আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
302 views
in সালাত(Prayer) by (5 points)
আজানের বাক্য গুলো দুই বার বলা আর ইকামতে বাক্য গুলো এক বার বোলার বিধান জানতে চাই?

1 Answer

0 votes
by (574,470 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান মতে আযানের বাক্য ১৫ টি,আর ইকামতের বাক্য ১৭ টি।
আযানের বাক্য ২ বার করে বলার ব্যাপারে সকলেই একমত হলেও ইকামতের বাক্য নিয়ে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
,
হানাফি মাযহাব মতে   ইকামতের বাক্যগুলো দুইবার করে উচ্চারণ করা আবশ্যক। একবার করে উচ্চারণ করলে ইকামত হবে না। একবার করে উচ্চারণের যে হাদীস রয়েছে তা মানসুখ তথা রহিত হয়ে গেছে। হযরত বিলাল রাঃ শুরুতে একবার করে ইকামতের বাক্যগুলো বলতেন। তারপর এ বিধান রহিত হবার পর মৃত্যু পর্যন্ত দুইবার করেই ইকামতের বাক্য উচ্চারণ করতেন। তাই একবার করে উচ্চারণ করলে ইকামত শুদ্ধ হবে না।

রাসূল সাঃ এর মুআজ্জিন হযরত আবু মাহজুরা রাঃ এর আমল

عَبْدَ اللهِ بْنَ مُحَيْرِيزٍ حَدَّثَهُ أَنَّ أَبَا مَحْذُورَةَ حَدَّثَهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَهُ الْإِقَامَةَ سَبْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً

আবু মাহজুরা রাঃ বলেন, নিশ্চয় রাসূল সাঃ আমাকে সতের বাক্যে ইকামত দিতে শিক্ষা দিয়েছেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৮৩১}

ইমাম তিরমিজী রহঃ আবূ মাহযুরা রাঃ থেকে যে মারফূ হাদীস বর্ণনা করেছেন তাতেও সতের বাক্যের কথা আছে। ইমাম তিরমিজী রহঃ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। {সুনানে তিরমিজী-১/৪৮}

আরেক মুআজ্জিন হযরত সালাম বিন আকওয়া রাঃ এর আমল
عَنْ عُبَيْدٍ، مَوْلَى سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ «أَنَّ سَلَمَةَ بْنَ الْأَكْوَعِ، كَانَ يُثَنِّي الْإِقَامَةَ»

হযরত উবায়েদ রহঃ বলেন, সালামা বিন আকওয়া রাঃ এর ইকামতে বাক্যগুলো দুইবার করে বলতেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৮৩৬}

হযরত বিলাল রাঃ এর আখেরী আমলও তাই
عَنِ الْأَسْوَدِ بْنِ يَزِيدَ: أَنَّ بِلَالًا كَانَ «يُثَنِّي الْأَذَانَ، وَيُثَنِّي الْإِقَامَةَ، وَأَنَّهُ كَانَ يَبْدَأُ بِالتَّكْبِيرِ، وَيَخْتِمُ بِالتَّكْبِيرِ»

আসওয়াদ বিন ইয়াযিদ রহঃ বলেন, হযরত বিলাল রাঃ আযান ও ইকামতের বাক্যগুলো দুই বার করে বলতেন। {মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৭৯০, তাহাবী শরীফ-১/৬৬}

হযরত আবু মাহজুরা রাঃ এর বর্ণনায় ইকামতের সতের বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে। যার দ্বারা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, ইকামতের বাক্যও দুই দুই বার করে বলতে হবে। এ সতের বাক্য হচ্ছে আজানের পনের বাক্যের সাথে কাদ কামিত সালাহ বাক্য দুইবার বলার দ্বারা। {দ্রষ্টব্য, তিরমিজী-১/২৭, আবু দাউদ-১/৮৯, নাসায়ী-১/১০৩, ইবনে মাজাহ-৫২, মিশকাত-১/৬৫, আসারুস সুনান-১/৫৩}

