আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
182 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (31 points)
আসসালামু আলাইকুম।
১. অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে অক্ষম ব্যক্তি কি কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে আয়াতের মাঝখানে থেমে থেমে, আগের শব্দ না মিলিয়ে তিলাওয়াত করতে পারবে? দেখা যায় যে, ৪/৫ টি শব্দের বেশি টান রক্ষা করা কষ্টকর হয়। আবার ঘন ঘন আগের শব্দ মিলাতে গেলে পড়তে অসুবিধাও লাগে।

২. ৪ রাকআত ফরজ নামাজের শেষ দিকের কোন রাকআতে সিজদার পর দাঁড়িয়ে সুরা ফাতিহা তিলাওয়াত শুরু করার পর দৃঢ় সন্দেহ জাগে যে এটাই চতুর্থ রাকআত ছিলো। এই অবস্থায় সাথে সাথে বসে গিয়ে বৈঠক শুরু করে সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ শেষ করলে কি নামাজ শুদ্ধ হবে? নাকি দোহরানো প্রয়োজন?
৩. গোসল ফরজ হবার জন্য পুরুষের ক্ষেত্রে মনী নির্গত হওয়া শর্ত, মযী বের হলে গোসল ফরজ হয় না। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে চিন্তা অথবা শারীরিক কারণে সামান্য উত্তেজনাবশত হলেও যেকোনো ধরনের তরল বের হলেই গোসল ফরজ হয়ে যায়, এটা কি সঠিক? মহিলাদের কি মনী আর মযী আলাদাভাবে চিহ্নিত করার দরকার নেই?
নাকি তাদেরও সম্পূর্ণ উত্তেজনাবশত চূড়ান্ত ভাবে কিছু বের না হওয়া পর্যন্ত গোসল ফরজ হবে না?

৪. গর্ভাবস্থায় যদি কোন মহিলা দাঁড়াতে অক্ষম না হয়েও শারীরিক ক্লান্তি, ব্যথা ইত্যাদি কারণে নামাজের প্রথম রাকআত দাঁড়িয়ে শুরু করে পরবর্তীতে বসে বাকিটা শেষ করে, তবে কি ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে সেই ওজর গ্রহণযোগ্য হবে? নাকি কষ্ট করে হলেও দাঁড়াতে হবে? যেহেতু সে দাঁড়াতে সক্ষম, কিন্তু দীর্ঘ সময় একভাবে দাঁড়াতে অসুস্থ অনুভব করে।

৫. তিন মাসের আগে যদি কোন মহিলার গর্ভপাত হয়, তবে কি সেই রক্তপাত নিফাস হিসেবে গণ্য হবে? নাকি ইস্তেহাযা ধরে নিয়ে নামাজ আদায় করতে থাকবে?

৬. প্রসবকালীন ব্যথা অথবা পানি ভাঙা, রক্ত যাওয়া এই ধরনের লক্ষ্মণ দেখা গেলে অনেক সময় নার্স বা ডাক্তার গর্ভবতীর জরায়ুমুখের পরীক্ষা করে থাকেন হাত দ্বারা, কতটুকু খুলেছে, আর কত দেরি হতে পারে, ইত্যাদি বুঝার জন্য। যেহেতু ডাক্তার বা নার্স ভেতরে হাত ঢুকিয়েছে, এমতাবস্থায় নামাজের ওয়াক্ত আসলে কি গোসল সেরে নামাজ পড়া জরুরি? নাকি অসুস্থ অবস্থার ওজরে উযু বা তায়াম্মুম গ্রহণযোগ্য হতে পারে নামাজের জন্য?

