জবাব,
‘আল-কুরআন‘ আমাদের প্রত্যেকের প্রাত্যহিক জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এক
কিতাবের নাম। এটি এমন এক ঐশী গ্রন্থ যা মানবজাতির মুক্তির লক্ষ্যে, মানবজাতির প্রভূর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া আদ্যোপান্ত এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান।
আমাদের দৈনিক ইবাদাত থেকে শুরু করে যাপিত জীবনের সকল অনুষঙ্গে আল-কুরআনের বিধি-বিধান
মেনে চলতে আমরা বদ্ধপরিকর।
আল-কুরআন
তিলাওয়াত এক উত্তম ইবাদাত যার সওয়াব অফুরন্ত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তায়ালার কাছে কুরআন
তিলাওয়াতকারী ব্যক্তির জন্য রয়েছে অনন্য মর্যাদা। যারা কুরআন পড়ে এবং পড়ায়- উভয়ের জন্যই
মহা পুরষ্কারের ঘোষণা আমরা নবিজী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে দেখতে পাই।
নিঃসন্দেহে
কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন অধ্যয়ন এবং শিক্ষাদান এক অনন্য সওয়াবময় ইবাদাত। তবে, কোন ধরনের কুরআন শরীফ আমরা কিনবো, তা নিয়ে প্রায়-ই আমাদের
দ্বিধা-দ্বন্ধে ভুগতে হয়।
‘কোন ধরণের কুরআন শরীফ কিনবো’- এই সমস্যা
সমাধানের আগে আমাদের ঠিক করতে হবে আমি আসলে কোন কাজে কুরআনকে ব্যবহার করবো।
যদি
কেবল তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যেই কুরআন কেনা হয়, তাহলে ভালো এবং স্পষ্ট ফন্টের কুরআন কেনাই উত্তম।
গোটা গোটা অক্ষরের উসমানি ফন্টে ছাপানো কুরআন এক্ষেত্রে বেশ উপকারি বলে মনে করি।
তরুণ
এবং চোখে সমস্যা নেই এমন মানুষদের জন্য ফন্ট সাইজ ছোট হলেও সমস্যা নেই। বয়স্ক এবং চোখে
সমস্যা আছে এমন মানুষদের জন্য বড় আকারের ফন্টে ছাপা কুরআন কেনাই উত্তম।
তবে
কেবল তিলাওয়াত করে গেলে কুরআন নাযিলের আসল উদ্দেশ্য হাসিল হয়না পুরোপুরি। কুরআন যেহেতু
মানবজাতির আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যেই নাযিল হওয়া, তাই এর অর্থ বুঝে তিলাওয়াত আমাদের জীবনকে আরো
গতিময় করে তুলতে পারে। এজন্যে যারা কেবল তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যেই কুরআন কিনতে চান,
তাদের জন্যে আমার পরামর্শ হবে আয়াতের পাশে অর্থসহ দেওয়া থাকে এমন কুরআন
কেনার। এতে করে তিলাওয়াতের সওয়াব এবং বুঝে পড়ার সওয়াব, দুটোই
একসাথে পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।
যারা
অধ্যয়ণের জন্য কুরআন কিনতে চান, তাদের জন্য শব্দার্থ সহ কুরআনের অনুবাদ বেশ কার্যকরী। ইংরেজিতে
দারুস সালামের ছাপা এ-ধরণের কুরআনের কপি পাওয়া যায়। সিয়ান পাবলিকেশন্সের ‘মহিমান্বিত
কুরআন‘ কপিটাও এক্ষেত্রে বেশ কাজে দেবে, ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে
উত্তম হয় যদি আয়াতের পাশাপাশি শব্দার্থ এবং প্রয়োজনীয় তাফসির দেওয়া থাকে।
আর
যারা কুরআনের গভীর অধ্যয়নে প্রবেশ করতে চান, তারা কুরআনের তাফসির নিয়ে বসে পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে
‘তাফসিরে আবু বকর জাকারিয়া’ অথবা ‘তাফসিরে তাওযীহুল কুরআন‘ কিংবা আমীন আহসান ইসলাহীর
‘তাদাব্বুরে কুরআন‘- তিনটার যেকোন একটা কিনে ডুব দিতে পারেন জ্ঞানের এক মহা-সমুদ্রে।
যাদের
উদ্দেশ্য কেবল হিফয করা,
তাদের জন্য অন্যরকম পরামর্শ। সাধারণত হাফেযী কুরআন হিসেবে দুই ধরণের
কুরআন বাজারে পাওয়া যায়। একটা ভারতীয় ছাপা, অন্যটা সৌদি ছাপা।
ভারতীয় ছাপায় প্রতি পৃষ্টায় ১৫ লাইন করে এবং সৌদি ছাপায় প্রতি পৃষ্টায় ১৬ বা ১৭ লাইন
করে থাকে। এই দুই ছাপার যেটাকে পাঠক অধিক কার্যকরী মনে করবে, সেটা কিনেই শুরু করে দেওয়া যায় হিফযের যাত্রা।