আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
195 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (49 points)
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্


উস্তাদজী ,
১/ কেউ যদি লোন নিয়ে ব্যবসা করে এবং সেই ব্যবসা থেকে যে আয় হয় সেটা কি হালাল নাকি হারাম ? যদি লোন তোলা হারাম ।
২/ যদি কোন মেয়ে এশার সালাত পড়বে ভেবেছিলো , সেই মূহূর্তে অন্য কেউ তাকে কাজে ধরিয়ে দিলো এবং কাজ শেষ হতে সাড়ে দশটা বাজে এমন সময় হয় তখন নামাজ শুরু আগেই হায়েজ শুরু হয় , তবে কি ঐ মেয়েকে হায়েজ থেকে সুস্থ হবার পর এশার সালাত আগে কাযা পড়তে হবে ? নাকি কাযা হবে না , নামাজ মাফ ?


৩/ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , যে মেয়ের প্রথম সন্তান কন্যা হবে সেই মেয়ে বরকতময় , যে মেয়ের প্রথম সন্তান ছেলে হয় সে কি বরকতময় নয় তাহলে ?
৪/ মেয়েরা পর্দা করে ডাক্তারি পড়তে এবং সেই পেশা করতে পারবেন? যদিও ভাইবা, পরীক্ষা বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখ খোলা লাগতে পারে পড়ার সময়কালীন , এবং ওখানে তো ছেলেরাও পড়ে থাকে ।
৫/ মেয়েরা ডাক্তার হয় ঠিকই এ কথা বলে যে মেয়ে ডাক্তার প্রয়োজন আছে , সিজার করতে আরো অনেক কাজে , কিন্তু বর্তমানে কোন মেয়েই সিজার করেন না , তারা পাশে থাকেন এবং পুরুষ ডাক্তার সিজার করেন , এ ক্ষেত্রে কোন মেয়ে পুরুষ ডাক্তার কাছে সিজার করতে পারবেন?
৬/ লেবু গাছের কাঁচা পাতা ছিঁড়ে যদি চা বানিয়ে খাওয়া হয় তবে কি গোনাহ হবে ?
কোথায় যেন শুনেছিলাম গাছের পাতা জিকির করে ।


৭/ উস্তাদজী , কোন বাবা যদি তার মেয়েকে দ্বীনের পথে আসতে চেষ্টা করেছেন এমন কারো সাথে তার মেয়েকে কথা বলতে বারণ করে এবং সে যে সব কিতাব পড়তে দিতো সেগুলো পড়তে বারণ করে সে ক্ষেত্রে মেয়ের করণীয় কি ?


৮/ কোন মেয়ে হিফজ করতে চায় এবং তার বাবা মা বারণ করে এই ভেবে যে , মেয়ে হিফজ করতে চাইলে সে বিয়ের ক্ষেত্রে ও হাফেজ মাওলানা ছেলে খুঁজবে , এবং তার বাবা মা হাফেজ মাওলানা ছেলের সাথে কখনো মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি নয় , তারা বড়লোক খুঁজে , মেয়ে সব জানিয়ে দিয়েছেন যে সে হিফয করবে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়বে তার পরও তার বাবা মা অনেক চাপ সৃষ্টি করছেন ,এ ক্ষেত্রে মেয়ের করণীয় কি ?
জাযাকাল্লাহু খইরন ফিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাহ্ ।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(০১)
সুদ গ্রহণ, সুদ প্রদান উভয়ই লানতপ্রাপ্ত গোনাহ। তাই এ ভিত্তিতে লোন নেওয়া,তা দিয়ে ব্যবসা করা,অন্যকে এ থেকে লোন দেওয়া জায়েজ নয়। হারাম। 

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন  
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٧٥

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। {সূরা বাকারা-২৭৫}

হাদীস শরীফে এসেছে  
عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ এর পিতা থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সকলেরই উপর আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস নং-৪৯৮১)
,

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
ব্যাংক লোন হারাম।কিন্তু ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে আসার পর সেই লোনকে পরিশোধ করার পর উক্ত লোন দিয়ে যা খরিদ বা তৈরী করা হয়েছিলো,সেটা হালালই থাকছে।যদিও লোন গ্রহণ করা হারাম ও অবৈধ ছিলো।

ব্যাংক লোন সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুন 
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ব্যবসা থেকে যেই লাভ হবে, ব্যাংকের লোন শোধ করার পর সেই লাভকে হালাল হবে। 
এক্ষেত্রে ব্যাংকের লোন শোধ করার পর ভবিষ্যতে এহেন কাজ না করার ওয়াদা করে  সুদী লেনদেনের কারনে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে খালেছ দিলে তওবা ইস্তেগফার করতে করতে হবে।         

