??

৯)ধরুন,কারো কলেজের পাশে একটা 100 বছরের পুরনো বটগাছ ছিল। সে ক্লাস শেষে ওই বট গাছের সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করতো গাছের কাছে। মানে শিরক করত।

এরপর সে তওবা করে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে আর কোনদিন ওই গাছের কাছে দোয়া করবে না

কিন্তু কিছুদিন পর আবারও সে ওই গাছের সামনে গাছের কাছে দোয়া করে ফেলেন

এরপর আবার আল্লাহর কাছে তওবা করে আর ওয়াদা করে যে আর যদি কোনদিন ওই গাছের সামনে গিয়ে গাছের কাছে দোয়া করবে না

এবং আল্লাহর কাছে এটাও ওয়াদা করে যে আর যদি কোনদিন ওই গাছের কাছে দোয়া করে ফেলে তবে সারা জীবনের জন্য কলেজ যাওয়া বন্ধ করে দিবে

এরপর একদিন সে সিলেটে বেড়াতে গেল এবং একটা মাজারে সিজদা করল

এখন তার একটা কথা মনে হল যে যেহেতু এখানে শিরক করল,তাই এখন শুধু তওবা করলেই চলবে কিন্তু যদি ঐ গাছের সামনে গিয়ে গাছের কাছে দুয়া করার মাধ্যমে শির্ক করত তাহলে তাকে তওবা করার সাথে সাথে কলেজ যাওয়াও বাদ দেওয়া লাগতো। এই ভেবে তার কাছে মনে হইল যে আল্লাহ বাচাইছে।

ওই গাছের সামনে গিয়ে গাছের কাছে দুয়া করার মাধ্যমে শিরক করার চেয়ে এখানে শিরক করা ভালো, কেননা এতে শুধু তওবা করলেই চলবে, কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে না।

এবং সে সিলেটের মাজারে সিজদা করার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইল।

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই ছেলে কোনোভাবেই শিরক করা পছন্দ করেনা।

এবং শিরক করতে চায়ও না।

কিন্তু যখনই কোন শির্ক করে ফেলে তখন সে মনে করে যে গাছের কাছে দুয়া করার চেয়ে এই ভাবে শিরক তুলনামুলক ভাবে ভালো কেননা এতে তওবা করলেই চলে কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগেনা

এই যে সে অন্যান্য শিরক কে গাছের সামনে গিয়ে শিরক করা থেকে তুলনামূলক ভাবে ভালো হিসেবে নিচ্ছে এতে কি শিরক হবে??

(সে কোন শিরকই করতে চায় না,আর হয়ে গেলে সাথে সাথে তাওবা করে)

মানে মাজারে সিজদা দেওয়া শিরক সেটা জানি।সে এটার জন্য তাওবা করেছে।

আবার গাছের কাছে দুয়া করাও শিরক।সে এটার জন্যও তাওবা করেছে।

কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, ওই লোক কলেজ এর পাশের গাছের কাছে দুয়া করার মাধ্যমে শিরক করার চেয়ে অন্য শিরক কে একটু কম অপছন্দ করে, কেননা ওইসব শিরকে শুধু তওবা করলেই চলে,কিন্তু গাছের সামনে গিয়ে শিরক করলে তাকে কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে, যেহেতু সে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করেছে যে যদি কলেজ এর পাশের ওই গাছের সামনে গিয়ে শিরক করে, তবে কলেজ যাওয়া বাদ দিবে।

তার এই মনভাব কি শিরক হবে??

যদি এই মনভাব শিরক হয়েই থাকে তবে করনিও কি??

কলেজ যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে?

সংক্ষিপ্ত ভাবে বললে,

ধরুন,একভাবে শিরক করলে তাওবা করার সাথে দুনিয়াবি কল্যাণকর কিছু জিনিস বাদ দেওয়া লাগবে
আর আরেক ভাবে শিরক করলে শুধু তওবা করলেই চলবে
আমি দুই প্রকার থেকেই বিরত থাকি,কিন্তু প্রথমটাতে যেহেতু তাওবা করার পরও জীবন থেকে দুনিয়াবি কল্যাণের কিছু জিনিস বাদ দেওয়া লাগবে, তাই এটার প্রতি ভয় একটু বেশি
আর দ্বিতীয় প্রকারের প্রতি একটু কম

এই মনোভাব কি শিরক???

১০)ওই বট গাছের সামনে শির্ক না করে অন্য কোনভাবে শিরক করলে মনের মধ্যে একটা খুশি চলে আসে যে যাক ওই গাছের সামনে গিয়ে শিরক করি নাই,তাই স্কুলে যাওয়া বাদ দেওয়া লাগবে না।এই মনভাব কি শিরক??(যদিও যেকোনোভাবে শির্কের পরে সে তওবা করে)

১১)আল্লাহ কে নিয়ে জানার চেয়ে দুনিয়াবি কোন কাজ কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া কি শিরক???

