আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
283 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (25 points)

একজন বক্তা একটি বয়ানে আদম আঃ কে সিজদা করতে বলার পর আল্লাহ্ আর ইবলিসের কথোপকথন এর ঘটনা বলার সময় বলেছিলেন, 

ইবলিস আল্লাহকে বলছে, "আমারে বানাইসেন নূ থেকে, তারে (আদম আঃ কে) বানাইসেন ব্রিকফিল্ডের মাটি থেকে আমি তারে কেমনে সম্মান করতাম? "

এমন মন্তব্য করার পর কি উক্ত বক্তা কি কুফর করেছেন? তাকে কাফির বলা কতটুকু যৌক্তিক?

1 Answer

0 votes
by (573,930 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم  

আল্লাহ তাআলা হজরত আদম [আ.]-কে কাদা মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। 

মাটি প্রক্রিয়াজাত করে তাঁর ‘খামিরা’ প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই আল্লাহ ফেরেশতাদের জানালেন, অচিরেই তিনি মাটি দিয়ে একটি নতুন সৃষ্টি তথা মাখলুক নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। সেই মাখলুককে ‘বাশার’ (মানুষ) বলা হবে এবং জমিনে সে আল্লাহ তাআলার প্রতিনিধিত্বের সম্মান লাভ করবে। হজরত আদম [আ.]-কে তৈরির উদ্দেশ্যে বানানো খামিরা প্রক্রিয়াজাতকৃত মাটি থেকে প্রস্তুত করা হয়েছিলো এবং এমন মাটি থেকে প্রস্তুত করা হয়েছিলো, যা ছিলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। খামির-মাটি দিয়ে সৃষ্ট আদমের দেহাবয়ব শুকিয়ে মাটির পাত্রের মতো হয়ে গেলো এবং তাতে আঘাত করলে ঠনঠন শব্দ হতে লাগলো। আল্লাহ তাআলা এই মাটি-নির্মিত দেহাবয়বের ভেতরে ‘রুহ’ ফুঁকে দিলেন এবং নিজের ইচ্ছাধীন শব্দ ‘কুন’ (হয়ে যাও) বললেন, অতঃপর সঙ্গেই সঙ্গেই তা মাংস, চর্ম, হাড়, রগ, শিরা-উপশিরাবিশিষ্ট জীবন্ত মানুষ হয়ে গেলো । এই মানবের ভেতরে অনুভূতি, ইচ্ছাশক্তি, জ্ঞান-বুদ্ধি, শিক্ষালাভের প্রেরণা ও অসংখ্য মানবিক গুণাবলি দৃষ্ট হতে লাগলো। তখন ফেরেশতাদের প্রতি নির্দেশ জারি হলো—তোমরা এর প্রতি সিজদাবনত হও। সঙ্গে সঙ্গেই ফেরেশতা সকলেই আল্লাহ তাআলার আদেশ পালন করে সদ্যনির্মিত আদম [আ.]-কে সিজদা করলেন।

হজরত আদম [আ.]-কে সৃষ্টির পূর্বাপর অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেছেন- ‘আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করি (তোমাদের অস্তিত্বে নিয়ে আসি এবং এটাই আমার কাজ), তারপর তোমাদের (মানবজাতির) আকৃতি দান করি এবং তারপর (সেই সময় এলো যে আমি) ফেরেশতাদেরকে আদমকে সিজদা করতে বলি; ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। (সে আমার আদেশ মানলো না।) সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।’ [সুরা আ’রাফ, আয়াত ১১]