(০২)
নামাজ আবশ্যকীয় হওয়ার ক্ষেত্রে নামাজের ওয়াক্তের শেষ সময় ধর্তব্য।
ওয়াক্তের শেষ সময়ে কেহ হায়েজ পবিত্র হলে যেমন সেই নামাজ তার উপর আদায় আবশ্যকীয় হয়ে যায়,(এক্ষেত্রে অল্প সময়ে গোসল করে তাকবিরে তাহরিমা পাওয়া সমপরিমাণ সময় থাকতে হবে।)

অনুরুপ ভাবে কাহারো যদি নামাজের শেষ ওয়াক্তে হায়েজ চলে আসে,তাহলে উক্ত ওয়াক্তের নামাজ তার মাফ। 
সেটি আদায় করতে হবেনা।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত মেয়ের উপর উক্ত ইশার নামাজ মাফ।
সেটি আদায় করতে হবেনা।
,
(০৩)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলনে, রাসূল (সা.) ইরশাদ করনে, যার গৃহে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করল,অতঃপর সে ঐ কন্যাকে কস্ঠ্ও দেয়নি,তার উপর অসন্তুষ্টও হয়নি এবং পুত্র সন্তানকে তার উপর প্রধান্য দেয়নি,তাহলে ঐ কন্যার কারনে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবশে করাবেন।(মুসনাদে আহমদ ১;২২৩) 

হযরত আব্দুল্লাহ উমর (রা.) বর্ণনা করেন,রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,ঐ মহিলা বরকতময়ী ও সৌবাগ্যশালী,যার প্রথম সন্তান মেয়ে হয়। কেননা,(সন্তানদানের নিয়ামত বর্ণনা করার ক্ষেত্রে)আল্লাহ তায়ালা মেয়েকে আগে উল্লেখ করে বলেন,তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।"(কানযুল উম্মাহ ১৬:৬১১)

★প্রথম সন্তান ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন ইসলামের দৃষ্টিতে এর মাঝে কোনো পার্থক্য বা মর্যাদাগত কোনো কম-বেশি নেই। কারণ ইসলাম কন্যা শিশু ও ছেলে শিশু উভয়কেই সমান দুষ্টিতে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে কারো প্রথম সন্তান কন্যা হলে তার জন্য হাদিস শরিফে বিশেষ ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। 

★এর কারন হলো তৎকালীন সমাজে অনেক সময় প্রথম সন্তান হলে সেই মহিলাকে ভৎসনা করা হতো,তাই এই ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
প্রথমেই ছেলে সন্তান হলে কোনো ফজিলত নেই,বিষয়টি এমন নহে।

(০৪)
হ্যাঁ জায়েজ আছে।
বরং তাহা মুসলিম উম্মাহর নারীদের খেদমতের জন্য প্রয়োজনীয়।  

মহিলাদের জন্য ডাক্তারী পড়াশোনার বিধান জানুনঃ 

(০৫)
অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তার না পেলে অনন্যোপায় হয়ে পুরুষ ডাক্তারের কাছে সিজার করাতে পারবে।
এক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন,শুধু ততটুকু কাপড় অনাবৃত করতে পারবে।  
বাকি অংশ আবৃতই রাখতে হবে।

(০৬)
এতে কোনো গুনাহ হবেনা।

গাছের পাতা যিকির করে,তবে এগুলো সবই মহান আল্লাহ তায়ালা আশরাফুল মাখলুকাত এই মানব জাতীর ফায়েদার জন্য সৃষ্টি করেছেন।
তাই প্রয়োজনে এসব পাতা ব্যবহার করা যাবে।
,
(০৭)
এক্ষেত্রে সেই মেয়ের জন্য করনীয় হলো হিকমতের সহিত উভয় দিক খেয়াল রেখে চলা।
আপাতত বাবার আদেশ মতে বিরত থেকে পরবর্তীতে  আস্তে-ধীরে হিকমতের সহিত পুনরায় সেই কিতাব গুলি পড়া,তার সাথে কথা।
বাবাকে কষ্ট না দেওয়া।

(তবে বাস্তবে দীনের পথে চলতে,পর্দা করতে,নামাজ আদায় করতে বাধা দিলে বাবার আদেশ মানা যাবেনা।
কেননা শরীয়তের খেলাফ বাবা মায়ের আদেশ মানা বৈধ নয়।)
          
(০৮)
হিফজ করা তো ফরজ ওয়াজিব বিষয় নয়।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত মেয়ের জন্য বাবা মার আদেশ মানাই উচিত।
তবে পড়াশোনার পাশাপাশি যদি একা একি হিফজ করে,তাতে দোষের কিছু দেখা যায়না।      


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...