এছাড়াও সুয়াইদ বিন গাফালা রাঃ, আবু জুহাইফা রাঃ, সালামা বিন আকওয়া রাঃ, সাওবান রাঃ এর বর্ণনাও আজানের মত ইকামতের বাক্য দুই দুইবারের হওয়ার বিষয়টি পরিস্কার প্রমাণ বহন করে। দেখুন তাহাবী শরীফ-১/৬৫, আসারুস সুনান-১/৫৩}

হযরত বিলাল রাঃ কে প্রথমে ইকামতের সময় একবার করে বাক্যগুলো বলার জন্য আদেশ করা হয়। যা হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: «أُمِرَ بِلَالٌ أَنْ يَشْفَعَ الْأَذَانَ وَيُوتِرَ الْإِقَامَةَ»
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত বিলাল রাঃ কে আজানের বাক্যগুলোকে দুইবার করে এবং ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার আদেশ করা হয়েছে। {সহীহ মুসলিম-১/১৬৪, হাদীস নং-৩৭৮}

★আজান ও ইকামতের সূচনাকালে বিলাল রাঃ কে এ আদেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ম রহিত হবার পর তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত ইকামতের বাক্যগুলো দুইবার করে বলতেন।

ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন,
ثُمَّ ثَبَتَ هُوَ مِنْ بَعْدُ عَلَى التَّثْنِيَةِ فِي الْإِقَامَةِ بِتَوَاتُرِ الْآثَارِ فِي ذَلِكَ , فَعُلِمَ أَنَّ ذَلِكَ هُوَ مَا أُمِرَ بِهِ.

 তারপর হযরত বিলাল রাঃ ইকামতের বাক্যগুলো দুইবার করেই বলতেন। যা বহু সংখ্যক বর্ণনার মাধ্যমে প্রমানিত। এ থেকে বুঝা যায়, হযরত বিলাল রাঃ এ নিয়ম অনুসরণে আদিষ্ট হয়েছিলেন। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৮৩৫}


আল্লামা শাওকানী ও আবু মাহযূরাহ রাঃ এর হাদীসের ভিত্তিতে বিলাল রাঃ এর পূর্ববর্তী আমলকে রহিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। তিনি লিখেন-
وَهُوَ مُتَأَخِّرٌ عَنْ حَدِيثِ بِلَالٍ الَّذِي فِيهِ الْأَمْرُ بِإِيتَارِ الْإِقَامَةِ لِأَنَّهُ بَعْدَ فَتْحِ مَكَّةَ لِأَنَّ أَبَا مَحْذُورَةَ مِنْ مُسْلِمَةِ الْفَتْحِ، وَبِلَالًا أُمِرَ بِإِفْرَادِ الْإِقَامَةِ أَوَّلَ مَا شُرِعَ الْأَذَانُ فَيَكُونُ نَاسِخًا

وَقَدْ رَوَى أَبُو الشَّيْخِ أَنَّ بِلَالًا أَذَّنَ بِمِنًى وَرَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – ثَمَّ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ، وَأَقَامَ مِثْلَ ذَلِكَ، إذَا عَرَفْت هَذَا تَبَيَّنَ لَك أَنَّ أَحَادِيثَ تَثْنِيَةِ الْإِقَامَةِ صَالِحَةٌ لِلِاحْتِجَاجِ بِهَا لِمَا أَسْلَفْنَاهُ، وَأَحَادِيثُ إفْرَادِ الْإِقَامَةِ، وَإِنْ كَانَتْ أَصَحَّ مِنْهَا لِكَثْرَةِ طُرُقِهَا وَكَوْنِهَا فِي الصَّحِيحَيْنِ لَكِنَّ أَحَادِيثَ التَّثْنِيَةِ مُشْتَمِلَةٌ عَلَى الزِّيَادَةِ، فَالْمَصِيرُ إلَيْهَا لَازِمٌ لَا سِيَّمَا مَعَ تَأَخُّرِ تَارِيخِ بَعْضِهَا كَمَا عَرَّفْنَاك.

