উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
মুসলমানদের জন্য উচিত হলো আযান শোনা মাত্র দুনিয়াবী সমস্ত ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মসজিদের দিকে যাওয়া,জামায়াতের সাথে নামাজ পড়া।
কোনো ক্রমেই বিনা ওযরে জামাত ছেড়ে না দেওয়া।
ইসলামে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এর জন্য খুবই তাগিদ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-"তোমরা নামায পড়ো নামাযিদের সাথে।" অর্থাৎ তোমারা জামাতসহকারে নামায পড়ো। (সূরা বাকারা)
এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইন, তাফসিরে বায়দাবি ও তাফসিরে কাশশাফ ইত্যাদিতে বলা হয়েছে- "তোমরা মুসল্লিদের সঙ্গে জামাতে নামায পড়ো। একা একা পড়ো না।"
নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন- "জামাতের সাথে নামাযে সাতাশ গুণ বেশি পূণ্য নিহিত রয়েছে।" (বুখারি, মুসলিম, তিরমিযি)
তিনি আরো ইরশাদ করেন- "একা নামায পড়া অপেক্ষা দুজনে জামাতে নামায পড়া উত্তম। দুজন অপেক্ষা বহুজন মিলে জামাতে নামায পড়া আল্লাহর কাছে আরো বেশি পছন্দনীয় এবং উত্তম।" (আবু দাউদ)
তিনি আরো ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি এশার নামায জামাতের সাথে পড়বে, সে অর্ধরাত বন্দেগির সওয়াব পাবে। যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সাথে পড়বে, পূর্ণ রাত বন্দেগি করার পূণ্য লাভ করবে।" (তিরমিযি)
এজন্য নবীজি সা. কখনো জামাত তরক করতেন না। এমনকি অসুস্থ অবস্থায় যখন তিনি হাঁটতে পারতেন না, তখনো দুই সাহাবির কাঁধে ভর করে পা টেনে টেনে নামাযের জামাতে হাজির হয়েছেন। জামাতবিহীন একা একা নামায পড়েননি।
এমন কি নবীজি তো এতটুকুও বলেছে- "আমার তো মনে চায় মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বলব এবং কাউকে নামায পড়াতে বলব আর আমি আগুনের অঙ্গার নিয়ে যাব, যে আজান শুনার পরও মসজিদে জামাতে হাযির হওয়ার জন্য বের হয়নি- তার ঘর জ্বালিয়ে দিই।" (বুখারি, মুসলিম)
তিনি আরো বলেন- "কোথাও যদি তিনজন মানুষ থাকে, আর তারা যদি জামাতে নামায না পড়ে, তাহলে শয়তান তাদের ওপর বিজয়ী হয়ে যাবে। কাজেই তুমি জামাতে নামায পড়াকে কর্তব্য মনে করো।" (নাসায়ি)
তিনি আরো বলেন- "সেই ব্যক্তির ওপর আল্লাহর অভিশাপ, যে আজান শুনেও জামাতে উপস্থিত হয় না।" (মাজমাউজ্জাওয়াইদ) চিন্তার বিষয় হল, নবীজি যেখানে জামাতে অনুপস্থিত মুসাল্লির ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেছেন, সেখানে যে বেনামাযি, তার শাস্তি যে কত ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।
বিশিষ্ট সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন- "আমরা কোনো সাহাবিকে জামাত থেকে অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। জামাত থেকে সেই ব্যক্তিই অনুপস্থিত থাকতে পারে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। এমনকি অসুস্থ ব্যক্তিও দুইজনের সাহায্যে জামাতে এসে হাজির হত। নবী সা. হেদায়াত এবং নাজাতের যে রাস্তা আমাদের বাতলিয়েছেন, তাতে আজান শুনে মসজিদে জামাতে হাজির হওয়াও অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি কাল কিয়ামতে আল্লাহ সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চায়, সে যেন জামাতের সাথে নামায পড়ে। কারণ, আল্লাহপাক স্বীয় নবীকে হিদায়াতের যে তরিকার তালিম দিয়েছেন, তাতে বিশিষ্টভাবে এটাও আছে- যে ব্যক্তি মুনাফিকের মত মসজিদে না গিয়ে ঘরে একা নামায পড়ে, সে তার নবীর তরিকাকে ছেড়ে দিলো। আর যে নবীর তরিকাকে ছেড়ে দিলো, সে পথভ্রষ্ট।" (মুসলিম, নাসায়ি)
