আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
103 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম
আশা করি ভালো আছেন


বিষয়ঃ- সম্পর্ক ও প্রতিজ্ঞা বিষয়ে সমাধান প্রয়োজন


আমার নানার বাড়ি যাওয়া আসা নিয়ে এবং কোনো না কোনো কারন নিয়ে আমার নানার বাড়ির সাথে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো নেই তারাও আসে না আমাদের বাড়ি আমরা ও যাই না


এই নিয়ে আমার বাবা মায়ের মাঝে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয় তার পরবর্তী তে তাদের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা তে চলে আসে
পরবর্তী তে আমার বাবা আমার মাকে বলে কোরআন ছুয়ে শফত করে বলতে হবে আমার পরিবার থেকে বা আমার ভাই রা (মানে আমার মা এর ভাই / আমার মামা) যতোদিন এই সমস্যার সমাধান করবে না ততো দিন তাদের বাড়িতে যাবো না এমন কি তাদের সাথে কথা বলবো না এই কথা বলতে বললো আমার বাবা আমার মাকে


পরবর্তী তে আামার মা কোরআন ছুয়ে বলে আমি আমার ভাই দের বাড়িতে যাবো না কোনোদিন এবং তাদের সাথে কথাও বলবো না কোনোদিন তখন আমার মা নার্ভাস ছিলো


আমি যতো টুকো জানি আল্লাহ ছাড়া কোনো কিছু নিয়ে কিরা করা টাই শিরিক সেই হিসাবে আমার জানা মতে তারা শিরিক মেনে চলছে


তবে একজন মানুষ আমাকে বলেছে সব কিছুর আগে সম্পর্ক আগে সম্পর্ক মানতে হবে এটার বিষয় ও আমি আপনার মাতামত চাই


তবে আমরা সবাই জানি কোরআন সত্য যার মাঝে কোনো ভুল নেই
★★ এই সমাধান এর জন্য আমার বাবা মা কি করতে পারে বা কিভাবে সমাধান পেতে পারে আপনাদের মতামত জানতে চাই

1 Answer

0 votes
by (60,240 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

https://www.ifatwa.info/3101  নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,

কসম বা শপথ তিন প্রকার যথাঃ-

(اليمين بالله ثلاثة أنواع) غموس، وهو الحلف على إثبات شيء، أو نفيه في الماضي، أو الحال يتعمد الكذب فيه فهذه اليمين يأثم فيها صاحبها، وعليه فيها الاستغفار، والتوبة دون الكفارة.

(১)গুমুস- অতীত বা বর্তমান কালে কোনো জিনিষকে প্রমাণিত করা বা না করার জন্য ইচ্ছা করে মিথ্যা কসম করা।এমন শপথকারী নিজে গোনাহগার হবে।তার উপর তাওবাহ ইস্তেগফার করা অত্যাবশ্যকীয়। তবে তার উপর কাফফারা আসবে না।

ولغو، وهو أن يحلف على أمر في الماضي، أو في الحال، وهو يظن أنه كما قال:، والأمر بخلافه بأن يقول: والله قد فعلت كذا، وهو ما فعل، وهو يظن أنه فعل، أو: ما فعلت كذا، وقد فعل، وهو يظن أنه ما فعل، أو رأى شخصا من بعيد فقال: والله إنه لزيد، وظنه زيدا، وهو عمرو، أو طائرا فقال: والله إنه لغراب، وظنه غرابا، وهو حدأة فهذه اليمين نرجو أن لا يؤاخذ بها صاحبها، واليمين في الماضي إذا كان لا عن قصد لا حكم له في الدنيا، والآخرة عندنا.

(২) লগু-অতীত বা বর্তমান কালে কোনো জিনিষ প্রমাণিত করা বা না করার জন্য শপথ করা।সে ধারণা করছে যে,সে যা বলছে তাই সত্য,অথচ বাস্তবতা হল,মিথ্যা।যেমন কেউ বলল,আল্লাহর কসম,আমি এমনটা করেছি।অথচ বাস্তবতা হল, সে করেনি।কিন্তু সে মনে করে করেছে যে,সে করোছে এবং তার উল্টো বিষয়ও এমনই।

এবং কেউ দূর থেকে কোনো ব্যক্তিকে দেখে বলল,এতো যায়েদ।অথচ সে আমর।কিন্তু সে ধারণা করেছিল যে,উনি যায়েদ,ইত্যাদি ইত্যাদি।এমন শপথের ব্যাপারে বলা যায় যে,এই শপথের শপথকারীর কোনো প্রকার গোনাহ হবে না।অতীতকালের শপথ যদি কেউ মিথ্যার ইচ্ছায় না করে,তাহলে হানাফি ফিকহ অনুযায়ী দুনিয়া ও আখেরাতে এর কোনো শাস্তির বিধান আরোপিত হবে না।

ومنعقدة، وهو أن يحلف على أمر في المستقبل أن يفعله، أو لا يفعله، وحكمها لزوم الكفارة عند الحنث كذا في الكافي.