হযরত আবূ মাহযুরা রাঃ এর বর্ণনায় পরবর্তী সময়ের বিধান বিধৃত হয়েছে। কেননা, হযরত আবু মাহযুরা রাঃ ইসলাম গ্রহণ করেন ফাতহে মক্কার সময়। অতএব বলতে হয় যে, হযরত বিলাল রাঃ কে ইকামতের বাক্য এক বার করে বলার জন্য যে আদেশ দেয়া হয়েছিল তা ছিল আজান ও ইকামতের সূচনাকালের বিষয়। এবং আবু মাহযুরা রাঃ এর হাদীস এ বিধান রহিত করেছে। আবুশ শায়খের বর্ণনায় এসেছে যে, স্বয়ং বিলাল রাঃ ও মিনায় রাসূল সাঃ এর উপস্থিতিতে আযান ও ইকামতের বাক্যগুলো দুই বার করে বলেছেন।

★★সারকথা এই যে, যে হাদীসে ইকামতের বাক্যগুলো দুই বার করে বলার কথা এসেছে তা প্রমাণ গ্রহণের পক্ষে উপযুক্ত। আর একবার করে বলার হাদীস যদিও অধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে এবং তা সহীহ বুখারী সহীহ মুসলিমে বিদ্যমান রয়েছে, সে হিসেবে তা অধিক সহীহ। কিন্তু লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, দুই বার বলার হাদীসে অধিক বিষয় আছে আর তা পরবর্তী সময়ের বিধান সম্বলিত বলে জানা যাচ্ছে। অতএব এ বর্ণনাই গ্রহণযোগ্য হবে। {নায়লুল আওতার-২/২২}

আরো কিছু সহীহ হাদীস জেনে নেই
হযরত আবূ মাহজুরা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন-
وَالْإِقَامَةَ سَبْعَ عَشْرَةَ كَلِمَةً
ইকামতের বাক্য সতেরটি।
মুসনাদে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৮২৮,
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২১১৯,
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৩৮১,
সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১২৩৩,
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৭০৯,
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫০২,
সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯২,
সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৩০,
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-১৬৮১,
মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৩০৯১,
সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৯০৯,
সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৯৬৮,
কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৯৬৪}

এটি সহীহ হাদীস। ইমাম তিরমিজী রহঃ এ হাদীসের ব্যাপারে মন্তব্য করেন-এ হাদীসটি হাসান সহীহ। {তিরমিজী-১/২৭}

ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বলেন, এ হাদীসকে ইবনে খুজাইমা এবং ইবনে হিব্বান রহঃ ও সহীহ বলেছেন। {দিরায়া-১/১১৪}

আরো দেখা যায়-
মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-১/২০৬।
সুনানে বায়হাকী-১/৪২০।
নসবুর রায়াহ-১/২৬৭।
আবু দাউদ-১/৮২।
দিরায়া-১/১১৫।
সুনানে দারা কুতনী-১/২৪২।
তাহাবী শরীফ-১/৮০।
আসারুস সুনান-১/৬৭।

আরো অনেক কিতাবে এর স্বপক্ষে সহীহ হাদীস বিদ্যমান।

উপরোক্ত সহীহ হাদীসগুলোর ভিত্তিতে আমাদের আমল হল আজানের বাক্য যেমন দুইবার করে বলতে হয়, তেমনি ইকামতের বাক্যগুলোও দুইবার করে বলতে হবে।
,

★★তবে ইমাম শাফেয়ী রহঃ সহ আরো কিছু স্কলার এবং তাদের মাযহাব মতে ইকামতের বাক্য ১ বার করে পড়তে হবে।
তাদের মতের স্বপক্ষে দলিলগুলোর মধ্যে অন্যতম  একটি হলোঃ
হাদীস শরীফে  এসেছে-
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: «أُمِرَ بِلَالٌ أَنْ يَشْفَعَ الْأَذَانَ وَيُوتِرَ الْإِقَامَةَ»

হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত বিলাল রাঃ কে আজানের বাক্যগুলোকে দুইবার করে এবং ইকামতের বাক্যগুলো একবার করে বলার আদেশ করা হয়েছে। {সহীহ মুসলিম-১/১৬৪, হাদীস নং-৩৭৮}
,
,
সুতরাং তাদের মতানুসারীরা সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।
এতে কোনো সমস্যা নেই।     


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 2,587 views
...