আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
239 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমি একজন প্র‍্যাক্টিসিং মুসলিমাহ আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামের বেসিক বিশ্বাস এবং ইবাদত নিজের সাধ্যমতো করার চেষ্টা করি। অন্যদিকে আমার স্বামী ইসলামের মৌলিক বিধান সমূহে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাসী নয়। সে নামাজ পড়ে না, রোজা রাখে না। যাকাত দেয় না যদিও অনেককে আর্থিক সহায়তা করে তবে তা যাকাতের নিয়তে নয়। আগে বাসায় মেহমান আসলে বা কোথাও গেলে অন্যদের সাথে জামাতে নামাজে দাড়াতো। এখন সেটাও করে না। ইসলামের অনেক বিধানকেই সে "বর্বর" বলে। বাচ্চাকে কুরআন শেখাতে হলে আমাকে গোপনে শেখাতে হয়। কারণ সে চায় না বাচ্চাকে ইসলামিক কোনো শিক্ষা দিতে। তার যুক্তিতে বিজ্ঞানই সব। আর ধর্ম শুধু মানুষের মনের বিশ্বাস মাত্র, যার কোনো প্রমান নেই। সে নাস্তিক না পুরোপুরি কিন্তু সে সংশয়বাদী, বলা যায়।
আমার পরিবার এবং তার পরিবারকে আমি এসব কথা জানিয়েছি অনেক দিন আগেই। তার পরিবার তাকে বুঝানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আর আমার মা বাবা আমাকে ইমোশনালি বুঝিয়ে দিয়েছে যে যত যাই হোক, এই স্বামীর সংসারই আমাকে করতে হবে। তারা আমার কোনো দায়িত্ব নিবে না।
উল্লেখ্য, আমার ৪ বছর বয়সী একটা সন্তান আছে। বর্তমানে আমি আবার ৭ মাসের গর্ভবতী। আমি দেশের বাইরে থাকি, যেখানে আমার পরিবারের বা রক্ত সম্পর্কের কোনো আত্মীয় থাকে না। আমি চাকরি করি না, যার জন্য হুট করে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়াও সম্ভব না আমার জন্য। আর নিজের শারীরিক হালত এবং ছোট বাচ্চা নিয়ে আগামী অন্তত ৬ মাস আমার পক্ষে চাকরী করাও মনে হয় সম্ভব হবে না। যেহেতু আমার পরিবার আমার দায়িত্ব নেবে না, তাই আমার যাওয়ারও কোনো জায়গা নেই। এখন আমার নিজের গার্ডিয়ান আমি নিজেই বলা যায়। এমতাবস্থায় আমার স্বামীর সাথে আমার সংসার করার বিধান কি? আমার কি গুনাহ হচ্ছে যে আমি তার সাথে সংসার করছি? বাচ্চা বড় হচ্ছে আর পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হচ্ছে কারণ বাচ্চাকে ইসলামিক শিক্ষা কতদিন এভাবে লুকিয়ে দেয়া সম্ভব! আবার আমার জন্য বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়াও কঠিন। কোথায় যাবো? এত বড় দুনিয়ায় যাওয়ার কোনো জায়গা খুঁজে পাই না আমি। দয়া করে আমাকে আমার অবস্থা বিবেচনায় করনীয় জানাবেন।

1 Answer

0 votes
by (62,960 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ الۡمُحۡصَنٰتُ مِنَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ اِذَاۤ اٰتَیۡتُمُوۡہُنَّ اُجُوۡرَہُنَّ مُحۡصِنِیۡنَ غَیۡرَ مُسٰفِحِیۡنَ وَ لَا مُتَّخِذِیۡۤ اَخۡدَانٍ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالۡاِیۡمَانِ فَقَدۡ حَبِطَ عَمَلُہٗ ۫ وَ ہُوَ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ 

আর মুমিন সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারীদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল যদি তোমরা তাদের মাহর প্রদান কর বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। আর কেউ ঈমানের সাথে কুফরী করলে তার কর্ম অবশ্যই নিষ্ফল হবে এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সুরা মায়েদা ০৫)