(৩) মুনআকিদাহ- ভবিষ্যৎকালে কোনো জিনিষ করা বা না করার শপথ করা।শপথ পূর্ণ না করলে এর কাফফারা অবশ্যই দিতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-২/৫২)

আপনার বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে যে,আপনি ভবিষ্যতে কিছু করা বা না করার শপথ নিয়েছিলেন।সুতরাং এখন শপথকে রক্ষা না করলে অবশ্যই আপনাকে কাফফারা দিতে হবে। এ সম্পর্কে  বিস্তারিত জানুন-https://www.ifatwa.info/1808  

 

কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেন,

لاَ يُؤَاخِذُكُمُ اللّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُواْ أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

 আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, (১) দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। (২) অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। (৩) যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে।.....এটা কাফফরা তোমাদের শপথের, যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা মায়েদা-৮৯)

কসমের ধারাবাহিক তিনটি কাফফারার প্রথমটি হল, ১০জন মিসকিনকে সকাল-বিকাল দু'বেলা খাদ্য খাওয়ানো বা বস্র পরিধান করানো।খাওয়ানো পড়ানো সম্ভব না হলে,১০জনের প্রত্যেকজনকে একটি ফিতরা সমপরিমাণ টাকা দিলেই কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।দ্বিতীয়ত একজন গোলাম আযাদ করা। তৃতীয়ত ধারাবাহিক তিনটি রোযা রাখা।

 

উল্লেখ্য যে,কসম শুধুমাত্র আল্লাহর নাম দ্বারাই হয়ে থাকে।এবং কুরআন যেহেতু আল্লাহর কালাম,তাই কুরআন দ্বারাও কসম হবে। আল্লাহ-ই ভালো জানেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/579

 

আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই।

হাদীস শরীফে এই ব্যপারে কঠোর হুমকি এসেছেঃ

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ " . - صحيح

জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/31298/?show=31298#q31298

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ হবে না মাঝে মাঝে আত্মীয়দের সাথে ঝগড়া, কথা কাটা কাটি, মনমালিন্য হতেই পারে তাই বলে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা বা কথা বন্ধ করে থাকা জায়েজ হবে না

. আপনার প্রশ্নের মধ্যে অস্পষ্টতা রয়েছে আপনার আম্মা কিভাবে কসম করেছে তা বলা নেই।  তাই  দেখুন তার কসম হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে ভঙ্গ করে কাফফরা দিয়ে দিবে। (কেউ যদি কুরআনে কারীম কে হাতে নিয়ে বা তাতে হাত রেখে কোনো কথা বলে,কিন্তু সে শপথ/কসম ইত্যাদি শব্দ উল্লেখ না করে, অথবা কুরআনের দিকে ইশারা করে বলে, এই কুরআনের শপথ, তাহলে সেটা শপথ হবে না। হ্যা তবে যদি কুরআনে কারীমের দিকে ইশারা করা ব্যতীত কেউ বলে,কুরআনের শপথ অথবা কালামুল্লাহর শপথ অথবা কুরআনের দিকে ইশারা করে এভাবে বলে যে,তাতে যে আল্লাহর কালাম রয়েছে,তার শপথ, তাহলে তখন শরয়ী শপথ (কসম) হয়ে যাবে।যা ভঙ্গ করলে অবশ্যই কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া-৫/৪৮৮) 

৩. আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে কসম করা ছোট শিরক। তাই ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে তওবা করে নিবে।

৪. আর যদি তার কসমও হয়ে থাকে তাহলে সে কসম ভঙ্গ করবে অর্থাৎ ভাইদের সাথে কথা বার্তা বলবে। কারণ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা বা কথা বন্ধ করে থাকা জায়েজ হবে না এবং পরে কসমের কাফফরা দিয়ে দিবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...