আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
204 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (26 points)
১-কোনো ধনীর সন্তানকে যদি যাকাত থেকে কিছু দেওয়া হয়, এবং সন্তান সাবালক হয় কিন্তু নিসাবের মালিক না, এবং বাবা মার উপর নির্ভরশীল, এ ক্ষেত্রে কি যাকাত দেওয়া যাবে কি না?

২-ধনীর সন্তান কিন্তু নিসাবের মালিক না, এবং বাবা মায়ের উপর নির্ভরশীল, তাকে ইলমে দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যাকাত দেওয়া যাবে কি না?

৩- কাউকে হাদীয়া দেওয়ার নিয়তে কিছু দেওয়া হলো, কিন্তু তাকে সেটা বলা হলো না, পরবর্তীতে যদি সে উক্ত টাকা ফেরত দেয় সেটা গ্রহণ করা জায়েজ হবে কি? না হলে করনীয় কি।

1 Answer

0 votes
by (59,190 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

কুরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা যাকাতের খাত উল্লেখ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}

মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-

১- গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।

২- মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।

৩- ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}

৪- নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।

এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়। {হিদায়া-১/১৮৪, মাআরিফুল কুরআন-৪/১৭১, তাফসীরে মাযহারী-৪/২৩৫}

৫- দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।

৬- ঋণগ্রস্তের জন্য।

৭- ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন-

জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}

৮- সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যে, যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

নাবালেগ বাচ্চা যদি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় তাহলে তার অভিভাবকের কাছে যাকাতের টাকা হস্তান্তর করলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩০৭)

জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাতগ্রহীতা বালেগ হওয়া শর্ত নয়, বরং স্বেচ্ছায় খরচ করার বুঝ হয়েছে- এমন হলেই তাকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, নাবালেগ ছেলের পিতা ধনী হলে ছেলেকে জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না। -(রদ্দুল মুহতার: ২/৩৪৯, ২/৩৫৬)

কোন সাহেবে নেসাব ব্যক্তির সন্তান যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে কোন বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত এমন সন্তানের জন্য যাকাত গ্রহণ না করাই উত্তম। ( দুররে মুখতার-২/৩৪৯)

 * কাউকে গিফট দেওয়ার পর গিফটদাতা স্বাভাবিকভাবে সেই গিফট ফিরিয়ে নেওয়ার অধিকার রাখেন না। যারা গিফট দেওয়ার পর তা আবার ফিরিয়ে নেয়, হাদিস শরিফে রাসূল (সা.) তাদের ব্যাপারে কঠিন ভাষা ব্যবহার করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,

الْعَائِدُ فِي هِبَتِهِ كَالْعَائِدِ فِي قَيْئِهِ

দান করার পর যে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ ব্যাক্তির মতই, যে বমি করে তা আবার খায়।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৪৫]

আরেক হাদিসে বলা হয়েছে,

لَيْسَ لَنَا مَثَلُ السَّوْءِ، الَّذِي يَعُودُ فِي هِبَتِهِ كَالْكَلْبِ يَرْجِعُ فِي قَيْئِهِ

নিকৃষ্ট উপমা দেওয়া আমাদের জন্য শোভনীয় নয় (তবু বলতে হয়), যে দান করে তা ফিরিয়ে নেয়, সে ঐ কুকুরের মত, যে বমি করে তা আবার খায়।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৪৪৬]

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!

১. কোন সাহেবে নেসাব ব্যক্তির সন্তান যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। তবে কোন বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত এমন সন্তানের জন্য যাকাত গ্রহণ না করাই উত্তম।

২. দেওয়া জায়েয আছে তবে তার মা বাবা তার খরচ বহন করার কারণে তার উল্লেখযোগ্য কোন সমস্যা না থাকাই তাকে না দেওয়াই শ্রেয়।

৩. যেহেতু আপনি তাকে তা হাদিয়া হিসেবে দিয়েছেন, বিধায় আপনার জন্য উক্ত জিনিস ফেরত নেওয়া উচিত হবে না। বরং আপনি তাকে স্পষ্ট বলে দিবেন যে, আমি আপনাকে তা হাদিয়া হিসেবে দিয়েছি। এরপরও যদি সে গ্রহণ না করে, তাহলে আপনি তা গ্রহণ করলে কোন সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...