আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
236 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
আমার বাবা মায়ের তালাক হয়ে যায় আমি ছোট থাকতেই। তারপর থেকে বাবা তেমন ভরনপোষণ দেন না। মা আইনের সাহায্য নিয়েও আদায় করতে পারেননি। তারপর মা ক্লাস ৪ থেকে অনার্স পর্যন্ত পড়ান। বাবার সাথে বার বার যোগাযোগ করেও আমি সারা পাচ্ছিনা। উনার পরের ঘরের একটা মেয়ে আছে।  তার সব দায়িত্ব পালন করে।  ২০ হাজার টাকার বেশি বেতনের চাকরি করেন।  উনার কাছে গিয়ে থাকলে উনি খরচ দিবেন বলে ঘুরাচ্ছেন। ১ হাজার টাকা দিবেন বলে ৩-৪ দিন ধরে ফোনই ধরেন না।  লেখাপড়া ঢাকাতে তাই উনার কাছে এক্কেবারে যেয়ে থাকা সম্ভব না।  উনি গাজীপু থাকেন।  এখন আমার করনীয় কি? আমি যদি উনার নামে মামলা করি আমার হক আদায়ের জন্য আমার কি পাপ হবে?

1 Answer

+1 vote
by (57,120 points)
edited by

  

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

সন্তান ছেলে বা মেয়ে হোক, প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণ-পোষণের দায়দায়িত্ব বাবার ওপরই থাকে। সেজন্য কোনো কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হলে কিংবা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে আলাদা হয়ে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করলে নাবালক সন্তানের ভরণ-পোষণ দিতে হয় বাবাকেই। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা কলহের জেরে আলাদা বসবাস বা বিচ্ছেদের পর অনেক বাবাই সন্তানের দায়িত্ব নিতে চান না। দিতে চান না ভরণ-পোষণ।

নিজের ও পরিবারের ভরণ-পোষণ খরচ বহনের বিষয়টি আমাদের কাছে শুধু একটি পার্থিব বিষয় মনে হলেও এটি একটি মহান দ্বিনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। কোরআন ও হাদিস অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে এ অধ্যায়টিকে কোনো দিক দিয়ে কম গুরুত্ব দেয়নি। নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করাও একজন মুসলিমের ফরজ দায়িত্ব। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হালাল রিজিকের সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম একটি ফরজ।’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস : ৯৯৯৩)

 অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে।’ (মুসলিম : হাদিস ৯৯৪) 

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে।’ (বুখারি : হাদিস ৪০০৬)

 সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পিতার ওপর। পুত্রের ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব উপার্জনক্ষম হওয়া পর্যন্ত। আর কন্যার ক্ষেত্রে বিয়ে হওয়া পর্যন্ত। (আদ্দুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার : ৩/৬১২)

আর পঙ্গু, অক্ষম, পাগল এবং মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানের ক্ষেত্রে সব সময়ের জন্য। তবে সন্তানদের মালিকানায় সম্পত্তি থাকলে পিতা তা থেকে তাদের জন্য খরচ করতে পারবেন। পিতা অক্ষম হলে, আর দাদা, মা, মামা অথবা চাচা সক্ষম হলেতারা ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তী সময়ে পিতা সক্ষম হলে তাদের খরচ ফিরিয়ে দেবেন। (কামুসুল ফিকহ : ৫/২১২)

কন্যাসন্তান সাবালক হলেও তাকে উপার্জনে বাধ্য করার অবকাশ পিতার নেই। তবে কন্যা যদি পর্দায় থেকে সেলাই ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন করে তাহলে তার ভরণ-পোষণ নিজের জিম্মায় থাকবে। তা যথেষ্ট না হলে বাকিটুকু পিতার জিম্মায় ওয়াজিব হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৬১২)

সন্তানের ভরণ-পোষণের বিষয়ে আইনে যা আছে:

১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ও ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সন্তানদের ভরণ-পোষণ দেয়ার দায়িত্ব আইনগতভাবে বাবার। সাবালক হওয়া পর্যন্ত ছেলেকে এবং বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত মেয়েকে বাবা ভরণ-পোষণ দেবেন। কোনো অসুস্থ ও অক্ষম সন্তান থাকলে তাদের ভরণ-পোষণও দেবেন বাবা। সাবালকত্ব অর্জন করার পরও যদি সন্তান নিজ ভরণ-পোষণ জোগাতে ব্যর্থ হন, তবে আইনানুসারে ওই সন্তান বাবার কাছে ভরণ-পোষণ দাবি করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাবা ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য নন। মা যদি সন্তানের জিম্মাদারও হন, তখনো বাবা ভরণ-পোষণ দেবেন।

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনী বোন!

প্রথমত আপনি আপনার বাবাকে তার দায়িত্ববোধ সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করবেন। নিজে না পারলে অন্য কোন ব্যক্তির মাধ্যমে তাকে বুঝানোরে চেষ্টা করবেন। এরপরও যদি তিনি আপনার প্রয়োজনীয় খরচ বহন না করেন, তাহলে আপনি আপনার অধিকার বুঝে পাওয়ার জন্য আইনের আশ্রয় নিলে আপনার কোন গুনাহ হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...