অন্য একটি আয়াতে বলেছেন- ‘আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা (শুষ্ক হয়ে খনখন শব্দে বাজে এমন খামিরাবিশিষ্ট মাটি) থেকে এবং তার আগে সৃষ্টি করেছি জিন অত্যুষ্ণ অগ্নি থেকে। স্মরণ করো, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি গন্ধযুক্ত কর্দমের শুষ্ক ঠনঠনা মৃত্তিকা থেকে মানুষ (মানবজাতি) সৃষ্টি করছি; যখন আমি তাকে (তার দেহাবয়বকে) সুঠাম করবো (সারকথা, তার অস্তিত্ব পূর্ণতায় পৌঁছে যাবে) এবং তাতে আমার পক্ষ থেকে রুহ (প্রাণ) সঞ্চার করবো তখন তার প্রতি সিজদাবনত হয়ো। তখন ফেরেশতাগণ সকলেই একত্রে সিজদা করলো, ইবলিস ব্যতীত, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বকার করলো।’ (সুরা হিজর, আয়াত ২৬-৩১)
,
★★উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে হযরত আদম আঃ কে কাদা মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
সুতরাং এটা ব্যপক অর্থ বুঝায়,যেকোনো পবিত্র কাদা মাটি এখানে উদ্দেশ্য হতে পারে।
তাই আলোচ্য বক্তার কথা "ব্রিকফিল্ডের মাটি" বলার দ্বারা কোনো সমস্যা নেই। 
তবে শুধু মাত্র কাদা মাটিই বলাই শ্রেয়,তাতে কাহারো কোনো প্রশ্ন থাকেনা।

তবে এহেন কথা বলার দ্বারা কাউকে কাফের বলা কোনো ভাবেই জায়েয নয়।

,
শরীয়তের বিধান হলো  কোন মুসলিমের মধ্যে কুফরী কাজ দেখতে পেলে তাকে মুশরিক বা কাফের বলে ডাকা যাবে না। 
আল্লাহ তায়ালা বলেন,  
ولا تنابزوا  بالالقاب
তোমরা কাউকে মন্দ লকবে ডেকো না’… (হুজুরাত ৪৯/১১)। 
,
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ক্বাতাদাহ বলেন, এর অর্থ হ’ল, কাউকে হে মুনাফিক, হে ফাসেক ইত্যাদি বলে ডাকা যাবে না’ (বায়হাক্বী শু‘আব হা/৬৭৪৮, কুরতুবী, তাফসীর হুজুরাত ১১ আয়াত)। 
,
রাসূল (ছাঃ) বলেন, যাকে কাফের বলা হবে সে সত্যিকারে কাফের না হ’লে যে কাফের বলল তার দিকেই সেটা ফিরে আসবে (মুসলিম হা/৬০; বুখারী হা/৬১০৩)। 
,
তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি কর্তৃক তার (মুসলিম) ভাইকে কাফের বলাটা তাকে হত্যা করার মত অপরাধ (বুখারী হা/৬০৪৭; মিশকাত হা/৩৪১০)। 
,
তবে কাউকে কুফরী কোনো কাজ করতে দেখলে, তোমার এ কাজটি কুফরী পর্যায়ভুক্ত বা তোমার মধ্যে মুনাফিকের এই আলামতটা দেখা যাচ্ছে এরূপ বলা যেতে পারে।
,

শরিয়ত কোনো মুসলমানকে কাফের দোষারোপ করতে নিষিদ্ধ করেছে। এটি হচ্ছে সাধারণ নীতি। এমনকি একজন অন্যজনকে অবিশ্বাসী (কাফের) বলে সন্দেহ করার ক্ষেত্রেও এ বিধান প্রযোজ্য হবে। 
,
একইভাবে কোনো মুমিন ব্যক্তি যদি দেখতে পান, তার মতোই একজন মুসলমান এমন কথা উচ্চারণ বা কাজ করেছে যাতে মনে হবে যে, সে হয়তো কাফের হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই সন্দেহের সুবিধা দিতে হবে এবং সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কোনোক্রমেই তাকে কাফের বলা যাবে না। 

যদি কোনো মুসলমান এমন কথা বলে বা এমন কাজ করে, যার কুফরির পর্যায়ে পড়ার কেবল একটা সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও তাকে ধর্মত্যাগী বা অবিশ্বাসী বলা যাবে না। ইমাম আবু হানিফার মতে, কোনো কথার যদি ৯৯ শতাংশই অবিশ্বাসের বোঝায় এবং মাত্র ১ শতাংশ বিশ্বাস (ঈমান) অবশিষ্ট থাকে,তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...