(০১)
যে সমস্ত ছুরতে তায়াম্মুম করা বৈধঃ-
১- পানির অনুপস্থিতিতে
আল্লাহ তাআলা বলেন, (فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ) {অতঃপর পানি না পাও, তবে তায়াম্মুম করো।}
২- পানি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করতে অপারগ হলে
যেমন অসুস্থ অথবা বৃদ্ধ ব্যক্তি যে নড়াচড়া করতে পারে না এবং তার কাছে এমন ব্যক্তিও নেই যে তাকে অজু করার ব্যাপারে সাহায্য করবে।
৩ - পানি ব্যবহার করার ফলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে
যেমন :
ক - অসুস্থ ব্যক্তি যদি পানি ব্যবহার করে তবে তার অসুস্থতা বেড়ে যাবে।
খ – প্রচন্ড ঠান্ডায় যদি পানি গরম করার মতো কিছু না থাকে এবং পানি ব্যবহার করলে অসুস্থতা বেড়ে যাবে এ ধারণার পাল্লা ভারি থাকে, এ অবস্থায় তায়াম্মুম করার অনুমতি রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক, প্রচন্ড ঠান্ডা থাকার কারণে তায়াম্মুম করে নামাজের ইমামতি করার পর, আমর বিন আস রাযি. এর কাজকে নাকচ করে না দেয়া এ ক্ষেত্রে প্রমাণ। (বর্ণনায় আবু দাউদ)
গ - কোনো ব্যক্তি যদি পানি থেকে দূরে কোথাও অবস্থান করে এবং তার সাথে পান করার মতো সামান্য পানি থাকে আর অন্য পানি হাজির করতে অপরাগ হয়।
বিস্তারিত জানুনঃ
(০২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ফরজ গোসলের স্থানে শরীয়তের বিধান অনুপাতে যদি কাহারো জন্য তায়াম্মুম বৈধ হয়,তাহলে তায়াম্মুম গোসলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে সে ব্যাক্তি পবিত্র হয়ে যাবে।
বিস্তারিত জানুনঃ
তায়াম্মুমের ফরজ দুটিঃ-
১। পুরো চেহারা একবার মাসেহ করা।
২। উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা।
★তবু নিয়ত করা তায়াম্মুমের জন্য শর্ত।
নিয়ত ছাড়া তায়াম্মুম শুদ্ধ হবেনা।
মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন,
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَفُوًّا غَفُوۡرًا ﴿۴۳﴾
‘আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাকো কিংবা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে, কিংবা নারীগমন করে থাকো, কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ الْفَارِسِيُّ ، نَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْحُسَيْنِ بْنِ جَابِرٍ ، نَا عَبْدُ الرَّحِيمِ بْنُ مُطَرِّفٍ ، ثَنَا عَلِيُّ بْنُ ظَبْيَانَ ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ، عَنْ نَافِعٍ ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، عَنِ النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ : " التَّيَمُّمُ ضَرْبَتَانِ : ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ ، وَضَرْبَةٌ لِلْيَدَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ "
আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল আল-ফারিসী (রহঃ) ... ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাইয়াম্মুমের জন্য দুইবার মাটিতে হাত মারতে হবে, একবার হাত মেরে মুখমণ্ডল মসেহ করবে এবং দ্বিতীয়বার হাত মারে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মসেহ করবে।
(সুনানে দারা কুতনি ৬৬০)
عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، كَانَ يَتَيَمَّمُ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ . وَسُئِلَ مَالِكٌ كَيْفَ التَّيَمُّمُ وَأَيْنَ يَبْلُغُ بِهِ فَقَالَ يَضْرِبُ ضَرْبَةً لِلْوَجْهِ وَضَرْبَةً لِلْيَدَيْنِ وَيَمْسَحُهُمَا إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ .
নাফি' (রহঃ) হইতে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) হস্তদ্বয়ের উভয় কনুই পর্যন্ত তাইয়াম্মুমে মসেহ করিতেন।
মালিক (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হইলঃ তাইয়াম্মুম কিরূপে এবং (হস্তদ্বয়ে তাইয়াম্মুম করার সময়) কোন স্থান পর্যন্ত তাহা পৌছাইবে? তিনি (উত্তরে) বলিলেনঃ একবার মাটিতে হাত রাখিবে মুখমণ্ডলের নিমিত্ত আর এক দফা রাখিবে হস্তদ্বয়ের সমূহের জন্য এবং হস্তদ্বয় উভয় কনুই পর্যন্ত মসেহ করিবে।
(মুয়াত্তা মালিক ১২১)
তায়াম্মুমের সুন্নত পদ্ধতিঃ-
১। তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। (জমউল জাওয়ামে : ১/১৫৭৮৭)
২। ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৯)
৩। মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করার মাঝখানে অন্য কোনো কাজ না করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭২)
৪। মাটির মধ্যে হাত আগে-পিছে নড়াচড়া করা। (দারাকুতনি : ৬৯৭)
৫। মাটির ওপর হাত মারার পর উভয় হাত ঝেড়ে ফেলা। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৬৩)
৬। মাটির ওপর হাত রাখার সময় আঙুলগুলো খোলা রাখা। (দারাকুতনি : ৬৯৭)
তায়াম্মুম করার ইচ্ছাকারী ব্যক্তি উভয় হাতের কাপড়গুলো কনুইয়ের ওপরে উঠিয়ে নেবে। তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়ার নিয়ত করে বিসমিল্লাহ পাঠ করবে। নিজের উভয় হাতের তালুকে আঙুলগুলো খোলা রেখে মাটির ওপর রাখবে। হাতকে মাটির ওপর সামান্য ঘষবে। তারপর উভয় হাত উঠিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। এরপর পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করবে। অতঃপর আগের মতো উভয় হাতের তালু আঙুল খোলা রেখে মাটির ওপর রেখে সামান্য ঘষবে। এরপর নিজের বাঁ হাত দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। এরপর ডান হাত দ্বারা বাঁ হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। তাতে তায়াম্মুম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর তা দ্বারা ফরজ, নফল সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে পারবে। (কিতাবুল আসার লি আবি ইউসুফ : ৭৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৬০)
(কিছু তথ্য সংগৃহীত)
,
কোন কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে,জানুনঃ