৬. প্রথম সন্তানের জন্মের পর ৪৫ দিনের মতো নিফাসের রক্ত দেখা যায়। প্রথম ৪০ দিন অতিবাহিত হবার পরে নামাজ শুরু করা হয়। এখন দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর যদি নিফাস ৪০ দিনের কম হয়, সেক্ষেত্রে কি তৃতীয় সন্তানের জন্মের পর দ্বিতীয় নিফাসের মেয়াদ অনুসরণ করতে হবে? ৪০ দিনের আগেই নামাজ শুরু করতে হবে, আর বাকি দিন ইস্তেহাযা ধরতে হবে? নাকি প্রথম বারের মতো পুরো ৪০ দিন ব্লিডিং হলে পূর্ণ সময়টাই নিফাস গণ্য করে তারপর থেকে নামাজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (575,580 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,

«لاَ تَنْثُرُوهُ نَثْرَ الدَّقْل وَلاَ تَهُذُّوهُ كَهَذِّ الشِّعْرِ ، قِفُوا عِنْدَ عَجَائِبِهِ ، وَحَرِّكُوا بِهِ الْقُلُوبَ ، وَلاَ يَكُونُ هَمُّ أَحَدِكُمْ آخِرَ السُّورَةِ» .

‘তোমরা একে (কুরআন) নষ্ট খেজুরের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ো না কিংবা কবিতার মতো গতিময় ছন্দেও পড়ো না। বরং এর যেখানে বিস্ময়ের কথা আছে সেখানে থামো এবং তা দিয়ে হৃদয়কে আন্দোলিত করো। আর সূরার সমাপ্তিতে পৌঁছা যেন তোমাদের কারো লক্ষ্য না হয়।’
ইবন আবি শাইবাহ, মুসান্নাফ: ২/২৫৬, নং ৮৭৩৩।

★সুতরাং কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে আয়াতের মাঝখানে থেমে থেমে, আগের শব্দ না মিলিয়ে তিলাওয়াত করা উত্তম নয়।

যদি ইচ্ছা করে এমন স্থানে ওয়াকফ করে যা অর্থের বিকৃতি ঘটায় তাহলে তা হারাম।

উদাহরণস্বরূপ:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
والله لاَ يَسْتَحْيِي مِنَ الحق
“আর আল্লাহ লজ্জা করেন না হকের ব্যাপারে।”(সূরা আহযাব: ৫৩)

কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যে لاَ يَسْتَحْيِي “আল্লাহ লজ্জা করেন না” বলে থেমে যায় তাহলে তারা হারাম হবে। কারণ তা আয়াতের মূল উদ্দেশ্যকে বিকৃতি ঘটায়।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

والله لاَ يَهْدِي القوم الفاسقين

“আর আল্লাহ হেদায়েত দেন না ফাসিক সম্প্রদায়কে।(সূরা সফ: ৫)

এখানে কেউ যদি والله لاَ يَهْدِي “আর আল্লাহ হেদায়েত দেন না…”এতটুকু পড়ে থেমে যায় তাহলে তা হারাম হবে। কারণ তা আয়াতের মূল উদ্দেশ্যকে পরিবর্তন করে দেয়।

শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল বলেনঃ
কেউ যদি জেনে-বুঝে আয়াতের অর্থ বিকৃত করার উদ্দেশ্যে এভাবে পড়ে তাহলে সে মুসলিম থাকবে না।
কেউ যদি জেনে-বুঝে আয়াতের অর্থ বিকৃত করার উদ্দেশ্যে এভাবে পড়ে তাহলে সে মুসলিম থাকবে না। কারণ সে কুরআনের বিকৃতি ঘটিয়েছে। কিন্তু নি:শ্বাস শেষ হওয়ার কারণে যদি উক্ত স্থানে থামা হয় তাহলে উক্ত শব্দটি অথবা কিছু আগে থেকে পুনরায় ফিরিয়ে পড়লে আর কোন সমস্যা থাবে না ইনশাআল্লাহ।
অথবা যেখানে থামার চিহ্ন ছিল সেখানে না থেমে এক শ্বাসে পড়া চালিয়ে যাওয়া হয় তাহলে তাতেও গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।
,
অনুরূপভাবে আরবি ভাষা না জানার কারণে (অর্থ না জানার কারণে) কোথাও ওয়াকফ করা হলে তার পর থেকে পড়া চালিয়ে গেলে (আগের শব্দকে পুনরাবৃত্তি না করে) তাতেও গুনাহ হবে না। কারণ মূলত: ইচ্ছা করে আয়াতের অর্থ বিকৃত করা তার উদ্দেশ্য নয়।


