ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/34057/ নং ফাতাওয়াতে আমরা বলেছি যে,
নারী-পুরুষের
মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা করতে গেলে পর্দাহীনতা, গায়রে মাহরাম মহিলার দিকে বারংবার দৃষ্টিপাত, পারস্পরিক সহাবস্থান,
অন্তরের আকর্ষণসহ সমূহ ফেতনার আশঙ্কা প্রবল
থাকার কারণে ওলামায়ে কেরাম এজাতীয় পরিবেশে কাজ করাকে নাজায়েয বলেছেন।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ؛ فَإِنَّمَا لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ “
হযরত বুরাইদা রাঃ
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ হযরত আলী রাঃ কে বলেন,
হে আলী! [সহসা] একবার দেখার পর পুনরায় [কোন
বেগানা নারীকে] দেখো না। কারণ, তোমার জন্য প্রথমবারে অনুমতি রয়েছে [যখন তা অনিচ্ছায় হয়ে
যাবে], কিন্তু দ্বিতীয়বারের অনুমতি নেই।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৯৭৪,
সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭৫১, সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস নং-২১৪৯, সুনানে তিরমিজী,
হাদীস নং-২৭৭৭}
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَنْظُرُ إِلَى مَحَاسِنِ امْرَأَةٍ أَوَّلَ مَرَّةٍ، ثُمَّ يَغُضُّ بَصَرَهُ إِلَّا أَحْدَثَ اللهُ لَهُ عِبَادَةً يَجِدُ حَلَاوَتَهَا “
হযরত আবু উমামা
রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে কোন মুসলমান কোন নারীর সৌন্দর্যের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে
যায়, অতঃপর সে নিজ চক্ষু নিচু করে নেয়,
তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য এক ইবাদতের সুযোগ
সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার স্বাদ পায়। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২২৭৮}
হযরত আবূ হুরায়রা
রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ
করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের
জিনা হল, [গায়রে মাহরামের
যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল,
[গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন।
হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে]
ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর
লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি
অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
ফাতাওয়াতুল
লাজনাতিতদ্দায়িমা (১২/১৫৬)-তে এসেছে,
الاختلاط بين الرجال والنساء في المدارس أو غيرها من المنكرات العظيمة ، والمفاسد الكبيرة في الدين والدنيا ، فلا يجوز للمرأة أن تدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানসমূহ ও অন্যান্য স্থানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান ঘটলে দীন ও দুনিয়ার
ক্ষেত্রে বড় বড় ফেতনা-ফ্যাসাদ ও পাপাচার সংঘটিত হবে। সুতরাং নারীর জন্য জায়েয নয়
নারী-পুরুষের মিশ্রিত পরিবেশে শিক্ষকতা কিংবা চাকুরি করা। আর অভিবাবকের জন্য জায়েয
নয় তাকে এর অনুমতি দেয়া।
এখানে বেতন
সংক্রান্ত মাসয়ালা হলোঃ
পড়ানোর বিনিময়ে
বেতন দেওয়া হয়, তাই কেহ যদি সহশিক্ষা সম্ভলিত প্রতিষ্ঠাবে নিয়ম অনুসারে কোনো প্রকার অবহেলা-অলসতা না
করে ঠিকমত পড়ান, তাহলে যে বেতন পাবে সেটা তার জন্য হালাল হবে।
কেননা তিনি
ক্লাশের বিনিময়েই বেতন নিচ্ছেন,আর তিনি ছেলেদেরও ক্লাশ নিচ্ছেন,পুরো সময়টা তিনি এই কাজেই ব্যায় করছেন।
শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নিয়ম মেনে চলছেন,আরো আনুষাঙ্গিক কাজও করছেন,এই সময়ে চাইলে তিনি ব্যবসা বাণিজ্যও করতে
পারতেন,তা না করে তিনি জীবনের পুরো সময়টাতে তিনি সেই
প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানের পিছনেই খরচ করছেন।
,
তবে শরয়ী পর্দা মেইনটেইন
না করলে সর্বদা পর্দা লঙ্ঘনের গোনাহে লিপ্ত থাকবে।
আরো জানুনঃ
https://ifatwa.info/654/
(এক্ষেত্রে কিছু আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো,
যদি তিনি দৃষ্টি নিচু করতে না পারেন,সর্বদায় যদি এই শিক্ষকতার দরুন গুনাহ চলমান
থাকে,ফিতনায় জড়িয়ে যায়,তাহলে যেহেতু এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরিই তার
গুনাহের কারন,তাই এহেন বেতন জায়েজ গ্রহন হবেনা।)
★সুতরাং তাকওয়ার খাতিরে তো এমনিতেই এহেন চাকুরী ছেড়ে দেওয়া
উচিত।
তদুপরি যদি
চাকুরী চালিয়ে গেলে শরীয়াহ নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
দৃষ্টির হেফাজত
করতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় কথা
বলা যাবেনা,ফিতনার আশংকা থাকা যাবেনা,ইত্যাদি ইত্যাদি।
এহেন শর্ত মেনে
চাকুরী করতে না পারলে এ চাকরি ছেড়ে দিতে হবে।
কারণ,
পার্থিব লাভ অর্জনের চাইতে দীনদারি রক্ষা
করার গুরুত্ব অবশ্যই বেশি। যদি এমনটি করতে পারে, তাহলে আল্লাহ তাআলা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,
وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا . وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ
আর যে আল্লাহকে
ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন এবং
তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। (সূরা তালাক ২,৩)