,
মক্কার তখনকার প্রশাসক হযরত উত্তাব ইবনে উসায়েদ রাযি. নবীজির মৃত্যুসংবাদ শোনার পর মক্কাবাসীর এক জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন- "যদি কারো ব্যাপারে জানা যায়, সে আজান শুনে মসজিদে গিয়ে জামাতে নামায পড়ে না, তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হবে।" (কিতাবুস সালাত লি ইবনে কায়্যিম)। হযরত আবুদ দারদা রাযি. বলেন- "আল্লাহর শপথ, উম্মাতে মুহাম্মদির জন্য জামাতের সাথে নামায পড়া থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু আছে বলে আমি জানি না।" (বুখারি)
,
ইসলামে জামাতে নামায পড়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটা আহনাফের কাছে সুন্নাত মুয়াক্কাদা হলেও আমলগতভাবে ওয়াজিব। এটা ইসলামের বড় একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর দ্বারা ইসলামের শান প্রকাশ পায়। পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ হয়। ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। ঐক্যবদ্ধতা প্রকাশ পায় এবং তা আরো নিবিড় হয়। পারস্পরিক খোঁজ-খবর নেয়া সহজ হয়। সাহাবায়ে কেরাম যখন আজান শুনতেন, দোকানপাট বন্ধ করে মসজিদে হাজির হতেন।
"যে ব্যক্তি জামাত ছেড়ে দেয়ার অভ্যাস বনিয়ে নেবে, সে সাংঘাতিক গোনাগার, ফাসিক। তার সাক্ষ্য অগ্রহণযোগ্য। যে তার প্রতিবেশিকে জামাত ছাড়ার কারণে সতর্ক করে না, তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করে না, সে গোনাগার হবে।" (কবীরী)
,
"যে এলাকার লোকেরা জামাত পরিত্যাগ করে ঘরে নামায পড়ার অভ্যাস করবে, তাদের সে বদঅভ্যাস দূর করতে প্রয়োজনে অস্ত্রের মাধ্যমে জেহাদ করা ওয়াজিব।" (মিরকাত শরহু মিশকাত)
,
আগেকার বুযুর্গদের কারো যদি এক ওয়াক্তের জামাত ছুটে যেত, এটাকে মহা-মসিবত মনে করতেন। সাতদিন পর্যন্ত রোনাজারি করতেন, আফসোস করতেন। আর তাকবিরে উলা ছুটে গেলে তিনদিন পর্যন্ত রোনাজারি ও আফসোস করতেন। (এহইয়ায়ে উলুমে দ্বীন)
,
অতএব আমাদের ওপর কর্তব্য হল পাঁচ ওয়াক্ত জামাতে নামায পড়া। শৈথিল্য না করা। তাকবিরে উলা না ছাড়া।
,
★আযান শোনা মাত্র মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা না করলে যেহেতু জামাত না পাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে,তাই আযান হয়ে যাওয়ার পর দুনিয়াবি কাজ ছেড়ে দিয়ে মসজিদ পানে যেতে হবে।
তবে যদি শরয়ী ওযর থাকে,যেমন বৃষ্টি, রাস্তায় কাদা মাটি ইত্যাদি তাহলে জামাত ছেড়ে দেওয়া জায়েয আছে।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পরীক্ষা চালাকালিন সময়ে আযান দিলে ওয়াক্তের ভিতরে পড়ে নামাজ পড়ে নেওয়া যাবে।
তবে ক্লাশ চালাকালিন সময়ে আযান দিলে আযানের ডাকে সাড়া দিয়ে মসজিদের দিকেই যেতে হবে।
হ্যাঁ যদি ক্লাশ খুবই দরকারী হয়,বা কোনোভাবেই সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় না থাকে,তবে সাময়ীক সময়ের জন্য এহেন পরিস্থিতিতে পড়ে নামাজ পড়ে নেওয়া যাবে ঠিকই,তবে প্রতিদিন এমন করা যাবেনা।
,
★★উল্লেখ্য যে যদি অবস্থা এমন হয় যে এখন নামাজ না পড়লে ওয়াক্ত চলে যাবে,তাহলে ক্লাশ চালাকালিন সময়ে যেভাবেই হোক নামাজ আদায় করার জন্য বের হতেই হবে।