১২)ধরুন কোনো এক ভালো ছাত্র পড়াশোনা করতে খুব ভালবাসে।
সে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে। বুয়েটে চান্স পেতে চায়। তার আব্বু আম্মু তাকে পরাশুনার জন্য খুব চাপ দেয়।
সে একদিন পরীক্ষা দিচ্ছিল।
পরীক্ষা দেওয়ার সময় সে একবার পিছনে ফিরে তাকায় বন্ধুর খাতা দেখার জন্য।
তখন পরীক্ষার হলে পাহারারত টিচার তার খাতা কেড়ে নেয়।
সে খুব হাতজোড় করে টিচারকে খাতা ফেরত দেওয়ার জন্য।
এরপর সে টিচারের পা ধরে বলে খাতাটা ফেরত দেওয়ার জন্য।
তাও শিক্ষক দেয়নি।
এরপর সে শিক্ষককে সিজদা করে
বলে খাতা ফেরত দেওয়ার জন্য। সে ইবাদতের উদ্দেশ্য নিয়েই শিক্ষক কে সিজদা দিছিল।

সে বুঝতে পারলো যে এটা শিরক হচ্ছে।
কিন্তু সে মনে মনে ভাবল শিরক থেকে বাঁচার চেয়ে পরীক্ষা দেওয়াটা,পড়ালেখায় ভালো করাটা তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এরপরে শিক্ষক তার খাতা ফেরত দিল।
এরপর সে পরীক্ষা শেষ করল।
এখন সে তোওবা করতে চায়।
সে কিভাবে তওবা করবে?
সে কালেমা শাহাদত পড়ে আল্লাহর কাছে এর জন্য মাফ চাইলে এবং যদি প্রতিজ্ঞা করে যে আর কোনদিন এভাবে কাউকে সেজদা দেবে না তাহলেই চলবে??
নাকি পড়াশোনা বাদ দিয়ে দেওয়া লাগবে, যেহেতু সে পড়াশোনা কে শিরক থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছিলে এক সময়।

সে যদি তাওবা করে এবং পরাশুনা চালিয়ে যায়,তবে কি কোন সমস্যা আছে??(যেহেতু শিরক করে পরিক্ষা দিয়ে পাশ করছে,সে কি পরবর্তী শ্রেণীতে পরতে পারবে নাকি এই ফলাফল গ্রহণ না করে আবার একই ক্লাসে পরবে??)

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِن تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ وَإِن تَسْأَلُوا عَنْهَا حِينَ يُنَزَّلُ الْقُرْآنُ تُبْدَ لَكُمْ عَفَا اللَّهُ عَنْهَا ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ
হে মুমিণগন, এমন কথাবার্তা জিজ্ঞেস করো না, যা তোমাদের কাছে পরিব্যক্ত হলে তোমাদের খারাপ লাগবে। যদি কোরআন অবতরণকালে তোমরা এসব বিষয় জিজ্ঞেস কর, তবে তা তোমাদের জন্যে প্রকাশ করা হবে। অতীত বিষয় আল্লাহ ক্ষমা করেছেন আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল।
قَدْ سَأَلَهَا قَوْمٌ مِّن قَبْلِكُمْ ثُمَّ أَصْبَحُوا بِهَا كَافِرِينَ
এরূপ কথা বার্তা তোমাদের পুর্বে এক সম্প্রদায় জিজ্ঞেস করেছিল। এর পর তারা এসব বিষয়ে অবিশ্বাসী হয়ে গেল।(সূরায়ে মায়েদা-১০১-১০২)

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول : ما نهيتكم عنه ، فاجتنبوه ، وما أمرتكم به فأتوا منه ما استطعتم ، فإنما أهلك الذين من قبلكم كثرة مسائلهم واختلافهم على أنبيائهم . رواه البخاري ومسلم .
আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি যে,তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে যে সমস্ত জিনিষ থেকে নিষেধ করেছি, সে সমস্ত জিনিষ থেকে বিরত থাকো,এবং যে সমস্ত জিনিষের আদেশ করেছি, যথাসম্ভব সেগুলো পালন করার চেষ্টা করো। তোমাদের পূর্ববর্তীগণ তাদের অধিক প্রশ্ন এবং মতপার্থক্যর কারণেই ধংস হয়েছে।(বোখারী-মুসলিম)

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
আপনি যতসব বিষয় উল্লেখ করোছেন,এবং শিরক হওয়ার সন্দেহ করেছেন, এগুলোর কোনো কিছুই শিরক হবেনা। তবে আমরা পরামর্শ দেবো, আপনি আপনার মসজিদের ইমাম সাহেবের নিকট এসব বিষয় উত্তাপন করে জেনে নিবেন।জটিল কোনো বিষয় হলে আমাদেরকে জানাবেন। জাযাকাল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...