 বিবাহ কেবল সামাজিক বন্ধন নয়। মুসলমানদের জন্য এটি একটি ইবাদতও। নবীজী সা. এক হাদিসে বলেছেন। “বিবাহ করা আমার সুন্নাত আর যে আমার সুন্নাত থেকে (অবজ্ঞার সাথে) দূরে থাকবে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয় (বুখারী শরীফ-হাদিস নং-৪৭৭৬)

আর ইবাদত সহীহ হবার জন্য মুসলমান হওয়া আবশ্যক। সুতরাং মুসলমানদের জন্য কোন নাস্তিক-মুরতদ, কাফের-মুশরিকের সাথে বিবাহ করা জায়েজ নয়। যদি বিবাহ করেও তাহলে এই বিবাহ সহীহ হবেনা। বিবাহের পর স্বামী বা স্ত্রী যদি নাস্তিক-মুরতাদ বা কাফের হয়ে যায় (আল্লাহ তায়ালা আমাদের হিফাযত করুন) তাহলে তাদের মাঝের বিবাহ বন্ধন বাতিল হয়ে যায়।

নাস্তিক-মুরতাদের সাথে বিবাহ করা জায়েজ নয়। ব্যক্তি মুসলমান অবস্থায় বিবাহ করার পর নাস্তিক মুরতাদ হয়ে গেলে তার বিবাহ বাতিল হয়ে যায়। নাস্তিক-মুরতাদের জন্য মুসলিম , কাফের , নাস্তিক-মুরতাদ কোন মহিলাকেই বিবাহ করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে শামী-৪/৩৭৬, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-১/২৮২, আল বাহরুর রায়েক-৩/২০৯)

قَوْله تَعَالَى { وَمَنْ يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآَخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ سورة المائدة-5)

আল্লাহ তায়ালা বলেন-ঈমান আনার পর যে ব্যক্তি কুফরী করে তার সকল আমল বাতিল হয়ে যায়। আর সে আখেরাতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা মায়িদা-৫)

ولا يجوز للمرتد أن يتزوج مرتدة ولا مسلمة ولا كافرة أصلية وكذلك لا يجوز نكاح المرتدة مع أحد كذا في المبسوط(الفتاوى الهندية-1/282)

মৌলিকভাবে মুরতাদের জন্য মুরতাদকে, কোন মুসলিমকে, এবং কোন কাফেরকেও বিবাহ করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী ০১/২৭২)

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!

যদি আপনার স্বামী নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদী আদায় না করে তাহলে ফাসেক হিসেবে বিবেচিত হবে, তবে কাফের হবে না। কিন্তু তিনি যদি শরিয়তের স্পষ্ট কোন বিধানকে অস্বীকার করেন তাহলে তিনি ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন। এমন পরিস্থিতিতে আপনার জন্য করণীয় হলো, আপনি আপনার স্বামীর হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট খুব দোয়া কান্না কাটি করবেন ও মুহাব্বতের সাথে তাকে বুঝাতে থাকবেন।

 সাথে সাথে কোন নির্ভরযোগ্য মান্যবর আলেমের সাথে তাকে কথা বলানোর চেষ্টা করবেন, যিনি তার বিভিন্ন সংশয় নিরসনের জন্য তাকে বুঝানোর চেষ্টা করবেন। আল্লাহ তায়ালার একটি নাম মুকাল্লিবুল কুলুব (অন্তর পরিবর্তনকারী)। আল্লাহ তায়ালা চাইলে মহূর্তের মধ্যেই তার অন্তর পরিবর্তন করে তাকে হেদায়েত দিতে পারেন। পরিশেষে যদি কোন ভাবেই তিনি পূর্বের অবস্থান থেকে ফিরে না আসেন তাহলে পারিবারিক ভাবে উক্ত বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে যেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত মনে করেন তা করতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...