আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
267 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

আমি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ছি। এটা পড়ার কোনো ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে একপ্রকার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাই হোক, আমি আমার পিতামাতার উপরে রাগান্বিত নই। তাছাড়া আমি আল্লাহর কাছে ক্বুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী সাহায্য চেয়েছিলাম এবং শেষ পর্যায়ে ইস্তিখারাও করেছিলাম। আল্লাহর এটাই ইচ্ছা নিশ্চিত হয়ে আমি আর প্রতিবাদ করিনি। আমার সমস্যাগুলো হল, ১. মানবরচিত আইন এবং শরিয়াহ আইনের বিকৃতির প্রতি সম্মান আনাও হারাম, তাহলে আমি যদি পড়াশোনার বিষয় হিসেবে এর কোনো একটি উপভোগও করি, তাহলে আমার গুনাহ হবে কিনা। ২. আমার পিতামাতার কোনো পুত্রসন্তান নেই এবং তাঁদের দেখাশুনা করবার জন্য কোনো মাহরামও নেই। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাঁদের তেমন দ্বীনি জ্ঞানও নেই। তাই তাঁরা মেয়েদের উপার্জন না করার বিষয়কে ভালো চোখে দেখেন না। আমি যদি আইন পেশা গ্রহণ না করার ব্যাপারে কোমল স্বরেও কিছু বলি, তাহলেও আমার মা রেগে যান এবং খুব কষ্টদায়ক কথা বলেন। ইদানীং তিনি আমার উপস্থিতিই পছন্দ করেন না। এক্ষেত্রে আমি কি আইন পেশা গ্রহণ করব? উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আইন শিক্ষাতেও পর্দা রক্ষা, এমনকি সালাত ও আমল রক্ষাও এত কঠিন যে আমি আজ পর্যন্ত আমার বিভাগে ইসলাম নিয়ে যথোচিত দৃঢ় কাউকে খুঁজে পাইনি। আর আমি কোনোভাবেই চাই না ইসলাম নিয়ে আমাকে আপোষ করতে হোক। ৩. আমি কি আসন্ন ফিতনা ও ফাসাদের থেকে রক্ষার জন্য বিকল্প হিসেবে মৃত্যুর দুয়া করতে পারব?

জাযাকুমুল্লাহু খইরন।

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

দ্বীনি শিক্ষা হোক,বা দুনিয়াবি শিক্ষা হোক,ইসলামের বিধান হলো ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি। (বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

 

 فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া।  (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات     জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُم

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

গতানুগতিক বৃটিশ আইন ও বিচার পদ্ধতিকে ইসলামিকরণ করার চেষ্টা-প্রচেষ্টার নিয়তে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা ও তাতে চাকুরী করার রুখসত রয়েছে।

উকিল পেশা সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন-598

বিচারক সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন-623

সরকারী বিধান সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন- 262

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوٰى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه فَهِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُولِه وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهٗ إِلٰى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে। (বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবূ দাঊদ ২২০১, ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২)

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/ বোন!

১,২. গতানুগতিক বৃটিশ আইন ও বিচার পদ্ধতিকে ইসলামিকরণ করার চেষ্টা-প্রচেষ্টার নিয়তে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা ও তাতে চাকুরী করার রুখসত রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত এই দেশে পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে উলামায়ে কেরামগন কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেন।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।

২/ চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না। সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। (ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১)

এ শর্ত পুরোপুরি ভাবে মেনে মহিলাদের জন্য  ভার্সিটিতে মেডিকেল ছাড়াও অন্যান্য সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করা জায়েজ আছে। সুতরাং আপনি আইন নিয়ে পড়তে পারবেন।  প্রশ্নে উল্লেখিত ইসলাম ও মানবতার খেদমতের নিয়তে আইন নিয়ে পড়াশোনার কারনে আপনার ছওয়াব হবে। যদি উক্ত শর্ত পুরোপুরি মানা সম্ভব  না হয়,তাহলে এ সহ শিক্ষা জায়েজ নেই। আপনি আপনার মা ও বাবার জন্য খুব বেশী বেশী দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাদেরকে সহিহ বুঝ দান করেন এবং আপনিও হতাশ হবেন না বরং হিকমতের সাথে মুহাব্বত দিয়ে তাদেরকে বুঝাতে থাকুন।

সহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/434

৩. আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদেরকে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন৷ তাই তার জন্য উচিৎ হবে ধৈর্য ধারণ করা ৷ আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন৷ দেখবেন, এক সময় আল্লাহ তায়ালা তাকে এই ফেতনা ও বিপদ হতে উত্তোরণ করবে করবেই ইনশাআল্লাহ৷ তাকে বলবো, নবীদের ঘটনা পড়ুন৷ বিশেষ করে নবী ইউসুফ আ. এর ঘটনা পড়ুন। দেখবেন, তাদেরকেও আল্লাহ তায়ালা কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষা নিয়েছেন৷ তাই কখনো মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না৷

উল্লেখ্য যে, যদি একান্ত দোয়া করতেই হয় তাহলে এভাবে করুন-

اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي

হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন পর্যন্ত আমার জন্য জীবিত থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মৃত্যু কল্যাণকর হয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...