আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
445 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (58 points)
আচ্ছালামু আ'লাইকুম হুজুর,

১. সালফে সালেহীন ও সালাফিদের মাঝে পার্থক্য কি?

২. নামাজের ভিতরে অন্য কোনো দুরুদ পড়ার অবকাশ কি আছে?  ফরয, সুন্নত আর নফল নামাজের ক্ষেত্রে হুকুম ভিন্ন হবে কি?

৩. কিছু গুনাহ এর তালিকা দিয়েন যা একজন মানুষ দ্বীন মানতে গিয়ে হয়ে যায়? এবং বাঁচার উপায় যদি বলে দিয়েন।

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ  

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

“আর যেসব মুহাজির ও আনসার (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও তাতে সন্তুষ্ট। তিনি তাদের জন্য এমন। উদ্যানসমূহ প্রস্তুত করে রেখেছেন, যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত; যার মধ্যে তারা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে, এ হল বিরাট সফলতা।” (তাওবাহঃ ১০০)।

ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ

“সর্বোত্তম যুগ হল আমার (সাহাবীদের) শতাব্দী। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) শতাব্দী। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেতাবেয়ীনদের) শতাব্দী। অতঃপর এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যাদের একজনের কসমের আগে সাক্ষি হবে, আবার সাক্ষির আগে কসম। হবে।”
(বুখারী ২৯৫২, মুসলিম ২৫৩৩নং হাদীস)

সহীহ মুসলিম (২৫৩৬নং)এ আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করল, কোন লোকেরা সর্বশ্রেষ্ঠ? উত্তরে তিনি বললেন, “আমি যে শতাব্দীতে আছি (তার লোকেরা)। অতঃপর দ্বিতীয়, অতঃপর তৃতীয়।”

فإن كلمة "السلف" في اللغة بمعنى السابق والمتقدم في الزمن، ويقابلها: "الخَلَف" بمعنى اللاحق والآتي بعدُ.

সালাফ আস-সালেহীন অর্থ, পূর্ববর্তী (নেককার) ব্যক্তিগণ।
খালাফ বলা হয় যারা তাদের পরবর্তীতে এসেছেন,এবং যারা পরে আসবেন।

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,

সালাফ আস-সালেহীন শব্দের ব্যাপক অর্থ ও প্রয়োগক্ষেত্র হতে পারে।

وأما في اصطلاح العلماء، فإن كلمة "السلف" يُقصد بها: الصحابة رضي الله تعالى عنهم، والتابعون، وتابعوهم؛ أهلُ القرون الثلاثة المفضَّلة، الذين زكَّاهم النبي صلى الله عليه وسلم بقوله: خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ. رواه البخاري ومسلم. 

উলামায়ে কেরামদের পরিভাষায়  সালফে সালেহীন বলতে বুঝায় প্রথম তিন স্বর্ণযুগের লোকদেরকে, তথা; সাহাবায়ে কিরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন এবং আমাদের সম্মানিত হেদায়েতপ্রাপ্ত ইমামগণ।
যেমন উপরে উল্লেখিত হাদীস।

সুতরাং পরবর্তীতে তাদের অনুসরণকারী এবং তাঁদের পথ অবলম্বনকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাঁদের প্রতি সম্বোধন করতঃ সালাফী বলা হয়।

তবে পরিভাষায় বা প্রসিদ্ধি হিসেবে শুধুমাত্র তাদেরকেই সালাফী বলা হয়,যারা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী হয়ে তাকলীদে গায়রে সাখসী করে থাকেন।

আরো জানুনঃ 

(০২)
হাদীসে বর্ণিত যেকোনো দরুদ শরীফ পড়ার অবকাশ রয়েছে।
,
(০৩)
দ্বীন মানতে গিয়ে গুনাহ হবেনা,তবে বাধা আসতে পারে।
সেক্ষেত্রে দ্বীনেএ উপর অটল অবিচল থাকতে হবে। 
,
আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَأَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوعَدُوْنَ، نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيْهَا مَا تَدَّعُوْنَ، نُزُلًا مِنْ غَفُوْرٍ رَحِيْمٍ- 

‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। অতঃপর তার উপর অবিচল থাকে, তাদের উপর ফেরেশতামন্ডলী নাযিল হয় এবং বলে যে, তোমরা ভয় পেয়ো না ও চিন্তান্বিত হয়ো না। আর তোমরা জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হয়েছিল। আমরা তোমাদের বন্ধু ইহকালে ও পরকালে। আর সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমাদের মন চাইবে এবং সেখানে রয়েছে যা তোমরা দাবী করবে। এটা হবে ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালুর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন’ (হা-মীম সাজদা ৪১/৩০-৩২)।

তিনি আরও বলেন,

إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ، أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ خَالِدِيْنَ فِيْهَا جَزَاءً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ، 

‘নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। অতঃপর এ কথার উপর অবিচল থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিত হবে না। তারা হবে জান্নাতের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং এটা হবে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান’ (আহকাফ ৪৬/১৩-১৪)।

আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলকে বলতে শুনেছি যে, 

إِنَّ الْمُسْلِمَ الْمُسَدَّدَ لَيُدْرِكُ دَرَجَةَ الصَوَّامِ الْقَوَّامِ بِآيَاتِ اللهِ بِحُسْنِ خُلُقِهِ وَكَرَمِ ضَرِيبَتِهِ، 

‘দ্বীনের উপর অটল থাকা মুসলিম এবং সঠিক পথ অবলম্বনকারী মুসলিম নিজ সদ্ব্যবহার ও উত্তম চরিত্রের ফলে দিনব্যাপী ছাওম পালনকারী এবং রাতব্যাপী ক্বিয়ামকারী ব্যক্তির সমান ছওয়াব অর্জনকারী এবং সমমর্যাদাবান হ’তে সক্ষম’
(আহমাদ হা/৬৬৪৮; ছহীহাহ হা/৫২২।)

★যেসমস্ত বাধা আসতে পারে,তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ-  

অভাব-অনটন, অসুস্থতা-দুর্বলতা, জান-মালের সমস্যা, ক্ষতি-লোকসান, শত্রুর ভয়-ভীতি, যুদ্ধ-অভিযান ইত্যাদি সময়ে অনেকে ইসতিক্বামাত, ইলাহী বিধান পালন, সুন্নাতে নববীর অনুসরণ এবং ধৈর্যধারণ করা ছেড়ে দেয়। অথচ এই সময়ই সত্য-মিথ্যা, খাঁটিঁ-ভেজাল এবং ভাল-মন্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ণিত হয়।
এমন সময় ধৈর্যধারণকারী এবং ইসতিক্বামাত অবলম্বন- কারীদেরকে মহান আল্লাহ সত্য ও মুত্তাক্বী মুসলিম বলেছেন। তিনি বলেন,وَالصَّابِرِيْنَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ، ‘অভাবে, রোগ-পীড়ায় ও যুদ্ধের সময় যারা ধৈর্যের সাথে দৃঢ় থাকে, তারাই হ’ল সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই হ’ল প্রকৃত আল্লাহভীরু’ (বাক্বারাহ ২/১৭৭)। কেননা এই তিন সময়ে অভাব, কষ্ট ও যুদ্ধের সময়ে ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর বিধান পালন করা হ’তে পিছপা না হওয়া খুবই কঠিন মুহূর্ত ও স্পর্শকাতর সময়। তাই মহান আল্লাহ বিশেষ করে এই অবস্থাসমূহের বর্ণনা দিয়েছেন।

দ্বীনের উপর অটল থাকার দো‘আ :
আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেন, তুমি বল,اللَّهُمَّ اهْدِنِىْ وَسَدِّدْنِىْ  ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সুপথ প্রদর্শন কর এবং আমাকে সরল পথে পরিচালিত কর। আর তুমি সুপথের সংকল্প কর এবং সঠিক পথে স্থির থাক, যেভাবে তীর তার লক্ষ্যে স্থির থাকে।
(মুসলিম হা/২৭২৫; মিশকাত হা/২৪৮৫।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (58 points)
ফরয নামাজে দুরুদে ইব্রাহিম ছাড়া অন্য কোনো দুরূদ পড়া যায়?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 162 views
...