আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
479 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (46 points)
closed by
আসসালামুয়ালাইকুম,

১.বিয়ের ক্ষেত্রে কিভাবে আগানো উচিত? ইসলাম কিভাবে আগাতে বলে বিস্তারিত বললে ভাল হয়।
২.আমার সাথে একজনের বিয়ের ব্যাপারে আলাপ চলছে। এখন তারা এই মুহূর্তে আমার জেলায় আসতে পারবে না আমরাও তাদের জেলায় যেতে পারব না। ৩/৪ মাস পর তারা আমাদের জেলায় চলে আসবে। তখন আমরা পাত্রীকে দেখব এবং তার ফ্যামিলির সাথে ফাইনাল আলাপ হবে। আমার ভয় লাগতেসে যদি কোন কারনে তাদের ৩/৪ মাস ওয়েট করিয়ে কোন কারনে তাদের না করিয়ে দিতে হয় তাহলে আমরা গুনাহগার হব কিনা। আপাতত পাত্র পাত্রীর ইমেইলে কথা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে। দ্বীন, পরিবার,আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে তারা একমত। পাত্রের বোনের সাথে পাত্রীর কথা হয়েছে। তবে পাত্রের অভিভাবকের সাথে পাত্রীর অভিভাবকের কথা হয়নি। পাত্রের অভিভাবক এখন কি কথা বলবেন বুঝতে পারছেন না যেহেতু ৩/৪ মাসের আগে কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। এমন অবস্থায় কি করা যেতে পারে?
৩.ইদানীং অনেক দ্বীনি ম্যাট্রিমনিতে পাত্র পাত্রীর ইমেইল এড্রেস দিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সুযোগ থাকে পাত্র পাত্রী নিজেদের মধ্যে মেসেজ আদান প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। এটা কি জায়েজ হবে?
closed

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
selected by
 
Best answer

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো,

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

 তিনি তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জীবনসঙ্গিনী, যাতে তোমরা তাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। ’ (সুরা রুম, আয়াত :২১)

ইসলামে বিয়ের যাবতীয় নিয়ম-কানুন এবং বিধান-শর্ত ও আনুসাঙ্গিক বিষয় নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

ইসলামে বিয়ের রুকন বা মৌলিক ভিত্তি

এক. বর-কনে উভয়ে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত হওয়া।

দুই. ইজাব বা প্রস্তাবনা: এটি হচ্ছে বরের কাছে মেয়ের অভিভাবক বা তার প্রতিনিধির পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব উপস্থান করা। যেমন, ‘আমি অমুককে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম’ অথবা এ ধরনের অন্য কোনভাবে প্রস্তাব পেশ করা।

তিন: কবুল বা গ্রহণ করা: এটি বর বা তার প্রতিনিধির সম্মতিসূচক বাক্য। যেমন, ‘আমি কবুল বা গ্রহণ করলাম’ ইত্যাদি।

বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত

(১) বর-কনে উভয়কে গ্রহণযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়া।

(২) বর-কনে একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘স্বামীহারা নারী (বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা)-কে তার সিদ্ধান্ত ছাড়া (অর্থাৎ পরিষ্কারভাবে তাকে বলে তার কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে) বিয়ে দেয়া যাবে না। কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি (কথার মাধ্যমে অথবা চুপ থাকার মাধ্যমে)  ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! কেমন করে তার সম্মতি জানব? তিনি বললেন, চুপ করে (লজ্জার দরুন) থাকাটাই তার সম্মতি। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪৭৪১)

(৩) বিয়ের আকদ (চুক্তি) করানোর দায়িত্ব মেয়ের অভিভাবককে পালন করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বিয়ে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যে অবিবাহিত নারী-পুরুষদের বিবাহ দাও। ’ (সুরা নুর, ২৪:৩২)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ১০২১)

(৪) বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। ’ (সহিহ জামে, হাদিস নং : ৭৫৫৮)

সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল  বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার-৩/৯; ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)

বিয়ের প্রচারণা নিশ্চিত করাও জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং: ১০৭২)

কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত

১. সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন হওয়া।

২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।

৩. দাসত্বের শৃঙ্খল হতে মুক্ত হওয়া।

৪.অভিভাবক কনের ধর্মানুসারী হওয়া। সুতরাং কোনো অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম নর-নারীর অভিভাবক হতে পারবে না।

৫. ন্যায়পরায়ণ হওয়া। অর্থাৎ ফাসেক না হওয়া। কিছু কিছু আলেম এ শর্তটি আরোপ করেছেন। অন্যেরা বাহ্যিক ‘আদালত’কে (ধর্মভীরুতা) যথেষ্ট বলেছেন। আবার কারো কারো মতে, যাকে তিনি বিয়ে দিচ্ছেন তার কল্যাণ বিবেচনা করার মত যোগ্যতা থাকলেও চলবে।

৬.পুরুষ হওয়া।  প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘এক নারী অন্য নারীকে বিয়ে দিতে পারবে না। অথবা নারী নিজে নিজেকে বিয়ে দিতে পারবে না। ব্যভিচারিনী নিজে নিজেকে বিয়ে দেয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৭৮২; সহিহ জামে : ৭২৯৮)

৭. বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের ‘কুফু’ বা সমতা ও অন্যান্য কল্যাণের দিক বিবেচনা করতে পারার যোগ্যতাবান হওয়া।

ফিকাহবিদরা অভিভাবকদের ধারা নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং কাছের অভিভাবক থাকতে দূরের অভিভাবকের অভিভাবকত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। কাছের অভিভাবক না থাকলে দূরের অভিভাবক গ্রহণযোগ্য হবে।

আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:

https://ifatwa.info/8941/ 

https://www.ifatwa.info/3136/?show=3136#q3136

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী ভাই/বোন!

১. বিয়েতে প্রস্তাব দেয়া ও কবুল করা। দেনমোহর নির্ধারিত করা এবং কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর সামনে এ বন্ধনটি হওয়া। সম্ভব হলে ছেলে বিয়ের পর নিজ লোকজনকে একবেলা খানা খাওয়ানো। এ পর্যন্তই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। এর বাইরে আর কিছুই শরিয়তের বিধান নয়। কোনো গুনাহের কাজ তো সমর্থন করার প্রশ্নই উঠে না। প্রয়োজনের বাইরে জরুরি কাজেও অপচয় করা, মেয়ের বাবার ওপর কোনো আর্থিক চাপ, সামাজিকতার চাপ ইসলামী বিয়েকে কলুষিত করে। দেশীয় অপসংস্কৃতি কিংবা বিধর্মীদের কালচার বিয়েকে অভিশপ্ত করে। সুন্নত তরিকার বিয়ে খুবই সহজ। কোনো ভালো আলেমের কাছ থেকে জেনে নিন। একখানা হাদিস মনে রাখবেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে বেশি বরকত সেই বিয়ে হয়, যাতে খরচের চাপ সবচেয়ে কম থাকে।

২,৩. কোন পাত্র বা পাত্রীকে পরস্পরে পছন্দ হওয়ার পরে কোন বিশেষ উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া বিয়েতে দেরী করা মোটেও উচিত না। কারণ, এতে পরবর্তিতে বিভিন্ন ফেতনার সম্ভবনা থাকে। ফেতনার আশংকা না থাকলে পাত্র পাত্রী প্রয়োজনীয় তথ্যাদী আদান প্রদাণ করতে পারবে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে যে, বিয়ের পূর্বে ছেলে মেয়ের মাঝে প্রেম ভালোবাসা সম্পূর্ণ হারাম। বিধায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা জায়েয হবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...