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে আয়াতের মাঝখানে থেমে থেমে, আগের শব্দ না মিলিয়ে তিলাওয়াত করতে পারবে।
কেননা তার ইচ্ছা করে আয়াতের অর্থ বিকৃত করা তার উদ্দেশ্য নয়।
তার অসুস্থতাই মূল কারন।

যেই শব্দ শেষ করে থামা হলো,সেই শব্দ পুনরায় মিলিয়ে নিয়ে পড়াই উত্তম হবে।   

এক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করে তেলাওয়াত করার কারনে দ্বিগুণ ছওয়াব পাওয়া যাবে। 

রাসূল (ছাঃ) বলেন,

الَّذِى يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَهُوَ مَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِى يَقْرَؤُهُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ فَلَهُ أَجْرَانِ، 

‘কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি কুরআন পড়ার সময় আটকে যায় এবং কষ্ট করে তেলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব’।
(বুখারী হা/৪৯৩৭ ‘তাফসীর’ অধ্যায়; মুসলিম ‘মুসাফিরের ছালাত’ অধ্যায়, ‘কুরআনে পারদর্শী হওয়ার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; আবূদাঊদ হা/১৪৫৪; তিরমিযী হা/২৯০৪।)

(০২)
হ্যাঁ প্রশ্নে উল্লেখিত নামাজ শুদ্ধ হবে।
পুনরায় আদায় করতে হবেনা। 

(০৩)
মহিলাদের ক্ষেত্রে চিন্তা অথবা শারীরিক কারণে সামান্য উত্তেজনাবশত হলেও যেকোনো ধরনের তরল বের হলেই গোসল ফরজ হয়ে যায়, এটা ঠিক নয়।
,
কেবল উত্তেজনা বশত বীর্য বের হলেই মহিলাদের উপর গোসল ফরজ হবে।

★মহিলার বীর্য হল,পাতলা প্রায় হলুদ বর্ণের। 
,
বিস্তারিত জানুনঃ  

(০৪)
শরীয়তের বিধান হলো দাড়িয়ে নামায পড়া সম্ভব না হলে যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবেই নামাযকে আদায় করতে হবে।নামাযের প্রত্যেকটি ফরয কে আদায় করতে হবে।যদি অসুস্থতার দরুণ কোনো ফরয রুকুন কে আদায় করা সম্ভব না হয়,তাহলে যেভাবে সম্ভব হয় সেভাবেই নামাযকে আদায় করতে হবে।বিস্তারিত জানুন-https://www.ifatwa.info/1162

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু দাড়ানোতে গর্ভের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, আর সে যেহেতু অক্ষম নন,তাই তাকে প্রতি রাকাতে দাড়াতেই হবে। 
নতুবা নামাজ শুদ্ধ হবেনা।
প্রয়োজন ছোট সুরা দিয়ে দ্রুত কিরাআত শেষ করতে পারেন।   

(০৫)
সেই রক্তপাত নিফাস হিসেবে গণ্য হবেনা।
সেটিকে ইস্তেহাযা ধরে নিয়ে নামাজ আদায় করতে থাকবে।

বিস্তারিত জানুনঃ

(০৬)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তো গোসল ফরজ হবেনা।
সুতরাং অযু করেই নামাজ আদায় করবে।
আর তায়াম্মুম করার শর্তাবলী পাওয়া গেলে তায়াম্মুমও করতে পারবে।   

(০৭)
এক্ষেত্রে প্রথম বারের মতো পুরো ৪০ দিন ব্লিডিং হলে পূর্ণ সময়টাই নিফাস গণ্য করে তারপর ৪১ তম দিন থেকে নামাজ আদায় করতে হবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 662 views
...